ঢাকা-জয়দেবপুর রেল সড়কের গাজীপুরের ছোট দেওড়া কাজীবাড়ি এলাকায় তেলবাহী ও যাত্রীবাহী ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষ হয়েছে। এতে চারজন আহত এবং সাতটি বগি লাইনচ্যুত হয়। এ ঘটনায় রেলওয়ের তিন কর্মচারীকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে কর্তৃপক্ষ। দুর্ঘটনার কারণ জানতে গঠন করা হয়েছে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি।
বরখাস্ততরা হলেন আবগোমটি ঘরের মাস্টার মো. হাসেম, পয়েন্টম্যান সাদ্দাম হোসেন ও মোস্তাফিজুর রহমান। জয়দেবপুর রেলওয়ে জংশনের স্টেশন মাস্টার হানিফ আলী গতকাল শুক্রবার এসব তথ্য নিশ্চিত করে জানান, শুক্রবার বেলা ১১টার দিকে ট্রেন চলাচলের সময় যারা ডিউটিতে ছিলেন তাদের তাৎক্ষণিকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে কর্তব্য পালনে তাদের কোনো গাফিলতি ছিল কি না, তা তদন্তসাপেক্ষে জানা যাবে।
স্টেশন মাস্টার আরও জানান, টাঙ্গাইল থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা কমিউটার ট্রেনটি বেলা ১১টায় জয়দেবপুর স্টেশনে যাত্রাবিরতি শেষে খালি অবস্থায় যাত্রা করে। ট্রেনটি স্টেশন থেকে ছেড়ে আউটার সিগন্যালে পৌঁছানোর পর লাইন ক্রসিং করার সময় বিপরীত দিক থেকে আসা জয়দেবপুর আউটার সিগন্যালের ছোট দেওড়া কাজীবাড়ি এলাকায় একটি তেলবাহী ট্রেনের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে টাঙ্গাইল কমিউটার ট্রেনের চারটি ও তেলবাহী ট্রেনের তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে যায়। এ ঘটনায় যাত্রীবাহী ট্রেনের চালকসহ আহত তিনজনকে উদ্ধার করা হয়েছে। আহতরা হলেন শরীফ মাহমুদ (৩৮), হাবিবুর রহমান (৫৮) ও সবুজ হাসান (৪৬)।
গাজীপুর ফায়ার সার্ভিসের উপসহকারী পরিচালক মো. আব্দুল্লাহ্ আল আরেফিন জানান, শুক্রবার বেলা ১১টা ১০ মিনিটে গাজীপুরে তেলবাহী ও যাত্রীবাহী ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে চারজন আহত হয়েছেন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের চারটি ইউনিট ঘটনাস্থলে যায়। আহতদের উদ্ধার করে গাজীপুর শহিদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহতদের একজন সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে গেছেন।
দুর্ঘটনার পর পরই ঘটনাস্থলে যান গাজীপুর জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবুল ফাতেহ মো. সফিকুল ইসলাম। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে তিনি সাংবাদিকদের জানান, এ দুর্ঘটনায় কারও কোনো গাফিলতি বা অবহেলা ছিল কি না, তা জানতে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মতিউর রহমানের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্ত কমিটিকে আগামী দুই কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর পরই দুর্ঘটনার প্রকৃত কারণ জানা যাবে।
দুর্ঘটনায় ময়মনসিংহ ও উত্তরাঞ্চলের সঙ্গে ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। এতে ওই ডাবল লাইনে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকে। প্রায় ২ ঘণ্টা পর দুপুর ১টার দিকে বিকল্প পথ হিসেবে ডাবল লাইনের ডাউন লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল শুরু হয়। দুপুর ১২টা ৫০ মিনিটের দিকে সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস জয়দেবপুর স্টেশন হয়ে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যায়। এর কিছু সময় পর একইভাবে একতা এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে জয়দেবপুর স্টেশন হয়ে পঞ্চগড়ের উদ্দেশে ছেড়ে গেছে। বর্তমানে একটি লাইন দিয়ে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক রাখা হয়েছে। দুর্ঘটনাকবলিত লাইনটিতে ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক করতে কাজ করছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।