অনেক কিংবা একাধিক পরিবর্তন নয়। পাঁচ দিনের পরিবর্তে কেবল চার দিন। ইংল্যান্ড এবং জিম্বাবুয়ের মধ্যকার চার দিনের খেলাটি ঐতিহ্যবাহী ‘পাঁচ দিনের’ ম্যাচের একটি সংক্ষিপ্ত সংস্করণ মাত্র। নটিংহামের ট্রেন্টব্রিজে উভয় দলই দুটি করে ইনিংস খেলবে এবং প্রতিদিন ৯০ ওভারের খেলা হবে। এই শতাব্দীর শুরু থেকে এটি হবে দ্বিতীয় চার দিনের টেস্ট, যা ক্রিকেটের লংগার ভার্সনে একটি নতুন যুগের সূচনার প্রতীক।
ঐতিহ্যগতভাবে টেস্ট ক্রিকেট পাঁচ দিনের খেলা। কিন্তু চার দিনের ম্যাচগুলো নতুন কিছু নয়। ১৯৭৯ সাল থেকে পাঁচ দিনের টেস্ট চূড়ান্ত হয়ে ওঠার আগে, টেস্ট ক্রিকেট বিভিন্ন ধরনের ফরম্যাট নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করত: তিন, চার, পাঁচ, এমনকি ছয় দিনের ম্যাচ খেলা হতো এবং কিছু টেস্টের কোনো সময়সীমা ছিল না- তথাকথিত ‘টাইমলেস টেস্ট’। সর্বশেষ আনুষ্ঠানিক চার দিনের টেস্টটি ১৯৭৩ সালে নিউজিল্যান্ড এবং পাকিস্তানের মধ্যে খেলা হয়েছিল। ২০১৭ সালে আইসিসি দক্ষিণ আফ্রিকা এবং জিম্বাবুয়ের মধ্যে একটি ম্যাচ দিয়ে ফরম্যাটটি পরীক্ষা করে। যদিও সেই ম্যাচটি দুই দিনের মধ্যে শেষ হয়ে গিয়েছিল।
টি-টোয়েন্টির যুগে টাইমলেস্ট টেস্ট কিংবা পাঁচ দিনের টেস্ট অনেকটা দীর্ঘ মনে হচ্ছে। লজিস্টিক সাপোর্ট থেকে শুরু করে দীর্ঘ ম্যাচের প্রতি দর্শকদের আগ্রহ হ্রাস পর্যন্ত সবকিছু সমাধানের চ্যালেঞ্জ নিয়েছে আইসিসি। তারই একটি ইংল্যান্ড-জিম্বাবুয়ে ম্যাচ। এটি আধুনিক যুগে ভক্ত, ব্রডকাস্টার এবং খেলাসংশ্লিষ্ট প্রত্যেকেই চাহিদা মেটাতে ঐতিহ্যবাহী ফরম্যাট নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার জন্য আইসিসির ইচ্ছার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
অনেক কারণেই ক্রিকেটের প্রাচীনতম এবং সবচেয়ে মর্যাদাপূর্ণ ফরম্যাট টেস্ট নিয়ে এভাবে পুনর্বিবেচনা করা হচ্ছে। একটি প্রধান কারণ হলো টেস্ট ম্যাচের পরিবর্তিত প্রকৃতি। ২০২৪ সালে বিশ্বব্যাপী ৫২টি টেস্ট ম্যাচ খেলা হয়েছিল এবং ফল হয় ৪৯টিতে। যে তিনটি হয়নি, তার মধ্যে একটি পরিত্যক্ত হয়েছিল কোনো বল ছাড়াই। বাকি দুটিতে বৃষ্টিপাতের প্রভাব ছিল। গত বছর গড়ে টেস্ট ম্যাচ প্রায় ২৬৮ ওভার স্থায়ী হয়েছিল, যা প্রায় তিন দিনের পূর্ণাঙ্গ ক্রিকেটের সমান। এটাই জানান দেয় যে, সিংহভাগ ম্যাচের ফলাফলে পৌঁছাতে আর পুরো পাঁচ দিনের প্রয়োজন হয় না।
চার দিনের টেস্টের দিকে এগিয়ে যাওয়ার পেছনে আরেকটি মূল চালিকাশক্তি হলো আইসিসি বিশ্ব টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের (ডব্লিউটিসি) পয়েন্ট সিস্টেম। এই সিস্টেমের অধীনে, একটি জয়ের মূল্য ১২ পয়েন্ট, কিন্তু একটি ড্র মাত্র চার পয়েন্ট অর্জন করে। এটি দলগুলোকে ফলাফল-ভিত্তিক পিচ প্রস্তুত করতে উৎসাহিত করেছে, যার ফলে ড্রয়ের সম্ভাবনা কম এবং পাঁচ দিনের পূর্ণাঙ্গ খেলার প্রয়োজন হ্রাস পেয়েছে।
সম্প্রচার এবং আর্থিক দৃষ্টিকোণ থেকে, চার দিনের টেস্ট বেশ কিছু সুবিধা প্রদান করে। প্রথমত, ম্যাচের সময়সূচি নির্ধারণ করা সহজ করে তোলে। যেহেতু খেলোয়াড়দের টেস্টের মধ্যে কমপক্ষে তিন দিনের বিশ্রামের প্রয়োজন হয়, তাই ম্যাচ সংক্ষিপ্ত করার ফলে বোর্ডগুলো সময়সূচির সঙ্গে আরও নমনীয় হতে পারে। সম্প্রচারক এবং হোম বোর্ডগুলোর জন্য খরচ সাশ্রয় উল্লেখযোগ্য হতে পারে। পঞ্চম দিনের জন্য পরিকল্পনা করা ব্যয়বহুল, বিশেষ করে ছোট ক্রিকেট খেলুড়ে দেশগুলোর জন্য। এখন পঞ্চম দিনটি বাদ দিলে বার্ষিক এবং লজিস্টিক খরচে লাখ লাখ টাকা সাশ্রয় হতে পারে।
ভক্তদের জন্য, চার দিনের টেস্ট ফরম্যাটটি আরও সহজলভ্য হতে পারে। এটা টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ানডে ক্রিকেটের দ্রুত গতিতে অভ্যস্ত নতুন দর্শকদের কাছে আবেদন সৃষ্টি করতে পারে। এক কথায়, চার দিনের টেস্ট ক্রিকেটের ঐতিহ্য এবং আধুনিক ক্রীড়া ব্যবহারের বাস্তবতার মধ্যে একটি সেতুবন্ধন তৈরি করে। অনেকেই, বিশেষ করে সমালোচকরা যুক্তি দেন যে, চার দিনের টেস্ট ফরম্যাটটির ঐতিহ্যকে হারিয়ে ফেলবে। তারা টেস্টকে ক্রিকেটের ধৈর্যশীল, সহশীলতার সবচেয়ে কঠোর এবং চূড়ান্ত পরীক্ষার দৃষ্টিতে দেখেন।
তবে আইসিসির বিশ্বাস, সমালোচকদের দৃষ্টিভঙ্গি খেলার ঐতিহাসিক নমনীয়তাকে ধ্বংস করবে না। খেলাটি ক্রমেই বিকশিত হচ্ছে এবং ইংল্যান্ড-জিম্বাবুয়ে ম্যাচটি নতুন সূচনালগ্নকে সফল করে তুলবে। আর যদি তাই হয়, তাহলে ভবিষ্যতের জন্য একটি অপরিহার্য অংশ হয়ে উঠতে পারে চার দিনের টেস্ট।