নানা সহিংসতার ঘটনায় চট্টগ্রাম মহানগরীর থানাগুলোতে প্রতিদিনই বাড়ছে মামলা। সেই সঙ্গে বাড়ছে গ্রেপ্তারের সংখ্যাও। সর্বশেষ ৩১ জনকে আসামি করে নগরীর ডবলমুরিং থানায় আরও একটি মামলা হয়েছে। এ নিয়ে গত ১৭ জুলাই থেকে শুক্রবার (২৬ জুলাই) পর্যন্ত সিএমপিতে মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৮টিতে। আর এসব মামলায় আসামি করা হয়েছে ৩৭ হাজারের বেশি জনকে।
অন্যদিকে জেলা পুলিশের আওতাধীন ১৬টি থানায় মামলা হয়েছে ১১টি। এসব মামলায় জেলা পুলিশ গত ২৪ ঘণ্টায় ২৭ জনসহ গ্রেপ্তার করেছে ৩৫৪ জনকে। আর সিএমপির থানাগুলো গত ২৪ ঘণ্টায় ৪১ জনসহ গ্রেপ্তার করেছে ৪৪৯ জনকে। সব মিলিয়ে জেলা ও মহানগরে গ্রেপ্তারের সংখ্যা ৮০৩ জন। আর মামলা হয়েছে ২৯টি।
নগরীর বিষয়টি নিশ্চিত করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র কাজী তারেক আজিজ বলেন, ডবলমুরিং থানায় আরও একটি নতুন মামলা হয়েছে। সব মিলিয়ে মামলা ১৮টি। আর গ্রেপ্তার ৪৪৯ জন।
জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিএসবি) আবু তৈয়ব মো. আরিফ উদ্দিন খবরের কাগজকে বলেন, ১১টি মামলা হয়েছে জেলার বিভিন্ন থানায়। এসব মামলায় ৩৫৪ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
কোটা সংস্কারের আন্দোলনে গত ১৬ ও ১৮ জুলাই রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে বন্দরনগরী চট্টগ্রাম। এই দুই দিন দফায় দফায় নগরীর মুরাদপুরে ও বহদ্দারহাটে শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া ও সংঘর্ষ হয়। এ ছাড়া নগরের কোতোয়ালি, নিউ মার্কেট, নতুন ব্রিজ, বাকলিয়া এলাকাও রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ সময় গোলাগুলির ঘটনা ঘটে। বেশ কয়েকজনকে অস্ত্র হাতে প্রকাশ্যে গুলি করতে দেখা গেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল, রাবার বুলেট নিক্ষেপ করে। এই দুই দিনে তাৎক্ষণিক পাঁচজন ও পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় একজনসহ ছয়জন মারা যান। এদের মধ্যে একজন দিনমজুর। বাকিরা শিক্ষার্থী। এসব ঘটনায় আহত হয়েছেন দুই শতাধিকের বেশি। যাদের বেশির ভাগই গুলিবিদ্ধ।
পরদিন ১৯ জুলাই শুক্রবার রাত ১২টা থেকে সারা দেশে কারফিউ শুরু হলে নগরীতে থেমে যায় সংঘর্ষের ঘটনা। এরপর আন্দোলনকারীদের আর সড়কে দেখা যায়নি। তখন থেকে বাড়তে থাকে নগরীর থানাগুলোতে মামলার সংখ্যা। প্রায় প্রতিদিনিই মামলা হচ্ছে কোনো না কোনো থানায়। সর্বশেষ ৩১ জনের নামে ও ৩০-৪০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে ডবলমুরিং থানায় আরও একটি মামলা করেছে পুলিশ।
ডবলমুরিং থানার ওসি ফজলুল করিম পাটোয়ারী খবরের কাগজকে বলেন, ‘গতকাল রাতে পুলিশ বাদী হয়ে মামলাটি করেছে বিশেষ ক্ষমতা আইনে। তবে এ মামলায় এখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়নি। এর আগে বৃহস্পতিবার হালিশহর থানায় ৩৭ জনের নাম উল্লেখ করে আরও একটি মামলা হয়। এতে ১০০-১৫০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করা হয়েছে।’ হালিশহর থানার ওসি কায়সার হামিদ খবরের কাগজকে বলেন, পুলিশ বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলাটি করেছে। এখন পর্যন্ত ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তার আগে বুধবার নগরের চান্দগাঁও থানায় পানি উন্নয়ন বোর্ডে ভাঙচুর, হত্যাচেষ্টা, মোটরসাইকেলে আগুন, বিস্ফোরকের ব্যবহার ও ক্ষতিসাধনের ঘটনায় একটি মামলা হয়েছে। ওই মামলায় ৫০০ থেকে ৭০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। তার আগে নগরীর পাঁচলাইশ, খুলশী, কোতোয়ালি, বাকলিয়াসহ অন্যান্য কয়েকটি থানায় ১৫টি মামলা হয়।
নগর বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইদ্রিস আলী খবরের কাগজকে বলেন, ‘এই পর্যন্ত আমাদের নগর বিএনপির সাড়ে ৩০০ নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া প্রতি রাতে নেতা-কর্মীদের বাসাবাড়িতে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ। গত পরশু নগর বিএনপির আহ্বায়ক এরশাদ উল্লাহর বাসায় তল্লাশি করতে যায় পুলিশ। কিন্তু পরে ব্যর্থ হয়। তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিএনপি শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনে সমর্থন দিয়েছে, তবে অংশ নেয়নি। এর পরও নেতা-কর্মীদের হয়রানি করা হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি চান্দগাঁও, পাঁচলাইশ এলাকার কর্মীদের নির্যাতন করা হচ্ছে।