মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা চাঁদের মাটিতে গাছ লাগানোর পরিকল্পনা করেছে। আগামী ২০২৬ সালে নাসার পরিচালিত সম্ভাব্য আর্টেমিস-৩ মিশনে এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা হবে। এই মিশনে চাঁদের পৃষ্ঠে নভোচারীদের সহায়তায় তিনটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা চালানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। এর মধ্যে রয়েছে লুনার ইফেক্টস অন অ্যাগ্রিকালচার ফ্লোরা (এলইএএফ) বা লিফ। এ গবেষণার মাধ্যমে চাঁদের মতো স্থানে ফসলের অবস্থা কেমন হতে পারে তা পরীক্ষা করা হবে।
গত ২৬ মার্চে এক বিবৃতিতে আর্টেমিস-৩ মিশনের জন্য নির্ধারণ করা তিনটি পরীক্ষার বিষয়ে জানানো হয়েছে নাসার পক্ষ থেকে। মহাকাশ গবেষণা সংস্থাটির এক কর্মকর্তা জানান, মহাকাশ বিকিরণ ও আংশিক মধ্যাকর্ষণ চাপে উদ্ভিদের সালোক সংশ্লেষণ, বৃদ্ধি এবং কীভাবে সাড়া দেয় তা পর্যবেক্ষণ করা হবে। এর মধ্য দিয়ে প্রথমবারের মতো চাঁদে একটি ক্ষুদ্র গ্রিন হাউস স্থাপন করবেন নভোচারীরা। সব পরিকল্পনা ঠিক থাকলে আর্টেমিস-৩ মিশনে চাঁদে গ্রিন হাউস স্থাপন করা হবে।
নাসার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, উদ্ভিদের বৃদ্ধি ও বিকাশের তথ্যসহ পরিবেশগত প্যারামিটার থেকে বিজ্ঞানীরা চাঁদ ও চাঁদের বাইরে মানুষের পুষ্টি এবং জীবন ধারণের জন্য চাঁদে জন্মানো উদ্ভিদের ব্যবহার বুঝতে সক্ষম হবে। সম্ভাব্য আর্টেমিস-৩ মিশনে চাঁদের পৃষ্ঠে নভোচারীদের পাঠানোর জন্য বাছাই করা বিজ্ঞানভিত্তিক যন্ত্রের প্রথম সেট দেখিয়েছে নাসা। এর লক্ষ্য চাঁদ সম্পর্কে মানুষের বোঝাপড়ার পরিসর আরও বাড়ানো। পাশাপাশি ভবিষ্যতে মঙ্গল গ্রহে বিভিন্ন ক্রু মিশনের প্রস্তুতি নেওয়া।
এ মিশনের লক্ষ্য প্রথমবারের মতো চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নভোচারীদের পাঠানো। বিজ্ঞানবিষয়ক ওয়েবসাইট স্পেসএক্সপ্লোরড এটিকে পৃথিবীর বাইরে মানুষের টেকসই উপস্থিতির বড় একটি পদক্ষেপ হিসেবে উল্লেখ করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এ মিশনের জন্য বাছাই করা বিভিন্ন যন্ত্র, চাঁদের পরিবেশ, চাঁদের ভেতর কী আছে ও চাঁদে দীর্ঘকাল ধরে মানুষের বসবাসের কার্যকারিতা সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করবে।
এর আগে ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে রোবোটিক চ্যাং ই ৪ মিশনের মাধ্যমে চাঁদের অন্ধকার অংশে তুলা গাছ পাঠিয়েছিল। এ মিশনের উদ্দেশ্য বাছাই করা ‘পেলোড’ প্যাকেজে তিনটি অত্যাধুনিক যন্ত্র রয়েছে। ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড বাল্টিমোর কাউন্টির বিজ্ঞানী ড. মেহেদি বেন্নার নেতৃত্বে লুনার এনভায়রনমেন্ট মনিটরিং স্টেশন (এলইএমএস) নামের একটি সিসমোমিটার স্যুট তৈরি করা, যা চন্দ্রপৃষ্ঠের কম্পন নিরীক্ষণ ও চাঁদের কাঠামোগত গঠনে তথ্য সংগ্রহ করবে। এলইএমএস হলো একটি স্বাধীন সিসমোমিটারের স্যুট। এটি স্থাপনের পর দুই বছর পর্যন্ত চাঁদের কম্পন অনুসন্ধান করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের কলোরাডো অঙ্গরাজ্যের গবেষণা সংস্থা স্পেস ল্যাব টেকনোলজিস, এলএলসির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ক্রিস্টিন এসকোবারে নেতৃত্ব লুনার ইফেক্টস অন এগ্রিকালচারাল ফ্লোরা (এলইএএফ) পরীক্ষার নকশা তৈরি করা হয়েছে। এর মাধ্যমে মহাকাশে ফসল ফলানোর উদ্দেশ্যে চাঁদের পরিবেশগত সম্ভাবনা খুঁজে দেখা হবে।
তৃতীয় যন্ত্রটি হলো লুনার ডাইলেকট্রিক অ্যানালাইজার (এলডিএ)। এটির নেতৃত্বে আছেন ইউনিভার্সিটি অব টোকিওর অধ্যাপক ড. হিদাকি মিয়ামোতোর। আর এর সহযোগী সংস্থা হিসেবে কাজ করছে জাপান অ্যারোস্পেস এক্সপ্লোরেশন এজেন্সি (জাক্সা)।
এলডিএ চাঁদের রেগোলিথ পরিমাপ করবে একটি বৈদ্যুতিক ক্ষেত্র তৈরি করার উদ্দেশ্যে। রেগোলিথ হচ্ছে পুরু স্তরের খণ্ডিত ও বিক্ষিপ্ত শিলা উপাদান, যা চাঁদের সম্পূর্ণ পৃষ্ঠকে ঢেকে রেখেছে। এলডিএ চাঁদের পৃষ্ঠতলের গঠন সম্পর্কেও প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহ করবে। এ ছাড়া চাঁদে বরফের মতো উদ্বায়ী বা পরিবর্তনশীল বস্তু শনাক্তকরণের ক্ষেত্রেও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এ গবেষণা, যা চাঁদের সম্ভাব্য বিভিন্ন উপাদান সম্পর্কে তথ্য দেবে নভোচারীদের।
আর্টেমিস ৩ মিশনের মাধ্যমে চাঁদে লিফ, এলইএমএস এবং এলডিএ গবেষণা চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্র পাঠানোর পরিকল্পনা থাকলেও নাসা এটি এখনো নিশ্চিত করেনি। আর্টেমিস-৩ এর ক্রু কারা হবেন সেটির ঘোষণাও এখনো দেওয়া হয়নি। তবে নাসার প্রথমবারের মতো চাঁদে একজন নারী ও একজন কৃষ্ণাঙ্গ ব্যক্তিকে পাঠানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
আর্টেমিস-৩ মিশনের মাধ্যমে ১৯৭২ সালের পর প্রথমবারের মতো মানুষ চাঁদে অবতরণ করবে। ২০২৫ সালে আর্টেমিস-২ মিশনে চাঁদের চারপাশে প্রদক্ষিণ করার জন্য নভোচারী পাঠানো হবে। এদিকে আর্টেমিস-১-এর মাধ্যমে ২০২২ সালে নভোচারী ছাড়াই একটি সফল মিশন সম্পন্ন করেছে নাসা।
এ.জে/জাহ্নবী