![অভাগার আরেক নাম নিউজিল্যান্ড](uploads/2024/05/25/New-Zealand-Team-Preview-1716611076.jpg)
বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে ফেবারিট কারা? দৃঢ় বিশ্বাসের সঙ্গে ক্রিকেটবোদ্ধারা বাজি ধরে, নিউজিল্যান্ডের পক্ষে। এটা যেমন কিউইদের সৌভাগ্য, তেমনি দুর্ভাগ্য। আইসিসির সাদা বলের বিশ্বকাপে সেমির দল তারা। সেরা চারে উঠে ভক্তদের স্বপ্ন দেখায় শিরোপা জেতার। কিন্তু সেমি কিংবা ফাইনাল সেই স্বপ্ন রূপ নেয় দুঃস্বপ্নে। স্বপ্ন-দুঃস্বপ্নের এমন মিশ্র আবেগে অভাগার আরেক নাম নিউজিল্যান্ড।
ওয়ানডে কিংবা টি-টোয়েন্টি, দুই ফরম্যাটের বিশ্বকাপে ফাইনাল খেলেছে কিন্তু শিরোপা নেই এমন একটি দলই রয়েছে। সেটা নিউজিল্যান্ড। সীমিত ওভারের বিশ্বকাপে সেমি খেলেছে ১০ বার এবং ফাইনাল হেরেছে ৩ বার। সাদা বলে তাদের মেজর টুর্নামেন্ট জয় বলতে কেবল ২০০০ আইসিসি ট্রফিতে। দ্বিতীয় আইসিসি শিরোপা এসেছে ২১ বছর পর। ২০২১ সালে ওয়ার্ল্ড টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনালে ভারতকে হারানোর মধ্য দিয়ে।
সীমিত ওভারে দুই বিশ্বকাপের প্রথম সংস্করণে সেমিফাইনালে বাদ পড়েছিল নিউজিল্যান্ড। একই দুর্ভাগ্যের শিকার হয়েছে টুর্নামেন্টে দুটি সবশেষ সংস্করণে! সবশেষ ভারতে ওয়ানডে বিশ্বকাপে সপ্তমবারের মতো সেমিফাইনাল থেকে বিদায় নেয় শান্তির দেশের ক্রিকেটাররা। এর আগে সেরা চার থেকে বিদায় নিয়েছিল ১৯৭৫, ১৯৭৯, ১৯৯২, ১৯৯৯, ২০০৭ এবং ২০১১ সংস্করণে। টুর্নামেন্টে এমনকি ব্যাক-টু-ব্যাক ফাইনাল হারের কষ্টও রয়েছে কিউইদের।
বহু চেষ্টার পর, ২০১৫ ওয়ানডে বিশ্বকাপে প্রথমবারের ফাইনাল নিশ্চিত করেছিল নিউজিল্যান্ড। শিরোপা লড়াইয়ে হেরে যায় অস্ট্রেলিয়ার কাছে। পরের সংস্করণে সুপার ওভার রোমাঞ্চে ফাইনাল হেরে যায় ইংল্যান্ডের কাছে। ফরম্যাট বদলালেও ভাগ্য বদলায়নি নিউজিল্যান্ডের। ২০২১ সালে প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনাল নিশ্চিত করেছিল কিউইরা। প্রতিপক্ষ হিসেবে পায় অস্ট্রেলিয়াকে। ফল একই। আরেকটি ফাইনাল হারের গল্প। সবশেষ অস্ট্রেলিয়া পর্দা উঠা টুর্নামেন্টে তারা বিদায় নেয় সেমিফাইনাল থেকে।
সব মিলিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সবশেষ তিন আসরে সেমিফাইনাল খেলেছে নিউজিল্যান্ড। যারা এখনো প্রথম সীমিত ওভারের বিশ্বকাপ জয়ের অপেক্ষায়। তাই কিউই এবং ভক্তরা নতুন করে স্বপ্ন বুনেছেন। তার বাস্তব প্রতিফলন হয় কি না সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা।
অভিজ্ঞতার কমতি নেই দলে
সবার আগে বিশ্বকাপের দল ঘোষণা করেছে নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড (এনজেডসি)। দুই শিশুকে দিয়ে দল ঘোষণায় তারা চমকে দিয়েছে সবাইকে। তবে ১৫ সদস্যের স্কোয়াড সাজাতে কোনো ঝুঁকি নেয়নি এনজেডসি। সেরাদের রেখে বিশ্বমানের এক দল সাজিয়েছে কিউই নির্বাচকরা। তাদের সেই সাজানো দলে অভিজ্ঞতার কমনি নেই।
২০২২ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফর করা ১৫ কিউই ক্রিকেটারের ১৩ জনকে রাখা হয়েছে বিশ্বকাপ পরিকল্পনায়। যেহেতু বিশ্বকাপের সিংহভাগ খেলা হবে ক্যারিবীয় দ্বীপে। নিউজিল্যান্ডকে প্রথম আইসিসি টুর্নামেন্ট জেতানোর মিশনে নেতৃত্বে থাকবেন কেন উইলিয়ামসন। এটা হবে তার ষষ্ঠ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, টিম সাউদির সপ্তম এবং ট্রেন্ট বোল্টের পঞ্চম। পেস আক্রমণভাগে সাউদি-বোল্টের সঙ্গী লুকি ফার্গুসন এবং ম্যাট হেনরি।
বিশ্বকাপ দলে ঠাঁই পেয়েছেন ডেভন কনওয়ে, যিনি আঙুলের চোট থেকে সেরে ওঠার প্রক্রিয়ায় আছেন। রাখা হয়েছে পার্ট টাইম কিপার ফিন অ্যালেনকে। পাকিস্তান সিরিজে নেতৃত্বে থাকা মাইকেল ব্রেসওয়েল টিকে গেছে দলে। নিউজিল্যান্ড শিবিরে আছেন পেস বোলিং অলরাউন্ডার জিমি নিশাম এবং ড্যারিল মিচেল। ব্যাটিং বিভাগে উইলিয়ামসন, কনওয়ে এবং অ্যালেন ছাড়াও আছেন গ্লেন ফিলিপস, রাচিন রবীন্দ্র এবং মার্ক চাপম্যান। স্পিন বিভাগ সামলাবেন মিচেল সান্তনার এবং ইশ সোধি। হেনরি এবং রাচিন প্রথমবারের মতো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলবেন।
হঠাৎ আড়াল উইলিয়ামসনরা
বিশ্বকাপের বছরে টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে ব্যস্ত সময় পার করেছে নিউজিল্যান্ড। ৩ সিরিজে খেলেছে ১৩টি ম্যাচ। জানুয়ারিতে ঘরের মাটিতে পাকিস্তানকে ৫ ম্যাচের সিরিজে হারিয়েছে ৪-১ ব্যবধানে। সবশেষ এপ্রিলে পাকিস্তানে ফিরতি সফরে সিরিজ ড্র করে ২-২ ব্যবধানে (একটি ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়)। এর মাঝে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৩ ম্যাচের হোম সিরিজে ধবলধোলাইয়ের লজ্জা পায়। তবে বিশ্বকাপের আগ মুহূর্তে আড়াল উইলিয়ামসনরা। ওয়ার্ম-আপ ম্যাচের সূচিতে নেই তাদের কোনো খেলা।
অভিযান শুরু ৮ জুন
গ্রুপ পর্বে অচেনা প্রতিপক্ষদের মুখোমুখি হবে নিউজিল্যান্ড। আগামী ৮ জুন আফগানিস্তান ম্যাচ দিয়ে অভিযান শুরু করবে নিউজিল্যান্ড। ম্যাচের ভেন্যুর গায়ানার প্রভিডেন্স স্টেডিয়াম। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ত ফরম্যাটে মাত্র এক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে তাদের। ‘সি’ গ্রুপে কিউইদের দ্বিতীয় ম্যাচ ১৩ জুন, ত্রিনিদাদে ব্রায়ান লারা একাডেমিতে। প্রতিপক্ষ বিশ্বকাপের সহ-আয়োজক ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ১৯ টি-টোয়েন্টি ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের জয় ১০টি এবং হার ৪টি। টাই হয়েছিল ৩ ম্যাচ। যার মধ্যে সুপার ওভারে ১টিতে জয় এসেছে, অপর ২টিতে ছিল হার। ফল হয়নি অবশিষ্ট ২ ম্যাচে। বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্বে নিউজিল্যান্ডের শেষ দুই ম্যাচের প্রতিপক্ষ উগান্ডা এবং পাপুয়া নিউগিনি। যাদের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলবে কিউইরা।
প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ম্যাচের সাক্ষী নিউজিল্যান্ড। ২০০৫ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি তাদের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার লড়াইয়ের মধ্য দিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছিল ক্রিকেটের ছোট এই সংস্করণের
ম্যাচ: ২১৬
জয়: ১০৯
হার: ৯০
পরাজয়: ১০
পরিত্যক্ত: ৭
র্যাঙ্কিং: ৫
গ্যারি স্টিড, প্রধান কোচ
আপনি যখন বিশ্বকাপে যান, দলে অভিজ্ঞতা চান এবং এমন খেলোয়াড় চান যারা জানে এখানে কেমন লড়াই হবে। আমাদের এমন বোলার আছে যারা আমাদের সত্যিই বৈচিত্র্যময় লাইনআপ প্রদান করে। বোলিং লাইনআপে বাঁহাতি, ডানহাতি, স্পিনারদের মধ্যে ভারসাম্য থাকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি আমরা ভালো এবং স্মার্ট ক্রিকেট খেলি, তবে আশা করি এটা এমন একটি টুর্নামেন্ট হবে যা আমরা জিততে পারব।
দল : কেন উইলিয়ামসন (অধিনায়ক), ফিন অ্যালেন, ডেভন কনওয়ে, মাইকেল ব্রেসওয়েল, মার্ক চাপম্যান, ড্যারিল মিচেল, জিমি নিশাম, গ্লেন ফিলিপস, রাচিন রবীন্দ্র, মিচেল সান্তনার, ট্রেন্ট বোল্ড, লুকি ফার্গুসন, ম্যাট হেনরি, ইশ সোধি ও সাউদি।