ভিটামিন ‘কে’ শরীরে গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন তৈরি করে, যা রক্তপাত নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। ভিটামিন কে-এর অভাব হলো এমন একটি অবস্থা যাতে শরীর এই রকমের গুরুত্বপূর্ণ প্রোটিন তৈরিতে অক্ষম হয়ে পড়ে, যা রক্তপাতের ঝুঁকি হিসেবে দেখা দেয়। মাই উপচার অবলম্বনে জানাচ্ছে ফখরুল ইসলাম
ভিটামিন কে-কী?
ভিটামিন কে হলো চর্বিতে দ্রবণীয় ভিটামিন, অর্থাৎ এই রকমের ভিটামিন মানব শরীরে শোষণের জন্য চর্বির দরকার পড়ে। ভিটামিন কে দুই ধরনের হয়ে থাকে। ভিটামিন কে-১ (ফাইলোকুইনন), যার উৎস হলো উদ্ভিদ এবং কে-২ (মেনাকুইনন), যা প্রাকৃতিকভাবে অন্ত্রের মধ্যে সংশ্লেষিত হয়। ফাইলোকুইনন ভিটামিন কে-এর প্রধান খাদ্য উৎস এবং পালংশাক, ব্রকোলি ও বাঁধাকপির মতো সবুজ পাতাওয়ালা সবজিতে পাওয়া যায়। আর মেনাকুইনন সাধারণত নির্দিষ্ট কিছু পশুজাত খাদ্য এবং ফারমেন্টেড বা গাঁজানো খাদ্যবস্তু থেকে পাওয়া যায়। গাঁজানোর জন্য দায়ী ব্যাক্টেরিয়াই মূলত এটি উৎপাদন করে এবং অধিকাংশ ব্যক্তির ক্ষেত্রেই শরীরের অন্ত্রে পর্যাপ্ত পরিমাণে তৈরি হয়।
লক্ষণ এবং উপসর্গ
ভিটামিন কে-এর অভাব দেখা দিলে নানা ধরনের লক্ষণ ও উপসর্গ প্রকাশ পায়। এর মধ্যে রয়েছে অত্যধিক রক্তপাত। এ ছাড়া সহজে কালশিটে পড়া, নখের তলার চামড়ায় রক্তপাত এবং পাচননালীর যেকোনো স্থান থেকে রক্তপাত। পাশাপাশি ফ্যাকাসেভাব ও দুর্বলতা, গাঢ় রঙের মল অথবা রক্ত পায়খানা, প্রস্রাবে রক্ত, হাড় দুর্বল, ফুঁসকুড়ি, দ্রুত হৃৎস্পন্দন দেখা দেয়।
প্রধান কারণ
ভিটামিন কে-এর অভাব যেকোনো বয়সে হতে পারে, কিন্তু সদ্যোজাতদের মধ্যে এর ঝুঁকি বেশি। ভিটামিন কে-এর ঘাটতির অন্যান্য কারণের মধ্যে আছে অপুষ্টি, লিভারের রোগ। এ ছাড়া অপর্যাপ্ত খাদ্যগ্রহণ, ফ্যাটের শোষণে দুর্বলতা ও সংক্রমণের চিকিৎসায় ব্যবহৃত এবং অ্যান্টিকোয়াগুলেন্ট ওষুধ।
রোগ নির্ণয়
ভিটামিন কে-এর অভাব চিহ্নিত করতে রোগীর চিকিৎসা সংক্রান্ত ইতিহাস জেনে নেওয়া হয়। রক্তপাতের সময় চিহ্নিত করার জন্য কোয়াগুলেশন টেস্ট করা হয়। ভিটামিন কে-এর ঘাটতির সমস্যা নির্ণয়ের জন্য নানা পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে প্রোথ্রম্বিন টাইম, ব্লিডিং টাইম, ক্লটিং টাইম এবং অ্যাক্টিভেটেড পার্শিয়াল প্রোথ্রম্বিন টাইম।
যা খাবেন
ব্রকলি: আধা কাপ ব্রকলিতে ৮৫ মাইক্রোগ্রাম ভিটামিন কে থাকে। এটা রান্না করার নানান উপায় আছে। তবে ক্যানোলা বা জলপাইয়ের তেল দিয়ে রান্না করা ভালো। এতে খাবারে ভিটামিন কে যোগ হওয়ার পাশাপাশি বাড়তি স্বাদও যোগ হয়।
কপি: কপিকে ভিটামিন কে-এর রাজা বলা হয়। এটাকে সুপার ফুড বলা যায় কারণ এটা ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ও ফোলাট সমৃদ্ধ। এ ছাড়া এতে রয়েছে ভিটামিন ও খনিজ। ডায়াবেটিস ও স্থূলতার সমস্যা আছে এমন রোগীদের জন্য উপকারী।
পালংশাক: কাঁচার চেয়ে আধা কাপ রান্না করা পালংশাক থেকে তিন গুণ বেশি ভিটামিন কে পাওয়া যায়। এ ছাড়া পালংশাক নানা রকমের পুষ্টি উপাদান যেমন- ভিটামিন-এ, বি, ই, ম্যাগনেশিয়াম, ফোলাট এবং লৌহ সমৃদ্ধ।
লেটুস: লেটুসের এক পাতায় ৩.৬২ এমসিজি ভিটামিন কে থাকে। এ ছাড়া এতে ফাইটোনিউট্রিয়েন্ট থাকে যা মূলত অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট। এসব উপাদান শরীরকে রোগমুক্ত ও সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
সয়াবিন: দুই ধরনের ভিটামিন কে রয়েছে যথা- ভিটামিন কে-১ ও কে-২। ভিটামিন কে-১ উদ্ভিদ থেকে আসে এবং ভিটামিন কে-২ সামান্য পরিমাণে প্রাণিজ উৎস এবং গাঁজানো খাবার যেমন- পনির থেকে আসে।
কলি