ভারতের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গানাইজেশন (ইসরো)-এর সঙ্গে যৌথভাবে ইউরোপের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির (ইসা) সূর্যগ্রহণ সম্পর্কে গবেষণা করতে ‘প্রোবা-৩ (Proba-3)’ মিশন পরিচালিত করছে। এই মিশনে মহাকাশে কৃত্রিম উপায়ে তৈরি হবে সূর্যগ্রহণ। এই মিশনের মহাকাশযান কবে নাগাদ উৎক্ষেপণ করা হবে, তা এখনো জানা যায়নি।
সূর্য আর চাঁদের গ্রহণ নিয়ে মানুষের জানার আগ্রহের শেষ নেই। চলতি মাসেই উত্তর আমেরিকার বিস্তীর্ণ অংশ থেকে দেখা গেছে পূর্ণগ্রাস সূর্যগ্রহণ। অসংখ্য মানুষ এই গ্রহণ দেখতে আকাশ পানে তাকিয়ে ছিলেন। সূর্য দীর্ঘ চার মিনিট ধরে চাঁদের ছায়ায় ঢাকা ছিল। এটাই ছিল বছরের প্রথম সূর্যগ্রহণ। গ্রহণের মতো মহাজাগতিক ঘটনা নিয়ে এবার নতুন গবেষণা শুরু করছে ইসা ও ইসরো। ইউরোপের মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটির দাবি, তারা মহাকাশে কৃত্রিম উপায়ে গ্রহণ করাতে পারবে। এমনই প্রযুক্তি তৈরি করা হচ্ছে।
ইউরোপের মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ইসা জানিয়েছে, প্রোবা-৩ মিশনটি সৌর আবহাওয়াকে আরও ভালোভাবে বুঝতে সূর্যগ্রহণের কৃত্রিম অনুকরণ তৈরি করবে। বর্তমানে ইসা আমাদের মহাবিশ্বের তারার চারপাশে থাকা বায়ুমণ্ডল, সৌর-জাল সম্পর্কে জানার জন্য দুটি স্যাটেলাইট একসঙ্গে উৎক্ষেপণের মাধ্যমে কৃত্রিম সূর্যগ্রহণ তৈরি করতে কাজ করছে। সংস্থাটি আরও জানিয়েছে, এই মিশন বাস্তবায়িত হলে এটিই হবে বিশ্বে প্রথম মানবসৃষ্ট কৃত্রিম সূর্যগ্রহণ। প্রোবা-৩ মিশনে দুটি স্যাটেলাইট (কৃত্রিম উপগ্রহ) ব্যবহার করা হবে। উৎক্ষেপণের পর মহাকাশে সেগুলো পাশাপাশি উড়বে। সূর্যের করোনা অংশকে বিশেষভাবে পর্যবেক্ষণ করবে এই স্যাটেলাইটগুলো, যা এর আগে কখনো করা হয়নি।
সূর্যগ্রহণের সময়ে চাঁদের ছায়ায় সূর্য ঢাকা পড়ে গেলে, সূর্যের যে অংশটি পৃথিবী থেকে খালি চোখে দেখা যায়, তার নাম করোনা। অন্যান্য সময়ে সূর্যের বাকি অংশের আলোর ঔজ্জ্বল্য করোনাকে ম্লান করে দেয়। গ্রহণের সময় উজ্জ্বল হয় করোনা। এই অংশকে দেখার জন্য বিশেষ করোনাগ্রাফ তৈরি করা হচ্ছে, যা ওই দুই স্যাটেলাইটের মধ্যে থাকবে। বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সূর্যের এই করোনা অংশটিই মহাকাশের আবহাওয়াকে নিয়ন্ত্রণ করে। প্রোবা হলো প্রজেক্ট অব অনবোর্ড অটোনমি এর সংক্ষিপ্ত রূপ ও লাতিন ভাষায় এর অর্থ লেট’স ট্রাই বা চেষ্টা করা যাক।
কৃত্রিম সূর্যগ্রহণের জন্য ব্যবহৃত স্যাটেলাইট দুটির নাম দেওয়া হয়েছে অকালটার ও করোনাগ্রাফ। দুটিকেই পৃথিবীর উচ্চ কক্ষপথে বসানো হবে। করোনাগ্রাফ মহাকাশযান ও অকালটার মহাকাশযান দুটিকে নির্ধারিত অবস্থানে স্থাপন করা হবে, এদের মধ্যে দূরত্ব হতে পারে কয়েক মিলিমিটার বা ১৪৪ মিটার। আবার এর চেয়েও বেশি দূরত্বে হতে পারে। অকালটার সূর্যের খুব কাছে এমনভাবে অবস্থান করবে, যেন সূর্যের ডিস্কটিকে আড়াল করে দ্বিতীয় স্যাটেলাইটের ওপর একটি ছায়া পড়ে। ঠিক যেমন গ্রহণের সময় চাঁদ পৃথিবীর পৃষ্ঠের ওপরে একটি ছায়া তৈরি করে। তৈরি হবে কৃত্রিম গ্রহণ। এটি কেবল পার্শ্ববর্তী করোনা অংশ পর্যবেক্ষণ করবে এবং অন্য স্যাটেলাইটকে করোনার অঞ্চলের ভেতরের অংশের ছবি তুলতে সাহায্য করবে। ইসার মতে, সূর্যের আলো যদি আটকানো না হয়, তাহলে এই আলোয় যেকোনো পর্যবেক্ষণ টেলিস্কোপই অস্পষ্ট বা আলোহীন হয়ে যাবে এবং করোনা দেখতে পারবে না। করোনার অঞ্চলের ভেতরের অংশের সূক্ষ্ম বৈশিষ্ট্যের ছবি তোলা শেষ হয়ে গেলে, অপারেশন প্রকৌশলীরা স্ট্যাক আলাদা করার জন্য একটি কমান্ড পাঠাবেন। সংস্থাটির মতে, সৌর করোনা সম্পর্কে জানা গেলে, এটি বিজ্ঞানীদের সৌর আবহাওয়ার পূর্বাভাস দিতে সাহায্য করবে।
রয়েল অবজারভেটরি অব বেলজিয়ামের একজন জ্যৈষ্ঠ বিজ্ঞানী আন্দ্রেই ঝুকভ বলেন, ‘এটি সূর্যে বাতাসের উৎপত্তি মতো বিভিন্ন বিষয় বুঝতে সাহায্য করবে। এখনো বেশ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়নি, বিশেষ করে ধীর গতির বাতাস সম্পর্কিত প্রশ্নগুলো।’
তিনি আরও বলেন, ‘ধীর গতির বাতাস পরিবর্তনশীল এবং সব সময় বিবর্তিত হচ্ছে, এটা সমজাতীয় বা অভিন্ন নয়। তাই এটি এখনো স্পষ্ট নয়, এটি কোথা থেকে আসে।’ বর্তমানে স্যাটেলাইট দুটি বেলজিয়ামে চূড়ান্ত সংযোজনের জন্য প্রস্তুত করা হচ্ছে। সেখান থেকে এগুলো আগামী সেপ্টেম্বরে ভারতে আনা হবে। ভারতের সতিশ ধাওয়ান স্পেস রিসার্চ সেন্টার থেকে পোলার স্যাটেলাইট লঞ্চ ভেহিকেল (পিএসএলভি) রকেটের মাধ্যমে এই মিশনের মহাকাশযান মহাকাশে উৎক্ষেপণ করা হবে। ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি জানিয়েছে, এই দুটি স্যাটেলাইট দ্বারা তৈরি সূর্যগ্রহণ পৃথিবী থেকে দেখা যাবে না।
ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সির প্রোবা-২ মিশন ইতোমধ্যে মহাকাশে পরিচালনা করছে। চলতি মাসে হওয়া সূর্যগ্রহণ প্রোবা-২-এর মাধ্যমে নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। সূর্যের দুই ধরনের ছবি তুলে পাঠিয়েছে ওই মহাকাশযান। এবার সেই প্রোবা সিরিজের তৃতীয় মিশন সম্পন্ন করতে চলেছে সংস্থা দুটি। সূত্র: ইউরেনিউজ
জাহ্নবী