মা,
তোমাকে লিখতে গেলে বাবার প্রসঙ্গ চলে আসে। মধ্যবিত্ত পরিবারে বাবার সঙ্গে সন্তানদের সম্পর্ক থাকে শাসনের। মা-ই থাকেন আশ্রয়ের হিমালয়। বাবার পুলিশি শাসন থেকে বাঁচতে মধ্যবিত্তের টানাপোড়েনের পরিবারে মা হয়ে ওঠেন সন্তানের জন্য ওয়ান ম্যান আর্মি।
মা, তোমার মনে আছে নিশ্চয়ই, ক্যানসার শনাক্তের পর বাবার চিকিৎসাযুদ্ধের দিনগুলোর কথা। প্রথম প্রথম বাবা একাই সব জায়গায় যেতেন চিকিৎসার জন্য। একদম শুরুতে তো কাউকে বলেননি উনার ক্যানসার হওয়ার বিষয়টি। একপর্যায়ে বাবা দুর্বল হতে লাগলেন। তাকে সাহায্য করার জন্য তুমি এগিয়ে এলে। আমার তখন কতই-বা বয়স?
আমি অবাক বিস্ময়ে দেখলাম, আমার যে মা কখনো একা একা শহরে যায়নি, সে মা বাবার চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেলের এ ওয়ার্ড থেকে ও ওয়ার্ডে যাচ্ছে। ল্যাবটেস্ট করাতে বিভিন্ন ল্যাবে যাচ্ছে। ডাক্তারের সঙ্গে কথা বলে চিকিৎসা বুঝে নিচ্ছে। যখন বাবাকে মেডিকেলে ভর্তি করানো হলো, সঙ্গে তুমি থাকলে মা। এর আগে কখনো কি তুমি মেডিকেলে ছিলে মা? আমি জানি না। কখনো জিজ্ঞেস করিনি। কত কিছুই তো জানি না মা আমি। বাবা যখন প্রথম আমাকে এসে বলল, ‘আমার তো অপারেশন লাগবে বাবা।’ আমার খুব কান্না পেল মা। আরেকদিন বাবা বলল, ‘আমি মনে হয় বাঁচব না মনা। চিকিৎসা বন্ধ করে দিই!’ আমার সেদিনও কান্না পেল। কাঁদলাম, কেউ দেখল না।
বাবার চিকিৎসার বড় একটি সময় তুমি বাবার সঙ্গে ছিলে মা। আমার মতো তুমিও কী লুকিয়ে লুকিয়ে কেঁদেছো মা? আমি জানি না। কখনো জানতেও চাইনি। বাবা গত হওয়ার পর কখনোই বাবার বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস হয়নি আমার। স্মৃতি খুঁড়ে বেদনা জাগাতে আমারও ভালো লাগে না। ক্যানসার যে পরিবারে দাগা দিয়েছে, সে পরিবারে সহসা সুখের আবাদ হয় না।
আজম রোড, নাজিরহাট
ফটিকছড়ি, চট্টগ্রাম।