নাসার মহাকাশ যান নিউ হরাইজনস বামন গ্রহ প্লুটোর পাশ দিয়ে ২০১৫ সালে উড়ে যায়। এ সময় মহাকাশ যানটি বামন গ্রহ প্লুটোর একটি বিস্ময়কর ছবি তুলে পাঠায়। ওই ছবিতে গ্রহটির পৃষ্ঠে হার্ট বা হৃৎপিণ্ড আকৃতির একটি ভৌগলিক গঠন পরিলক্ষিত হয়, যা গ্রহের বিশাল নিম্ন অঞ্চল। এটির নাম স্পুটনিক প্ল্যানিটিয়া। মেক্সিকোর আকারের এই অঞ্চল প্লুটোর একটি গোলার্ধজুড়ে বিস্তৃত। স্পুটনিক প্ল্যানিটিয়া সম্ভবত কোনো ধাক্কার ফলে তৈরি হয়েছে। এই আবিষ্কার নিয়ে কৌতূহল সৃষ্টি হয় মানুষ ও বিজ্ঞানীদের মাঝে। গবেষকরা মনে করেন, তারা এই মহাজাগতিক ভালোবাসার চিহ্নের উৎপত্তি উদ্ঘাটন করেছেন। চলতি মাসের ১৫ তারিখে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ন্যাচার অ্যাস্ট্রোনমিতে এ সম্পর্কিত গবেষণা দলের অনুসন্ধানটি প্রকাশ পেয়েছে।
‘টমবাঘ রেজিও’ নামে পরিচিত এ চিহ্নটি আংশিকভাবে ‘স্পুটনিক প্ল্যানিটিয়া’ নামের অঞ্চল নিয়ে গঠিত, যা দেখতে একটি বিশালাকার পানির ফোটার মতো। আর এর আকার ইউরোপ বা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় এক চতুর্থাংশের সমান।
প্লুটোতে এ অনন্য ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য কীভাবে তৈরি হলো? সে বিষয়টি জানতে সুইজারল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব বার্ন ও যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব অ্যারিজোনার গবেষকরা উন্নত কম্পিউটার সিমুলেশন প্রযুক্তি ব্যবহার করেছেন।
এর আগে বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেন, যুক্তরাষ্ট্রের অ্যারিজোনা অঙ্গরাজ্যের সমান কোনো বস্তুর সঙ্গে সংঘর্ষে স্পুটনিক প্ল্যানিটিয়া অঞ্চলটি তৈরি হয়েছে। এ ঘটনা প্লুটোর আদিকালে ঘটেছে বলে ধারণা করা হয়। যার সঙ্গে এর বর্তমান রূপেও অনেক সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
ওই ঘটনা কোনো সোজা সংঘর্ষ নয় বরং আঁচড় কেটে যাওয়ার মতো আঘাত থেকে এসেছে। এর থেকে ধারণা পাওয়া যায়, কেন স্পুটনিক প্ল্যানিটিয়ার দীর্ঘ আকৃতি ও এটি বিষুবরেখা বরাবর আছে। বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ প্রতিবেদনে লিখেছে, যে বস্তুটি প্লুটোকে আঘাত করেছিল তা কোণ ঘেঁষে ও তুলনামূলক ধীরে, যা প্লুটোকে খুব গভীরে আঘাত না করে বা এর বরফের ভূত্বক না গলিয়ে, প্লুটোর সঙ্গে একেবারে মিশে গিয়েছে।
অনুসন্ধানটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি প্লুটোর ভেতরের অবস্থা নিয়ে আগের বিভিন্ন প্রচলিত ধারণাকে চ্যালেঞ্জ করেছে। এতদিন বিজ্ঞানীদের প্রচলিত ধারণা ছিল, প্লুটোর বরফ থাকা পৃষ্ঠের নিচে মহাসাগর লুকিয়ে থাকতে পারে। ঠিক যেমনটি ধারণা করা হয় দূরের বিভিন্ন মহাকাশীয় বস্তুর ক্ষেত্রে।
নতুন এ গবেষণায় আরও ধারণা পাওয়া যায়, প্লুটোতে যদি আসলেই মহাসাগর থেকে থাকে, তবে এই সাগরের আকার অনেক ছোট বা এর অস্তিত্ব না থাকার মতোই। গ্রহটির সিংহভাগ পৃষ্ঠ মিথেন বরফে আবৃত হলেও স্পুটনিক প্লানিটিয়া মূলত ঢেকে আছে নাইট্রোজেন বরফে। এলাকাটির উচ্চতাও এর আশপাশের এলাকাগুলোর চেয়ে চার কিলোমিটার কম। যার প্রভাবে সেখানে নাইট্রোজেন বরফ জমা হতে পারে।
তবে ঠিক কী কারণে স্পুটনিক প্ল্যানিটিয়া অঞ্চলটি প্লুটোর বিভিন্ন মেরুর দিকে প্রবাহিত না হয়ে বিষুবরেখার কাছে অবস্থান করছে, তা বিজ্ঞানীদেরও ধাঁধার মধ্যে ফেলেছে।
এ.জে/জাহ্নবী