ঢাকা ১৭ বৈশাখ ১৪৩২, বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫
English
বুধবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৫, ১৭ বৈশাখ ১৪৩২

যেমন ছিলেন নিয়ান্ডারথাল নারীরা

প্রকাশ: ০৩ মে ২০২৪, ১২:১০ পিএম
আপডেট: ০৩ মে ২০২৪, ১২:১১ পিএম
যেমন ছিলেন নিয়ান্ডারথাল নারীরা
ছবি : সংগৃহীত

আধুনিক মানুষের খুবই নিকটাত্মীয় ৭৫ হাজার বছর আগের নিয়ান্ডারথাল এক নারীর মুখের অবয়ব পুনরায় তৈরি করেছেন কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানীরা। সেই নারীর ছবি বৃহস্পতিবার (২ মে) বিবিসি এক প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, এটি নিয়ান্ডারথাল এক নারীর মাথার খুলির ছিন্নভিন্ন হয়ে যাওয়া অংশ থেকে তৈরি করা হয়েছে। গবেষকরা শুরুতে হাড়ের অংশগুলোকে একত্রিত করেছেন। পরে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের জীবাশ্ম চিত্রশিল্পী এর ওপর ভিত্তি করে ত্রিমাত্রিক কাঠামো (থ্রিডি মডেল) তৈরি করেন।

যে মাথার খুলির ওপর ভিত্তি করে মডেলটি তৈরি করা হয়েছে, সেটি পাওয়া গেছে ইরাকের কুর্দিস্তানের শানিদার নামের এক গুহায়। ২০১৫ সালে কুর্দি কর্তৃপক্ষ ব্রিটিশ গবেষক দলকে আমন্ত্রণ জানালে তারা এই নিয়ান্ডারথাল নারীর কঙ্কালের সন্ধান পান। এর নাম দেওয়া হয়েছিল ‘শানিদার জেড’। এর আগে ১৯৫০-এর দশকে একই স্থানে ১০ জন নিয়ান্ডারথাল পুরুষ, নারী ও শিশুর দেহাবশেষ পাওয়া গিয়েছিল।

এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটির জীবাশ্ম-নৃতত্ত্ববিদ ড. এমা পোমেরয় বিবিসিকে বলেন, ‘আমি মনে করি, নিয়ান্ডারথালরা আসলে কারা, তা বুঝতে সহায়তা করবে এ ছবি।’

আর এই পুরো চিত্রটি কীভাবে তৈরি করা হয়- তার ওপর নির্ভর করে বিবিসি স্টুডিও ‘সিক্রেটস অব দ্য নিয়ান্ডারথাল’ নামের একটি ডকুমেন্টারিও তৈরি করেছে। জনপ্রিয় ওটিটি প্ল্যাটফর্ম নেটফ্লিক্সে এটি প্রকাশ করা হয়।

হোমো নিয়ান্ডারথাল হলো- আধুনিক মানুষ হোমো স্যাপিয়েন্সের টিকে থাকা সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি বিবর্তনীয় কাজিন। ৪০ হাজার বছর আগে এই প্রজাতির বিলুপ্তি ঘটে। সূত্র: বিবিসি

হাবলের ৩৫ বছর পূর্তি ঈগল নেবুলার চোখধাঁধানো নতুন ছবি

প্রকাশ: ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১০:০৬ এএম
হাবলের ৩৫ বছর পূর্তি
ঈগল নেবুলার চোখধাঁধানো নতুন ছবি
ঈগল নেবুলা বা নীহারিকার একটি অসাধারণ নতুন ছবি প্রকাশ করেছে নাসা ও ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি। ছবি: নাসা ও ইএসএ

মহাকাশে হাবল স্পেস টেলিস্কোপ স্থাপনের ৩৫তম বার্ষিকী উদযাপন করছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা ও ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি (ইএসএ)। এ উপলক্ষে তারা ঈগল নেবুলা বা নীহারিকার একটি অসাধারণ নতুন ছবি প্রকাশ করেছে। ছবিতে নীহারিকাটির ভেতরে মহাজাগতিক গ্যাস ও ধূলিকণার তৈরি বিশাল এক কুণ্ডলীর অংশবিশেষ দেখা যাচ্ছে। ঈগল নেবুলার এই অংশটি শেষবার হাবল টেলিস্কোপে ধারণ করা হয়েছে প্রায় দুই দশক আগে।

নাসা ও ইএসএ জানিয়েছে, ছবিতে দৃশ্যমান গ্যাস ও ধূলিকণার কুণ্ডলীটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৯ দশমিক ৫ আলোকবর্ষ। এটি মূলত আরও বড় ঈগল নেবুলার একটি ক্ষুদ্র অংশ। ঈগল নেবুলা তরুণ নক্ষত্রদের ‘নার্সারি’ হিসেবে পরিচিত। নতুন প্রকাশিত ছবিতে কমলা ও গাঢ় নীল রঙের যে আকর্ষণীয় মিশ্রণ দেখা যায়, তা মূলত হাইড্রোজেন গ্যাস ও মহাজাগতিক ধূলিকণার কারণে সৃষ্টি হয়েছে।

পুরো নীহারিকাটিকে একসঙ্গে দেখলে এর মেঘের প্রান্তগুলো উড়ন্ত শিকারি পাখির ডানার মতো মনে হয়, আর সে কারণে এর নাম দেওয়া হয়েছে ঈগল নেবুলা। নতুন ছবিতে প্রকাশিত কুণ্ডলীটিকে সেই কাল্পনিক পাখির ডানার অংশ বলে মনে হতে পারে।

সাম্প্রতিক সময়ে জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ মহাকাশের দারুণ সব ছবি তুলেছে। তবে হাবলের প্রকাশিত এই নতুন ছবি প্রমাণ করে, পুরোনো এই টেলিস্কোপটিও কর্মক্ষমতা ধরে রেখেছে। নাসা জানিয়েছে, হাবলের তোলা ছবির ডেটা প্রক্রিয়াকরণে নতুন কৌশল প্রয়োগ করার ফলে ছবিগুলো আরও বেশি স্পষ্ট ও রঙিন হয়ে উঠছে।

হাবলের ৩৫তম বার্ষিকী উপলক্ষে টেলিস্কোপটি মহাকাশের বেশ কয়েকটি পরিচিত লক্ষ্যবস্তুর ছবি নতুন করে তুলছে বা পুরোনো তথ্য নতুনভাবে বিশ্লেষণ করছে। ভিন্ন কোণ থেকে ছবি তোলা এবং উন্নত ডেটা প্রসেসিং কৌশল ব্যবহারের মাধ্যমে আরও দর্শনীয় ও রঙিন ছবি তৈরি করা সম্ভব হচ্ছে। গবেষকদের মতে, যদিও এসব ছবিতে নতুন কোনো বৈজ্ঞানিক আবিষ্কার হয়নি, তবে আগের চিত্রগুলোর তুলনায় এগুলো অনেক বেশি দৃষ্টিনন্দন। সুত্র: নাসা

নতুন রং ‘ওলো’ আবিষ্কারের দাবি বিজ্ঞানীদের

প্রকাশ: ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ০২:৪৫ পিএম
নতুন রং ‘ওলো’ আবিষ্কারের দাবি বিজ্ঞানীদের
বিজ্ঞানীরা ‘ওলো’ নামে একটি নতুন রং আবিষ্কারের দাবি করেছেন। ছবি: সংগৃহীত

বিজ্ঞানীরা ‘ওলো’ নামে একটি নতুন রং আবিষ্কারের কথা জানিয়েছেন, যা বিশ্বে এখনো পর্যন্ত মাত্র পাঁচজন ব্যক্তি দেখতে পেয়েছেন। তাদের মতে, এটি নীলচে-সবুজ রঙের একটি অত্যন্ত গাঢ় আভা। তবে এই রংটি খালি চোখে দেখা সম্ভব নয়। এর জন্য বিশেষ লেজার প্রযুক্তির মাধ্যমে উদ্দীপনা সৃষ্টি করতে হয়। গবেষকরা দাবি করেছে, এই পদ্ধতি মানুষের সাধারণ রং উপলব্ধির স্বাভাবিক সীমার বাইরে দেখার সুযোগ করে দিতে পারে। সম্প্রতি ‘সায়েন্স অ্যাডভান্সেস’ জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণাপত্রে এই তথ্য জানানো হয়েছে।

গবেষকরা ‘ওজ ভিশন সিস্টেম’ নামে একটি বিশেষ পদ্ধতি তৈরি করেছেন এই রং দেখার জন্য। এই পদ্ধতির নাম দেওয়া হয়েছে বিখ্যাত ‘উইজার্ড অব ওজ’ চলচ্চিত্রের চরিত্রদের অনুপ্রেরণায়, যারা এমেরাল্ড শহরে সবুজ কাচের চশমা পরতেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, যখন ‘ওজ’ লেজার সংকেত অতি সূক্ষ্মভাবে (মাত্র কয়েক মাইক্রন) নাড়ানো হয়, তখন অংশগ্রহণকারীরা লেজারের স্বাভাবিক রংটি দেখতে পান। তবে যখন সেই লেজার রশ্মি অত্যন্ত নির্ভুলভাবে নির্দিষ্ট কোষের ওপর ফেলা হয়, তখন তারা রংধনুর বিভিন্ন রঙের পাশাপাশি এমন কিছু অভূতপূর্ব রং দেখতে সক্ষম হন, যাকে বলা হচ্ছে ‘ওলো’। এটি মানুষের স্বাভাবিক দৃষ্টি সীমার বাইরে থাকে। গবেষণায় অংশ নেওয়া একজন গবেষক বলেছেন, এই রঙের পটভূমিতে দেখা গেছে ঘূর্ণায়মান বিন্দু ও উজ্জ্বল লাল রেখা।

‘ওলো’ আসলে কেমন রং?
গবেষকদের ভাষ্য মতে, এটি একটি অতিমাত্রায় স্যাচুরেটেড নীল-সবুজ রং, যা স্বাভাবিক রঙের সীমার বাইরে থাকে। যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার রেন এনজি বলেন, ‘আমরা শুরু থেকে ধারণা করেছিলাম এটি একটি অভূতপূর্ব রঙের অনুভূতি দেবে। তবে মস্তিষ্ক এটাকে কীভাবে গ্রহণ করবে তা জানতাম না। ফলাফল ছিল বিস্ময়কর। রংটি অবিশ্বাস্যরকম গাঢ়। ‘ওলো’ বাস্তব জগতে দেখা যেকোনো রঙের চেয়ে বেশি গাঢ়।’

গবেষণার সময় ‘ওজ’ লেজার শুধু রেটিনার ‘এম’ কোষে আলো ফেলেছে। তত্ত্ব অনুযায়ী, এটি মস্তিষ্কে এমন একটি রঙের সংকেত পাঠায় যা প্রাকৃতিক আলোতে কখনো তৈরি হয় না।

এই নতুন রংটির নাম ‘ওলো’ রাখার একটি কারণ রয়েছে। এটি বাইনারি সংখ্যা ‘০১০’ (010) কে নির্দেশ করে, যার অর্থ হলো চোখের তিনটি রঙ সংবেদনশীল কোষের (এল, এম, এস) মধ্যে শুধু ‘এম’ কোষ এই প্রক্রিয়ায় সক্রিয় ছিল। গবেষকরা জানিয়েছেন, একটি নিরপেক্ষ ধূসর পটভূমিতে দেখলে ‘ওলো’ রংটিকে অভূতপূর্ব গাঢ়ত্বের নীলচে-সবুজ বলে মনে হয়েছে।

তবে এই আবিষ্কার নিয়ে অন্য বিশেষজ্ঞরা ভিন্নমত পোষণ করেছেন। যুক্তরাজ্যের ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের দৃষ্টি বিশেষজ্ঞ জন বারবার বলেন, ‘এটি কোনো নতুন রং নয়। এটি আসলে একটি অতি গাঢ় সবুজ রং, যা শুধু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে এম কোষের উদ্দীপনার মাধ্যমে তৈরি করা সম্ভব হয়।’ তিনি এই গবেষণার গুরুত্বকে ‘সীমিত’ বলেও অভিহিত করেছেন।

ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার আরেক গবেষক জেমস ফং জানিয়েছেন, এই প্রযুক্তি বর্তমানে টেলিভিশন বা মোবাইল ফোনের পর্দায় ব্যবহারের সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ এর জন্য অত্যন্ত বিশেষায়িত লেজার ও অপটিক্যাল যন্ত্রপাতির প্রয়োজন, যা সহজে পাওয়া যায় না বা সাধারণ যন্ত্রে যুক্ত করা সম্ভব নয়। তাই আপাতত নির্বাচিত কয়েকজন ব্যক্তি এই ‘ওলো’ রংটি প্রত্যক্ষ করতে পারবেন।

বিজ্ঞানীরা আশা করছেন, এই ‘ওজ’ পদ্ধতি ভবিষ্যতে বর্ণান্ধদের দৃষ্টি অনুকরণ করতে এবং চোখের বিভিন্ন রোগ নিয়ে গবেষণার ক্ষেত্রে নির্ভুল মডেল তৈরিতে সাহায্য করতে পারে।

গভীর সমুদ্রে ক্যামেরাবন্দি কলোসাল স্কুইড

প্রকাশ: ২৭ এপ্রিল ২০২৫, ১০:২০ এএম
গভীর সমুদ্রে ক্যামেরাবন্দি কলোসাল স্কুইড
প্রথমবারের মতো গভীর সমুদ্রের অতলে ক্যামেরায় ধরা পড়েছে একটি ‘কলোসাল স্কুইড’। ছবি: সংগৃহীত

গভীর সমুদ্রের অপার রহস্য উন্মোচনে নতুন দিগন্ত খুলে দিল একটি বিরল ঘটনা। প্রথমবারের মতো গভীর সমুদ্রের অতলে ক্যামেরায় ধরা পড়েছে একটি ‘কলোসাল স্কুইড’। এই বিরল দৃশ্য ধারণ করেছে একটি আন্তর্জাতিক গবেষক দল, যারা একটি রিমোট চালিত সাবমার্সিবল ব্যবহার করছিলেন। বিষয়টি গত মঙ্গলবার শ্মিডট ওশান ইনস্টিটিউট জানিয়েছে।

আকারে ছোট হলেও এই স্কুইড ছিল একটি কিশোর বয়সী, যার দৈর্ঘ্য প্রায় ১ ফুট (৩০ সেন্টিমিটার)। এটি ক্যামেরাবন্দি করা হয়েছে দক্ষিণ আটলান্টিক মহাসাগরের ৬০০ মিটার গভীরে। বিজ্ঞানীরা তিমি ও সামুদ্রিক পাখির পাকস্থলী থেকে প্রাপ্ত নমুনা বিশ্লেষণ করে জেনেছেন, পূর্ণবয়স্ক কলোসাল স্কুইড প্রায় ৭ মিটার (২৩ ফুট) পর্যন্ত লম্বা হতে পারে, যা একটি ছোট ফায়ার ট্রাকের সমান।

গত মাসে দক্ষিণ স্যান্ডউইচ দ্বীপপুঞ্জের কাছে নতুন সামুদ্রিক প্রাণীর খোঁজে চালানো একটি অভিযানের সময় স্কুইডটি দেখা যায়। স্কুইডটির ভিডিও ধারণের পর গবেষকরা এর প্রজাতি সম্পর্কে নিশ্চিত হতে অন্য স্বতন্ত্র বিজ্ঞানীদের মতামত গ্রহণ করেন। এরপর তা প্রকাশ করা হয়।

নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ড ইউনিভার্সিটি অব টেকনোলজির স্কুইড গবেষক ক্যাট বোলস্টাড বলেন, ‘আমরা প্রথম একটি অল্পবয়সী কলোসাল স্কুইড দেখতে পেয়েছি, এটা সত্যি দারুণ।’ তিনি প্রজাতি শনাক্তে সহায়তা করেছেন।

বোলস্টাড আরও জানান, তারা এখন উন্নত ক্যামেরা পরীক্ষা করছেন যাতে ভবিষ্যতে প্রাপ্তবয়স্ক বিশাল স্কুইড ক্যামেরাবন্দি করা যায়। বিশেষজ্ঞদের মতে, নবীন স্কুইডটি ছিল প্রায় সম্পূর্ণ স্বচ্ছ এবং পাতলা বাহুবিশিষ্ট। তবে পূর্ণবয়স্ক হলে এরা গাঢ় লাল বা বেগুনি রঙ ধারণ করে এবং তাদের দেহ আর স্বচ্ছ থাকে না। উল্লেখযোগ্যভাবে, কলোসাল স্কুইড পৃথিবীর বৃহত্তম অমেরুদণ্ডী প্রাণী হিসেবে বিবেচিত।

এই সাফল্য সামুদ্রিক গবেষণায় এক নতুন দিগন্তের সূচনা করল বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। সূত্র: এপি

 

ইঁদুরের মস্তিষ্কের জটিল নকশা উন্মোচন

প্রকাশ: ১৯ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:১৯ পিএম
ইঁদুরের মস্তিষ্কের জটিল নকশা উন্মোচন
গবেষক আর ক্লে রেইড এবং লায়লা এলাবাদি যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটলের অ্যালেন ইনস্টিটিউট ল্যাবে মাইক্রনস প্রকল্পের ডেটা পরীক্ষা করছেন। ছবি: অ্যালেন ইনস্টিটিউট

প্রথমবারের মতো একটি স্তন্যপায়ী প্রাণীর মস্তিষ্কের সবচেয়ে বড় ও বিশদ ‘ওয়্যারিং ডায়াগ্রাম বা সংযোগ নকশা’ তৈরি করেছেন একদল স্নায়ুবিজ্ঞানী। ইঁদুরের সেরিব্রাল কর্টেক্সের টিস্যু ব্যবহার করে এই যুগান্তকারী কাজটি সম্পন্ন হয়েছে। মস্তিষ্কের ছোট একটি টিস্যু বিশ্লেষণ করে তারা একসঙ্গে কাঠামো ও কার্যকারিতা মানচিত্র তৈরি করেছেন। ধারণা করা হচ্ছে, এই গবেষণা মানব মস্তিষ্ক কীভাবে কাজ করে, তা বুঝতে সহায়তা করবে।

যুক্তরাষ্ট্রের ‘মাইক্রনস’ (মেশিন ইন্টেলিজেন্স ফ্রম কর্টিক্যাল নেটওয়ার্কস) নামে একটি বৈজ্ঞানিক কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রায় ১৫০ জন বিজ্ঞানী এই গবেষণায় অংশ নেন। এতে ব্যবহার করা হয় ইঁদুরের প্রাথমিক ভিজ্যুয়াল কর্টেক্সের একটি বালু কণার আকারের টিস্যু, যা দৃষ্টিসংক্রান্ত তথ্য প্রক্রিয়াজাত করে।

গবেষকরা জানান, এই নমুনাতে ২ লাখের বেশি কোষ ছিল, যার মধ্যে প্রায় ৮৪ হাজার স্নায়ুকোষ বা নিউরন। এই নিউরনগুলোর মধ্যে সংযোগ স্থাপনকারী প্রায় ৫২ কোটি ২৪ লাখ সংযোগস্থল বা সিন্যাপ্স রয়েছে। সব মিলিয়ে তারা মস্তিষ্কের যে অংশ চোখের দেখা তথ্য প্রক্রিয়াজাত করে, সেখানকার প্রায় ৫ দশমিক ৪ কিলোমিটার দীর্ঘ স্নায়বিক সংযোগ পথের তথ্য সংগ্রহ করেছেন। সম্প্রতি বিজ্ঞানবিষয়ক ‘নেচার’ জার্নালে গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে।

অ্যালেন ইনস্টিটিউট ফর ব্রেন সায়েন্সের স্নায়ুবিজ্ঞানী ফরেস্ট কোলম্যান বলেন, ‘লাখ লাখ সিন্যাপ্স এবং লাখ লাখ কোষের বিভিন্ন আকার ও আকৃতির জটিলতা দেখে আমাদের নিজেদের মস্তিষ্কের রহস্যময়তা উপলব্ধি করা যায়।’ ফরেস্ট কোলম্যান এই গবেষণার অন্যতম প্রধান বিজ্ঞানী। 
সেরিব্রাল কর্টেক্স হলো মস্তিষ্কের বাইরের স্তর, যা মূলত সচেতন উপলব্ধি, বিচারক্ষমতা, পরিকল্পনা ও কাজ সম্পাদনের প্রধান স্থান। এই গবেষণায় বিজ্ঞানীরা এর একটি অংশ প্রাথমিক ভিজ্যুয়াল কর্টেক্সের ওপর মনোযোগ দেন।

বেলর কলেজ অব মেডিসিনের গবেষকরা প্রথমে একটি জীবন্ত ইঁদুরকে বিভিন্ন ভিডিও দেখানোর সময় তার মস্তিষ্কের কোষগুলোর প্রতিক্রিয়া রেকর্ড করে স্নায়বিক কার্যকলাপের মানচিত্র তৈরি করেন। এই ইঁদুরকে জেনেটিকভাবে পরিবর্তন করা হয়েছিল, যাতে নিউরন সক্রিয় হলে ফ্লুরোসেন্ট আলো ছড়ায়। এরপর অ্যালেন ইনস্টিটিউটে সেই কোষগুলোর উচ্চ রেজল্যুশনের থ্রিডি ছবি তোলা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটন ইউনিভার্সিটির গবেষকরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) এবং মেশিন লার্নিং ব্যবহার করে সেই ছবিগুলো থেকে নিউরন এবং তাদের সংযোগের বিন্যাস ত্রিমাত্রিকভাবে পুনর্গঠন করেন।

বেলর কলেজ অব মেডিসিনের আরেক স্নায়ুবিজ্ঞানী আন্দ্রেয়াস টোলিয়াস বলেন, ‘এক শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে বিজ্ঞানীরা মস্তিষ্কের গঠন নিয়ে গবেষণা করছেন। কিন্তু সার্কিট স্তরে নিউরনের কার্যকলাপ কীভাবে উদ্ভূত হয়, তা বোঝা বেশ কঠিন ছিল। আমাদের গবেষণা একই ইঁদুরের মধ্যে মস্তিষ্কের গঠন ও কার্যকারিতা পদ্ধতিগতভাবে একত্রিত করার সবচেয়ে বড় প্রচেষ্টা এটি।’ যদিও ইঁদুর ও মানুষের মস্তিষ্কের মধ্যে উল্লেখযোগ্য পার্থক্য রয়েছে, অনেক সাংগঠনিক নীতি প্রজাতি নির্বিশেষে একই রকম থাকে। 

তিনি আরও বলেন, ‘এটি ভবিষ্যতে অটিজম ও সিজোফ্রেনিয়ার মতো স্নায়ুবিক জটিলতা বোঝার ক্ষেত্রে সহায়ক হতে পারে।’

গবেষণায় ‘ইনহিবিটরি বা নিবৃত্তিমূলক কোষ’ নামে পরিচিত মস্তিষ্কের এক ধরনের নিউরনের সংযোগ বিন্যাস সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে এসেছে। এই কোষগুলো সক্রিয় হলে তাদের সঙ্গে সংযুক্ত অন্যান্য কোষের কার্যকলাপ কমিয়ে দেয়, যা মস্তিষ্কের সুষম কার্যকারিতার জন্য জরুরি। এর বিপরীতে রয়েছে ‘এক্সাইটেটরি বা উদ্দীপক কোষ’, যা সংযুক্ত কোষের কার্যকলাপ বাড়িয়ে তোলে। বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, এই ইনহিবিটরি কোষগুলো এলোমেলোভাবে নয়, বরং অত্যন্ত নির্দিষ্ট ধরনের নিউরনের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন করে। এটি আগের ধারণার চেয়েও বেশি জটিল বিন্যাস নির্দেশ করে। ইনহিবিটরি কোষগুলো কর্টেক্সের মোট নিউরনের প্রায় ১৫ শতাংশ।

গবেষকরা মনে করছেন, এই গবেষণা ভবিষ্যতে অটিজম ও সিজোফ্রেনিয়া মতো বিভিন্ন স্নায়বিক ও মানসিক রোগ সম্পর্কে বুঝতে সাহায্য করবে। কারণ, এগুলোর সঙ্গে মস্তিষ্কের সংযোগের সূক্ষ্ম ত্রুটির সম্পর্ক থাকতে পারে। টোলিয়াস বলেন, ‘মস্তিষ্কের ওয়্যারিং কীভাবে এর কার্যকারিতাকে প্রভাবিত করে, তা সঠিকভাবে জানতে পারলে আমরা উপলব্ধির মৌলিক প্রক্রিয়াগুলো উন্মোচন করতে পারব।’

এই বিস্তারিত মানচিত্র বিজ্ঞানীদের মস্তিষ্কের গঠন ও কাজের মধ্যে সম্পর্ক বুঝতে এবং মানব মস্তিষ্কের জটিল রহস্য সমাধানে ভবিষ্যতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।

নক্ষত্রে হারিয়ে গেল গ্রহ

প্রকাশ: ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১০:১০ এএম
নক্ষত্রে হারিয়ে গেল গ্রহ
একটি নক্ষত্র কোনো গ্রহকে গ্রাস করার পর পড়ে থাকা উত্তপ্ত গ্যাসের বলয়। নাসার জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ এমনই একটি বলয় এবং একে ঘিরে থাকা শীতল ধুলোর একটি প্রসারমাণ মেঘ পর্যবেক্ষণ করেছে।  ছবি নাসা

মহাকাশে ঘটে গেল এক নাটকীয় ঘটনা। একটি ভিনগ্রহী গ্রহ তার নক্ষত্রের আকর্ষণে বিলীন হয়ে গেছে। শক্তিশালী জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ সেই ভিনগ্রহের করুণ পরিণতির চিত্র তুলে ধরেছে, যা গ্রহটির ধ্বংসের কারণ সম্পর্কে আগের ধারণার চেয়ে ভিন্ন।

২০২০ সালের মে মাসে জ্যোতির্বিদরা প্রথমবারের মতো প্রত্যক্ষ করেন, একটি নক্ষত্র তার একটি গ্রহকে গ্রাস করতে যাচ্ছে। তখনকার তথ্যের ভিত্তিতে তারা মনে করেছিলেন, নক্ষত্রটি তার জীবনকালের শেষ পর্যায়ে প্রসারিত হয়ে একটি ‘লাল দানব বা রেড জায়ান্ট’ অবস্থায় পৌঁছে গ্রহটিকে গিলে ফেলেছে। তবে ওয়েব টেলিস্কোপের নতুন পর্যবেক্ষণ বলছে, সেই ঘটনাটি ঘটেছিল ভিন্নভাবে। গবেষকদের মতে, নক্ষত্রটি গ্রহের দিকে এগিয়ে যায়নি। বরং গ্রহটির কক্ষপথ দীর্ঘ সময় ধরে ক্ষয়প্রাপ্ত হতে হতে নক্ষত্রের দিকে ধাবিত হয়েছে। এক সময় তা নক্ষত্রে পতিত হয়েছে, যার পরিণতি হয়েছিল ভয়াবহ।

ঘটনার পরের দৃশ্য বেশ নাটকীয়, যা ওয়েব টেলিস্কোপের পর্যবেক্ষণে ধরা পড়েছে। ঘটনাটি ঘটার পরপর ওয়েব টেলিস্কোপের তোলা ছবিতে দেখা গেছে, গ্রহটি বিলীন হওয়ার পর নক্ষত্রের চারপাশে সম্ভবত উত্তপ্ত গ্যাসের একটি বলয় তৈরি হয়েছে। এ ছাড়া চারপাশে ছড়িয়ে পড়েছে ঠাণ্ডা ধুলার মেঘ। টেলিস্কোপটি ২০২১ সালে উৎক্ষেপিত হয় ও ২০২২ সাল থেকে এটি মহাকাশ পর্যবেক্ষণে ভূমিকা রাখছে।

যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশনের জ্যোতির্বিজ্ঞানী এবং এই গবেষণার প্রধান লেখক রায়ান লাউ বলেন, ‘গ্রহটি যখন তার অন্তিম যাত্রায় নক্ষত্রে পতিত হয়েছিল, তখন নক্ষত্র থেকে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ পদার্থ ছিটকে বেরিয়ে আসে। সেই ধুলা এখন সেখানে ছড়িয়ে আছে।’ সম্প্রতি অ্যাস্ট্রোফিজিক্যাল জার্নালে এই গবেষণা প্রকাশিত হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে আমাদের মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির ১২ হাজার আলোকবর্ষ দূরে অ্যাকুইলা নক্ষত্রমণ্ডলের দিকে। নক্ষত্রটি আমাদের সূর্যের চেয়ে কিছুটা লালচে, কম উজ্জ্বল এবং ভরের পরিমাণও সূর্যের প্রায় ৭০ শতাংশ।

ধারণা করা হচ্ছে, গ্রহটি ছিল একটি ‘উষ্ণ বৃহস্পতি বা হট জুপিটার’ শ্রেণির। অর্থাৎ এটি বৃহস্পতির মতো একটি গ্যাসীয় দৈত্য গ্রহ, যা নক্ষত্রের খুব কাছে প্রদক্ষিণ করার কারণে অত্যন্ত উত্তপ্ত অবস্থায় ছিল। হার্ভার্ড-স্মিথসোনিয়ান সেন্টার ফর অ্যাস্ট্রোফিজিক্সের পোস্টডক্টরাল ফেলো মরগান ম্যাকলিওড বলেন, ‘সম্ভবত গ্রহটি বৃহস্পতির চেয়েও কয়েকগুণ ভারী ছিল। কারণ, নক্ষত্রে এত বড় পরিবর্তন ঘটাতে হলে তেমন বিশাল গ্রহ দরকার।’

গবেষকরা মনে করছেন, নক্ষত্রের সঙ্গে মহাকর্ষীয় মিথস্ক্রিয়ার ফলে গ্রহটির কক্ষপথ ধীরে ধীরে ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। এরপর এটি নক্ষত্রের বায়ুমণ্ডলে প্রবেশ করে। ম্যাকলিওডের মতে, ‘নক্ষত্রের বায়ুমণ্ডলের প্রবল বাধার মুখে গ্রহটি আরও দ্রুত নক্ষত্রের গভীরে পতিত হতে থাকে। এ সময় গ্রহটির বাইরের গ্যাসীয় স্তর খসে পড়তে থাকে এবং সংঘর্ষের ফলে উৎপন্ন তাপে নক্ষত্রের গ্যাসীয় পদার্থ ছিটকে বেরিয়ে আসে। এতে চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে গ্যাস, ধুলা ও নানা উপাদান।’

তবে গ্রহটির চূড়ান্ত পরিণতি ঠিক কী হয়েছে, সে সম্পর্কে বিজ্ঞানীরা পুরোপুরি নিশ্চিত নন। ম্যাকলিওড বলেন, ‘আমরা দেখেছি গ্রহটির পতনের ফলে নক্ষত্রের ওপর কী প্রভাব পড়েছে। তবে গ্রহটির ঠিক কী হয়েছে, তা নিশ্চিতভাবে জানি না। মহাকাশের অনেক ঘটনা এত বিশাল ও দূরবর্তী যে, সেগুলোর পরীক্ষা ল্যাবরেটরিতে করা অসম্ভব। তবে আমরা কম্পিউটার মডেলের মাধ্যমে কেবল অনুমান করতে পারি।’

এই ঘটনা আমাদের সৌরজগতের জন্য আপাতত কোনো হুমকি নয়। গ্রহ-নক্ষত্রের সম্পর্ক যেমন পরিবর্তনশীল, তেমন অনিশ্চিত। আমাদের সৌরজগতের গ্রহগুলোর কক্ষপথ স্থিতিশীল। কারণ আমাদের গ্রহগুলো সূর্যের এতটা কাছে নেই যে, তাদের কক্ষপথ এভাবে ক্ষয়প্রাপ্ত হবে। তবে এর মানে এই নয় যে, সূর্য ভবিষ্যতে কোনো গ্রহকে গ্রাস করবে না। বিজ্ঞানীরা মনে করেন, প্রায় ৫০০ কোটি বছর পর সূর্য যখন তার লাল দানব অবস্থায় পৌঁছাবে, তখন এটি প্রসারিত হয়ে বুধ, শুক্র এমনকি পৃথিবীও হয়তো তার মধ্যে তলিয়ে যেতে পারে। তখন সূর্যের বাইরের স্তরগুলো মহাকাশে ছড়িয়ে যাবে এবং এটি একটি শ্বেত বামন নক্ষত্রে পরিণত হবে।

জেমস ওয়েবের নতুন পর্যবেক্ষণ গ্রহদের অন্তিম পরিণতি সম্পর্কে নতুন ধারণা দিচ্ছে। রায়ান লাউ বলেন, ‘আমাদের পর্যবেক্ষণ ইঙ্গিত দেয়, নক্ষত্র প্রসারিত হয়ে গ্রহকে গ্রাস করার চেয়ে বরং গ্রহগুলো ধীরে ধীরে তাদের নক্ষত্রের দিকে এগিয়ে গিয়ে বিলীন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তবে আমাদের সৌরজগৎ তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল। তাই আমাদের আপাতত কেবল সূর্যের লাল দানব হয়ে ওঠার ও আমাদের গ্রহকে গ্রাস করার বিষয়ে চিন্তা করতে হবে।’ সূত্র: রয়টার্স