নাকে লাগছে পোড়া টায়ারের গন্ধ। ‘ওয়ানস মোর, ওয়ানস মোর’ উচ্চারিত হচ্ছে দর্শক সারি থেকে। মাজদা এমএক্স৫ মডেলের গাড়ি ড্রিফ্টিং করে চক্রাকারে ঘুরছে। টায়ার আর পিচঢালা চত্বরে ঘর্ষণে সাদা ধোঁয়া উড়ছে। আর রোমাঞ্চকর গাড়ির স্টান্ট দেখে উপস্থিত দর্শকরা চিৎকার করে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করছে। এমনই গাড়ি ও বাইকের স্টান্ট প্রদর্শিত হয়েছে দ্বিতীয় ঢাকা মোটর ফেস্ট ২০২৪-এ।
আর এই মোটর ফেস্ট অনুষ্ঠিত হয়েছে রাজধানীর আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় (আইসিসিবি)। উইজার্ড শোবিজের আয়োজনে তিন দিনব্যাপী এই মোটর ফেস্ট ২২ ফেব্রুয়ারি শুরু হয়। শেষ হয়েছে ২৪ ফেব্রুয়ারি।
প্রথম দিন বেলা ১১টায় আইসিসিবির ৫ নম্বর হল ও এক্সপো জোনে এ আয়োজন শুরু হয়। তবে গাড়ির স্টান্ট শো দুপুর ২টায় শুরু হওয়ার কথা থাকলেও, আবহাওয়া খারাপ থাকায় স্টান্ট শো একটু দেরিতে শুরু হয়। এই দিনে শুধু কার শো প্রদর্শিত হয়েছে। কার স্টান্ট করেছে বিডিআরসি ক্লাবের সদস্যরা। কার স্টান্ট শোয়ে ক্লাবটির সভাপতি সার্জসহ অনেকেই মনোমুগ্ধকর কার স্টান্ট করেন। গাড়ির পিছনের চাকাগুলোকে স্কিড করে ড্রিফ্টিং, একই স্থানে গাড়িকে ৩৬০ ডিগ্রি ঘুরিয়ে ডোনাট, টায়ারের অবস্থান স্থির রেখে থ্রোটল ঘুরিয়ে ধোঁয়া তৈরি করে বার্নাউটসহ বিভিন্ন ধরনের কার স্টান্ট করেন ক্লাবটির সদস্যরা।
বিডিআরসি মূলত একটি অলাভজনক কার ক্লাব। এর সহসভাপতি সৌমিক বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্য যুবসমাজকে মাদকাসক্তি থেকে বের করে ভালো কিছু করতে উৎসাহিত করা। গাড়ি ভালো শখের জায়গা, যা যুবসমাজকে আকৃষ্ট করে মাদক থেকে দূরে রাখতে পারে।’
সন্ধ্যায় ছিল ড্রাইভিং মুভি দেখার ব্যবস্থা। ফেস্টে মডিফাইড কার কালেকশনসহ অনেক আকর্ষণীয় গাড়ি প্রদর্শিত হয়েছে। এই আয়োজন বাইকার ও গাড়িপ্রেমীদের জন্য দেশে অন্যতম একটি ইভেন্ট। ফেস্টের প্রথম দিনে দর্শনার্থীদের জন্য দিনভর ছিল নানা আয়োজন। নিত্যনতুন মোটরসাইকেল ও মোটরসাইকেলের সরঞ্জামাদি আরও নতুনভাবে তুলে ধরতে দ্বিতীয়বারের মতো এটি আয়োজিত হয়েছে। মোটর ফেস্টে প্রদর্শিত হয়েছে মোটরগাড়ি, বাইক ও মোটর অ্যাক্সসেসরিজের মতো অটোমোবাইলের জিনিসপত্র।
ফেস্টে দ্বিতীয় ও তৃতীয় দিন গাড়ির প্রদর্শনী ও স্টান্ট শোর পাশাপাশি জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকারা লাইভ কনসার্ট মাতান। দ্বিতীয় দিনে বাইক দিয়ে স্টান্ট শো শুরু হয়। এখানে নারী বাইকাররাও স্টান্ট করেন। গাড়ির প্রদর্শনী ও স্টান্ট শোর পাশাপাশি জনপ্রিয় ব্যান্ড তারকারা লাইভ কনসার্টে যোগ দেন। আয়োজনের দ্বিতীয় দিনে মোটরপ্রেমীদের মন মাতিয়েছে জনপ্রিয় ব্যান্ড বে অব বেঙ্গল, আর্ক এবং এ কে রাহুল। ফেস্টের শেষ দিন রাঙিয়েছে জনপ্রিয় ব্যান্ড ব্ল্যাক জ্যাং, আপেক্ষিক, সাবকন্সাস ও কার্নিভ্যাল। আয়োজনের দ্বিতীয় ও শেষ দিনে বেলা ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কনসার্ট হয়। ফেস্টে উপস্থিত দর্শনার্থীদের অধিকাংশই ছিলেন উঠতি বয়সী ছেলেমেয়ে।
কয়েকটি টায়ারের ব্র্যান্ড তাদের পণ্যগুলো প্রদর্শন করেছে। কিক্স ও ক্যাস্ট্রোল মোটর অয়েলের মতো কোম্পানিগুলো তাদের পণ্য নিয়ে হাজির হয়েছিল। ফেস্ট উপলক্ষে এসব পণ্যের ছিল বিভিন্ন ধরনের ছাড় ও অফার। এসবি গ্রুপ বিভিন্ন ধরনের মোটরবাইক নিয়ে হাজির হয়েছিল এ আয়োজনে। যেখানে মেয়েদের স্কুটিও প্রদর্শিত হয়। ফেস্টে গাড়ি ও বাইকসজ্জার স্টলও ছিল।
এবারের মোটর ফেস্টে স্টান্ট শোসহ অন্যান্য আয়োজন অনেক জাঁকজমকপূর্ণ হলেও গাড়ি বা বাইকের কোনো কোম্পানির উপস্থিতি ছিল না। ফেস্টে আসা অনেকেই এতে হতাশা প্রকাশ করেছেন। বাইকার হাবিব হাসান বলছিলেন, ‘আশা করছিলাম জনপ্রিয় কোম্পানিগুলোর নতুন মডেলের বাইক এখানে দেখতে পাব। কিন্তু এখানে এ রকম কোনো কিছুই নেই। ধানমন্ডি থেকে আকাশ সরকার প্রথমবারের মতো এমন আয়োজনে যোগ দিয়েছেন। দুর্দান্ত সব বাইক ও কার স্টান্ট দেখে মুগ্ধতার কথা জানালেন তিনি।
এই ফেস্টে মূলত দেশি-বিদেশি লুব্রিক্যান্ট কোম্পানিসহ টায়ার, ফগলাইট ও হেলমেট কোম্পানিগুলো অংশগ্রহণ করেছে। তারা নিজেদের নতুন পণ্যগুলো প্রদর্শন করেছে। এসব পণ্যের মধ্যে ছিল হেলমেট, বাইক ও বাইক মেকআপের অন্যান্য জিনিসপত্র। দেশি-বিদেশি ১৬টি কোম্পানির স্টল ছিল এ আয়োজনে। এ ছাড়া মেলায় বাইকস্ট্যান্ডের জন্য বেশ কয়েকটি গ্রুপসহ কারস্ট্যান্ডের কয়েকটি গ্রুপও অংশগ্রহণ করেছে।
আয়োজন সম্পর্কে উইজার্ড শোবিজের ম্যানেজিং পার্টনার সৌরভ আহমেদ বলেন, ‘ঢাকায় আমরা দ্বিতীয়বারের মতো এই আয়োজন করছি। এই ফেস্টের মাধ্যমে অটোমোবাইল খাতের সব প্রতিষ্ঠানকে এক ছাদের নিচে আনার চেষ্টা করেছি। এখানে দেশি ব্র্যান্ডের পাশাপাশি বিদেশি ব্র্যান্ডের কোম্পানিগুলো অংশগ্রহণ করেছে।’
উইজার্ড শোবিজ এর আগে চট্টগ্রামে ছয়বার মোটর ফেস্টের আয়োজন করলেও ঢাকায় দ্বিতীয়বারের মতো এ আয়োজন করেছে। চট্টগ্রামের ফেস্টে অটোমোবাইল, মোটরসাইকেল, লুব্রিকেন্ট প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানসহ অনেক বড় বড় প্রতিষ্ঠান এই ফেস্টে অংশ নিয়েছে। এবারের ঢাকা মোটর ফেস্টে এন্টারটেইনমেন্ট পার্টনার বিডি কিটজ, বিডিআরসি ও অনলাইন পার্টনার হিসেবে ছিল বাইক বিডি। এ আয়োজনের মিডিয়া পার্টনার ছিল সময় টেলিভিশন।
জাহ্নবী