![শিশু আয়ানের মৃত্যু তদন্তে নতুন কমিটি গঠন হাইকোর্টের](uploads/2024/02/20/1708434385.Ayan.jpg)
রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে পাঁচ বছর বয়সী শিশু আয়ানের মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে হাইকোর্ট জানিয়েছেন, আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তদন্ত প্রতিবেদন মনঃপূত নয়।
নতুন কমিটির সদস্যরা হলেন, শহিদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক এ বি এম মাকসুদুল আলম, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) অধ্যাপক সুশঙ্কর কুমার মণ্ডল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন, ঢাকা শিশু হাসপাতালের অধ্যাপক আমিনুর রশিদ এবং জাতীয় প্রতিষেধক ও সামাজিক চিকিৎসা ইনস্টিটিউটের সহকারী অধ্যাপক সাথী দস্তিদার। কমিটিকে ৩০ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য আগামী ২০ মার্চ দিন ধার্য করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (২০ ফেব্রুয়ারি) হাইকোর্টের বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর বেঞ্চ এ আদেশ দেন। শুনানিতে রিট আবেদনের পক্ষে বক্তব্য উপস্থাপন করেন এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম। ইউনাইটেড হাসপাতালের পক্ষে অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা ও রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল তুষার কান্তি রায়।
গত ৩১ ডিসেম্বর রাজধানীর সাঁতারকুলে অবস্থিত ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সুন্নাতে খতনা করানো হয় শিশু আয়ানের। অপারেশনের পর তার আর জ্ঞান ফেরেনি। এরপর টানা ৭ দিন লাইফ সাপোর্টে থাকার পর গত ৮ জানুয়ারি প্রথম প্রহরে (রাত ১টায়) ইউনাইটেড হাসপাতালের আইসিইউতে মারা যায় শিশু আয়ান। এ ঘটনায় ভুল চিকিৎসার অভিযোগ ওঠে ইউনাইটেড মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে ইউনাইটেড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে দায় করে অবহেলা ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ এনে জনস্বার্থে গত ৯ জানুয়ারি রিট দায়ের করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এ বি এম শাহজাহান আকন্দ মাসুম। এতে আয়ানের পরিবারকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশনা চাওয়া হয়। পরে শিশু আয়ানের বাবা ওই রিটে পক্ষভুক্ত হন। নতুন করে রিটে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চাওয়া হয়। স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়।
রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে গত ১৫ জানুয়ারি এক আদেশে শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় তার পরিবারকে ৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে হাইকোর্ট। একই সঙ্গে শিশু আয়ানের মৃত্যুর ঘটনা তদন্ত করে ৭ দিনের মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করতে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে নির্দেশ দেওয়া হয়। পাশাপাশি দেশের সরকার অনুমোদিত ও অনানুমোদিত সব হাসপাতাল ও ক্লিনিকের তালিকা ১ মাসের মধ্যে আদালতে দাখিল করতে বলা হয়।
আয়ানের মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত শেষে ২৯ জানুয়ারি প্রতিবেদন দাখিল করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। তবে ওই প্রতিবেদনে অসন্তোষ প্রকাশ করেন হাইকোর্ট। প্রতিবেদনটি ‘আইওয়াশ’ হিসেবে উল্লেখ করে এতে করা সুপারিশগুলো ‘হাস্যকর’ বলেও মন্তব্য করেন আদালত। শুনানির একপর্যায়ে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি আদালত বলেন, ‘শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বে মেডিকেল সেক্টরে মাফিয়া চক্র কাজ করে। তারা ওষুধসহ মেডিকেল উপকরণ সরবরাহে রি-এজেন্ট হিসেবে কাজ করে। স্বাস্থ্য খাত নিয়ে সবার সচেতন হওয়া প্রয়োজন।’ এরই ধারাবাহিকতায় প্রতিবেদনটি মনঃপূত হয়নি বিবেচনা করে আজ নতুন কমিটি গঠন করলেন হাইকোর্ট।