প্যানক্রিয়াসে অতি ক্ষতিকর (ক্যানসার রোগাক্রান্ত) কোষের বৃদ্ধি পাওয়াকেই প্যানক্রিয়াটিক ক্যানসার বলা হয়। এটি প্যানক্রিয়াসের এক্সোক্রিন (ডাক্টস) বা অ্যান্ডোক্রিন (হরমোন বা এনজাইম উৎপাদক) অংশে ঘটে। এটি সাধারণত নারীদের তুলনায় পুরুষদের মধ্যে বেশি দেখা যায়। মাই উপচার অবলম্বনে জানাচ্ছেন ফারজানা আলম
প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গ
প্রাথমিক অবস্থায় প্যানক্রিয়াটিক ক্যানসার ধরা পড়ে না। ক্যানসারে পরিণত হলে রোগীর মধ্যে লক্ষণ এবং উপসর্গ দেখা দেয়। যেমন বমি বমি ভাব। এ ছাড়া পিঠে ব্যথা এবং পেটে ব্যথা, লিভার বৃদ্ধি পাওয়া বা গলব্লাডার বৃদ্ধি পাওয়া, ক্ষুধামান্দ্য। পাশাপাশি বদহজম, খাবার গিলতে সমস্যা, রক্ত বমি, বমি, ক্লান্তিভাব। এ ছাড়া রোগীর জ্বর এবং কাঁপুনি থাকে। এই রোগে কখনো কখনো জন্ডিসের মতো কিছু উপসর্গও দেখা যায়।
কারণ
প্যানক্রিয়াটিক ক্যানসার হওয়ার নানা কারণ আছে। এর মধ্যে ডায়াবেটিস অন্যতম। এ ছাড়া লিভারে ক্ষত, প্যানক্রিয়াসে দীর্ঘস্থায়ী প্রদাহ (দীর্ঘস্থায়ী প্যানক্রিয়াটাইটিস)। পাশাপাশি পেটে সংক্রমণ, রক্তশূন্যতা, হাইপারগ্লাইসিমিয়া, মাদকদ্রব্যের অপব্যবহার, প্যানক্রিয়াস, লিভার বা পেট সম্পর্কিত বংশগত রোগ। এ ছাড়া স্থূলতা, ধূমপান বা তামাক ব্যবহার, উচ্চ পরিমাণে ফ্যাটজাত খাদ্যগ্রহণ, স্তন ক্যানসার অথবা ওভারিয়ান বা ডিম্বাশয়ের ক্যানসারের পারিবারিক ইতিহাস থাকলে প্যানক্রিয়াটিক ক্যানসার হতে পারে।
রোগ নির্ণয়
চিকিৎসক বিভিন্ন পরীক্ষার দ্বারা প্যানক্রিয়াটিক ক্যানসার নির্ণয় করতে পারেন, যেমন রক্ত পরীক্ষা। এর দ্বারা বিলিরুবিন, যা লিভারে উৎপাদিত হয়, তার মাত্রা শনাক্ত করতে সাহায্য করে। এর দ্বারা ডাক্তার লিভারের সক্রিয়তা বা জন্ডিসের লক্ষণগুলো আছে কি না, তা জানতে পারবেন। এটি প্যানক্রিয়াটিক হরমোন এবং এনজাইমের মাত্রায় বৃদ্ধিও শনাক্ত করতে সাহায্য করে।
বায়োপসি: প্যানক্রিয়াসে ক্যানসার কোষের উপস্থিতি পরীক্ষা করার জন্য করা হয়।
আল্ট্রাসাউন্ড: তলপেটে ক্যানসারের আকার এবং বিস্তার জানার জন্য।
সিটি স্ক্যান: এটি ক্যানসার শনাক্ত করতে সাহায্য করে, যা প্যানক্রিয়াসের আশপাশের অঙ্গগুলোয় ছড়িয়ে পড়তে পারে।
এমআরআই: ডাক্তারকে পিত্ত এবং প্যানক্রিয়াটিক ডাক্টসের সঠিক চিত্র তুলে ধরতে সহায়তা করে।
টিউমার মার্কার পরীক্ষা: কয়েকটি টিউমার মার্কার হলো সিএ-১৯-৯ এবং কার্সিনোএম্ব্রায়োনিক অ্যান্টিজেন (সিইএ)।
রোগ নির্ণয়ের পর এই রোগের চিকিৎসা হয় নিম্নলিখিত পদ্ধতির মাধ্যমে। যেমন-
অস্ত্রোপচার: যদি সম্ভবপর হয়, এটাই সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি। ক্যানসার যখন খুব একটা ছড়িয়ে পড়ে না তখন অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ক্যানসারযুক্ত কোষগুলো সরিয়ে ফেলা হয়।
কেমোথেরাপি: ক্যানসারযুক্ত কোষগুলো মেরে ফেলার জন্য সেবনের মাধ্যমে বা শিরায় প্রদানের মাধ্যমে ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। এর কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে যেমন- চুল পড়া, অবসাদ, কালশিটে পড়া, মুখে ঘা ইত্যাদি।
অন্যান্য উপায়: কিছু অপসারণ পদ্ধতি (যে পদ্ধতিগুলো টিউমারকে সরিয়ে দেওয়ার বদলে ধ্বংস করতে সাহায্য করে) - ক্রায়োসার্জারি, মাইক্রোওয়েভ থার্মোথেরাপি, রেডিওফ্রিকোয়েন্সি অ্যাবলেশন (আরএফএ) ইত্যাদি।
যা খাবেন
ক্যানসার প্রতিরোধক খাবারের তালিকায় প্রথমেই আসে মাশরুম। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। কোলিনসমৃদ্ধ সবুজ শাকসবজি যেমন- ব্রকোলি, বাঁধাকপি, ফুলকপি, শর্ষেশাক, মুলা ইত্যাদি খাওয়া ভালো। এ ছাড়া এপিজেনিন যৌগসমৃদ্ধ খাবার যেমন- চেরি, আঙুর, ধনেপাতা, পার্সলে পাতা, আপেলের মতো খাবারগুলোয় প্রচুর পরিমাণে এপিজেনিন যৌগ রয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন, এসব খাবার ক্যানসারের আশঙ্কা কমায়।
ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ কিউয়ি ফল খেতে পারেন। এই ফল প্রাকৃতিকভাবে ডিএনএ মেরামত করতে করে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেমোথেরাপির পর কিউয়ি ফল রোগীর শরীরে খুব ভালো কাজ করে। কিউয়ি ফল ছাড়া কমলালেবু, পাতিলেবু, আঙুর ডায়েটে প্রাধান্য দিন। গ্রিন টি শরীরের কোষগুলোর সুরক্ষার জন্য পান করতে পারেন গ্রিন টি। এতে রয়েছে ইজিসিজি অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের প্রদাহ দমন করতে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে।
কলি