সাত কোটি টাকার স্ক্র্যাপ মাত্র এক কোটিতে বিক্রি করল চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসায় চট্টগ্রামে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
বন্দর সূত্রে জানা গেছে, আট মাস আগে দরপত্রের মাধ্যমে ১ কোটি ২১ লাখ টাকায় লোহার স্ক্র্যাপ বিক্রি করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। কিন্তু এসব স্ক্র্যাপের প্রকৃত মূল্য ছিল সাত কোটি টাকা। বন্দরের এই অনিয়ম ধরতে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) অভিযানে নেমেছে। দুদকের তিন সদস্যের দল ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে। দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় চট্টগ্রাম-১-এর সহকারী পরিচালক মো. এনামুল হকের নেতৃত্বে চলছে এ অভিযান। ইতোমধ্যে দুদকের তদন্ত দল বন্দরে গিয়ে কাগজপত্র ঘেঁটে দেখেছে।
বুধবার (১৫ মে) থেকে অভিযোগ ওঠা ওই নিলামের লটের স্ক্র্যাপ আবারও পরিমাপ করা হচ্ছে, যা শেষ করতে তিন-চার দিন সময় লাগতে পারে। ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে এসব লোহার স্ক্র্যাপ বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ।
দুদক জানায়, তাদের টিম অভিযোগ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান সঙ্গে কথা বলার পর সংশ্লিষ্ট শাখার কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে। ঠিকাদারকে যে পরিমাণ মালামাল সরবরাহ করা হয়েছে এবং যে পরিমাণ মালামাল রয়ে গেছে সেগুলোর ওজন করে দেখা হচ্ছে।
চট্টগ্রাম বন্দরের ভাণ্ডার শাখার ৩১, ৩২, ৫৮, ৫৯, ও ৬০ নম্বর লটে লোহার স্ক্র্যাপসহ অন্যান্য মালামাল বিক্রির কাগজ, রেকর্ডপত্র, স্টক রেজিস্ট্রার, মুভমেন্ট রেজিস্ট্রার ও স্টক করা মালামাল সরেজমিন পরিদর্শনে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া যায়।
অভিযানের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দুদক কর্মকর্তা মো. এনামুল হক। তিনি বলেন, গত বছর সেপ্টেম্বরে লোহার স্ক্র্যাপ বিক্রির দরপত্র আহ্বান করে বন্দর কর্তৃপক্ষ। সেখানে সাত কোটি টাকার স্ক্র্যাপ ছিল। অথচ অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে ওই লোহার স্ক্র্যাপ বিক্রি করা হয় মাত্র ১ কোটি ২১ লাখ টাকায়।
তিনি আরও বলেন, মালামাল ওজন করার কাজ চলছে। দুদকের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে লটে নিলাম হওয়া স্ক্র্যাপের ওজন করা হচ্ছে। বুধবার এক দিনে কয়েকটি লটের ওজন করে ২২ মেট্রিক টন স্ক্র্যাপ পাওয়া গেছে। বাকিগুলো ওজন করতে আরও ৪-৫ দিন সময় লাগবে।
সূত্রমতে, চট্টগ্রাম বন্দরের ভাণ্ডার শাখা থেকে নামমাত্র মূল্যে কার্যাদেশ দিয়ে পুরো টাকা কতিপয় কর্মকর্তা ও দুই প্রতিষ্ঠানের মালিক ভাগবাঁটোয়ারা করে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে বন্দরজুড়ে তোলপাড় চলছে।
গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর ডাকা নিলামে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। ১৬ জানুয়ারি মেসার্স আল-আমিন এন্টারপ্রাইজকে দুই লটের কার্যাদেশ দেওয়া হয়। ৫৮ নম্বর লটে ৫০ টন বা ৫০ হাজার কেজি স্ক্র্যাপ দেখানো হয়। এ লটে রয়েছে জাহাজ ও পন্টুনের পুরোনো প্রেইট, অ্যাঙ্গেল, গার্ডার ও অকেজো মালামাল। ২৭ লাখ ৪৭ হাজার ৯০০ টাকা দাম দেখানো হয়। একইভাবে ৬০ নম্বর লটে স্ক্র্যাপের পরিমাণ একই দেখানো হয়। মালামালও একই ধরনের। ৪৩ লাখ ৪৭ হাজার ৯০০ টাকা দাম ধরা হয়। প্রকৃতপক্ষে এ দুই লটে স্ক্র্যাপের পরিমাণ প্রায় ৭৫০ টন। এভাবে ৫টি লটে অনিয়ম হয় বন্দরে। এ লটগুলোর নিলাম পায় মেসার্স আল-আমিন এন্টারপ্রাইজ নামে একটি প্রতিষ্ঠান।
দুদদ কর্মকর্তারা বলেন, অভিযানে রেকর্ডপত্র সংগ্রহ ও মালামালের ওজন পরিমাপের বিস্তারিত প্রতিবেদন দুদকের প্রধান কার্যালয়ে দাখিল করা হবে।