একজন মানুষের সুস্থ থাকার অন্যতম নিয়ামক হলো ঘুম। স্বাভাবিক প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন কমপক্ষে সাত থেকে আট ঘণ্টা ঘুমানো প্রয়োজন। দিনে ছয় ঘণ্টার কম ঘুমালে তা স্বাস্থ্যহানির কারণ হতে পারে। তবে বয়স অনুযায়ী শরীরে ঘুমের চাহিদা ভিন্ন হয়। কেয়ার হসপিটালস অবলম্বনে জানাচ্ছেন মো. রাকিব
কারও যদি ঘুমাতে নিয়মিত সমস্যা হয়, তবে ধরে নিতে হবে তার অনিদ্রা রোগ হয়েছে। অনিদ্রার আরও কিছু লক্ষণ আছে। যেমন রাতে খুব ঘন ঘন জেগে ওঠা, রাতে ঘুম থেকে জেগে ওঠার পর ঘুমাতে অসুবিধা, খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠা ইত্যাদি। এ ছাড়া রাতে ঘুমের পরে অস্বস্তি বোধ করা বা ভালোভাবে বিশ্রাম না পাওয়া, দিনের বেলা ক্লান্তি বা কম শক্তি, কাজে মনোযোগ দিতে সমস্যা ইত্যাদি। পাশাপাশি বিরক্তি উদ্বেগ ও বিষণ্নতা, একাগ্রতা বা ঘুমের অভাবের কারণে ত্রুটি বা দুর্ঘটনা বেড়ে যাওয়া, টান মাথাব্যথা, ঘুমে ব্যাঘাত ঘটার কারণে গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল উপসর্গ যেমন বদহজম বা পেটে অস্বস্তি, ঘুম নিয়ে ক্রমাগত উদ্বেগ বা উদ্বেগ।
অনিদ্রার কারণ কী?
নানা কারণে অনিদ্রা দেখা দিতে পারে। যেমন-
চাপ এবং উদ্বেগ: স্ট্রেস, উদ্বেগ, বিষণ্নতা ঘুমিয়ে পড়া বা ঘুমিয়ে থাকতে অসুবিধা সৃষ্টি করতে পারে।
খারাপ ঘুমের অভ্যাস: অনিয়মিত ঘুমের সময়সূচি, দেরিতে ঘুমানো, ঘুমানোর সময় অসংগতিপূর্ণ রুটিন, দিনের বেলা অতিরিক্ত ঘুমানো বা শোবার আগে উদ্দীপক কার্যকলাপে লিপ্ত হওয়া শরীরের স্বাভাবিক ঘুম-জাগরণ চক্রকে ব্যাহত করতে পারে।
শারীরিক সমস্যা: কিছু শারীরিক সমস্যা যেমন দীর্ঘস্থায়ী ব্যথা, হাঁপানি, বাত, অ্যালার্জি, গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল সমস্যা, স্নায়বিক ব্যাধি এবং হরমোনের ভারসাম্যহীনতার (যেমন- থাইরয়েড সমস্যা) কারণে ঘুমে ব্যাঘাত ঘটতে পারে।
ক্যাফেইন, নিকোটিন এবং অ্যালকোহল: ঘুমানোর সময় ক্যাফিন বা নিকোটিনের মতো উদ্দীপক গ্রহণ করা বা অতিরিক্ত অ্যালকোহল ব্যবহার করা ঘুমের গুণমানকে প্রভাবিত করতে পারে।
পরিবেশগত ফ্যাক্টর: কোলাহলপূর্ণ বা অস্বস্তিকর ঘুমের পরিবেশ, অত্যধিক আলো, অতিরিক্ত তাপমাত্রা বা শিফটের কাজের কারণে সৃষ্ট সমস্যা ঘুমিয়ে থাকার ক্ষমতাকে নষ্ট করতে পারে।
দুর্বল ঘুমের স্বাস্থ্যবিধি: নিয়মিত ব্যায়ামের অভাব, খারাপ ডায়েট, ঘুমানোর আগে অত্যধিক স্ক্রিন টাইম এবং নীল আলো নির্গত ইলেকট্রনিক ডিভাইস ব্যবহার ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি করে।
বয়স এবং বংশগত: বয়স বাড়লে এমনিতেই ঘুমের সময় কমে আসে। অন্যদিকে বংশগত কারণেও অনেকের ঘুমে সমস্যা থাকতে পারে।
অনিদ্রা দূর করার উপায়
অনেকে ঘুমের সমস্যা দূর করতে ঘুমের ওষুধ খেয়ে থাকেন। এটি স্বাস্থ্যকে আরও ক্ষতির দিকে ঠেলে দেয়। স্লিপিং পিল বা ঘুমের বড়ি খেয়ে ঘুমানোর প্রবণতা একসময় অভ্যাসে পরিণত হয়। ফলে স্লিপিং পিল সেবন না করলে স্বাভাবিকভাবে আর ঘুম আসে না।
চলুন দেখে নিই ঘুমের সমস্যা দূর করার কয়েকটি ঘরোয়া উপায়-
রাত জেগে কাজ না করা: যারা রাত জেগে কাজ করেন তারা অনেক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যায় পড়েন। রাতে কাজ করে তারা দিনে ঘুমিয়ে রাতের ঘুমের অভাব পুষিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। কিন্তু তা যথেষ্ট নয়। কারণ সাধারণত তারা দিনের বেলার ঘুম কখনোই তেমন গভীর হয় না এবং তা রাতের ঘুমের সুফল দিতে পারে না।
প্রতিদিন একই সময় ঘুমাতে যাওয়া: প্রতিদিন রাতে নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমাতে হবে এবং সকালে একটি নির্দিষ্ট সময়ে জাগতে হবে। প্রতিদিন একই সময়ে ঘুম থেকে ওঠা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এটা ঘুমানোর সময়কালকে নিয়মিত রাখে এবং শরীরও সময়ের সঙ্গে অভ্যস্ত হতে পারে।
চা-কফি থেকে দূরে থাকা: চা-কফি খেলে অনেকেরই ঘুমের সমস্যা হয়। শুধু চা-কফি নয়, যেকোনো কোমল পানীয়ও ঘুমের সমস্যার কারণ হতে পারে।
বিছানায় ফোন ল্যাপটপ নয়: আমরা অনেকেই বিশ্রাম নিতে কিংবা ঘুমের আগে ফেসবুক থেকে ঢুঁ মেরে আসি। কিন্তু এতে ঘুম আসার পরিবর্তে মস্তিষ্ককে উত্তেজিত করে চোখ থেকে ঘুম তাড়িয়ে দেয়। তাই ঘুমের সমস্যা দূর করতে চাইলে রাতে দীর্ঘসময় ধরে মোবাইল, কম্পিউটার, ল্যাপটপ ইত্যাদি ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন।
খাদ্যাভ্যাস: আমরা অনেকেই জানি না, ঘুমের সমস্যার পেছনে খাদ্যাভ্যাসের ভূমিকা অনেক। যারা অনিদ্রা রোগে ভুগছেন তাদের জন্য খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা ঘুমের জন্য সহায়ক হতে পারে।
ম্যাগনেসিয়ামযুক্ত খাবার: ম্যাগনেসিয়াম হলো এমন একটি খনিজ পদার্থ যা পেশিকে শিথিল করতে এবং স্ট্রেস কম করতে সাহায্য করে। ডার্ক চকলেট, বাদাম এবং অ্যাভোকাডোয় ম্যাগনেসিয়াম আছে। রাতে এগুলো খেলে ভালো উপকার পাবেন।
মেলাটোনিনযুক্ত খাবার: মেলাটোনিন শুধু ঘুম আসতে নয়, ঘুম দীর্ঘস্থায়ী করতেও সাহায্য করে। আমরা সালাদ হিসেবে যা খাই যেমন- টমেটো, শসা, ব্রোকোলি, সরিষা, আখরোট, বেদানা ইত্যাদিতে মেলাটোনিন থাকে। প্রতিদিনের খাবারে সবজিগুলো যোগ করলে ঘুমের সমস্যা কেটে যাবে।
কলা: অনিদ্রা কমাতে কলা কার্যকর। এতে আছে ম্যাগনেশিয়াম ও পটাশিয়াম যা মাংসপেশি শিথিল করে দ্রুত ঘুম আনতে সাহায্য করে।
গরম দুধ: অনিদ্রা দূর করতে গরম দুধের কোনো বিকল্প নেই। গরম দুধে থাকে ট্রিপটোফ্যান নামে এক ধরনের অ্যামাইনো অ্যাসিড। যা সিরোটোনিন হিসেবে কাজ করে আর এই সিরোটোনিন ঘুম আনতে খুবই সহায়ক।
মধু: মধুকে বলা হয় সর্বরোগের মহৌষধ। এক চামচ মধু ভালো ঘুমের জন্য খুবই সহায়ক। কেননা এটি শরীরে ইনসুলিনের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে। তাছাড়া মানসিক চাপ সৃষ্টিকারী হরমোন কমাতেও মধুর জুড়ি নেই।
কলি