বেসরকারি ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) সঙ্গে একীভূত না হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ন্যাশনাল ব্যাংক লিমিটেড।
শনিবার (২৭ এপ্রিল) ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে এ সিদ্ধান্ত হয় বলে জানা যায়।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, একীভূতকরণ নিয়ে ব্যাংকে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ায় অনেকে আমানত তুলে নিচ্ছেন।
এ প্রসঙ্গে ন্যাশনাল ব্যাংকের এক কর্মকর্তা সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘আগে থেকে কোনো আলোচনা না করে হঠাৎ গত ৯ এপ্রিল ইউসিবির সঙ্গে একীভূত হওয়ার কথা বলা হয়। ঈদের আগে শেষ কর্মদিবসে এ সিদ্ধান্ত জেনে আমানতকারী ও কর্মকর্তাদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এতে অনেকে ব্যাংক থেকে টাকা তুলে নিতে শুরু করেন।’
তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের চাপিয়ে দেওয়া এ সিদ্ধান্ত পরিচালনা পর্ষদে অনুমোদন হয়নি বলে জানা যায়।
একটি সূত্র জানায়, একীভূত না হয়ে ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়াতে ঋণ আদায়ের প্রচেষ্টা আরও জোরদার করবে। বিশেষ করে শীর্ষ ঋণখেলাপিদের থেকে টাকা আদায়ে ক্রাশ কর্মসূচি নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এ জন্য কর্মকর্তাদের বিভিন্ন স্থরে ঋণ আদায়ের জন্য লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করে দেওয়া হবে।
ন্যাশনাল ব্যাংকের একজন পরিচালকের বরাত দিয়ে একটি সংবাদমাধ্যম জানায়, ‘ব্যাংকটি ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে নতুন পরিচালনা পর্ষদ গঠন করে দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ডিসেম্বরে সিকদার পরিবারের বিতর্কিত পরিচালকদের সরিয়ে নতুন পর্ষদ গঠন করা হয়। ব্যবস্থাপনায়ও পরিববর্তন এসেছে। এখন হঠাৎ করে যদি বলা হয় আরেক ব্যাংকের সঙ্গে এক হয়ে যেতে। যে কারণে একীভূত না হয়ে ব্যাংকটিকে কীভাবে ঘুরে দাঁড়াতে পারে সে ধরনের উদ্যোগ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই ব্যাংকের যে সম্পদ রয়েছে অনেক ব্যাংকের চেয়ে ভালো। সুতরাং খেলাপি ঋণ কমানো গেলে এবং আস্থা ফেরানো গেলে ব্যাংকটি দ্রুত ঘুরে দাঁড়াবে।’
ন্যাশনাল ব্যাংকের পরিচালক ও নির্বাহী কমিটির চেয়ারপারসন পারভীন হক সিকদার বলেন, ‘অন্য কোনো ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত হওয়ার পরিকল্পনা কখনো তারা নেননি। একীভূত হওয়ার ইস্যুতে পরিচালক বা ব্যবস্থাপনার কেউ জানেনও না।’
তিনি আরও বলেন, ‘ন্যাশনাল ব্যাংকের ৪১ বছরের ইতিহাস রয়েছে। কিছু সমস্যা দেখা দিলেও সম্প্রতি কেন্দ্রীয় ব্যাংক পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে নতুনভাবে গঠন করে দিয়েছে। সবার চেষ্টায় দ্রুততম সময়ে এই ব্যাংক আবার দেশের এক নম্বর ব্যাংকে পরিণত হবে।’
এদিকে একীভূত করতে যাওয়া ব্যাংকগুলোর গ্রাহকদের পরিস্থিতি সামলাতে গত ১৫ এপ্রিল কেন্দ্রীয় ব্যাংক জরুরি ভিত্তিতে সাংবাদিকদের ডেকে জানায়, আপাতত ৫টি ব্যাংকের বাইরে কোনো একীভূতকরণের আবেদন নেওয়া হবে না। ব্যাংকগুলোর মধ্যে এক্সিম ব্যাংকের সঙ্গে পদ্মা ব্যাংক একীভূত হওয়ার বিষয়ে এমওইউ সই করেছে। এ ছাড়া সিটি ব্যাংকের সঙ্গে বেসিক ব্যাংক, সোনালী ব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (বিডিবিএল), বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংকের সঙ্গে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক (রাকাব) একীভূত করা হবে।
আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে স্বেচ্ছায় একীভূত না হলে মার্চ থেকে বাধ্যতামূলকভাবে এক করার কথাও জানায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাখ্যা
ব্যাংক একীভূতকরণ নিয়ে জনমনের বিভ্রান্তি দূর করতে গত ২৩ এপ্রিল এক বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এতে বলা হয়, মূলত দুটি উদ্দেশ্য নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ‘ব্যাংক একীভূতকরণ’ নিয়ে কাজ করছে। প্রথমত, ২০২৬ সালে বাংলাদেশ একটি উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে। ফলে উন্নয়নশীল অর্থনীতিতে কার্যকর ব্যাংকিং সেবা দিতে দেশে অধিক সক্ষমতাসম্পন্ন ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রয়োজন হবে। যাতে করে অর্থনৈতিক উন্নয়নে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে কোনোরূপ বাধার সৃষ্টি না হয়।
দ্বিতীয়ত, অপেক্ষাকৃত দুর্বল ব্যাংকের বিদ্যমান সমস্যা সমাধান এবং একইসঙ্গে অপেক্ষাকৃত সবল ব্যাংকের কার্যক্রম উন্নয়নের মাধ্যমে আর্থিক খাতকে শক্তিশালী করা, যাতে করে জনস্বার্থে একীভূত ব্যাংক-কোম্পানি অধিক সেবা দিতে পারে।
জনবিভ্রান্তি দূর করতে বাংলাদেশ ব্যাংক জানাচ্ছে, ক. একীভূতকরণের প্রক্রিয়াধীন ব্যাংকগুলোতে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক আমানতকারীদের জমা আমানত সম্পূর্ণ নিরাপদ ও সুরক্ষিত থাকবে। একীভূতকরণের কাজ সম্পন্ন হওয়ার পরও নিজ নিজ ব্যাংকের হিসাবধারীদের বর্তমান হিসাব, পূর্বের ন্যায় চলমান থাকবে।
খ. একীভূতকরণের আওতাভুক্ত ব্যাংকগুলোর উদ্যোক্তা পরিচালক, বর্তমান পর্ষদ ও সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের সম্মতির ভিত্তিতেই একীভূতকরণের কার্যক্রম সম্পন্ন করা হবে।
গ. ২০২৪ সালের ৪ এপ্রিল বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা বিআরপিডি সার্কুলার নং-৮ এ বর্ণিত নীতিমালা অনুসরণ করেই একীভূতকরণের সকল কার্যক্রম সম্পাদন হবে।
অমিয়/সালমান/