বিচারহীনতার কারণে সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতন বাড়ছে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে) সভাপতি রুহুল আমিন গাজী।
শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) সকালে ময়মনসিংহ প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জেইউএম-এর বার্ষিক সাধারণ সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
রুহুল আমিন বলেন, ‘দেশের গণমাধ্যম ভয়াবহ সংকটকাল পার করছে। গণমাধ্যমের টুঁটি এমনভাবে চেপে ধরা হয়েছে যে এর স্বাধীনতা এখন পুরোপুরি বিপন্ন। দুঃশাসন পাকাপোক্ত করতে গণমাধ্যমকে হুমকি, ভয় প্রদর্শন, সাংবাদিক হত্যা, গ্রেপ্তার, নির্যাতন চলছেই। কথায় কথায় গণমাধ্যম বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। সাংবাদিকদের জেলে ঢোকানো হচ্ছে। নানা কালাকানুন তৈরি করে গণমাধ্যমকে আষ্টেপৃষ্ঠে বেঁধে ফেলা হয়েছে। গণমাধ্যম শিল্পে একটা ভয়ের সংস্কৃতি তৈরি করায় গণমাধ্যম এখন সত্য তুলে ধরতে পারছে না। এসব কারণে গণমাধ্যম দিন দিন জনগণের আস্থা হারিয়ে ফেলছে।’
তিনি বলেন, ‘স্মরণকালের ইতিহাসে মিডিয়া ও মিডিয়া কর্মীদের এমন দুর্দিন আর কখনো দেখা যায়নি। গত ১৫ বছরে ৬০ জন সাংবাদিক হত্যা করা হয়েছে। জেলে ঢোকানো হয়েছে অনেক সাংবাদিককে। সত্য প্রকাশ করতে কিংবা পেশাগত দায়িত্বপালন করতে গিয়ে হামলা-মামলা ও নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হয়েছেন বহু সাংবাদিক। এমনকি কখনো কখনো প্রাণ পর্যন্ত বিসর্জন দিতে হচ্ছে। কিন্তু দেশে সাংবাদিক হত্যার বিচার হয় না। সাংবাদিক নির্যাতন-নিপীড়নের কোনো বিচার হয় না। এটা খুব ঝুঁকিপূর্ণ পেশা ঠিক আছে। তবে খুন হয়ে যাবে, নির্যাতিত হবে কিন্তু বিচার হবে না, এটা কোনো স্বাভাবিক পরিবেশ নয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাংবাদিক সুরক্ষার জন্য আইনি সহায়তাটাই বেশি দরকার। বিচারহীনতার কারণে সাংবাদিক হত্যা-নির্যাতন বাড়ছে। প্রতিটি ঘটনা অনুযায়ী দ্রুত দৃষ্টান্তমূলক বিচার হলে সাংবাদিক হত্যা কিংবা তাদের ওপর হামলা-মামলা ও হুমকি এসব অনেকটাই কমে আসবে। কিন্তু এটা কে করবে? যাদের দায়িত্ব তারাইতো নিপীড়কদের পৃষ্ঠপোষক! দেশে গণতন্ত্র নেই বলে সাংবাদিক নির্যাতন বাড়ছে।’
সম্মেলনে সাংবাদিক নেতারা বলেন, ‘মুক্ত পরিবেশ ছাড়া মুক্ত সাংবাদিকতা করা যায় না। দেশে গণতন্ত্র ও আইনের শাসন নেই বলেই আজ সাংবাদিকরা নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।’
সভায় বিশেষ অতিথি হিসেবে বিএফইউজের মহাসচিব কাদের গনি চৌধুরী বলেন, ‘সাংবাদিকরা হবে সত্যের পন্থি। সাদাকে সাদা আর কালোকে কালো বলবে। বাকস্বাধীনতা, গণতন্ত্র, মানবাধিকারহরণ, ভোটাধিকারহরণ, নির্যাতন, নিপীড়ন, শোষণ, অবিচারের বিরুদ্ধে কথা বলবে সাংবাদিকরা। এজন্যই গণমাধ্যম ও সাংবাদিকদের ভরসার শেষ ঠিকানা মনে করেন সাধারণ মানুষ। কিন্তু স্বাধীনতা না থাকায় সংবাদমাধ্যম আজ গণমুখী সংস্কৃতি হারিয়ে ফেলছে। সরকার নানা ধরনের কালাকানুন তৈরি করে গণমধ্যমের স্বাধীনতা হরণ করেছে। আজ গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ততটুকুই আছে যতটুকু সরকারের পক্ষে যায়।’
ময়মনসিংহ সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আইয়ুব আলীর সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বিএফইউজের সাংগঠনিক সম্পাদক এরফানুল হক নাহিদ, আবু বকর, হামিদুল হক মানিক, আমান উল্লাহ আকন্দ জাহাঙ্গীর। অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করেন জেইউএম-এর সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম।
পপি/সালমান/