পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) পাবনার বেড়া অফিসে কর্মরত ২৫ কর্মকর্তা-কর্মচারী একযোগে বদলি চেয়ে আবেদন করেছেন। ‘রহস্যজনক’ এ আবেদন প্রত্যাহার করতে অফিস ফাঁকা রেখেই নির্বাহী প্রকৌশলীসহ ৯ কর্মকর্তা গত দুদিন ধরে ঢাকায় অবস্থান করছেন। এতে বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের সকল কার্যক্রমে স্থবিরতা নেমে এসেছে।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, বেড়া পওর বিভাগের বিভিন্ন কাজ ও লেনদেন বুঝে নেওয়া নিয়ে কর্মকর্তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব শুরু হয়। এরই জের ধরে গত ৯ মে স্বেচ্ছায় বদলি চেয়ে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক বরাবর ২৫ কর্মকর্তা-কর্মচারী আবেদন করেন। তাদের মধ্যে আছেন ১২ কর্মকর্তা ও ১৩ কর্মচারী।
আবেদনে তারা উল্লেখ করেন, ‘একটি স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী বর্তমানে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের হয়রানি করতে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন মাধ্যমে নামে-বেনামে হয়রানিমূলক চিঠি পাঠাচ্ছে। এতে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিব্রতকর পরিস্থিতির শিকার হচ্ছেন।’ এমন পরিস্থিতিতে কাজের পরিবেশ নেই দাবি করে স্বেচ্ছায় বদলির আবেদন করেন তারা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সংস্থাটির একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী জানান, আগে বদলি হওয়া কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের কাজ থেকে অনৈতিক সুবিধা না পেয়ে নির্বাহী প্রকৌশলীসহ বর্তমান কর্মকর্তাদের দ্বন্দ্ব দেখা হয়। সেই দ্বন্দ্বে নিজেদের সুবিধা আদায় করতে না পেরে কর্মকর্তারা একযোগে বদলির আবেদন করেন। এ ছাড়া সকল পর্যায়ের কর্মচারীদের বদলির আবেদনে স্বাক্ষর করতে বাধ্য করা হয়। কর্মচারীদের অনেকেই জানেন না বদলির আবেদনে কী লেখা হয়েছে। বিষয়টি প্রকাশ্যে এলে বদলির আবেদন প্রত্যাহার করতে নির্বাহী প্রকৌশলীসহ কর্মকর্তারা গত মঙ্গলবার ঢাকার পানি উন্নয়ন বোর্ড (বাপাউবো) অফিসে যান। গতকাল বুধবার বিকেল পর্যন্ত তারা কর্মস্থলে ফেরেননি।
গতকাল সকালে বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পওর বিভাগে গিয়ে দেখা গেছে, অধিকাংশ কর্মকর্তাদের রুম তালাবদ্ধ। তবে তিনজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী অফিস করছেন। বেশির ভাগ কর্মচারীও অফিসে নেই। সাংবাদিকদের দেখেই তাদের ছোটাছুটি বেড়ে যায়। অফিস ফাঁকা হয়ে যাওয়ায় কাজে স্থবিরতা নেমে এসেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নির্বাহী প্রকৌশলী ছাড়া সকল কর্মকর্তা স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ায় রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার করছেন। তবে এক দপ্তরের সব কর্মকর্তার একযোগে বদলির আবেদন নিয়ে দেখা দিয়েছে প্রশ্ন।
এ বিষয়ে উচ্চমান সহকারী রাকিবুল ইসলাম বলেন, ‘স্যাররা বলায় আমরা স্বাক্ষর করেছি। কিন্তু আবেদনে কী লেখা আছে বলতে পারি না। শুধু বলেছেন বদলির আবেদন করা হবে। তাই স্বাক্ষর করে দিয়েছি।’ একই কথা বলেন উচ্চমান সহকারী তাউফিকুর রহমান, অফিস সহায়ক মজিবুর রহমানসহ একাধিক কর্মচারী।
এ ব্যাপারে তিন উপ-সহকারী প্রকৌশলী আনিছুর রহমান বলেন, ‘স্যারদের অফিশিয়াল কাজ থাকায় তারা ঢাকায় অবস্থান করছেন। আবেদনের বিষয়ে কিছু বলতে পারব না। স্যারের (নির্বাহী প্রকৌশলী) নির্দেশনা ছাড়া এ বিষয়ে কথা বলা নিষেধ।’ একই কথা বলেছেন উপ-সহকারী আব্দুল খালেক ও হাবিবুর রহমান।
বেড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের পওর বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী অমিতাভ চৌধুরীকে তার কার্যালয়ে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। আর একই কার্যালয়ের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ওসমান ফারুকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। পানি উন্নয়ন বোর্ড পাবনার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুধাংশু কুমার সরকারকে বিভিন্ন নম্বর থেকে ফোন দিলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। খুদেবার্তা পাঠিয়েও তার সাড়া মেলেনি।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড রাজশাহীর প্রধান প্রকৌশলী মুখলেসুর রহমান বলেন, ‘পাবনার তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও নির্বাহী প্রকৌশলী আমাকে জানিয়েছেন ঢাকায় একটি মিটিংয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু ৯ জন একসঙ্গে ঢাকা যাওয়ার বিষয়ে আমাকে কিছু জানায়নি। আর একযোগে ৩৭ কর্মকর্তা-কর্মচারীর বদলির আবেদন ডিজি বরাবর দিয়েছেন শুনেছি। কিন্তু অফিশিয়ালি কোনো ডকুমেন্ট এখনো পাইনি। তাই সে বিষয়ে কিছু বলতে পারছি না।’
বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের মহাপরিচালক আমিরুল হক ভূঞা বলেন, ‘একসঙ্গে সবার ঢাকায় আসার সুযোগ নেই। গেলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ও ছুটি নিয়ে যেতে হবে। আর একযোগে সবার বদলি হওয়ার সুযোগ নেই। কি কি দরখাস্ত আসছে আগে দেখি। কেন দিয়েছে, কী কারণে দিয়েছে সবগুলো আগে দেখি, তারপর বলা যাবে।’