ঢাকা ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

শ্রেয়ার কথা

প্রকাশ: ১৮ মে ২০২৪, ০১:৫৮ পিএম
আপডেট: ১৮ মে ২০২৪, ০১:৫৮ পিএম
শ্রেয়ার কথা

এখন বা এক মুহূর্ত পর কী হতে যাচ্ছে, তা কেবল সৃষ্টিকর্তাই জানেন। এইতো মনে পড়ে, কিছুদিন আগে শ্রেয়াকে যখন প্রেগনেন্সি রিপোর্টটা দেখিয়ে বললাম ‘তুমি মা হতে চলেছ’, খুশিতে ওর চোখ-মুখ উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। আমি কোনো দিন কাউকে এত খুশি হতে দেখিনি।

কিছুদিন পর শ্রেয়াকে নিয়ে শ্রীপুরে জয়ন্তী দেবীর মন্দিরের উদ্দেশে রওনা দিই। বাসা থেকে বেশ দূরে। আমি নিজেই ড্রাইভিং করছিলাম। হঠাৎ ঝড় শুরু হলো। সঙ্গে সঙ্গে গাড়ি বন্ধ হয়ে যায়। আমরা একটি বাড়িতে আশ্রয় নিই। চার দেয়ালে ঘেরা অনেক পুরোনো বাড়ি। আশপাশে গাছগাছালি ছাড়া আর কোনো বাড়িঘর ছিল না। একজন বৃদ্ধ চাচা আমাদের আশ্রয় দেন। বাড়িটিতে তিনি ছাড়া আর কেউ ছিলেন না। খুব সম্ভবত তিনি বাড়ির কেয়ারটেকার। বললাম, ‘চাচা, আমরা বিপদে পড়েছি। ঝড় কমলেই চলে যাব। কিছুটা সময় এখানে থাকতে দিন।’ তিনি বললেন, ‘আজ রাতটা অনেক খারাপ। ভয় নেই, রাতটা এখানে থাকেন। সকালে চলে যাবেন।’

এই কথা বলে তিনি আমাদের জন্য খাবার আনতে গেলেন। ফিরে এসে বললেন, ‘আজ রাতটা সুবিধার না, ভুলেও কেউ বাইরে যাবেন না। এই যে দেখেন, কিছুক্ষণ আগে ঝড় ছিল, এখন নেই। একটু পর আবার শুরু হবে।’ শ্রেয়া বলল, ‘চাচা, আজ রাতটা খারাপ বলছেন কেন?’ তিনি বললেন, ‘মা, আপনারা এ যুগের মানুষ, বিশ্বাস করবেন না। এই গ্রামে জয়ন্তী দেবী মন্দির নামে একটি মন্দির আছে। আজ থেকে প্রায় ১০০ বছর আগে মন্দিরের দেবী প্রতি বছর একজন করে কুমারী মেয়ে নিয়ে যেত। এখন বছরের এই রাতে একজন করে কুমারী মেয়ে বের হয়, যে মানুষের ক্ষতি করে।’ শ্রেয়া বলল, ‘আপনি কি এখন পর্যন্ত কোনো মেয়েকে মন্দির থেকে বের হতে দেখেছেন?’

’না, আমি দেখেনি। তবে অনেকেই দেখেছে।’

অল্প কিছু সময়ের ব্যবধানে দরজায় কেউ কড়া নাড়ল। দরজার ওপাশ থেকে একটি মেয়ে ডাকছে, ‘কেউ আছেন? দয়া করে দরজাটা খুলুন। আমি অনেক বিপদে পড়েছি।’ আমি দরজাটা খুলতে গেলে চাচা আমার সামনে দাঁড়ান। আমাকে বাধা দিয়ে বলেন, ‘বাবা, আপনার পায়ে ধরি, দরজাটা খুলবেন না। খুললে আমরা সবাই বিপদে পড়ব।’

‘কী বলেন! একটা মানুষ বিপদে পড়ে ডাকছে। আর আমরা দরজা খুলব না?’

চাচাকে ধাক্কা দিয়ে আমি দরজাটা খুলে দিই। আধ ভেজা হয়ে ১৭-১৮ বছরের মেয়েটি কাঁপতে কাঁপতে ঘরে ঢুকেই বলল- ‘দয়া করে আজ রাতটা আমাকে থাকতে দিন। আমি ট্রেনে যাচ্ছিলাম। পাশের রেলস্টেশনে ট্রেনটা থামল। আমি কিছু খাবার কেনার জন্য নামলাম। আর তখনই ট্রেনটা আমাকে রেখে চলে গেল। এর মধ্যে ঝড় শুরু হলো। অনেকটা সময় ছোটাছুটি করার পর এ বাড়িটি দেখতে পাই। প্লিজ, রাতটা আমাকে এখানে থাকতে দিন। সকালে ভোরের ট্রেনে চলে যাব।’

থাকার জন্য চাচা মেয়েটিকে একটি রুম দেখিয়ে দিলেন।

ঝড় আবার থেমে গেল। আমি আর শ্রেয়া শুয়ে পড়লাম। হঠাৎ খেয়াল করি, শ্রেয়া ভীষণ কাঁপছে। ওকে জড়িয়ে ধরে বললাম, ‘শ্রেয়া, তোমার কি খারাপ লাগছে?’

‘আমার অনেক ভয় হচ্ছে। দেবীটা তোমাকে মেরে ফেলবে। চল আমরা চলে যাই।’

আমি হেসে বললাম, ‘কী সব উলটাপালটা বলছ? দেবী আবার আসল কোথা থেকে?’

‘দেখোনি, দেবীর মতো মেয়েটি কেমন করে তাকিয়ে ছিল। মেয়েটি মানুষ না, মানুষরূপী দেবী। ও আমাদের পিছে পিছে ওই জয়ন্তী দেবী মন্দির থেকে এসেছে।’ বলেই আমাকে জড়িয়ে ধরে ও ঘুমিয়ে পড়ল। সকালে ঘুম থেকে উঠে মেয়েটাকে আর দেখা গেল না। দরজা খোলা ছিল। খুব সম্ভবত ভোরের ট্রেনে মেয়েটি চলে গেছে।

ওই রাতের পর থেকে শ্রেয়া অস্বাভাবিক সব আচরণ করতে শুরু করে। শ্রেয়ার অস্বাভাবিক আচরণ আমাকে অনেক দূরে ঠেলে দেয়। শুধু ভাবতাম, আর কয়েকটা দিন। মা হলেই ও ভালো হয়ে যাবে। একটা ফুটফুটে কন্যা সন্তানসহ আমি আমার পুরোনো শ্রেয়াকে ফিরে পাব। প্রার্থনাই শেষ সম্বল।

আমি আবার ছুটে চলি জয়ন্তী দেবী মন্দিরে। যাওয়ার পথে ওই চার দেয়াল ঘেরা পুরোনো বাড়িটি দেখে কেয়ারটেকার চাচাকে খুঁজতে যাই। যা জানতে পারি, তার সারমর্ম হচ্ছে ‘সেদিনের ওই ঝড়ের রাতের পর একটি মেয়ের লাশ পাওয়া যায় বাড়িটির পুকুরপাড়ে। তার জন্য কেয়ারটেকারকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি নিজেকে নির্দোষ প্রমাণ করতে পারেননি বলে হাজতবাস করছেন।’

তারপর নিম্ন আদালতে স্বীকারোক্তি দিয়ে, অনেক কষ্টে নিজেকে অপরাধী এবং চাচাকে মুক্ত করি। কারণ, সেই রাতে আমার জীবননাশের আশঙ্কার কথা ভেবে মেয়েটাকে শ্রেয়াই পুকুরে ফেলে দিয়েছিল, পরে জানতে পেরেছিলাম। আজ আমার হাজতবাসের তৃতীয় দিন। খুব অস্থির অনুভব করছিলাম। এই অস্থিরতার মধ্যে শ্রেয়ার দুই বাক্যের একটি চিঠি আসে।

‘আমি এবং তোমার মেয়ে দুজনই ভালো আছি। আর আমি তোমার মেয়ের নাম রেখেছি জয়ন্তী।’ 
-তোমার শ্রেয়া


ইঙ্গোলস্ট্যাড, জার্মানি

 কলি 

রিকশায় একদিন

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০২:২১ পিএম
আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০২:২১ পিএম
রিকশায় একদিন

মাস দুয়েক আগের ঘটনা, সন্ধ্যায় রিকশায় চড়ে বাসায় ফিরছিলাম আর রিকশাচালক মুরুব্বির সঙ্গে গল্প করছিলাম। এটা আমার পুরাতন অভ্যাস। রিকশায় চড়লেই রিকশাচালকদের সম্পর্কে জানি, তাদের অভিজ্ঞতা শুনি, নিজের কিছু অভিজ্ঞতাও শেয়ার করি। আমার উনাদের মতো সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগে। কথা প্রসঙ্গে তিনি জানালেন, তার মেস বাসা আমার বাসার কাছেই। বউ-বাচ্চারা গ্রামে থাকেন। উনি মাসে একবার গ্রামে যান তাদের দেখতে।

গল্প করতে করতে বাসার কাছাকাছি চলে এলাম। ভাড়া দিয়ে রিকশা থেকে নামতেই উনি আমাকে পাশের চায়ের দোকানে চা পান করতে অনুরোধ করলেন। বললেন, ‘আসেন এক কাপ চা খাইয়া যান, বিল দিতে হইব না’।

একসঙ্গে চা পান করে, একরাশ প্রশান্তি নিয়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে বাসার দিকে এলাম। গেটেই দারোয়ান আংকেলের সঙ্গে দেখা হলো। তাকে ব্যাপারটা বললাম, তিনিও অবাক হলেন। তাকে বলার কারণ, কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া আরেকটি বিব্রতকর ঘটনা।

আচ্ছা খোলাসা করা যাক। তখন মাত্র বাসা বদল করে এই বাসায় উঠেছি। আগের বাসার কাছ থেকে মুরুব্বি দেখে এক রিকশাচালকের রিকশায় উঠলাম। সাধারণত আমি ভাড়া ঠিক করে উঠি, কিন্তু সেদিন বোকামি করে ভাড়া ঠিক করে উঠিনি। বাসার নিচে নেমে ভাড়া কত হয়েছে জিজ্ঞেস করলে তিনি ৬০ টাকার ভাড়া ১২০ টাকা চেয়ে বসলেন। আমি বেকুব বনে গেলাম। আমার এক রুমমেট তখন বাসার গেটে ছিলেন, তিনি সব শুনে রীতিমতো রেগে গেলেন। দারোয়ান আংকেলও দূর থেকে সব দেখলেন।

তাকে বললাম, ‘আমার হিসাবে ভাড়া ৬০ টাকার বেশি হওয়ার কথা না। আপনি ৭০ বা ৮০ টাকা চাইতে পারেন, ১২০ টাকা কীভাবে চান?’

তিনি গলা উঁচিয়ে তার কথার যৌক্তিকতা প্রমাণ করার চেষ্টা করলেন। আমার রুমমেটের সঙ্গে তার ঝগড়া লেগে যাওয়ার মতো অবস্থা। দারোয়ান আংকেল এসে থামালেন। পরে তিনি ১০০ টাকা দাবি করলেন। বললাম, ‘দেখেন আপনি ভাড়া জানেন না, এটা বললেও হতো বা আপনার হয়তো টাকার দরকার তাও বলতে পারতেন। আমি নিঃসংকোচে আপনাকে ১২০ টাকাই দিয়ে দিতাম। কিন্তু আপনি ন্যায্য ভাড়া না জেনেই তর্ক করছেন’। তিনি মানতে নারাজ, চেঁচামেচি করে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করলেন।

আমি তার সামনেই দুজন রিকশাচালক আংকেলকে ভাড়া জিজ্ঞেস করলে তারা ৬০ ও ৭০ টাকা বললেন। তবুও তিনি মানতে নারাজ। আমি আর ঝগড়ায় গেলাম না। তাকে ১০০ টাকা দিলাম, যদিও তা যৌক্তিক ভাড়া নয়। ভাড়া হাতে দিয়ে আমি বললাম, ‘দয়া করে কারও থেকে আর এমন অযৌক্তিক ভাড়া চাইবেন না’। তিনি রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলেন। অল্প কদিনের ব্যবধানে আল্লাহ আমাকে একই পেশার দুরকম স্বভাবের মানুষের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তাই তো মুরুব্বিরা বলে থাকেন, ‘জীবন আসলে একটা শিক্ষার পাঠশালা’।

ঠিকানা পাওয়া যায়নি

রিকশায় একদিন

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০২:১১ পিএম
আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০২:১১ পিএম
রিকশায় একদিন

মাস দুয়েক আগের ঘটনা, সন্ধ্যায় রিকশায় চড়ে বাসায় ফিরছিলাম আর রিকশাচালক মুরুব্বির সঙ্গে গল্প করছিলাম। এটা আমার পুরাতন অভ্যাস। রিকশায় চড়লেই রিকশাচালকদের সম্পর্কে জানি, তাদের অভিজ্ঞতা শুনি, নিজের কিছু অভিজ্ঞতাও শেয়ার করি। আমার উনাদের মতো সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলতে ভালো লাগে। কথা প্রসঙ্গে তিনি জানালেন, তার মেস বাসা আমার বাসার কাছেই। বউ-বাচ্চারা গ্রামে থাকেন। উনি মাসে একবার গ্রামে যান তাদের দেখতে।

গল্প করতে করতে বাসার কাছাকাছি চলে এলাম। ভাড়া দিয়ে রিকশা থেকে নামতেই উনি আমাকে পাশের চায়ের দোকানে চা পান করতে অনুরোধ করলেন। বললেন, ‘আসেন এক কাপ চা খাইয়া যান, বিল দিতে হইব না’।

একসঙ্গে চা পান করে, একরাশ প্রশান্তি নিয়ে আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করে বাসার দিকে এলাম। গেটেই দারোয়ান আংকেলের সঙ্গে দেখা হলো। তাকে ব্যাপারটা বললাম, তিনিও অবাক হলেন। তাকে বলার কারণ, কিছুদিন আগে ঘটে যাওয়া আরেকটি বিব্রতকর ঘটনা।

আচ্ছা খোলাসা করা যাক। তখন মাত্র বাসা বদল করে এই বাসায় উঠেছি। আগের বাসার কাছ থেকে মুরুব্বি দেখে এক রিকশাচালকের রিকশায় উঠলাম। সাধারণত আমি ভাড়া ঠিক করে উঠি, কিন্তু সেদিন বোকামি করে ভাড়া ঠিক করে উঠিনি। বাসার নিচে নেমে ভাড়া কত হয়েছে জিজ্ঞেস করলে তিনি ৬০ টাকার ভাড়া ১২০ টাকা চেয়ে বসলেন। আমি বেকুব বনে গেলাম। আমার এক রুমমেট তখন বাসার গেটে ছিলেন, তিনি সব শুনে রীতিমতো রেগে গেলেন। দারোয়ান আংকেলও দূর থেকে সব দেখলেন।

তাকে বললাম, ‘আমার হিসাবে ভাড়া ৬০ টাকার বেশি হওয়ার কথা না। আপনি ৭০ বা ৮০ টাকা চাইতে পারেন, ১২০ টাকা কীভাবে চান?’

তিনি গলা উঁচিয়ে তার কথার যৌক্তিকতা প্রমাণ করার চেষ্টা করলেন। আমার রুমমেটের সঙ্গে তার ঝগড়া লেগে যাওয়ার মতো অবস্থা। দারোয়ান আংকেল এসে থামালেন। পরে তিনি ১০০ টাকা দাবি করলেন। বললাম, ‘দেখেন আপনি ভাড়া জানেন না, এটা বললেও হতো বা আপনার হয়তো টাকার দরকার তাও বলতে পারতেন। আমি নিঃসংকোচে আপনাকে ১২০ টাকাই দিয়ে দিতাম। কিন্তু আপনি ন্যায্য ভাড়া না জেনেই তর্ক করছেন’। তিনি মানতে নারাজ, চেঁচামেচি করে পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করলেন।

আমি তার সামনেই দুজন রিকশাচালক আংকেলকে ভাড়া জিজ্ঞেস করলে তারা ৬০ ও ৭০ টাকা বললেন। তবুও তিনি মানতে নারাজ। আমি আর ঝগড়ায় গেলাম না। তাকে ১০০ টাকা দিলাম, যদিও তা যৌক্তিক ভাড়া নয়। ভাড়া হাতে দিয়ে আমি বললাম, ‘দয়া করে কারও থেকে আর এমন অযৌক্তিক ভাড়া চাইবেন না’। তিনি রাগে গজগজ করতে করতে চলে গেলেন। অল্প কদিনের ব্যবধানে আল্লাহ আমাকে একই পেশার দুরকম স্বভাবের মানুষের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। তাই তো মুরুব্বিরা বলে থাকেন, ‘জীবন আসলে একটা শিক্ষার পাঠশালা’।

ঠিকানা পাওয়া যায়নি

জাপানে বাংলাদেশি তরুণের আয়োজনে চিত্র প্রদর্শনী

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০২:০৭ পিএম
আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০২:০৭ পিএম
জাপানে বাংলাদেশি তরুণের আয়োজনে চিত্র প্রদর্শনী

প্রবাসে জমজমাট চিত্র প্রদর্শনীর আয়োজন করা আদৌ সহজ কাজ নয়। কিন্তু জাপানপ্রবাসী স্বনামধন্য তরুণ চিত্রশিল্পী কামরুল হাসান লিপু সেই অসাধ্য কাজ সম্পাদন করছেন এক দশকের বেশি সময় ধরে।

গত ১৪ জুলাই রবিবার ছিল কাহাল গ্যালারি প্রতিষ্ঠানে দশম আন্তর্জাতিক চিত্র প্রদর্শনী। স্বল্পপরিসর কিন্তু সুপরিকল্পিত এই গ্যালারির প্রতিষ্ঠাতাও শিল্পী কামরুল। জাপানে এমন উদ্যোগ দ্বিতীয় আর কোনো বিদেশি নিতে পেরেছেন বলে শোনা যায়নি। এখানেই বাঙালির জয়যাত্রার একটি উজ্জ্বল অনুকরণীয় দৃষ্টান্তের প্রমাণ মেলে।

এশিয়া মহাদেশে জাপান দেশটি শিল্পকলার জন্য অনন্য। এদেশে প্রাচীনকাল থেকেই সংস্কৃতি ও শিল্পকলার যে গভীরতর প্রসার ঘটেছে তার নজির প্রাচ্যের আর কোনো দেশে ঘটেনি। ঐতিহ্যগত এবং আধুনিক শিল্পকলাচর্চার আন্দোলন জাপানে যেভাবে বিস্তৃত আকারে ঘটেছে এমনটি এশিয়ার আর কোনো দেশে দেখা যায়নি। স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জাপানের শিল্পকলা আন্দোলনের দ্বারা গভীরভাবে আন্দোলিত এবং প্রভাবিত হয়েছেন। তার রচিত ‘জাপানযাত্রী’ গ্রন্থে জাপানি শিল্পকলার প্রতি প্রবল অনুরাগের কথা জানা যায়। তিনি শান্তিনিকেতনে জাপানের ঐতিহ্যবাহী শিল্পকলা প্রচলন করার জন্য বিশেষভাবে আগ্রহী ছিলেন এবং কতিপয় বিশিষ্ট জাপানি চিত্রশিল্পী ও চারুশিল্পীকে শান্তিনিকেতনে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন।

রবীন্দ্রনাথ এবং বিশ্বখ্যাত জাপানি পণ্ডিত ও শিল্পাচার্য ওকাকুরা তেনশিনের যৌথ প্রয়াসে ১৯০২ সাল থেকে জাপান ও বাংলা অঞ্চলের মধ্যে বিরল এক সাংস্কৃতিক ভাববিনিময়ের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। দুই অঞ্চলের অনেক শিল্পী দুই অঞ্চলে যাতায়াত করেছেন, শিল্পকলা বিষয়ে কাজ করেছেন, প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণ করেছেন। তারই ধারাবাহিকতায় এই প্রদর্শনীটি একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। 

কাহাল গ্যালারিতে দশম আন্তর্জাতিক চিত্র প্রদর্শনীতে বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেপাল, ফ্রান্স, বেলজিয়াম, স্লোভাকিয়া, মঙ্গোলিয়া, ইংল্যান্ড ও আফ্রিকা মহাদেশের শিল্পীদের বিভিন্ন মাধ্যমে অঙ্কিত ৫৪টি বর্ণিল, বৈচিত্র্যময় চিত্রকর্ম স্থান পেয়েছে। বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধ স্মরণে বিমূর্তচিত্র অঙ্কন করেছেন বাংলাদেশের শিল্পী ইমরুল চৌধুরী ‘ দ্য জেনোসাইড ১৯৭১’ নামে। ফরাসি শিল্পী আলেক্সান্ডার বারাখার অঙ্কিত চিত্র ‘টুগেদার’ অসামান্য একটি শিল্পকর্ম। ‘বিউটি অব বাংলা’ নামক বর্ণিল চিত্রটি এঁকেছেন শিল্পী কামরুল হাসান লিপু, যা একাধারে ঐতিহ্যিক এবং রোমান্টিক। “ভিলেজ অব বাংলাদেশ” শীর্ষক প্রাণবন্ত চিত্রটি এঁকেছেন আবদুল মান্নান, যা বাংলার চিরাচরিত রূপকে দেখার সুযোগ করে দিয়েছে। প্রায় প্রতিটি চিত্রকর্মই স্ববৈশিষ্ট্যে স্বতন্ত্র,যা চিত্রকলাপ্রিয় যে কাউকেই অপার আনন্দে আপ্লুত করবে নিঃসন্দেহে।

বর্ণাঢ্য প্রদর্শনীটি উদ্বোধন করেন জাপানের বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত শাহাবুদ্দিন আহমেদ। নিয়ম অনুযায়ী এবারও একজন বিশিষ্ট শিল্পীকে তার জীবনভর শিল্পকলায় অমূল্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ‘কাহাল সম্মাননা’ প্রদান করা হয়। এবারের ‘কাহাল সম্মাননা’ পেয়েছেন বাংলাদেশের খ্যাতিমান চিত্রশিল্পী মোস্তফা মনোয়ার। এ ছাড়া অংশগ্রহণকারী শিল্পীদের চিত্রকর্মকে যাচাই-বাছাই করে আটজন শিল্পীকে বিশেষ পুরস্কারে ভূষিত করা হয়।

তারা হলেন, প্রথম গ্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ড আবদুল মান্নান, দ্বিতীয় গ্র্যান্ড অ্যাওয়ার্ড দিদারুল লিমন, তৃতীয় ছয়জন, যথাক্রমে, প্রদীপ কুমার সাউ, ড. মৃণাল রাজু কর, ডেনিস ওলেকজা বোগোডালিকোভা, নিয়ামুল কাদিম লোটাস, ইমন আলী এবং রুমানা ইসলাম রূপা। বিচারকমণ্ডলীতে ছিলেন জাপানের বিশিষ্ট গ্রাফিক ডিজাইনার ও ছাপশিল্পী ফুকুজাওয়া ইকুফুমি, ফ্রান্সের শিল্পী আলেক্স ওজমোসে ব্রাখা এবং আয়োজক শিল্পী কামরুল হাসান লিপু।

প্রদর্শনীটি হয়ে উঠেছিল একটি ছোটখাটো প্রাণচঞ্চল আন্তর্জাতিক মিলনমেলা। জাপানপ্রবাসী একাধিক গণ্যমান্য ব্যক্তি উপস্থিত থেকে তরুণ শিল্পীদের উৎসাহিত করেছেন। যেমন, আবদুর রহমান, মুন্সী আজাদ, রেণু আজাদ, কাজী ইনসানুল হক, বাদল চাকলাদার চৌধুরী হোসাইন মুনির প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন বিশিষ্ট আবৃত্তিকার, কথাসাহিত্যিক এবং জাপানি টিভি নাট্যাভিনেতা জুয়েল আহ্সান কামরুল। প্রদর্শনীটি শেষ হয় ২১ জুলাই।

 কলি 

ছোট্ট পাখি হামিংবার্ড

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০২:০৩ পিএম
আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০২:০৩ পিএম
ছোট্ট পাখি হামিংবার্ড

পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট পাখি হামিংবার্ড। ছোট্ট সুন্দর এই পাখিটার ওজন মোটে দুই গ্রাম। এদের দৈর্ঘ্য প্রায় দুই ইঞ্চি হয়। পৃথিবীতে ৩০০-এর বেশি প্রজাতির হামিংবার্ড রয়েছে। যার মধ্যে অত্যন্ত এবং পৃথিবীর সবচেয়ে ছোট পাখি হলো বি হামিংবার্ড (Bee hummingbird) বা মৌমাছি হামিংবার্ড।

 দ্রুত, চঞ্চল এবং ছোট পাখিটি সংরক্ষণে প্রতি বছর ২ সেপ্টেম্বর পালিত হয় বিশ্ব হামিংবার্ড দিবস। চলুন জেনে নিই পাখিটি সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য-
পেছনের দিকে উড়তে পারে হামিংবার্ড
উড়ন্ত প্রাণীদের মধ্যে হামিংবার্ড পেছনে উড়তে পারে। তাদের ডানার গঠন এমন যে, তারা সহজেই পেছনের দিকে উড়তে পারে। হামিংবার্ডের রোটেটর কাফ তাকে পেছনের দিকে উড়তে সাহায্য করে। তারা ডানাগুলো সেকেন্ডে ২০০ বার নাড়াতে পারে। 
তাদের ডানা শুধু পেছনে নয় ডানে-বামে সবদিকে ওড়াতে পারে। ডিম ফুটে বের হওয়ার দুই সপ্তাহ পর তারা উড়তে সক্ষম হয়।

হামিংবার্ড হাঁটতে পারে না
হামিংবার্ডের হাঁটু থাকে না। তাছাড়া তাদের পা খুবই ছোট। তারা দুর্বল এবং ছোট পা দিয়ে চলাফেরা করতে পারে না। তবে হামিংবার্ড দাঁড়াতে পারে। এরা উড়ে উড়েই চলাফেরা করে। যেখানেই যায় উড়ে যায় এবং দ্রুত পাখা ঝাপটায়। হামিংবার্ডের চারটি আঙুল থাকে। তিনটি সামনের দিকে একটি পেছনের দিকে। যা দিয়ে কোনো কিছুকে আঁকড়ে ধরতে পারে তারা। তারা তাদের পা ব্যবহার করে পালক ঝাড়ার জন্য এবং পোকামাকড় খাওয়ার জন্য। তবে হামিংবার্ড হাঁটতে পারে না।

হামিংবার্ড কেন হামিংবার্ড?
ছোট্ট এই পাখিটার নামকরণের পেছনে আছে তাদের চঞ্চল ডানা। হামিংবার্ড খুব দ্রুত ডানা ঝাপটাতে পারে। এরা সেকেন্ডে প্রায় ৮০ বারের মতো ডানা ঝাপটাতে পারে, যেহেতু এরা হাঁটতে পারে না, তাই চলাফেরায় ডানাই তাদের অবলম্বন। এই অধিক ডানা ঝাপটানোর ফলে এক ধরনের শব্দ তৈরি হয়। তাদের ডানার গুনগুন শব্দকে হামিং বলা হয়। ডানার এই শব্দের কারণে পাখিটির নাম হামিংবার্ড।

সবচেয়ে ছোট পরিযায়ী পাখি
পৃথিবীর দীর্ঘ দূরত্বের পরিযায়ী পাখি হামিংবার্ড। গবেষকরা জানান, হামিংবার্ড দিনে ২৩ মাইল পর্যন্ত ভ্রমণ করতে পারে। তাদের ওড়ার গতি ঘণ্টায় ২০ থেকে ৩০ মাইল। তারা মেক্সিকো উপসাগর পাড়ি দেওয়ার সময় একসঙ্গে ৫০০ মাইল পাড়ি দেয়। বছরে দুবার আলাস্কা ও মেক্সিকো ভ্রমণ করে তারা। যা প্রায় ৩৯০০ মাইল। বসন্ত এলেই তারা অভিবাসন শুরু করে। তাদের টেক্সাস, লুইজিয়ানা এবং উপসাগরীয় উপকূল বরাবর অন্যান্য জায়গায় জানুয়ারির শেষ থেকে মার্চের মাঝামাঝি সময়ে দেখা যায়।

পিং পং বলের সাইজের বাসা
হামিংবার্ডের বাসা বোতলের ক্যাপ অথবা পিং পং বলের আকারের হয়ে থাকে। বেশির ভাগ বাসার ব্যাস দেড় থেকে দুই ইঞ্চি হয়। বাসাগুলো ছোট হলে এগুলো তৈরিতে মা পাখিকে প্রচুর পরিশ্রম করতে হয়। কেননা তার বাচ্চাদের নিরাপত্তার জন্য বাসা বুনন জরুরি। তারা এমন স্থানে বাসা তৈরি করে যাতে সূর্য, বৃষ্টি, ঝোড়ো হাওয়া এবং শিকারি থেকে নিরাপদে থাকতে পারে। মাটি থেকে ৫-১০ ফুট উচ্চতায় অথবা লম্বা গাছ থাকলে ৬০-৯০ ফুট উচ্চতায় বাসা তৈরি করে।

বাসা তৈরিতে কাঁটাযুক্ত স্থান তাদের খুব প্রিয়। তারা তুলার আঁশ, বাকলের টুকরা, পালক ইত্যাদি ব্যবহার করে। তাছাড়া মাকড়শার জালকে সুতা হিসেবে কাজে লাগায় বাসা বুনতে। যেহেতু পৃথিবীর ছোট পাখির বাসাটি খুবই ছোট, তাই সহজে চোখে পড়ে না তাদের বাসা। সূত্র- উইকিপিডিয়া, দেয়ারবার্ডিং, ওয়াইল্ডবার্ডসকপ, হামিংবার্ডসেন্ট্রাল।

 কলি

স্বশিক্ষিত চিত্রশিল্পী আল আমিন

প্রকাশ: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০১:৫২ পিএম
আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৪, ০১:৫২ পিএম
স্বশিক্ষিত চিত্রশিল্পী আল আমিন

ছবির ভেতর দিয়ে দেশ, সমাজ, সংস্কৃতি, পরিবেশ ও প্রেমের কথা বলেন আল আমিন। তিনি একজন স্বশিক্ষিত শিল্পী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদীর পূর্বপারের আদমপুরে ১৯৭৬ সালে তার জন্ম। তার বাবা আদম আলী ছিলেন ট্রেনচালক।

শুরুর গল্প
আল আমিনের পড়াশোনার হাতেখড়ি গ্রামের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে। দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ার সময় থেকেই আঁকিবুঁকি করেন। দাদা সেবার চেয়ারম্যান পদের প্রার্থী ছিলেন। বাড়িভরা পোস্টার ছিল। পোস্টারের ছবির ওপর সাদা পাতলা কাগজ রেখে কলম দিয়ে আঁকতেন তিনি। এক সময় ছবি আঁকা তার নেশায় দাঁড়িয়ে যায়। গাঁয়ের মাটির ঘরের দেয়ালগুলোয় বাঁশের কঞ্চি, চকখড়ি মাটি ও কাঠি দিয়ে ছবি আঁকতেন। তখন কোনো একটা রিকশার পেছনে অভিনেত্রী বিপাশার ছবি আঁকা দেখেছিলেন। সেই ছবিটি এঁকেছেন অনেকবার।

অষ্টম শ্রেণিতে আর্টের দোকান
প্রাইমারি স্কুল শেষ করে চম্পকনগর উচ্চ বিদ্যালয়ে ভর্তি হন আল আমিন। হাতের লেখা সুন্দর ও পড়াশোনায় ভালো হওয়ায় শিক্ষকরা তাকে স্নেহ করতেন। তাকে আরও আঁকতে উৎসাহ দিতেন। অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় স্থানীয় বাজারে আর্টের দোকান দিয়ে ফেলেন আল আমিন। ক্লাসের ফাঁকে ফাঁকে ব্যানার লিখতে থাকেন। রাজনৈতিক দলগুলোর জন্য দেয়ালে স্লোগান লিখতেন। সে সময় গ্রামে ফলের গাছ ছিল প্রচুর। বাদুড় ও বিভিন্ন পাখি ফলমূল খেয়ে যেত। আল আমিন মানুষের হা-করা মুখের ছবি, এলোকেশে মাথার ছবি এঁকে টানিয়ে দিলেন গাছে গাছে। বেশ কাজ দিয়েছিল।

এইচএসসি পাস করার পর আর্ট শিখতে আল আমিন ঢাকায় আসেন। জাজমেন্ট অ্যাড নামের একটি দোকানে ব্যানার লেখার কাজ পান। দোকানি সম্পর্কে তার নানা ছিলেন। সিনিয়র আর্টিস্টদের কাজ দেখে দেখে শিখতে থাকেন তিনি। খেয়াল করতেন তাদের হাত ঘোরানো বা লেখার স্টাইল। দিনের বেলায় যা শিখতেন, রাত জেগে তা প্র্যাকটিস করতেন। মাঝেমধ্যে দেয়ালে রাজনৈতিক স্লোগান লিখতেন। আল আমিন বললেন, ‘আমি আর এক বড় ভাই রাজনৈতিক কর্মীদের আদেশে সারা রাত ঢাকার পথে ঘুরে ঘুরে দেয়াল লিখন করতাম। তারা দেয়ালে রঙ লাগিয়ে যেতেন আর আমরা দ্রুত লিখে যেতাম। এভাবে এক বছর রাতে কাজ করেছি।’ 

তিতাস আর্ট
এক আত্মীয় মারফত নারায়ণগঞ্জে ‘মিতা আর্ট’ নামের একটি দোকান দেন। সেখানে তিন বছর ছিলেন। তারপর নরসিংদীতে একটা দোকানে চাকরি নেন। ছয় মাস পর আবার নিজের দোকান খোলেন। নাম রাখেন তিতাস আর্ট। ২০২, পশ্চিম ব্রাহ্মন্দীতে দোকানের অবস্থান। নরসিংদী সরকারি কলেজের মূল ভবনের পেছনে গেলেই চোখে পড়বে তিতাস আর্ট। অল্প দিনেই নাম ছড়িয়ে পড়ে। কাজের সুবাদেই নরসিংদীর তরুণ কবি রবিউল আলম নবি, মো. ফয়েজুল কবির এবং সম্পাদক ও সংগঠক আব্দুল্লাহ আল মামুন রাসেলের সঙ্গে যোগাযোগ হয়। তারা তাকে নতুন নতুন ভাবনা দেন। বিমূর্ত ছবিও আঁকতে বলেন। করতে থাকেন প্রচ্ছদ ডিজাইন। বলেন, ‘তারা খুব প্রশংসা করতেন। উৎসাহ দিতেন। আমাকে হোটেলে নিয়ে গিয়ে খাওয়াতেন।’ নরসিংদী সরকারি কলেজের বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনের দেয়ালিকার প্রচ্ছদ এঁকে পেয়েছেন পুরস্কার।

আল আমিন শিল্পালয়
এর মধ্যে দোকানের নাম বদলে রাখেন আল আমিন শিল্পালয়। সারা দিন ছবি নিয়েই পড়ে থাকেন। ছবি নিয়ে ভাবেন। সমাজের নানা অসঙ্গতি ফুটে উঠতে থাকে তার ছবিতে। অসহায়-নিপীড়িত মানুষের ছবিও আঁকতেন। আঁকেন দেশমাতৃকার ছবি। তার ছবি দেখে খুশি হয়ে কবি আবু হাসান শাহরিয়ার নিজের বাড়িতে আল আমিনকে দাওয়াত করে খাইয়েছেন। ছবির মাধ্যমে আঁকি সমাজের বিভিন্ন অসঙ্গতি, শ্রেণিবৈষম্য, মানুষে মানুষে ভেদাভেদ, অধিকারবঞ্চিত, অন্যায়ভাবে আহত হওয়া মানুষের কথা- বললেন আল আমিন।

ভাণ্ডারে রতন
আল আমিন বিমূর্ত ছবিই আঁকেন বেশি। প্রয়োজনে মূর্ত ছবিও আঁকেন। এ পর্যন্ত প্রায় ৫ হাজার বিমূর্ত ছবি এঁকেছেন তিনি। তার ছবিঘরে আছে দেড় হাজারের মতো ছবি। ছবিতে আছে দেশপ্রেম, অন্যায়ের প্রতিবাদ, পরিবেশ রক্ষা, সমাজের অসঙ্গতির কথা। এর মধ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছবি এঁকে বেশ প্রশংসা পেয়েছেন। পরিবেশ নিয়ে কিছু ছবি এঁকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। কিছু মানুষের ছবি এঁকে দিয়ে বিপুল ভালোবাসা পেয়েছেন।

শিল্পীর বেদনা
ছবি আঁকার নেশা আর মায়ায় পড়ে গেছেন আল আমিন। দিনমান ছবি নিয়েই পড়ে থাকেন। নাওয়া-খাওয়াও ভুলে যান প্রায় সময়। তীব্র অভাব এবং অর্থকষ্ট যখন জীবনকে কুঁড়ে কুঁড়ে খায়, তবুও ছবির নেশা ও মায়া ছাড়তে পারেন না তিনি। এর মধ্যে বাসা ভাড়া বাকি পড়েছে, ছবিঘরের ভাড়াও দিতে পারছেন না। বাড়িওয়ালা দু-এক কথা বললেনও। অন্য পেশায় জড়াতে কেউ কেউ পরামর্শ দিলেন। কিন্তু আল আমিন খেয়ে-না খেয়ে এটা নিয়েই থাকতে চান। ছবিঘরটার বর্তমানে এমন অবস্থা হয়ে দাঁড়িয়েছে, বৃষ্টি এলে পানি পড়ে। বাতাস এলে ছবিগুলো মেঝেতে লুটোপুটি খায়।

অর্থাভাবে ছবিগুলো নষ্ট হওয়ার জো হয়েছে।  বললেন, ‘জগতে সবচেয়ে বড় এবং ভয়াবহ রকমভাবে আচ্ছাদিত করে রাখে ছবি আঁকার নেশা। নেশা আর মায়ার কারণে এটি ছাড়তে পারছি না। আমার ছবিগুলো বাঁচাতে পারলে শান্তি পেতাম। কেউ যদি আমার পাশে এসে দাঁড়াত।’

 কলি