ফুসকুড়ি হলো ত্বকের রঙে অস্বাভাবিক পরিবর্তন। এগুলো সাধারণত ত্বকের প্রদাহ থেকে আসে। এর নানা কারণ থাকতে পারে। যেমন- একজিমা, গ্রানুলোমা অ্যানুলারে, লাইকেন প্ল্যানাস এবং পাইটিরিয়াসিস রোজের মতো ত্বকের অবস্থার কারণে সৃষ্টসহ অনেক ধরনের ফুসকুড়ি রয়েছে। ওয়েব এমডি অবলম্বনে জানাচ্ছেন মো. রাকিব
ফুসকুড়িগুলোর লক্ষণ
ত্বকের ফুসকুড়ির লক্ষণগুলো ফুসকুড়িগুলোর কারণ এবং ধরনের ওপর নির্ভর করে। তবে কিছু সাধারণ লক্ষণের মধ্যে রয়েছে ফোস্কা পড়া, লাল ভাব, খসখসে বা শুষ্ক ত্বক, ফোলা বা প্রদাহ, ত্বকে চুলকানি, ব্যথা, ভাঙা চামড়ায় সংক্রমণ, বৃত্তাকার আকৃতি নিয়ে ত্বকে লাল বর্ণ ধারণ ইত্যাদি।
ফুসকুড়ির কারণ
নানা কারণে ত্বকে ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে ভাইরাল বা ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ, রোসেসিয়া বা একজিমার মতো ত্বকের অবস্থা, মানসিক চাপ, অ্যালার্জি, জ্বর বা হাঁপানির ব্যক্তিগত এবং পারিবারিক ইতিহাস, উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ এবং বাতের চিকিৎসাসহ কিছু নির্দিষ্ট ওষুধের সঙ্গে অ্যালার্জি। এ ছাড়া হেপাটাইটিস বি বা হেপাটাইটিস সির মতো রোগ থেকে ফুসকুড়ি
হতে পারে।
ফুসকুড়ি নির্ণয়
ত্বকের ফুসকুড়ি নির্ণয় বেশ সহজ। ডাক্তার ত্বক পরীক্ষা করে এবং লক্ষণগুলো সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করে রোগ নির্ণয় করতে পারেন। তবে প্রয়োজনবোধে কিছু পরীক্ষা করা যেতে পারে। এর মধ্যে আছে স্কিন বায়োপসি। আক্রান্ত স্থান থেকে কিছুটা ত্বক নেওয়া হয়। সেটা ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া পরীক্ষার জন্য ল্যাবে পাঠানো হয়।
রক্ত পরীক্ষা। ডাক্তার রোগীর রক্তে অ্যান্টিবডিগুলো দেখে রোগ নির্ণয় করতে পারেন।
এলার্জি পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় রোগী কতটা এলার্জির প্রতি সক্রিয় তা দেখা হয়।
ফুসকুড়ির চিকিৎসা
চিকিৎসা সাধারণত ফুসকুড়িগুলোর কারণের ওপর নির্ভর করে। তবে সাধারণ কিছু চিকিৎসার মধ্যে আছে ফুসকুড়ি নিরোধক ক্রিম এবং মলম। এ ছাড়া স্টেরয়েড দিয়েও চিকিৎসা চলে। এটা চুলকানি এবং ফুলে যাওয়া ত্বকে সমস্যা কমাতে সহায়তা করে।
ইনজেকশন। ইনজেকশনগুলো নির্দিষ্ট ত্বকের অবস্থা থেকে আসা ফুসকুড়িগুলোর চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হয়।
এটি বেশির ভাগ রোগীর চুলকানি দ্রুত পরিষ্কার করে। কর্টিসোন ইনজেকশনগুলো আরও গুরুতর ক্ষেত্রেও ব্যবহার করা যেতে পারে।
ফটোথেরাপি (লাইট থেরাপি)। এটি কার্যকর চিকিৎসা, যা একজিমা আক্রান্ত রোগীকে সহায়তা করে। ফটোথেরাপি গুরুতর ক্ষেত্রে আক্রান্ত ব্যক্তিদের চিকিৎসার জন্য ব্যবহার করা হয়। বিশেষ লাইট থেকে অতিবেগুনি এ (ইউভিএ) বা অতিবেগুনি বি (ইউভিবি) ব্যবহার করে রোগের চিকিৎসা করা হয়।
ফটোথেরাপির কিছু ঝুঁকি আছে। ত্বক জ্বলে যাওয়া, শুষ্ক ত্বক, চুলকানি এবং ত্বকের সম্ভাব্য অকাল বার্ধক্য এর মধ্যে অন্যতম।
ফুসকুড়িগুলোর জটিলতা
ত্বকে ফুসকুড়িগুলো সাধারণ চিকিৎসায় ভালো হয়ে যায়। তবে এরপরও কিছু সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এর মধ্যে আছে সংক্রমণ। ফুসকুড়ির স্থানে চুলকালে সেখান দিয়ে ব্যাকটেরিয়ার মতো রোগজীবাণু প্রবেশ করে। ফলে সংক্রমণ হতে পারে।
অ্যানাফিল্যাক্সিস। ত্বকের ফুসকুড়ি ছাড়াও কিছু রোগীর মারাত্মক অ্যালার্জি হতে পারে, যা প্রাণঘাতী। এটি অ্যানাফিল্যাক্সিস নামেও পরিচিত। অ্যানাফিল্যাক্সিসে ত্বকে চরম ফোলা ভাব ঘটে।
ফুসকুড়ি প্রতিরোধের উপায়
ফুসকুড়ি প্রতিরোধ করতে চাইলে মানসিক চাপ কমাতে হবে। উল এবং রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে। নিয়মিত ত্বক ময়েশ্চারাইজ করতে হবে। অধিক তাপমাত্রা বা আর্দ্রতা এড়িয়ে চলতে হবে। ঘাম এবং অতিরিক্ত গরম থেকে দূরে থাকতে হবে।
ঘরোয়া সমাধান
শিশুর তাপজনিত ফুসকুড়ি থেকে রক্ষা পেতে বরফের সেঁক খুব কার্যকর। গামলায় ঠাণ্ডা পানি নিয়ে বা আইস ব্যাগ দিয়ে আক্রান্ত স্থানে এক-দুই মিনিট করে দিনে কয়েকবার সেঁক দিন।
ঘরোয়া সমাধান হিসেবে কাঁচা শসাবাটা ব্যবহার করে দেখতে পারেন। কাঁচা শসা বেটে বা পেস্ট করে আক্রান্ত স্থানে লাগিয়ে রেখে কিছুক্ষণ পর ধুয়ে ফেলুন। দিনে দুই- তিনবার এমন করুন।
নারকেল তেলের সঙ্গে চায়ের তেল (টি ট্রি অয়েল) মিশিয়ে ব্যবহার করলে দারুণ উপকার পাওয়া যায়। এই দুটি তেলের মিশ্রণ ত্বকে লাগিয়ে রেখে ২০-৩০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন।
ঘৃতকুমারীর (অ্যালোভেরা) নির্যাসের নানাবিধ উপকারিতার মধ্যে ফুসকুড়ির ঘরোয়া সমাধানও খুব কার্যকর। এতে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি ও অ্যান্টিসেপটিক উপাদান। ফলে অ্যালোভেরার রস আক্রান্ত স্থানে লাগালে হিট র্যাশ কমে যায়।
কলি