কৃষিপ্রধান দেশ বাংলাদেশ। তাই একজন কৃষিবিদ হিসেবে ভবিষ্যতে দেশের এ গুরুত্বপূর্ণ খাতে অবদান রাখতে পারা গৌরব এবং আনন্দেরও। তা ছাড়া কৃষি নিয়ে পড়াশোনা ও গবেষণার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ রয়েছে। উচ্চশিক্ষিত অনেকেই এখন শখের বশে নিজের বাসার ছাদে ছাদকৃষি করছেন। কৃষি নিয়ে কাজ করতে তরুণ-তরুণীদের মধ্যেও দিন দিন আগ্রহ বাড়ছে। কৃষি বিষয়ে পড়ালেখা করে দেশ-বিদেশে ভালো মানের চাকরি করা যায়। ইদানীং ভেষজ ওষুধ উৎপাদনেও কৃষি গ্র্যাজুয়েটদের সম্ভাবনাময় পদচারণা শুরু হয়েছে। এক কথায়, বাংলাদেশসহ সারা দেশে কৃষিবিদদের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।
পড়াশোনা
নিত্যনতুন কোনো কিছু আবিষ্কার করতে ভালোবাসেন কিংবা কোনো জিনিসকে ভেঙে যারা উন্নত করতে চান তাদের জন্য কৃষিতে একটা বিষয় রয়েছে- যার নাম কৃষি প্রকৌশল। এ ছাড়া উদ্ভিদ রোগবিদ্যা পড়ে গাছের চিকিৎসক হতে পারেন। এই যেমন মানুষ কিন্তু নিজের রোগের ব্যাপারে বলতে পারে, গাছপালা পারে না। সেই না বলতে পারা গাছের অসুখটা বের করে নিমিষেই চিকিৎসা করে সুস্থ করাটা হবে আপনার কাজ। বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃষি অনুষদের অধীনে কৃষিতে গ্র্যাজুয়েট ডিগ্রি দেওয়া হয়। এ অনুষদে রয়েছে ১৬টি বিভাগ। এখানে কৃষিতত্ত্ব, মৃত্তিকাবিজ্ঞান, কীটতত্ত্ব, উদ্যানতত্ত্ব, উদ্ভিদ রোগতত্ত্ব, ফসল উদ্ভিদবিজ্ঞান, কৌলিতত্ত্ব ও উদ্ভিদ প্রজনন, কৃষি সম্প্রসারণ, কৃষিরসায়ন, প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান, ফুড সেফটি ম্যানেজমেন্ট, বায়োটেকনোলজি, পরিবেশ বিজ্ঞান, সিড সায়েন্স ও টেকনোলজি বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান করা হয়। তবে কৃষিবিদ হতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ে বিজ্ঞান বিভাগ থেকে পড়াশোনা করতে হবে। পরে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর নিজস্ব ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে বিভিন্ন অনুষদের ৪ বছর মেয়াদি বিএসসি (অনার্স) কোর্স বেছে নিতে হবে।
তা ছাড়া জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় এবং একাধিক বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়েও কৃষিতে পড়ার জন্য আবেদন করতে পারবেন। দেশে যেসব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে কৃষি বিষয়ে উচ্চতর ডিগ্রি নেওয়ার সুযোগ রয়েছে সেগুলো হলো- বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সায়েন্স বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব ফিশারিজ কলেজ জামালপুর, বরিশাল ভেটেরিনারি কলেজ। এদিকে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় ও বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিভিন্ন বিষয়ে পিএইচডি অর্জন করা যাচ্ছে। দেশ ছাড়াও কৃষিবিদদের বিদেশে রয়েছে উচ্চশিক্ষার বিশাল সুযোগ।
ক্যারিয়ার
প্রতি বিসিএসেই কৃষি ক্যাডারে পদ থাকে। উত্তীর্ণরা বিসিএস (কৃষি) ক্যাডারে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অধীনে ‘কৃষি সম্প্রসারণ অফিসার’ পদে জয়েন করেন। কৃষিতে স্নাতক সম্পন্ন করার পর নিজস্ব বিষয়সহ যেকোনো উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকতা ও উচ্চশিক্ষার সুযোগ রয়েছে। বর্তমানে কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় উল্লেখযোগ্য কয়েকটি অনুষদেও চাকরির ক্ষেত্র বেড়েছে। ভালো ফল করলে সেখানে শিক্ষকতার সুযোগ রয়েছে। সরকারি কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠানেও চাকরি করা যায়। এ ছাড়া বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ ধান গবেষণা, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা কাউন্সিল, পল্লি উন্নয়ন একাডেমি, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউট (বিএসটিআই), এসিআই, সিনজেনটা, কাজী ফার্মসসহ কৃষি যন্ত্রপাতি উৎপাদক বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরির সুযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফুড ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে পড়াশোনা হয়, যা বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি খাদ্য প্রক্রিয়াজাত এবং খাদ্যের গুণগতমান নির্ধারণ করা প্রতিষ্ঠানে চাকরির পথ খুলে দেয়। বিভিন্ন বেসরকারি দুগ্ধ ও পোলট্রির খামার, ব্র্যাক, ফিড মিল, এনজিও এবং আন্তর্জাতিক সংস্থায়ও চাকরির সুযোগ আছে। এসবের মধ্যে আড়ং ডেইরি, কাজী ফার্মস, আফতাব বহুমুখী ফার্ম, মিল্ক ভিটা, সিপি ফুড উল্লেখযোগ্য। আর আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর মধ্যে ইউএসএইড, ডিএফআইডি, ড্যানিডা, সিডা, উইনরক, ইরি, আইএফডিসি ও অক্সফাম জিবির মতো প্রতিষ্ঠানেও কৃষিবিদদের অগ্রাধিকার রয়েছে। বর্তমানে এনজিও এবং বহুজাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো কৃষিক্ষেত্রে কাজের পরিধি বাড়াচ্ছে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, জাপান, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, সাউথ কোরিয়া, মালয়েশিয়া ও ভারতে প্রতিবছর উচ্চশিক্ষা ও চাকরির জন্য অনেক শিক্ষার্থী গমন করছেন।
আয়
বাংলাদেশে সাধারণত কৃষি সম্পর্কিত যেকোনো প্রতিষ্ঠানে একজন কৃষিবিদদের বেতন সরকারি স্কেলেই ধার্য করা হয়। তা ছাড়া বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রথম অবস্থায় উচ্চ বেতন দিয়ে চাকরি শুরু হয়, দিন যত গড়ায় তত বেতন বাড়তে থাকে। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো অনেক উচ্চমানের বেতন দিয়ে থাকে। সে ক্ষেত্রে শুরুতেই লাখ টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
কলি