![দেশের সবচেয়ে উঁচু গ্রাম](uploads/2024/05/18/bi-ja-be-j-1716018904.jpg)
সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২ হাজার ৭০০ ফুট উঁচুতে মেঘের ভেলায় ভেসে বেড়ানো একটি গ্রাম। গ্রামটির নাম পাসিংপাড়া। বান্দরবান জেলার রুমা উপজেলায় কেওক্রাডং চূড়ার পাশেই এর অবস্থান। এটি বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু গ্রাম। এর অবস্থান এত উঁচুতে যে, মেঘ এই গ্রামের নিচ দিয়ে নদীর মতো বয়ে চলে। আবার গ্রামের মধ্য দিয়ে মেঘের অবারিত যাওয়া-আসা। ঘরের ভেতরে মেঘ ঢুকে যায় যখন-তখন। দরজা খুলে হাত বাড়ালেই মেঘের স্পর্শ পাওয়া যায়। পুরো শরীরে শীতল আবেশ ছড়িয়ে দিয়ে যায় মেঘের দল। দেখলে মনে হবে যেন গ্রামটি মেঘের ভেলায় ভেসে বেড়াচ্ছে। সারা বছরই মেঘের সঙ্গে নিবিড় সান্নিধ্য থাকে এই গ্রামের।
রুমা থেকে চাঁদের গাড়িতে সরাসরি পৌঁছে যাওয়া যায় কেওক্রাডংয়ে। সময় লাগে দেড় ঘণ্টা। কেওক্রাডং থেকে মাত্র ১০০ ফুট নিচে নামলেই দেখা মিলবে এই অনিন্দ্য সুন্দর গ্রামের। পাহাড়ের গ্রাম বা পাড়াগুলোয় একজন পাড়াপ্রধান অর্থাৎ কারবারি থাকেন। পাসিংপাড়ার কারবারির নাম পাসিং ম্রো। তার নামেই গ্রামটির নামকরণ করা হয়েছে। পার্বত্য অঞ্চলের স্মার্ট কারবারির মধ্যে তিনি অন্যতম। তার সুঠাম দেহ, সুদর্শন মুখাবয়ব জুড়ে যেন ঠিকড়ে পড়ে তার ব্যক্তিত্ব। এ গ্রামের বাসিন্দারা ম্রো এবং বম সম্প্রদায়ের। ৫০-৬০টি পরিবার বাস করে এখানে। যোগাযোগের সহজলভ্যতার দরুণ এ গ্রামে নেটওয়ার্ক পাওয়া যায়, যা বেশির ভাগ পাহাড়ি গ্রামেই থাকে না।
পাসিংপাড়া খুব পরিচ্ছন্ন একটি গ্রাম। গ্রামে প্রবেশের জন্য বানানো আছে একটি ফটক। প্রবেশদ্বারটি কাঠ-বাঁশ ও বেড়া দিয়ে আটকানো। এ গ্রামের ঘরগুলো বাঁশ, কাঠ এবং টিনের তৈরি। সাধারণত বাঁশ বা কাঠ ব্যবহৃত হয় বেড়া হিসেবে। আর টিন ব্যবহার করা হয় চালা দেওয়ার জন্য। গ্রামটির অবস্থান বেশি ওপরে হওয়ার জন্য এখানে বাতাসের তাণ্ডবও থাকে বেশি। বাতাসের তোড়ে যেন টিনের চালা উড়ে না যায়, তাই ওপরে বাঁশ আড়াআড়ি করে বাঁধা হয়।
এ গ্রামের বাসিন্দারা খুব সহজ-সরল এবং পরিশ্রমী। জীবন ধারণের জন্য এখানকার বাসিন্দারা জুম পদ্ধতিতে চাষ করে থাকেন। এ ছাড়া কেউ কেউ শিকারও করে থাকেন। যখন জুম চাষের মৌসুম শেষ হয়ে যায়, তখন তাদের হাতে অনেক অবসর সময় থাকে। সেই সময় গ্রামের বৃদ্ধ মানুষ শিশু, কিশোর ও তরুণদের বিভিন্ন ধরনের গল্প শুনিয়ে থাকেন। সেসব গল্পে তাদের সমাজের রীতিনীতি ও সংস্কৃতির কথা মিশে থাকে।
উচ্চতা বেশি হওয়ার দরুণ এ গ্রামের বাসিন্দারা পানির সংকটে ভোগেন। পানির জন্য তাদের প্রায় দুই হাজার ফুট নিচে নামতে হয়। সেখানের ঝিরি থেকে পানি সংগ্রহ করে থাকেন তারা। আসলে পাহাড়ি জীবন প্রাকৃতিকভাবে যত সুন্দর, জীবন ধারণের জন্য তা ততটাই কঠিন।
এ গ্রামের মধ্য দিয়ে চলে গেছে একটি রাস্তা। তার দুই পাশ জুড়ে রয়েছে ঘরবাড়ি। পাড়ায় দুটি চার্চ আছে। একটি চার্চ পরিত্যক্ত অবস্থায় রয়েছে। আরেকটি চার্চে প্রতি রবিবার ধর্মীয় সমাবেশ ও প্রতি সন্ধ্যায় প্রার্থনা হয়। পাড়ায় বোর্ডিংসহ একটি স্কুল আছে। স্কুলটির নাম ‘মডার্ন স্কুল’। স্কুলটিতে ১০০-এর বেশি শিশু পড়াশোনা করে। সেখানে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করার সুযোগ রয়েছে। দূরের পাহাড় থেকে শিশুরা এসে বোর্ডিংয়ে থেকে পড়াশোনা করে।
স্বাভাবিকভাবেই অন্যান্য পাহাড়ি গ্রামের মতো তাদের ওখানেও কোনো হাসপাতাল বা চিকিৎসাব্যবস্থা নেই। চিকিৎসার প্রয়োজনে তাদের যেতে হয় রুমা বাজারে। এ গ্রামে বিদ্যুৎ নেই। তবে সব ঘরেই সোলার আছে। গ্রামের বাসিন্দারা বাংলা ভালো বোঝে, এমনকি বাংলা ভাষায় কথাও বলতে পারে। পাহাড়ের অনেক গ্রামেই পর্যটক বা বাঙালিদের প্রবেশ নিষিদ্ধ থাকে। কিন্তু পাসিংপাড়ায় যাওয়ার অনুমতি সহজেই রুমা গ্যারিসন থেকে পাওয়া যায়। তবে কখনো কখনো নিরাপত্তার কারণে সেখানে বহিরাগতদের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা হয়।
কলি