পেটে গ্যাস জমা হওয়া একটি সাধারণ সমস্যা। এটা থেকে বড় ধরনের কোনো ক্ষতি হয় না। নানা কারণে এটি হতে পারে। মাই উপচার অবলম্বনে জানাচ্ছেন ফখরুল ইসলাম
পেটে গ্যাস কী
মানুষের পেটের বায়ু সৃষ্টি হয় পরিপাক বা হজমের নালিতে (গ্যাস্ট্রোইন্টেস্টিন্যাল ট্র্যাক্ট)। পেটে থাকা জীবাণু যখন খাবার ভাঙতে শুরু করে তখন গ্যাস জমে। আবার অনিচ্ছাকৃতভাবে বাতাস গিলে ফেলার কারণে এটা হতে পারে। ফলে পেট ফুলে যায়। অনেক সময় ঢেঁকুর সৃষ্টি হয়। অন্ত্রে প্রায় ২০০ এমএল গ্যাস থাকে। যেখানে প্রায় ৬০০ থেকে ৭০০ এমএল গ্যাস প্রতিদিন শরীর থেকে বাতকর্ম রূপে বেরিয়ে যায়। পেট ফাঁপা একটা স্বাভাবিক শারীরবৃত্তীয় প্রতিক্রিয়া। পেটে বায়ুর পরিমাণ ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিতে ভিন্ন ভিন্ন ধরনের হয়। এটা অস্বস্তিকর এবং লজ্জাকর হতে পারে। পেটের বায়ুতে হাইড্রোজেন, মিথেন এবং কার্বন ডাই-অক্সাইডের মতো গ্যাস থাকে।
পেটে গ্যাসের উপসর্গ
অত্যধিক আন্ত্রিক গ্যাসের সৃষ্টি হলে নানা ধরনের উপসর্গ দেখা দেয়।
যেমন-
ঢেঁকুর তোলা: প্রধানত পরিপাক (হজম) নালির ওপরের অংশগুলোয় বিশেষ করে পাকস্থলী এবং ক্ষুদ্র অন্ত্র অত্যধিক বায়ু জমা থেকে এটা ঘটে।
পেট ফাঁপা: এটা প্রধানত বৃহদন্ত্রে গ্যাস বা বায়ু জমার কারণে হয়। প্রধান কারণ হলো ব্যাকটেরিয়া দ্বারা গেঁজিয়ে ওঠা খাবার বা উদ্ভিজ্জ তন্তু (ফাইবার) অথবা মিশ্রিত কার্বোহাইড্রেট (শর্করা) ভাঙা। কোনো কোনো সময় খাবারের অসম্পূর্ণ হজমের কারণে গ্যাস সৃষ্টি হতে পারে।
পেট ফুলে ওঠা: এটা আন্ত্রিক গ্যাসের খুব বেশি জমা হওয়া ছাড়াই পেট ভরা ভরা লাগার একটা অনুভূতি। অনেকে প্রায় সময়ই পেটভার অনুভব করেন এবং সৃষ্ট গ্যাস ঢেঁকুর তোলা বা বাতকর্মের দ্বারা বের করতে সক্ষম হন না।
পেটে গ্যাস হওয়ার কারণ
পেটে গ্যাসের প্রধান কারণ হলো খাবার। কিছু খাবার অত্যধিক আন্ত্রিক গ্যাস সৃষ্টি করে। যেমন- ডাল, বিন, বাঁধাকপি, ফুলকপি, ব্রোকোলি, ব্রাসেল স্প্রাউটসের মতো কপি জাতীয় শাকসবজি, দুগ্ধজাত খাবার ইত্যাদি। এ ছাড়া ফ্রাক্টোজের মতো কার্বোহাইড্রেট অথবা সরবিটলের মতো চিনির বিকল্পগুলো, সোডা এবং বিয়ারের মতো বায়ুভরা পানীয়, মদ, আলু এবং ভাতের মতো শ্বেতসারজাতীয় খাবার। পাশাপাশি চুইং গাম এবং ধূমপান থেকেও এটা হতে পারে।
এসব ছাড়াও কখনো কখনো কিছু রোগের কারণে পেটে গ্যাস জমতে পারে। যেমন প্যানক্রিয়াটাইটিস। এটা প্যানক্রিয়াসের (অগ্ন্যাশয়) একটা প্রদাহ।
জিইআরডি বা গ্যাস্ট্রোএসোফেজিয়াল রিফ্লাক্স ডিজঅর্ডার থেকেও এটা হতে পারে। এই রোগ হলে পাকস্থলীর খাবারগুলো খাদ্যনালির মধ্যে উল্টো দিকে বেয়ে এসে অত্যধিক উদ্গার বা ঢেঁকুর তোলার কারণ ঘটায়।
ডায়াবেটিসের কারণেও এটা হতে পারে। দীর্ঘস্থায়ী উচ্চ রক্ত শর্করা বিলম্বিত মলত্যাগের কারণ সৃষ্টি করে, যা একটা পেটভরা থাকার অনুভূতি দেয়। পাশাপাশি এটা পেট ফাঁপা এবং গ্যাস উৎপাদন করে। পেপটিক আলসার হলে পাকস্থলী বা অন্ত্রগুলোয় সুরক্ষামূলক পর্দার ক্ষতির কারণে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। সেখান থেকেও পেট ফাঁপা হতে পারে।
পেটে গ্যাসের প্রতিকার
পেট ফাঁপার প্রতিকার হতে পারে ব্যায়াম। নিয়মিত ব্যায়াম করলে পেটের নানা সমস্যা, পেট ফাঁপা কিংবা কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয় সহজেই। হজম ভালো হয় বলে মলত্যাগও সহজ হয়। মানসিক চাপ কমে অনেকটাই। তাই নিয়মিত ব্যায়ামের অভ্যাস করা জরুরি।
পেট ফাঁপা দূর করতে প্রতিদিনের খাবারের দিকে নজর রাখা জরুরি। পেটের সমস্যা ডেকে আনতে পারে এমন খাবার খাওয়া এড়িয়ে চলতে হবে। কিছু খাবার আছে যেগুলো পেটের সমস্যা বাড়িয়ে তোলে। বাদাম, তৈলাক্ত খাবার, পনির, শিম ইত্যাদি সহ্য হয় না অনেকের। তাদের এসব খাবার এড়িয়ে চলা উচিত। কমলা, কফি, চা, টমেটো এসব খেলে যদি পেট ফাঁপার সমস্যা দেখা দেয় তবে তা বাদ দিন।
মদ্যপান কিংবা ধূমপান সবসময়ই শরীরের জন্য খারাপ। তাই এই অভ্যাস কখনো গড়ে তোলা উচিত নয়। এরপরও যদি ধূমপান বা মদ্যপানের অভ্যাস থাকে তবে বাদ দিন।
অনেকে তাড়াহুড়ো করে খাবার খান। এটি ঠিক নয়। ধীরে ধীরে ভালো করে চিবিয়ে খাবার খান। এতে পেটে বাতাস ঢুকে পেট ফাঁপার সমস্যা হবে না। কখনোই গোগ্রাসে খাবার গিলবেন না। অতিরিক্ত লবণ দেওয়া খাবার, ভাজাভুজি, চিপস, আচার যতটা সম্ভব কম খাবেন; পেট ফাঁপার সমস্যার জন্য ততটাই ভালো। চেষ্টা করুন সবসময় লবণ কম খেতে।
অনেকের পেটেই দুধ সহ্য হয় না। দুধ বা দুগ্ধজাতীয় খাবার হজম হতে চায় না অনেকের। এ জাতীয় খাবার খেলে যদি পেটে গ্যাস জমে তবে তা এড়িয়ে চলুন। দুধের বদলে দই বা সয়া মিল্ক খেতে পারেন।
অনেকে একটুতেই ওষুধ খেয়ে নেন। যেকোনো অসুখের ক্ষেত্রেই চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া ওষুধ খাওয়া ঠিক নয়। তাই পেট ফাঁপার সমস্যায়ও নিজে থেকে কোনো ওষুধ খাবেন না। বরং ওষুধ যদি খেতেই হয় তবে চিকিৎসকের পরামর্শ মেনে খান।
কলি