যশোরে প্রথমবারের মতো স্কোয়াশ চাষ করেছেন শার্শা উপজেলার কৃষি উদ্যোক্তা মঞ্জুরুল আহসান। মিলছে সফলতাও। এতে জেলার কৃষিতে যোগ হয়েছে নতুন একটি সবজি। স্কোয়াশ চাষে নতুন সম্ভাবনাও দেখছে কৃষি বিভাগ।
বড় শশার মতো দেখতে একটি স্কোয়াশের ওজন প্রায় এক কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। বীজ বপনের ৩৫ থেকে ৪০ দিনের মধ্যেই গাছে ফুল আসে। পরাগায়নের ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে ফল সংগ্রহ করা যায়। সব মিলিয়ে ফসল তুলতে সময় লাগে দুই আড়াই মাস। হেক্টর প্রতি ফলন হয় ৪৫ থেকে ৫০ টন।
কৃষি অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (উদ্যান) সৈয়দা সিফাত জাহান বলেন, ‘স্কোয়াশ চাষের জন্য বেলে-দোআঁশ মাটি বেশ উপযুক্ত। বসতবাড়ি ও চরেও আবাদ সম্ভব। শীতকালীন চাষাবাদের জন্য সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে বীজ বপন করা হয়। তবে আগাম শীতকালীন ফসলের জন্য আগস্ট মাসের মাঝামাঝি থেকে সেপ্টেম্বর মাসে জমিতে সরাসরি বীজ বপন করা হয়। শতক প্রতি ১০ গ্রাম বীজ বপন করা ভালো।’
চাষি মঞ্জুরুল আহসান উপজেলার লক্ষ্মণপুর ইউনিয়নের শিকারপুর গ্রামের বাসিন্দা। সরকারি বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ ডিগ্রি কলেজ থেকে তিনি এইচএসসি পাশ করেন।
মঞ্জুরুল আহসান বলেন, ‘ছাত্র অবস্থা থেকেই আম, কুল, টমেটো, বাঁধাকপি ও ফুলকপিসহ বিভিন্ন ধরনের সবজি ও ফল চাষ করে আসছি। সম্প্রতি ইউটিউবে ভিডিও দেখে ও শার্শা উপজেলার কৃষি বিভাগের পরামর্শ নিয়ে স্কোয়াশের বীজ সংগ্রহ করি। মালচিং পদ্ধতি ব্যবহার করে জমিতে বীজ রোপণ করি। দেড় মাস পর ফল আসতে শুরু করেছে।
তিনি আরও বলেন, নভেম্বর মাসে লাগানো স্কোয়াশে মাঠ ভরে গেছে। মাত্র ১৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ৫০ হাজার টাকার ফল বিক্রি করেছি। বাজারে চাহিদা ও দাম ভালো থাকায় দেড় লাখ টাকার স্কোয়াশ বিক্রির আশা করছি। স্কোয়াশ আবাদের সুবিধা হচ্ছে অল্প সময়ে এবং সাশ্রয়ী মূল্যে উৎপাদন করা যায়। স্কোয়াশের প্রতিটি গাছের গোড়ায় ৮ থেকে ১২টি পর্যন্ত ফল ধরে। বাজারে প্রতি কেজি স্কোয়াশ বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৬০ টাকা দরে।’
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. সাইদুজ্জামান জানান, ‘স্কোয়াশ অত্যন্ত সুস্বাদু এবং ডায়াবেটিস, ক্যানসার ও হার্টের রোগীদের জন্য বেশ উপকারী। কুমড়ার একটি ইউরোপীয় জাত স্কোয়াশ। এ সবজি ভাজি, মাছ ও মাংসের সঙ্গে রান্নার উপযোগী। বিশেষ করে চাইনিজ রেস্টুরেন্টে সবজি এবং সালাদ হিসেবে এর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে।’
স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা পলাশ কিশোর ঘোষ বলেন, ‘প্রথমবারের মতো শার্শার মাটিতে বিদেশি সবজি স্কোয়াশ চাষ হয়েছে। বাজারে চাহিদা ও কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় আগামীতে এলাকায় স্কোয়াশ চাষের প্রসার ঘটবে।’
শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দীপক কুমার রায় বলেন, ‘স্কোয়াশ চাষে মঞ্জুরুল আহসানকে বিভিন্ন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। অন্য চাষিরা আগ্রহ হলে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে সার-বীজসহ সবধরনের পরামর্শ দেওয়া হবে। শস্যটি অপ্রচলিত হলেও খুবই লাভজনক। কৃষক ও সাধারণ মানুষ এ সম্পর্কে জানতে পারলে উৎপাদন ও চাহিদা বাড়বে।’
তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণত স্কোয়াশের বীজ বপনের পর হালকা সেচ দিয়ে মাটি ভিজিয়ে দিতে হবে। স্কোয়াশ গাছ সপ্তাহে ২ ইঞ্চি পানি শোষণ করে থাকে। তাই প্রয়োজনীয় সেচ দিতে হবে। স্কোয়াশ চাষে মালচিং গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। চারা টিকে গেলেই গোড়ার চারপাশে মালচিং করলে তাপমাত্রা ঠিক থাকে এবং মাটি আর্দ্রতা ধরে রাখে। বিষয়টি স্কোয়াশের ফলন বৃদ্ধিতে সহায়তা করে।