![মানবদেহের অক্সিজেনেই চলবে পেসমেকার](uploads/2024/04/05/1712294607.a.jpg)
মানবদেহের অক্সিজেন দিয়েই মেডিকেল ইমপ্ল্যান্ট ব্যাটারি চার্জ হবে। আর এই ইমপ্ল্যান্ট ব্যাটারি ব্যবহার করা যাবে হৃৎস্পন্দন চালু রাখার সহায়ক কৃত্রিম পেসমেকারে। সম্প্রতি এমন ব্যাটারি আবিষ্কারের দাবি করেছেন চীনের এক দল গবেষক।
পেসমেকার ও গ্যাস্ট্রিক স্টিমুলেটরের মতো বিভিন্ন মেডিকেল ইমপ্ল্যান্ট মানব জীবনকে উন্নত করেছে। এসব ইমপ্ল্যান্ট ব্যাটারিতে চলে। এ ধরনের ডিভাইসের সমস্যা হচ্ছে ব্যাটারির চার্জ শেষ হয়ে গেলে নতুন ব্যাটারি বসাতে হয়, সেজন্য পুনরায় অস্ত্রোপচারের প্রয়োজন পড়ে।
গবেষকরা এই ব্যাটারি পরিবর্তনে মানবদেহে বারবার কাটাছেঁড়া এড়ানোর উপায় খুঁজছিলেন। এর অংশ হিসেবে কাটাছেঁড়া ছাড়া ইমপ্ল্যান্টযোগ্য ব্যাটারি তৈরি করে, মানবদেহে অস্ত্রোপচার বন্ধ করার একটি সম্ভাব্য পদ্ধতি আবিষ্কারে দাবি করেছে চীনের গবেষকরা। এই ব্যাটারি ইতোমধ্যে দেহের অভ্যন্তরে থাকা অক্সিজেন ব্যবহার করে নিজেকে ক্রমাগত চার্জ করে যাচ্ছে।
গত ২৭ মার্চ বিজ্ঞানবিষয়ক সাময়িকী কেম (CHEM) এই বিষয়ে গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছে। ল্যাবের ইঁদুরের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে গবেষকরা দেখিয়েছেন, এদের দেহের ভেতরে ব্যাটারিটি নিরাপদেই কাজ করেছে। ফলে মানুষের শরীরেও বিভিন্ন ডিভাইসে এই ব্যাটারি কাজ করার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে।
গবেষকরা এ বিষয়ে জানিয়েছেন, ‘মানবদেহের অক্সিজেন ক্যাথোড হিসেবে কাজ করতে পারে। এটি ব্যাটারির এমন এক ইলেকট্রোড, যা বিদ্যুৎ প্রবাহের সুবিধা দেয়। আর এটি দেহের মেটাবলিজম থেকে ক্রমাগত সংগ্রহ করা যেতে পারে।’
সে তত্ত্বের ভিত্তিতে গবেষকরা স্বর্ণ ও সোডিয়াম থেকে তৈরি ইলেকট্রোড দিয়ে একটি ইমপ্ল্যান্টযোগ্য ব্যাটারি বানিয়েছেন। এই উভয় রাসায়নিকই মানবদেহের জন্য নিরাপদ। রাসায়নিকগুলো বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে দেহের অক্সিজেনের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে। যেখানে ব্যাটারির চারপাশের আবরণ হিসেবে কাজ করে একটি প্লাস্টিকের স্তর।
পরবর্তী ধাপে গবেষকরা ইঁদুরের ত্বকের নিচে ‘সোডিয়াম-অক্সিজেন’ ব্যাটারি নামের একটি যন্ত্র স্থাপন করেন। এটি দিয়ে এসব ব্যাটারি কী পরিমাণ বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে তা ট্র্যাক করেছেন। এর ফলাফলে দেখা যায়, ব্যাটারিগুলোয় ১ দশমিক ৩ থেকে ১ দশমিক ৪ ভোল্ট আউটপুট তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি গবেষকরা ইঁদুরের শরীরে তাপমাত্রার পরিবর্তন পরিমাপ করেছেন।
গবেষকরা বলছেন, ইমপ্ল্যান্টযোগ্য উন্নত মেডিকেল ডিভাইসে বিদ্যুৎ সরবরাহের ক্ষেত্রে নতুন ব্যাটারির যথেষ্ট নয়। তবে এটি নতুন সম্ভাবনার পথ দেখাচ্ছে, যা দেহের ভেতরে থাকা অক্সিজেন ব্যবহার করে নিরাপদ ব্যাটারির সক্ষমতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।
এক বিবৃতিতে চীনের তিয়ানজিন ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির গবেষক জিজেং লিউ বলেন, ‘আপনি চিন্তা করলে দেখবেন, অক্সিজেন আমাদের জীবনের একটি উৎস। আমরা দেহে অক্সিজেনের সুবিধা নিতে পারলে নতুন এই ব্যাটারির আয়ু প্রচলিত ব্যাটারিগুলোর মতো সীমিত হবে না।’
এখন গবেষকদের পরবর্তী পদক্ষেপ হচ্ছে এ ব্যাটারির আরেকটি প্রতিরূপ ব্যাটারি তৈরি করা। যেটি আরও শক্তিশালী ও মানবদেহের জন্য নিরাপদ হবে। গবেষকরা ধারণাটিকে সফলভাবে বাস্তবায়নের পাশাপাশি এর বাণিজ্যিকীকরণ করতে পারলে এই ধরনের রোগীদের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
এ.জে/জাহ্নবী