যখন রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণু কারও শরীরে আক্রমণ করে তখন তারা নিজেদের সংখ্যা বাড়িয়ে তুলে নানা রকম উপসর্গ এবং প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, একে সংক্রমণ বা ইনফেকশন বলে। সংক্রমণ ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, ভাইরাস এবং পরজীবীর কারণে হয়, যা শরীরের ভেতরে ও বাইরে হতে পারে। ওয়েবএমডি অবলম্বনে জানাচ্ছেন ফখরুল ইসলাম
সংক্রমণের উপসর্গগুলো সাধারণত সংক্রমণের স্থানের ওপর এবং যে জীবাণু এই সংক্রমণের কারণ তার ওপর নির্ভর করে। প্রধান উপসর্গগুলো হলো- ফুলে যাওয়া এবং লাল হয়ে যাওয়া। এ ছাড়া ব্যথা, জ্বর, পেট খারাপ, লাল লাল ফুসকুড়ি, নাক দিয়ে পানি পড়া বা সর্দি এবং কাশি থাকতে পারে। পাশাপাশি নড়াচড়া বা চলাফেরা করতে অসুবিধা, স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া বা নষ্ট হয়ে যাওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দিতে পারে।
প্রধান কারণ
রোগ সৃষ্টিকারী জীবাণুগুলো হলো- ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক, ভাইরাস এবং প্যারাসাইট বা পরজীবী, যেমন- দাদ, কেঁচোকৃমি, উকুন, মাছি এবং এঁটেল পোকা। এগুলো নানাভাবে আমাদের শরীরে ছড়ায়। যেমন- ব্যক্তি থেকে ব্যক্তি, পশু থেকে ব্যক্তি, মায়ের থেকে গর্ভে থাকা শিশুর মধ্যে। এ ছাড়া দূষিত খাদ্য এবং পানি থেকে, পোকার কামড় থেকে, সংক্রমিত ব্যক্তি ছুঁয়েছে এরকম কোনো জিনিস ব্যবহার করলে জীবাণু ছড়ায়। পাশাপাশি ইয়াট্রোজেনিক সংক্রমণ (সংক্রমিত চিকিৎসার যন্ত্রপাতির কারণে) ও নসকমিয়াল সংক্রমণ (হাসপাতাল থেকে আসা) থেকেও আমাদের সাবধান থাকতে হবে।
রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসা
রোগ নির্ণয় করার জন্য নানা ধরনের পরীক্ষা করতে হতে পারে। যেমন- শারীরিক পরীক্ষা, মাইক্রোবায়োলজিকাল পরীক্ষা, ল্যাবরেটরি পরীক্ষা, যেমন- রক্তের নমুনা, মূত্র, মল, গলার ভেতর এবং সেরিব্রোস্পাইনাল ফ্লুইড পরীক্ষা। এ ছাড়া ছবি পরীক্ষা, যেমন- এক্স-রে এবং এমআরআই, বায়োপসি, পিসিআর (পলিমেরেজ চেইন রিঅ্যাকশন) ভিত্তিক পরীক্ষা।
একবার যদি সংক্রমণ সৃষ্টিকারী জীবাণুর পরিচয় পাওয়া যায়, তাহলে চিকিৎসা সহজ হয়ে যায়। সংক্রমণের জন্য নিম্নলিখিত চিকিৎসাগুলো সহজেই করা যায়, যেমন- ওষুধ দ্বারা চিকিৎসা। এ পদ্ধতিতে অ্যান্টিবায়োটিক, অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগস, এন্টিপ্রোটোজোয়াল ড্রাগস, অ্যান্টিফাঙ্গালস ও টিকাকরণ ওষুধ দেওয়া হয়।
পরিচ্ছন্নতা এবং খাদ্যাভ্যাস
নিয়মমাফিক হাত ধুতে হবে খাদ্য প্রস্তুত করার আগে (খাবার কাটাকুটির আগেও) এবং থালাবাসন ধোয়ার আগে (খাওয়ার আগে তো অবশ্যই)। ফিতা কৃমি সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে আধা সেদ্ধ মাংস ও কাবাবজাতীয় খাবার এড়িয়ে চলুন। অপরিষ্কার হাত চোখে দেবেন না। হাত দিয়ে নাকের ময়লা পরিষ্কার করলে সাবান দিয়ে হাত ধুতে হবে। নখ বড় রাখবেন না। চিরুনি, নেইল কাটার, ব্লেড ও রেজারের মতো ব্যক্তিগত ব্যবহারসামগ্রী একাধিক ব্যক্তি ব্যবহার করবেন না। প্রতিবার খাওয়ার পর কুলকুচি করুন। দুই বেলা ব্রাশ করুন। খালি পায়ে মাটিতে হাঁটবেন না। পায়ে কাদাপানি ছিটে গেলে সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলুন যত দ্রুত সম্ভব। ধুতে দেরি হলে প্রথমে মুছে ফেলুন। হাত-পা ভেজা রাখবেন না।
মশা-মাছি এবং ইঁদুরও বয়ে আনে জীবাণু। তাই খাবার ঢেকে রাখুন। মশারি ব্যবহার করুন দিনে ও রাতে। কালাজ্বরপ্রবণ এলাকায় অবশ্যই স্যান্ডফ্লাইয়ের কামড় থেকে বাঁচতে চেষ্টা করুন। ঘরে ইঁদুর থাকলে তাড়ানোর ব্যবস্থা করুন। ফাঁদ বা ইঁদুরকলে ইঁদুর ধরা কিংবা মারার বিষ ব্যবহার করা যুক্তিসংগত নয়। ইঁদুর তাড়ানোর দারুণ উপায় হলো কয়েকটি বিড়াল পোষ্য করে নেওয়া।
টিকা নিন
সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির আওতায় শিশুদের টিকা দিন। ৬৫ পেরোনো ব্যক্তিদেরও নির্ধারিত টিকা দেওয়ার ব্যবস্থা করুন। পশুর কামড় বা আঁচড় লাগলে অধিক ক্ষারযুক্ত সাবান দিয়ে ভালোভাবে জায়গাটুকু ধোয়ার পর জলাতঙ্কের টিকা নিয়ে নিন। নিজের পোষা প্রাণীকে নিয়মমাফিক টিকা দিন।
সামাজিক মেলামেশা
ব্যবহৃত টিস্যু, রুমাল বা মাস্ক যেখানে-সেখানে রাখবেন না। কফ-থুতু যত্রতত্র ফেলা যাবে না। টাকা বা বইয়ের পৃষ্ঠা ধরার আগে আঙুলে থুতু দেবেন না। করোনাভাইরাস এবং অন্যান্য জীবাণু প্রতিরোধে মাস্ক পরুন। কখনো কখনো বিক্রেতারা ফুঁ দিয়ে পলিব্যাগের মুখ খোলেন কিংবা ফুঁ দিয়ে কোনো কৌটার ওপর থেকে ধুলা সরান। এসব অভ্যাস পরিত্যাগ করুন। শিশুর খেলনা জীবাণুমুক্ত রাখুন, তাছাড়া খেলনা মুখে দিলে তা জীবাণুমুক্ত না করে অন্যকে দেওয়াও উচিত নয়।
কলি