ইউরোপে যাওয়ার পথে তিউনিসিয়ায় ভূমধ্যসাগরে নৌকায় অক্সিজেন সঙ্কটে মারা যাওয়া মাদারীপুরের ৫ যুবকের লাশ শুক্রবার (৩ মে) পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। ওই ঘটনায় নিহত ৮ বাংলাদেশির মধ্যে ৫ জনের বাড়ি মাদারীপুর জেলায়। মারা যাওয়ার ৭৮ দিন পর তাদের লাশ বাড়িতে পৌঁছালে কান্নার রোল পড়ে যায়। পরে লাশগুলো দাফন করা হয় পারিবারিক কবরস্থানে। একদিকে আদরের সন্তানদের হারিয়ে দিশেহারা পরিবার, অন্যদিকে দালালদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষুব্ধ স্বজন ও এলাকাবাসী।
নিহতরা হলেন, মাদারীপুরের রাজৈরের কোদালিয়া গ্রামের মিজানুর রহমান কাজীর ছেলে সজীব কাজী (১৯), পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের ইউসুফ আলী শেখের ছেলে মামুন শেখ (২২), সেনদিয়ার গ্রামের সুনীল বৈরাগীর ছেলে সজল বৈরাগী (২২), উত্তরপাড়া গ্রামের পরিতোষ বিশ্বাসের ছেলে নয়ন বিশ্বাস (২৪), কেশরদিয়া গ্রামের কাওসার (২২), গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার বড়দিয়া গ্রামের দাদন মিয়ার ছেলে রিফাদ (২১), ফতেয়পট্টি এলাকার মো. রাসেল (২০) ও গয়লাকান্দি গ্রামের পান্নু শেখের ছেলে ইসরুল কায়েস আপন (২২)। ৮ বাংলাদেশি ছাড়াও এই দুর্ঘটনায় এক পাকিস্থানি নাগরিকও মারা যান। কয়েকজনকে জীবিত উদ্ধার করে স্থানীয় কোস্টগার্ড।
সরেজমিনে দেখা যায়, শুক্রবার সন্ধ্যার কিছু সময় আগে অ্যাম্বুলেন্সযোগে ঢাকা থেকে নিয়ে আসা হয় নিহত মামুন শেখের লাশ। অ্যাম্বুলেন্সে আসার খবরেই বুকফাটা আর্তনাদ করেন মামুনের মা হাফিজা বেগম। স্বজনদের আহাজারিতে ভারি হয়ে ওঠে চারপাশ।
গত বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টা ২০ মিনিটের দিকে তিউনিসিয়া থেকে সৌদিয়া এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দের পৌঁছায় নিহত ৮ বাংলাদেশির লাশ। পরে লাশগুলো নিয়ে যাওয়া হয় ঢাকা মেডিকেলে। আইনি প্রক্রিয় শেষে শুক্রবার দুপুরে পরিবারের কাছে লাশ বুঝিয়ে দেয় ঢাকা জেলা প্রশাসন ও বিমানবন্দর থানা-পুলিশ। পরে লাশগুলো নিয়ে যাওয়া হয় গ্রামের বাড়ি মাদারীপুরের রাজৈরে ও গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরে। ধর্মীয়রীতি শেষে নিহতদের দাফন করা হয় নিজ নিজ পারিবারিক কবরস্থানে।
মাদারীপুরের পুলিশ সুপার মাসুদ আলম বলেন, তিউনিসিয়ায় নিহতের লাশ এরই মধ্যে নিজ গ্রামের বাড়িতে পৌঁছেছে। দাফনও সম্পন্ন হয়েছে। এই ঘটনায় ভুক্তভোগীর পরিবার আইনগত সহযোগিতা চাইলে দেওয়া হবে।
মাদারীপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মারুফুর রশিদ খান বলেন, অবৈধভাবে সমুদ্রপথে বিদেশযাত্রা বন্ধের জন্য প্রয়োজন সচেতনতা। মানুষ সচেতন হলে অকালে এমন মৃত্যু আর হবে না। এ জন্য জনপ্রতিনিধি ও নাগরিক সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে।