কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে টানা ৭২ ঘণ্টা অভিযান চালিয়ে দেশি-বিদেশি অস্ত্র-গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে পুলিশ। এ সময় পেশাদার অস্ত্র ব্যবসায়ী হিসেবে চিহ্নিত এক নারীসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের কাছ থেকে ২টি ওয়ান শুটার গান (এলজি), ৭৭ রাউন্ড গুলি এবং ২৪টি গুলির খোসা, ১টি বিদেশি জি-থ্রি রাইফেল, ১টি ম্যাগাজিন ও ১৫ রাউন্ড তাজা গুলি উদ্ধার করা হয়।
বৃহস্পতিবার (১৬ মে) বিকেল ৪টার দিকে কক্সবাজারের পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সম্মেলন কক্ষে এসব তথ্য জানান এসপি মো. মাহফুজুল ইসলাম।
গ্রেপ্তাররা হলেন, উখিয়ার জালিয়াপালং ইউনিয়নের মাদারবনিয়া এলাকার মোস্তাক আহমদ ওরফে ডাকাত মোস্তাক (৩৭), তার স্ত্রী লতিফা আক্তার (৩৪), একই এলাকার কাশেম ওরফে মনিয়া (৩৮), মহেশখালী উপজেলার বড় মহেশখালী ইউনিয়নের মাঝের ডেইল এলাকার রবিউল আলম (২৮), একই উপজেলার নতুন বাজার এলাকার মো. বেল্লাল হোসেন (৩৮)।
টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওসমান গণি জানান, গ্রেপ্তার ৫ আসামিকে অধিকতর তদন্তের স্বার্থে আদালতে সোপর্দ করে ৫ দিন করে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। রিমান্ড মঞ্জুর হলে তাদের অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদে আরও তথ্য পাওয়া যাবে।
এসপি মো. মাহফুজুল ইসলাম জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানা যায়, কয়েকজন ডাকাত ও অস্ত্র ব্যবসায়ী মায়ানমার থেকে বিদেশি আগ্নেয়াস্ত্র ও গুলি বাংলাদেশে নিয়ে এসে অপরাধীচক্রের কাছে হস্তান্তর করতে যাচ্ছে। উখিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেলের নেতৃত্বে উখিয়া ও টেকনাফ পৃথক দুটি টিমের সমন্বয়ে আভিযানিক দল গঠন করে এসব আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের পরিকল্পনা করা হয়। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উখিয়া থানাধীন জালিয়াপালং ইউনিয়নের মাদারবুনিয়া এলাকার ডাকাতদের অবস্থান চিহ্নিত করে আভিযানিক দল ডাকাত মোস্তাকের বাড়ি ঘেরাও করে। সেখানে মোস্তাকসহ অস্ত্র ব্যবসায়ী রবি আলম, কাশেম এবং মোস্তাকের স্ত্রীকে ২টি ওয়ান শুটার গান (এলজি), ৭৭ রাউন্ড গুলি এবং ২৪টি গুলির খোসাসহ গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর পলাতক আসামিদের গ্রেপ্তার ও আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারের জন্য পালংখালী দুর্গম পাহাড়ে অস্ত্র ব্যবসায়ী রবি আলমের আস্তানায় অভিযান পরিচালনা করা হয়। আসামি বেলাল টেকনাফ এলাকা থেকে পালিয়ে মহেশখালীর দিকে চলে যাচ্ছে, এমন খবরে মরিচ্যা চেকপোস্টে বিজিবির সহায়তায় তাকে আটক করা হয়।
পরে আটক বেলালকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী ৩-৪ ঘণ্টা অভিযানের পর টেকনাফ থানাধীন শাপলাপুর এলাকায় সমুদ্রতীরবর্তী ঝাউ বাগানের মধ্যে বালির নিচে রাখা ১টি বিদেশি জি-থ্রি রাইফেল, ১টি ম্যাগাজিন ও ১৫ রাউন্ড তাজা গুলি উদ্ধার করা হয়।
উখিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শামীম হোসেন বলেন, ‘ডাকাত মোস্তাক একাধিক ডাকাতি, অস্ত্র, মাদকমামলার আসামি এবং তার বিরুদ্ধে চারটি গ্রেপ্তারি পরোয়ানা রয়েছে। অস্ত্র ব্যবসায়ী রবি আলম দীর্ঘদিন যাবৎ পালংখালী এলাকায় দুর্গম পাহাড়ে অবস্থান করে অস্ত্র কেনাবেচা চালিয়ে আসছে। তার নামে মহেশখালী থানায় একাধিক অস্ত্র, মাদক, অপহরণ ও খুনের মামলা রয়েছে।’
টেকনাফ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ওসমান গণি বলেন, ‘অবৈধ অস্ত্র-গুলি উদ্ধার ও আসামি গ্রেপ্তারে টানা ৭২ ঘণ্টা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার উখিয়া সার্কেলের নেতৃত্বে উখিয়া ও টেকনাফ মডেল থানা-পুলিশের যৌথ উদ্যোগে অভিযান পরিচালনা করে। গ্রেপ্তার আসামিদের বিরুদ্ধে উখিয়া ও টেকনাফ মডেল থানায় অস্ত্র আইনে নিয়মিত দুটি মামলা করা হয়েছে। অস্ত্র ব্যবসায়ী চক্রের অপর আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে।’