ঢাকা ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, শুক্রবার, ৩১ মে ২০২৪

জিনদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা আছে কি?

প্রকাশ: ০৫ মে ২০২৪, ০৬:৪৫ পিএম
জিনদের প্রযুক্তিগত দক্ষতা আছে কি?
সুরা জিন পবিত্র কোরআনের ৭২তম সুরা। ছবি: ইন্টারনেট

কোরআন ও হাদিসের বহু জায়গায় জিনদের অস্তিত্বের বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে। অতীত ও বর্তমানের অসংখ্য মানুষ নানাভাবে জিনের অস্তিত্ব টের পেয়েছে। অনেকে অবশ্য বুঝে উঠতে পারেনি যে, সেগুলো জিন ছিল। কেউ তাদের ভেবেছে আত্মা, কেউ অদৃশ্য মানব, কেউ ভিনগ্রহের প্রাণী; কেউ আবার এ রকম কোনো কিছু। জিনদের অস্তিত্বের চাক্ষুষ একটি প্রমাণ হচ্ছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) নিজ চোখে তাদের দেখেছেন, তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন, শিক্ষা দিয়েছেন এবং তাদের কোরআন তেলাওয়াত করে শুনিয়েছেন। (সুরা জিন, আয়াত: ১ ও ৬)। এ ছাড়া তারা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে খাবার চেয়েছে। (মুসলিম, হাদিস: ৪৫০)

জিনদের আছে প্রযুক্তিগত জ্ঞান। আছে নির্মাণকাজে বেশ সক্ষমতা। ধারণা করা হয়, এ ব্যাপারে তাদের জ্ঞান মানুষের থেকেও বেশি। স্থাপত্য নির্মাণের জন্য তাদের আছে বিশেষ যন্ত্রপাতি। সুলাইমান (আ.) জিনদের দিয়ে এমন সব বিরাট বিরাট কাজ করিয়েছেন, যেগুলো বেশ শক্তি, বুদ্ধি ও নির্মাণশিল্পে বিশেষ দক্ষতা ছাড়া সম্ভব নয়। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘সুলাইমানের অধীন করেছিলাম বায়ুকে, যা সকালে এক মাসের পথ এবং সন্ধ্যায় এক মাসের পথ অতিক্রম করত এবং তার জন্য প্রবাহিত করেছিলাম তামার ঝরনা। আর ছিল এমন জিন, যারা তার প্রতিপালকের অনুমতিক্রমে তার সামনে কাজ করত। তাদের কেউ যদি আমার আদেশ থেকে বিমুখ হতো, তা হলে তাকে জ্বলন্ত আগুনের শাস্তি ভোগ করাতাম। তারা সুলাইমানের ইচ্ছামতো নির্মাণ করত উঁচু ভবন, ভাস্কর্য, হাউসের মতো বৃহদাকার পাত্র ও চুল্লির ওপর বিশাল ডেকচি। হে দাউদের পরিবার, কৃতজ্ঞতার সঙ্গে কাজ করো। আর আমার বান্দাদের মধ্যে অল্পই কৃতজ্ঞ।’ (সুরা সাবা, আয়াত: ১২-১৩)

এসব কাজের জন্য প্রয়োজন নির্মাণশিল্পে বিশেষ দক্ষতা, তীক্ষ্ণ বুদ্ধি ও সামর্থ্য। ইমাম বাগাবি (রহ.) বলেন, ‘জিনদের মাধ্যমে যেসব নির্মাণকাজ সম্পাদিত হয়েছে, মাসজিদুল আকসা সেগুলোর মধ্যে অন্যতম। উচ্চতায় এক মানুষ পরিমাণ কাজ করার পর দাউদ (আ.) মারা যান। পরে তার ছেলে সুলাইমানকে আল্লাহ এই কাজের দায়িত্ব দেন। জিনজাতি সুলাইমান (আ.)-এর অধীনে থাকায় তিনি সবাইকে একত্রিত করে আলাদা আলাদা কাজে নিয়োগ দেন। পুরো পৃথিবী থেকে আনা সোনা-রুপা, হিরা-জহরত, মণিমুক্তা ও সাদা পাথরে মসজিদটি এমনভাবে নির্মাণ করা হয়েছিল, ঘোর অমাবস্যার রাতেও তা পূর্ণিমার চাঁদের ন্যায় জ্বলজ্বল করত। বুখতেনসর সেখানে ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর আগ পর্যন্ত তেমনই ছিল। এ ছাড়াও সুলাইমান (আ.) জিনদের দিয়ে ইয়েমেনে পাথরের অনেক বড় বড় দালানকোঠা নির্মাণ করেছিলেন।’ (তাফসিরুল বাগাবি, খণ্ড: ৩, পৃষ্ঠা: ৬৭৩-৬৭৪)

জিনেরা শুধু (আ.)-এর জন্যই নয়; বরং তারা নিজেদের বা অন্যান্য মানুষের জন্যও স্বেচ্ছায় এমন অনেক কাজ করেছে, যা আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমেও করা দুষ্কর। অনেকেই মিশরের পিরামিড বা ইংল্যান্ডের স্টোনহেঞ্জের মতো কীর্তিগুলোকে জিনদের তৈরি বলে দাবি করেছেন। অবশ্য এ সম্পর্কে সুস্পষ্ট কোনো প্রমাণ নেই।

হাদিসে আছে, ‘শয়তান সমুদ্রে তার সাম্রাজ্য বিস্তার করেছে। সেখানে থেকেই সে তার সৈন্যবাহিনী পাঠায়।’ (মুসলিম, হাদিস: ২৮১৩)। বারমুডা ট্রায়াঙ্গলের ঘটনাগুলো নিশ্চিতভাবে দাবি করে, সমুদ্রে কোনো বিশেষ শক্তির প্রভাব রয়েছে। আর ইবলিস সেই শক্তির উৎস হওয়াটাও অযৌক্তিক নয়।

লেখক: আলেম, গবেষক ও সাংবাদিক

 

জিন: অদৃশ্য ও রহস্যময় এক সৃষ্টি

প্রকাশ: ৩১ মে ২০২৪, ০৯:০০ এএম
জিন: অদৃশ্য ও রহস্যময় এক সৃষ্টি
সৌদি আরবের মদিনায় অবস্থিত জিন উপত্যকার ছবি

আবহমান কাল থেকে মানুষের মধ্যে জিন সম্পর্কে নানারকম ভ্রান্ত ধারণা ও কল্পকাহিনি প্রচলিত আছে। তবে জিন, মানুষ এবং ফেরেশতাদের জগৎ সম্পূর্ণ আলাদা। জিন এক অদৃশ্য সৃষ্টি, আল্লাহতায়ালা এদের আগুন থেকে তৈরি করেছেন। পৃথিবীতে এদের অস্তিত্ব ছিল, আছে এবং কিয়ামত পর্যন্ত থাকবে। জিনদের অস্তিত্ব, জীবনাচার, খাদ্য, বিয়েশাদি, আমল-ইবাদত, শ্রেণিবিন্যাস এবং জিনদের নানাবিধ কাজ সম্পর্কে বিস্তারিত লিখেছেন মিরাজ রহমানরায়হান রাশেদ

জিন বলা হয় কেন?
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর তিনি (আল্লাহতায়ালা) জিনদের সৃষ্টি করেছেন ধোঁয়াহীন অগ্নিশিখা থেকে।’ (সুরা রহমান, ১৫) । আরবি ‘জিন’ শব্দের অর্থ আবরণ। জিন শব্দের ধাতু থেকে উৎপন্ন সব শব্দেই আবরণের অর্থ পাওয়া যায়। জিন ও মানুষের মাঝে টেনে দেওয়া হয়েছে আবরণ। ফলে মানুষ তাদের দেখতে পায় না। কিন্তু তারা ঠিকই মানুষকে দেখতে পায়। মানুষের দৃষ্টির আড়ালে থাকায় তাদের জিন বলা হয়। আল্লাহতায়ালা জিন ও শয়তানদের সম্পর্কে বলেছেন, ‘সে (শয়তান) ও তার দলবল তোমাদের যেভাবে দেখতে পায়, তোমরা তাদের সেভাবে দেখতে পাও না।’ (সুরা আরাফ, ২৭) 
সৃষ্টিজগতের মধ্যে একমাত্র মানুষ ও জিনদের আল্লাহতায়ালার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করা হয়েছে। মানবজাতির মতো কিয়ামতের মধ্য দিয়ে জিনেরাও ধ্বংস হয়ে যাবে। হাশরের ময়দানে হিসাব-নিকাশ হবে শুধু এই দুই জাতির, তাদের বুঝিয়ে দেওয়া হবে ভালো ও মন্দ কর্মের প্রতিদান। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘মানুষ ও জিনদের একমাত্র আমার ইবাদত করার জন্যই সৃষ্টি করেছি।’ (সুরা জারিয়াত, ৫৬)
ইসলাম তো বটেই, অন্যান্য ধর্মও জিনের অস্তিত্ব স্বীকার করে। খ্রিষ্টধর্মের অনুসারীরা মনে করেন, সব জিনই ইবলিস শয়তান। তাদের মধ্যে কোনো কল্যাণ নেই। সৃষ্টিগতভাবে তারা মানুষ থেকে শক্তিশালী। তারাই মানুষের সব পাপের নেপথ্যে ক্রিয়াশীল। তাই তাদের অপবিত্র আত্মা বা শয়তানের আত্মা বলে ডাকা হয়। (আল-মাওসুআতুল ইয়াহুদিয়া, ৫/১৫২৬)
ইহুদিদের ধর্মীয় গ্রন্থ তালমুদ অনুসারে, ‘শয়তান অর্থাৎ জিন কয়েক ধরনের, যাদের ভিন্ন ভিন্ন উপাদান থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। তাদের কাউকে সৃষ্টি করা হয়েছে আগুন থেকে, কাউকে পানি থেকে, কাউকে আবার বাতাস থেকে। মাটি থেকেও তৈরি করা হয়েছে তাদের এক দলকে। তবে সবার রুহ সৃষ্টি করা হয়েছে চাঁদের আলোর এক বিশেষ ধরনের উপাদান দিয়ে।’ (আসাতিতুল ইয়াহুদ, লুইস জিনজবার্গ, ১/২১৩)

এদের কখন সৃষ্টি করা হয়েছে?
মানুষ সৃষ্টির আগে আল্লাহতায়ালা জিনদের সৃষ্টি করেছেন। আল্লাহ বলেন, ‘আমি মানুষকে সৃষ্টি করেছি কালো কাদামাটি থেকে, যা শুকিয়ে ঠনঠনে হয়েছিল। আর তাদের আগে জিনকে সৃষ্টি করেছি লেলিহান অগ্নিশিখা থেকে।’ (সুরা হিজর, ২৬-২৭)ইবনে আব্বাস (রা.), আতা ইবনে রাবাহ, হাসান আল-বসরি, মুকাতিল ও কাতাদাসহ অধিকাংশের মতে, ‘আল-জান্না’দ্বারা উদ্দেশ্য ইবলিস অর্থাৎ আল্লাহ জিন জাতিকে সৃষ্টি করেছেন মানবজাতির আগেই। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা জান্নাতে আদমের প্রতিকৃতি তৈরি করার পর নির্দিষ্ট একটি সময় পর্যন্ত রেখে দেন। তখন ইবলিস আদমের মাটির প্রতিকৃতির চারপাশ ঘুরে ঘুরে এর মধ্যে ফাঁকা দেখে সে বুঝতে পেরেছিল, এটা এমন এক সৃষ্টি, যারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না।’(মুসলিম, ২৬১১) 
ইমাম হাকিম (রহ.) আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.)-এর সূত্রে বর্ণনা করেন, ‘মানুষ সৃষ্টির দুই হাজার বছর আগে আল্লাহতায়ালা জিন জাতিকে সৃষ্টি করেন। পৃথিবীর সর্বত্র তারা ফেতনা-ফ্যাসাদ ছড়াতে থাকে। অবশেষে আল্লাহ ফেরেশতাদের আদেশ করেন, তাদেরকে পিটিয়ে সমতলভূমি থেকে উচ্ছেদ করে সমুদ্রের বিভিন্ন দ্বীপে পাঠিয়ে দিতে। এরপর আল্লাহ যখন ফেরেশতাদের বললেন, পৃথিবীতে তিনি তাঁর প্রতিনিধি পাঠাবেন। ফেরেশতারা বলল, আপনি কি এমন জাতি পাঠাবেন, যারা ফেতনা-ফ্যাসাদ ও রক্তপাত করবে; আগে যেমন জিন জাতি করেছিল?’ (মুসতাদরাকুল হাকিম, ৩০৩৫) 
শরীর কেমন?
ইবলিস ও জিন সম্পর্কে আল্লাহ মানুষকে যতটুকু জানিয়েছেন, এর বাইরে তাদের অবয়ব, আকৃতি ও ক্ষমতা সম্পর্কে মানুষ তেমন কিছুই জানে না। মানুষের মতো জিনদেরও চোখ, কান ও হৃদয় আছে। আল্লাহ বলেন, ‘আমি অনেক জিন ও মানুষকে সৃষ্টি করেছি জাহান্নামের জন্য। তাদের হৃদয় আছে, কিন্তু তা দিয়ে তারা অনুধাবন করে না। তাদের চোখ আছে, কিন্তু তা দিয়ে তারা দেখে না। তাদের কান আছে, কিন্তু তা দিয়ে তারা শোনে না। তারা চতুষ্পদ জন্তুর মতো; বরং তার থেকেও নীচ; তারাই অমনোযোগী।’(সুরা আরাফ, ১৭৯)
বিশুদ্ধ সূত্রে বর্ণিত কিছু হাদিস থেকে জানা যায়, শয়তানদের জিহ্বা ও লালা আছে। আবু সাইদ খুদরি (রা.) বলেন, ‘তিনি একবার রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর পেছনে ফজরের নামাজ আদায় করছিলেন। হঠাৎ নবি (সা.) তেলাওয়াতের মাঝে এদিক-সেদিক করে ফেলেন। নামাজ শেষ করে তিনি বলে ওঠেন, তোমরা যদি আমাকে আর ইবলিসকে দেখতে পেতে! আমি তাকে জাপটে ধরে তার শ্বাসরোধ করার চেষ্টা করছিলাম। এমনকি আমার বৃদ্ধাঙুলি আর তর্জনীতে তার লালার শীতলতা টের পাচ্ছিলাম। আমার ভাই সুলাইমানের দোয়া না থাকলে আজ সকালে তোমরা তাকে মসজিদের খুঁটিতে বাঁধা অবস্থায় পেতে। আর মদিনার বাচ্চারা তাকে নিয়ে খেলা করত।’(মুসলিম, ৫৪২)

শ্রেণিবিন্যাস
জিনদের কি নাম আছে? কিংবা কোনো শ্রেণি বিভাগ? প্রকারভেদ অনুযায়ী তাদের একেক জনের নাম কি একেক রকম? চলুন বিষয়গুলো জেনে নিই—রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘জিনেরা তিন ধরনের। এক. যাদের পাখা আছে, যার সাহায্যে তারা বাতাসে উড়তে পারে। দুই. যারা কুকুর ও সাপের বেশ ধরে থাকে। তিন. যারা এদিক-সেদিক ঘুরে বেড়ায়, আবার কোথাও অবস্থান করে।’ (মুসতাদরাকুল হাকিম, ৩৭০২)
রাসুলুল্লাহ (সা.) সাহাবিদের বলেছেন, দ্বিতীয় প্রকারের জিন যদি বাসাবাড়ি ছাড়া অন্য কোথাও সাপের বেশে দেখা যায় এবং বোঝা না যায়, সেটা সাপ না জিন। তা হলে সাপ হিসেবে এর অনিষ্ট থেকে বাঁচতে, সেটাকে মেরে ফেলা যাবে। এমনকি যদি কোনো পবিত্র স্থানেও দেখা যায়। তবে ঘরবাড়িতে দেখা গেলে তিনবার বলবে, ‘এটা তোমার আবাসস্থল নয়; আল্লাহর দোহাই দিয়ে বলছি, যদি তুমি মুমিন হও, এখান থেকে চলে যাও। যদি না যাও, আমি তোমাকে হত্যা করব।’ এভাবে তিনবার বলার পর কিছুক্ষণ অপেক্ষা করবে। আবু লুবাবা (রা.) বলেন, ‘নবি (সা.) ঘরবাড়িতে দেখতে পাওয়া সাপকে তিনবার সতর্ক করার আগে মারতে নিষেধ করেছেন।’ (বুখারি, ৩২৮৯)। তিনবার সতর্ক করার পরও যদি না যায়, তা হলে মেরে ফেলবে। কারণ সেটা কোনো জিন নয়; বরং সাধারণ সাপ। তৃতীয় প্রকারের জিন, তারা যাযাবরের মতো ঘুরে বেড়ায়। ইচ্ছে হলে কোথাও নেমে থাকতে শুরু করে। কিছুদিন বা কয়েক মাস অথবা কয়েক বছর থাকার পর আবার চলে যায়। 
ইবনে আব্দিল বার (রহ.) বলেছেন, জিনদের বিভিন্ন শ্রেণি রয়েছে—১. সাধারণ জিনদের বলা হয় জিন্নি। ২. যেসব জিন মানুষের সঙ্গে বাসাবাড়িতে অবস্থান করে, তাদের বলা হয় আমির। ৩. যেসব জিন বাচ্চাদের সামনে আবির্ভূত হয়, তারা আরওয়াহ। এটি রুহ শব্দের বহু বচন। ৪. যেসব জিন খারাপ হয়ে যায় এবং মানুষের ক্ষতি করতে চায়, তারা শয়তান। ৫. যেসব শয়তানের দুষ্কৃতি খুব বেড়ে যায়, তাদের বলে মারিদ। ৬. যারা শক্তিশালী ও দুশ্চরিত্র হয়ে ওঠে, তাদের বলা হয় ইফরিত। (আত-তামহিদ, ইবনে আব্দিল বার, ১১/১১৭-১১৮)

দেখা যায় না কেন?
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মোরগের ডাক শুনলে তোমরা আল্লাহর কাছে রহমতের দোয়া করবে। কারণ মোরগ ফেরেশতাদের দেখতে পায়। আর গাধার ডাক শুনলে আল্লাহর কাছে শয়তানের কবল থেকে আশ্রয় চাইবে। কারণ গাধা শয়তানকে দেখতে পায়।’(বুখারি, ৩৩০৩)। এ হাদিস থেকে বোঝা যায়, গাধা ও কুকুর জিনদের দেখতে পায়। পশুপাখিরা জিন ও ফেরেশতাদের দেখতে পায়। এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। আল্লাহতায়ালা প্রাণীদের এমন অনেক ক্ষমতা দিয়েছেন, যা মানুষদের দেননি। নির্দিষ্ট প্রাণীর আচরণ পর্যবেক্ষণ করে ভূমিকম্পের সম্ভাবনা নির্ণয় করা হয়। ভূমিকম্পের আগমন টের পেলে এসব প্রাণী খুব দ্রুত পালিয়ে বেড়ায়। বিপদ খুব কাছে চলে এলে এরা কান পেতে তা শোনে। এরা এমন সব আওয়াজ শোনে, যা মানুষ শুনতে পায় না। আধুনিক প্রযুক্তি এখনো এতটা উন্নত হয়নি, যা দিয়ে পৃথিবীর বুকের ভেতর প্রোথিত এসব ভূমিকম্প ও অগ্ন্যুৎপাত থেকে নিশ্চিতভাবে আগাম সতর্কতা লাভ করা যায়। সংঘটিত কোনো পরিবর্তন দেখে আসন্ন বিপদের খবর পাওয়া যায়। অথচ আল্লাহ ছোট ছোট এসব প্রাণীকে এমন কিছু ক্ষমতা দিয়েছেন, যার সাহায্যে এরা এ ধরনের অনেক আগাম খবর জানতে পারে।
আল্লাহ পশুপাখিদের বিশেষ সক্ষমতা দিয়েছেন, তাই তারা জিন ও ফেরেশতাদের দেখতে পায়। এতে আশ্চর্যের কিছু নেই। ইমাম বুখারি মুসয়াব ইবনে উমাইর (রা.)-এর ঘটনা উল্লেখ করেছেন, তার ঘোড়া রাতে কোরআন তেলাওয়াতের সময় যে ছোটাছুটি করছিল, তা মূলত ফেরেশতাদের দেখার কারণে। রাসুলুল্লাহ (সা.) মুসয়াব (রা.)-কে বলেন, ‘তারা ছিল ফেরেশতা, তোমার সুমধুর তেলাওয়াত শুনতে তারা জড়ো হয়েছিল। যদি তুমি তেলাওয়াত করতেই থাকতে, সকালে মানুষ তাদের দেখতে পেত। তারাও মানুষদের থেকে আড়াল হতো না।’(বুখারি, ৫০১৮)

কোথায় বাস করে?
আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) ‘কার’ বিশিষ্ট ভূমিতে প্রবেশ করতে নিষেধ করছেন। কারণ সেটা তোমাদের ভাই জিনদের আবাসস্থল। রাসুলুল্লাহ (সা.)-কে জিজ্ঞাসা করা হলো, ‘কার’ কি? তিনি বলেন, ঘন ঝাড়-জঙ্গল, গাছপালা বিশিষ্ট নিম্নাঞ্চল। এ ছাড়া জনবসতির শৌচাগার, গোসলখানা, নোংরা ও অপবিত্র স্থান, আবর্জনার স্তূপ এবং কবরস্থানে দুষ্ট জিন-শয়তান বিচরণ করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয় শৌচাগারে দুষ্ট জিন-শয়তান উপস্থিত থাকে। তাই তোমরা যখন সেখানে প্রবেশ করবে তখন বলবে, বাংলা উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আউজুবিকা মিলান খুবুসি ওয়াল খবাইস।’ বাংলা অর্থ: আমি আল্লাহর কাছে যাবতীয় দুষ্ট পুরুষ ও নারী জিন ও শয়তান থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করছি।’ (আবু দাউদ, ৬) 
হাদিসে শৌচাগার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো, যেখানে নাপাকি থাকে বা শরীর বস্ত্রহীন করতে হয়, সেসব স্থানে শয়তানের আনাগোনা থাকে। মানুষকে বিবস্ত্র করা শয়তানের অন্যতম একটি মিশন। কারণ আল্লাহর এবং বান্দার মাঝে আবরণ হলো লজ্জা। আদম ও হাওয়া (আ.) যখন আল্লাহর আদেশ অমান্য করেছিলেন, প্রথমেই তাদের শরীর থেকে জান্নাতি পোশাক খুলে গিয়েছিল।
রাসুলুল্লাহ (সা.) মাটির গর্তে প্রস্রাব করতে নিষেধ করেছেন। আবদুল্লাহ ইবনে সারজিসের সূত্রে কাতাদা (রহ.) বর্ণনা করেন, গর্তে প্রস্রাব করতে নবিজি (সা.) নিষেধ করেছেন। কাতাদাকে জিজ্ঞেস করা হলো, কেন তিনি নিষেধ করেছেন? কাতাদা বলেন, ‘জিনদের বসবাসের স্থান।’
কবরস্থানে জিনেরা সাধারণত মানুষের মতোই যাতায়াত করে। আবার কখনো অবস্থান করে দীর্ঘদিন। ভালো-মন্দ সব ধরনের—এমনকি সেখানে দুষ্ট প্রকৃতির জিন-শয়তানরাও অবস্থান করে। একটা ভুল ধারণা লোকসমাজে প্রসিদ্ধ আছে, ‘বদকারদের কবরের আজাবের ভয়ে জিনেরা কবরস্থানে থাকে না।’ যেমনভাবে মানুষ কবরস্থানে যেতে ভয় পায়, বিশেষ করে একা একা রাতের বেলা, জিনেরাও তেমনই ভয় পায়। কবরে কাফেরকে প্রশ্নোত্তর করার পরের অবস্থা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘অতঃপর তার জন্য লোহার বিশাল হাতুড়িধারী একজন অন্ধ ও বধির ফেরেশতা নিযুক্ত করা হয়। যদি সে ওই হাতুড়ি দিয়ে পাহাড়কেও আঘাত করে তবে পাহাড় চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাবে। তিনি বলেন, সেই ফেরেশতা ওই হাতুড়ি দিয়ে কাফেরকে এমন জোরে আঘাত করে; যার আওয়াজ মানুষ ও জিন ছাড়া পূর্ব-পশ্চিমের সব সৃষ্টি শুনতে পায়। আঘাতে সে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে ধুলায় পরিণত হয়ে যায়। অতঃপর তাকে আবার জীবিত করা হয়।’ (আবু দাউদ, ৪৭৫৩)
এসব বর্ণনা থেকে বোঝা যায়, জীবিত মানুষের কবরস্থানে যাওয়া-আসা বা অবস্থান করা যেমন সাধারণ বিষয়, হোক সে ভালো কিংবা খারাপ, মুমিন বা কাফের, তেমনই জিনদের বেলায়ও একই ব্যাপার। কারণ, মানুষের মতো তারাও কবরের ভয়ানক আজাব দেখতে বা শুনতে পায় না। তাই কবরস্থানে জিন-শয়তান থাকে না, এমন কথা একেবারেই অবান্তর; বরং বিভিন্ন কবরস্থানে মাঝে মধ্যে যে ভৌতিক ঘটনা ঘটে থাকে, তা মূলত সেখানে উপস্থিত জিন-শয়তানরাই করে থাকে। এ ছাড়াও বাজার ও দোকানপাটে দুষ্ট জিন-শয়তানের আনাগোনা বেশি থাকে। আল্লাহর রাসুল (সা.) জানিয়েছেন, ‘বাজারে শয়তান তার যুদ্ধের পতাকা উত্তোলন করে।’ (মুসলিম, ২৪৫১) 

খাদ্য ও পানীয়
শৌচকর্ম সম্পাদনের জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) একবার আবু হুরায়রা (রা.)-কে কিছু পাথর নিয়ে আসতে বললেন। তবে হাড় বা গোবর আনতে নিষেধ করলেন। আবু হুরায়রা (রা.) কাপড়ে করে কিছু পাথর এনে সেগুলো নবিজি (সা.)-এর পাশে রেখে চলে গেলেন। নবিজি (সা.) কাজ সেরে ফিরে আসার পর আবু হুরাইরা জিজ্ঞেস করলেন, ‘ইয়া রাসুলাল্লাহ, হাড় ও গোবরে সমস্যা কী? তিনি উত্তরে বললেন, সেগুলো জিনদের খাবার। নাসিবিন শহরে জিনদের একটি প্রতিনিধি দল এসেছিল। তারা সবাই খুব ভালো জিন। আমার কাছে খাবার সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করেছিল। আমি আল্লাহর কাছে তাদের জন্য দোয়া করি। তাই তারা যে হাড় বা গোবরের পাশ দিয়ে যাবে, তাতেই নিজেদের জন্য খাবার খুঁজে পাবে।’ (বুখারি, ৩৮৬০)
এ জন্য কেউ যদি বিসমিল্লাহ বলে খাবার খায় এবং হাড় থেকে মাংস খাওয়ার পর নাপাক স্থানে না ফেলে, মুমিন জিনেরা সেই হাড় হাতে নিলে তাতে গোশত ফিরে আসবে। (তিরমিজি, ৩২৫৮)। আর দুষ্ট জিন এবং শয়তানরা খায় এমন সব খাবার, যেখানে আল্লাহর নাম উচ্চারিত হয় না। যেসব খাবারের শুরুতে বিসমিল্লাহ বলা হয়, সেগুলো তারা ছুঁয়েও দেখে না। আর গোবরে জিনদের পশুদের জন্য খাবার জমা হয়। তার মানে জিনদের পোষা প্রাণী আছে এবং তারা তাতে আরোহণ করে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘গোবর বা হাড় নাপাকি পরিষ্কারের কাজে ব্যবহার করো না। কারণ এগুলো তোমাদের ভাই জিনদের খাবার।’ (তিরমিজি, ১৮)

বিয়ে ও সন্তানসন্ততি
জিনদের মধ্যে বিয়ের প্রচলন রয়েছে। জিন ও শয়তান একই জাতি, একই উপাদান দিয়ে তাদের সৃষ্টি করা হয়েছে। মানুষের মতো তাদেরও সংখ্যা বৃদ্ধি হয় প্রজননের মাধ্যমে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা কি আমার পরিবর্তে তাকে (শয়তানকে) এবং তার চ্যালাচামুণ্ডাদের অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করেছ? অথচ তারা তোমাদের শত্রু। বস্তুত জালেমদের বিনিময় কতই না নিকৃষ্ট।’ (সুরা কাহাফ, ৫০)
জিনরাও স্ত্রী-সহবাস করে। তাদেরও আছে প্রবৃত্তির চাহিদা। জান্নাতের হুরদের বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘যাদের এর আগে কোনো মানুষ বা জিন সম্ভোগ করেনি।’ (সুরা রহমান, ৫৬)
কাতাদা (রহ.) বলেন, ‘মানুষের মতো জিনরাও সন্তান জন্ম দেয়।’ (তাফসিরে ইবনে আবি হাতিম, ১২৮৫১)। ইমাম বাইহাকি, সাবিত (রহ.) থেকে মুরসাল সূত্রে বর্ণনা করেন, ইবলিস বনি আদমের বিরুদ্ধে লড়াই করতে আল্লাহর কাছে তার সন্তান বৃদ্ধির জন্য দরখাস্ত করলে আল্লাহতায়ালা ইবলিসের আবেদন মঞ্জুর করে বলেন, ‘প্রতি একজন বনি আদমের বিপরীতে তোর সন্তান জন্ম হবে ১০ জন করে।’ (বাইহাকি, ৬৬৬৯)

জিনের সঙ্গে মানুষের বিয়ে
মানুষ ও জিন আলাদা জাতি। মৌলিক উপাদান ভিন্ন হওয়া এটির বড় প্রমাণ। অধিকাংশ ফকিহ জিনের সঙ্গে মানুষের বিয়েশাদি নিষেধ করেছেন; চাই সে পুরুষ হোক বা নারী। আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহর অন্যতম একটি নিদর্শন হলো, তোমাদের থেকেই তিনি তোমাদের সঙ্গিনী সৃষ্টি করেছেন, যাতে তোমরা তাদের কাছে প্রশান্তি লাভ করতে পারো। আর সুদৃঢ় করেছেন তোমাদের পরস্পরের মাঝে দয়া ও ভালোবাসা। নিশ্চয় এর মাঝে রয়েছে চিন্তাশীলদের জন্য বহু নিদর্শন।’(সুরা রুম, ২১)
অপর এক আয়াতে আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ তোমাদের থেকেই তোমাদের জোড়া তৈরি করেছেন।’(সুরা নাহল, ৭২)। এই দুই আয়াতের ব্যাখ্যায় মুফাসসিররা বলেছেন, ‘আল্লাহ পুরুষের সঙ্গী হিসেবে নারী জাতিকে সৃষ্টি করেছেন সমগোত্রীয় এবং একই উপাদান থেকে।’ আনাস ইবনে মালেক (রা.)-এর কাছে ইয়েমেনের এক সম্প্রদায় জিজ্ঞাসা করে, ‘একটি পুরুষ জিন আমাদের গোত্রের এক নারীর ব্যাপারে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে, তারা ভেবেছিল এ ধরনের বিয়ে হালাল হবে। আমরা কি তা কবুল করব? উত্তরে তিনি বলেন, আমি তা ভীষণ অপছন্দ করি। এর দ্বারা বরং ফেতনাই বৃদ্ধি পাবে। কারণ যখন কোনো গর্ভবতী নারীকে জিজ্ঞাসা করা হবে এটা কার সন্তান? সে বলবে জিনের। (রুহুল মায়ানি, ১০/১৮৪) আনাস ইবনে মালেক (রা.)-এর মতে, ‘কেউ কেউ জিনের সঙ্গে বিয়েকে হারাম না বলে অপছন্দনীয় বলেছেন।’(মাজমাউল ফাতাওয়া, ১৯/৩৯)

আমল-ইবাদত
পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আমি জিন ও মানবজাতিকে সৃষ্টি করেছি একমাত্র আমার ইবাদত করার জন্য।’(সুরা জারিয়াত, ৫৬)। হাশরের ময়দানে মানুষের মতো জিনদেরও হিসাব-নিকাশ হবে, প্রতিদানস্বরূপ দেওয়া হবে জান্নাত ও জাহান্নাম। ইসলামে মানুষ ও জিনদের ইবাদতের পদ্ধতি একই। শুধু তাই নয়, জিনদের মধ্যেও রয়েছে মানুষের মতো ধর্ম বিভাজন। এ সম্পর্কে জিনদের উক্তি আল্লাহ সুরা জিনে উল্লেখ করেছেন, ‘আর নিশ্চয় আমাদের (জিনদের) কতক সৎকর্মশীল এবং কতক এর ব্যতিক্রম। মূলত আমরা ছিলাম (মুসলিম ও কাফের) বিভিন্ন দলে বিভক্ত।’(সুরা জিন, ১১)
জিনেরা অদৃশ্য হওয়ায় তাদের আমল মানুষের দৃষ্টিগোচর হয় না। হাদিস, সাহাবি ও তাবিয়িদের থেকে এমন কিছু ঘটনার বর্ণনা উঠে এসেছে, যার মাধ্যমে জিনদের ইবাদত করার কথা জানা যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমরা রাতে তাহাজ্জুদের নামাজ আদায় করো, তেলাওয়াত উচ্চৈঃস্বরে করবে। কারণ এদিক-সেদিক ঘোরাফেরা করে বা সেই ঘরে বসবাস করে এমন জিন; তার সঙ্গে নামাজ আদায় করে ও মনোযোগসহকারে কোরআনের তেলাওয়াত শোনে।’(মুসনাদুল বাজজার, ২৬৫৫)
হজ ও ওমরার মতো শারীরিক ইবাদতেও জিনদের উপস্থিতি পরিলক্ষিত হয়েছে। আবু নুআইম স্বীয় গ্রন্থ দালাইলুন নুবুওয়াহতে বর্ণনা করেছেন, আতা ইবনে রাবা বলেন, ‘আবদুল্লাহ ইবনে আমর একবার মসজিদুল হারামে ছিলেন। হঠাৎ একটি সাপ এসে বায়তুল্লায় সাতটি তাওয়াফ করল এবং মাকামে ইবরাহিমে গিয়ে নামাজ আদায় করল। তখন আবদুল্লাহ ইবনে আমর দাঁড়িয়ে বললেন, ‘হে জিন, তোমার ইবাদত তো শেষ হয়েছে। মূর্খ লোকদের ভয়ে এখানে তোমার অবস্থান আমি নিরাপদ মনে করি না। এটা শুনে সাপটি কুণ্ডলী পাকিয়ে বসল, তারপর আকাশে উড়ে গেল।’(দালাইলুন নুবুওয়াহ, আবু নুআইম, ৫১৫)
মুমিন জিনরা নামাজসহ অন্যান্য ইবাদত করলেও কাফের ও দুষ্ট জিনরা সব সময় মানুষ ও জিনের ইবাদত ভণ্ডুল করতে সক্রিয় থাকে। (বুখারি, ৩৪২৩)

ইবলিস শয়তান জিন নাকি ফেরেশতা?
আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘আর যখন আমি ফেরেশতাদের বললাম, আদমকে সেজদা করো; তখন ইবলিস ছাড়া সবাই সেজদা করল। সে দম্ভভরে প্রত্যাখ্যান করল। ফলে সে কাফেরদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।’ (সুরা বাকারা, ৩৪) 
কোরআনের এই আয়াত থেকে কারও কারও মনে প্রশ্ন আসা স্বাভাবিক যে, ইবলিসকে কেন ফেরেশতাদের সঙ্গে সিজদা করতে আদেশ করা হলো? ইবলিস কি তাহলে ফেরেশতাদের দলভুক্ত? ইবলিস জিনদের একজন, তার মৌলিক উপাদান আগুন। ইমাম রাজি (রহ.) তিনটি দলিল উপস্থাপন করে বলেছেন, ‘ইবলিসের জিন প্রমাণিত হওয়ার জন্য এই দলিলগুলো যথেষ্ট।’(আত-তাফসিরুল কাবির, ২/৪২৯-৩০)
এক. ইবলিসকে সৃষ্টি করা হয়েছে আগুন থেকে। কোরআনে এসেছে, ইবলিস বলেছে, ‘আপনি আমাকে সৃষ্টি করেছেন আগুন থেকে আর তাকে (আদমকে) সৃষ্টি করেছেন মাটি থেকে।’(সুরা আরাফ, ১২)
দুই. ইবলিসের ছেলেমেয়ে আছে, সে বংশবিস্তার করে। ফেরেশতারা এসব বিষয় থেকে মুক্ত। তাদের স্ত্রী-সন্তান নেই। তাদের মধ্যে নেই নারী-পুরুষের বিভাজনও। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা কি তাকে (ইবলিসকে) এবং তার বংশধরকে আমার পরিবর্তে অভিভাবক হিসেবে গ্রহণ করছ?’ (সুরা কাহফ, ৫০)
তিন. ফেরেশতারা আল্লাহর সব আদেশ মেনে চলে। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘তারা (ফেরেশতারা) কখনোই আল্লাহর আদেশ অমান্য করে না; বরং যে কাজে তাদের নিয়োজিত করা হয়েছে, সব সময় সেই কাজই করে।’(সুরা তাহরিম, ৬)

লেখকদ্বয় : বিভাগীয় সম্পাদক ও সহ-সম্পাদক, ইসলাম, খবরের কাগজ

 

উপার্জন বৃদ্ধির আমল

প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
উপার্জন বৃদ্ধির আমল
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত দোয়ারত এক ব্যক্তির ছবি।

আয়-উপার্জন বৃদ্ধি নিয়ে মানুষ প্রায়ই পেরেশান থাকে। বেশ পরিশ্রম করে রিজিক তালাশ করে। অনেক মানুষ সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্য ইবাদত ভুলে গিয়ে কাজে ব্যস্ত থাকে। অথচ এই রিজিকের মালিক একমাত্র আল্লাহ। আল্লাহর এক নাম রাজ্জাক, যার অর্থ হলো রিজিকদাতা। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘বলো, আমার প্রতিপালক নিজ বান্দাদের মধ্যে যার জন্য ইচ্ছা রিজিকের প্রাচুর্য দান করেন এবং (যার জন্য ইচ্ছা) তা সংকীর্ণ করে দেন, তোমরা যা কিছুই ব্যয় ‌কর তিনি তার জায়গায় অন্য জিনিস দিয়ে দেন। তিনি শ্রেষ্ঠ রিজিকদাতা।’ (সুরা সাবা, আয়াত: ৩৯)

উপার্জন বৃদ্ধির ব্যাপারে কোরআন-হাদিসে কিছু আমলের কথা বর্ণিত হয়েছে। এখানে কয়েকটি উল্লেখ করা হলো-

বেশি বেশি ইসতেগফার করা
আয়-উপার্জন বৃদ্ধির পরীক্ষিত ও গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম হলো, বেশি বেশি ইসতেগফার করা। আল্লাহ বলেন, ‘আমি তাদেরকে বলেছি, নিজ প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। তিনি আকাশ থেকে তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করেন। এবং তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে উন্নতি দান করেন এবং তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেন উদ্যান আর তোমাদের জন্য নদ-নদীর ব্যবস্থা করে দেবেন।’ (সুরা নুহ, আয়াত: ১০-১২)

যে দোয়া বেশি পড়তে হয়

বাংলা উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মাগ ফিরলি জাম্বি, ওয়া ওয়াসসি লি ফি দারি, ওয়া বারিক লি ফিমা রাজাকতানি।’

বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ, আমার গুনাহ ক্ষমা করে দিন, আমার ঘর প্রশস্ত করে দিন এবং আপনি আমাকে যে রিজিক দান করেছেন, তাতে বরকত দান করুন।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৩৫০)

আল্লাহর ওপর পূর্ণ ভরসা রাখা
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা যদি আল্লাহতায়ালার ওপর যথাযথ ভরসা রাখতে, তা হলে তোমরা সেভাবে রিজিকপ্রাপ্ত হতে, যেভাবে পাখিদের দেওয়া হয়। সকালবেলা খালি পেটে বের হয়, সন্ধ্যাবেলা ভর পেটে ফিরে আসে।’ (তিরমিজি, হাদিস:২৩৪৪)

আত্মীয়তার সম্পর্ক ঠিক রাখা
আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘আমি প্রিয় নবি (সা.)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি রিজিকের প্রশস্ততা ও আয়ু বৃদ্ধি করতে চায়, সে যেন তার আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করে।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৫৫৯)

দান করা
রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘হে আদম সন্তান, খরচ করো। আমিও তোমার ওপর খরচ করব।’ (বুখারি, হাদিস: ৫৩৫২)

লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া কাশেফুল উলুম মাদরাসা, মধুপুর

ইশরাকের নামাজ কি ও কখন পড়তে হয়?

প্রকাশ: ৩০ মে ২০২৪, ০৯:০০ এএম
ইশরাকের নামাজ কি ও কখন পড়তে হয়?
নামাজরত এক মুসল্লির ছবি। ইন্টারনেট

ইশরাক অর্থ আলোকিত হওয়া, উজ্জ্বল হওয়া। সূর্য পরিপূর্ণভাবে উদিত হওয়ার পর ইশরাকের নামাজ আদায় করতে হয়। হাদিসে এ নামাজকে সালাতুত দোহা বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে।

ইশরাকের উত্তম সময়
ইশরাক নামাজের মূল সময় সূর্যোদয় থেকে নিয়ে সূর্য মাথার ওপরে আসা পর্যন্ত। তবে উত্তম হলো সূর্য উদিত হওয়ার কিছুক্ষণ পর আদায় করা। রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর হাদিসসমূহ থেকে এমনই জানা যায়। আলেমরা বলেন, সূর্য ওঠার ১০-১২ মিনিট পর এই নামাজ আদায় করতে হয়। তবে ১৫ মিনিট পর পড়া ভালো। কেউ কেউ ২০ মিনিট পর পড়ার কথাও বলেছেন।

ইশরাক নামাজের গুরুত্ব ও ফজিলত

রাসুলুল্লাহ (সা.) সব সময় ইশরাক নামাজ আদায় করেছেন। সাহাবায়েকেরাম (রা.)-কেও আদায়ে উদ্বুদ্ধ করেছেন। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, ‘আমার প্রিয়তম রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে তিনটি বিষয়ে অসিয়ত করেছেন, যেন আমি তা মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ত্যাগ না করি। এক. প্রতি মাসে তিন দিন রোজা রাখা, দুই. দুহার নামাজ, তিন. ঘুমানোর আগে বিতর আদায় করা।’ (বুখারি, হাদিস: ১১৭৮)

হজ বা উমরা করা প্রত্যেক মুসলমানের জীবনের অন্যতম কাঙ্ক্ষিত স্বপ্ন। ইশরাকের নামাজ আদায়ে হজ ও উমরার সওয়াব পাওয়া যায়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি জামাতের সঙ্গে ফজরের নামাজ আদায় করল এবং সূর্যোদয় পর্যন্ত আল্লাহর জিকিরে বসে থাকল; অতঃপর দুই রাকাত নামাজ আদায় করল, সে একটি পরিপূর্ণ হজ ও উমরার সওয়াব পাবে।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৫৮৬)

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘মানুষের শরীরে ৩৬০টি জোড়া আছে। অতএব, মানুষের কর্তব্য হলো প্রত্যেক জোড়ার জন্য একটি করে সদকা করা। সাহাবায়েকেরাম বলেন, ‘হে আল্লাহর রাসুল, কার শক্তি আছে এই কাজ করার?’ তিনি বলেন, ‘মসজিদে কোথাও থুতু দেখলে তা ঢেকে দাও অথবা রাস্তায় কোনো ক্ষতিকারক কিছু দেখলে সরিয়ে দাও। তবে এমন কিছু না পেলে, চাশতের দুই রাকাত নামাজ এর জন্য যথেষ্ট।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৫২২২)

ইশরাকের নামাজের জন্য আলাদা কোনো নিয়ম-পদ্ধতি নেই। ইশরাকের নামাজ অন্যান্য নফল নামাজের মতো দুই রাকাত দুই রাকাত করে পড়তে হয়। 

লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক

সম্পদ ও রিজিক বৃদ্ধির দোয়া

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৪, ০৭:০০ পিএম
সম্পদ ও রিজিক বৃদ্ধির দোয়া
ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত দোয়ারত এক মুসল্লির ছবি।

আল্লাহতায়ালা মানুষকে হালাল উপায়ে রিজিক অন্বেষণের নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘অতঃপর নামাজ শেষ হয়ে গেলে তোমরা জমিনে ছড়িয়ে পড়ো এবং আল্লাহর অনুগ্রহ সন্ধান করো এবং আল্লাহকে স্মরণ করো বেশি বেশি, যাতে তোমরা সফলকাম হও।’ (সুরা জুমা, আয়াত: ১০)

পৃথিবীর প্রতিটি সৃষ্টিজীবের রিজিক আল্লাহতায়ালার পক্ষ থেকে নির্ধারিত। আল্লাহ বলেন, ‘ভূপৃষ্ঠে বিচরণকারী এমন কোনো প্রাণী নেই, যার রিজিক আল্লাহ নিজ দায়িত্বে রাখেননি। তিনি তাদের স্থায়ী ঠিকানাও জানেন এবং সাময়িক ঠিকানাও। সবকিছুই সুস্পষ্ট কিতাবে লিপিবদ্ধ আছে।’ (সুরা হুদ, আয়াত: ৬)

কোরআন-সুন্নাহর আলোকে এমন কিছু আমলের কথা জানা যায়, যার দ্বারা সম্পদ বা রিজিক বৃদ্ধি পায়। এখানে কয়েকটি আমল তুলে ধরা হলো—

দোয়া পড়লে রিজিক বাড়ে

বাংলা উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আসয়ালুকাল হুদা, ওয়াত তুকা, ওয়াল আফাফা ওয়াল গিনা।’

বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ, আমি তোমার কাছে হেদায়েত, তাকওয়া, চরিত্রের নির্মলতা ও ধনাঢ্যতা প্রার্থনা করছি। (তিরমিজি, হাদিস: ৩৪৮৯)

বেশি বেশি ইসতেগফার করা
আয়-উপার্জন বৃদ্ধির পরীক্ষিত ও গুরুত্বপূর্ণ একটি মাধ্যম হলো, বেশি বেশি ইসতেগফার করা। আল্লাহ বলেন, ‘আমি তাদেরকে বলেছি, নিজ প্রতিপালকের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করো। নিশ্চয়ই তিনি অতিশয় ক্ষমাশীল। তিনি আকাশ থেকে তোমাদের ওপর প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করেন। এবং তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততিতে উন্নতি দান করেন এবং তোমাদের জন্য সৃষ্টি করেন উদ্যান আর তোমাদের জন্য নদ-নদীর ব্যবস্থা করে দেবেন।’ (সুরা নুহ, আয়াত: ১০-১২)

যে দোয়া বেশি পড়তে হয়

বাংলা উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মাগ ফিরলি জাম্বি, ওয়া ওয়াসসি লি ফি দারি, ওয়া বারিক লি ফিমা রাজাকতানি।’ 

বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ, আমার গুনাহ ক্ষমা করে দিন, আমার ঘর প্রশস্ত করে দিন এবং আপনি আমাকে যে রিজিক দান করেছেন, তাতে বরকত দান করুন।’ (তিরমিজি, হাদিস: ৩৫০)

দোয়া পড়া

বাংলা উচ্চারণ: ‘আল্লাহুম্মা ইন্নি আস আলুকা ইলমান নাফিআ, ওয়া আমালান মুতাকাব্বালা, ওয়া রিজকান তাইয়িবা। 

বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ, আমি তোমার কাছে উপকারী জ্ঞান চাই, কবুল হওয়ার মতো আমল ও পবিত্র রিজিক চাই।’ (ইবনে মাজা)

সুরা কুরাইশ পড়া
হজরত জুলফিকার নকশেবন্দি খুতবাতে জুলফিকার কিতাবে উল্লেখ করেছেন, সকাল-সন্ধ্যা সুরা কুরাইশের আমল করার দ্বারা সম্পদ ও রিজিক বৃদ্ধি পায়। (খুতবাতে জুলফিকার)

লেখক: মুহাদ্দিস, জামিয়া কাশেফুল উলুম মাদরাসা, মধুপুর

 

কসর নামাজের নিয়ম ও নিয়ত

প্রকাশ: ২৯ মে ২০২৪, ০৯:০০ এএম
কসর নামাজের নিয়ম ও নিয়ত
প্রতীকী ছবি

কসর অর্থ সংক্ষিপ্ত। কোনো মুসলিম ৪৮ মাইল তথা ৭৮ কিলোমিটার দূরত্বে সফর করলে ফরজ নামাজ কসর বা সংক্ষিপ্ত করে পড়তে হয়। নামাজে কসর করার অনুমতি বান্দার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে নেয়ামত। আল্লাহ বলেন, ‘তোমরা যখন জমিনে সফর করবে, তখন তোমাদের জন্য নামাজের কসর করায় কোনো আপত্তি নেই।’ (সুরা নিসা, আয়াত: ১০১)

কসর কখন করবে
ব্যক্তি তার অবস্থানস্থল থেকে ৪৮ মাইল তথা ৭৮ কিলোমিটার দূরে সফরের নিয়তে বের হয়ে নিজ শহর বা গ্রাম পেরিয়ে গেলেই মুসাফির হয়ে যায়। মুসাফির নামাজ সংক্ষিপ্ত করবেন। (জাওয়াহিরুল ফিকহ: ১/৪৩৬)

কসর নামাজের নিয়ত


নিয়ত হলো অন্তরের ইচ্ছা। মানুষের অন্তরে যে ইচ্ছা বা উদ্দেশ্য থাকে, সেটাই নিয়ত। কসরের নামাজের বিশেষ কোনো নিয়ত নেই। আমরা যেভাবে ফরজ নামাজের নিয়ত করি, ঠিক সেভাবে কিবলামুখী হয়ে নিয়ত করতে হবে। শুধুমাত্র সেখানে কসরের নামাজ এবং দুই রাকাত কথাটি উল্লেখ করে দিতে হবে।

কসরের নামাজের নিয়ম

মুসাফির ব্যক্তি প্রত্যেক চার রাকাতবিশিষ্ট ফরজ নামাজ দুই রাকাত করে আদায় করবেন। তিন রাকাতবিশিষ্ট এবং দুই রাকাতবিশিষ্ট নামাজ কমানো যাবে না। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আল্লাহতায়ালা তোমাদের নবি (সা.)-এর মুখে নামাজকে মুকিম অবস্থায় চার রাকাত ও সফর অবস্থায় দুই রাকাত ফরজ করেছেন।’ (মুসলিম, হাদিস: ৬৮৭)

তবে ফুকাহায়েকেরাম বলেন, মুসাফির ব্যক্তি মুকিম ইমামের পেছনে ইকতিদা করলে সে ইমামের অনুসরণেই পূর্ণ নামাজ আদায় করবে। (আল মাবসুত, সারাখসি: ১/২৪৩)

আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘মুসাফির যদি মুকিমদের সঙ্গে নামাজে শরিক হয়, তবে সে যেন তাদের মতো (চার রাকাত) নামাজ পড়ে।’ (ইবনে আবি শাইবা, হাদিস: ৩৮৪৯)


লেখক: আলেম ও মাদরাসা শিক্ষক