ঢাকা ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, শনিবার, ২৭ জুলাই ২০২৪

রাজস্ব আয় বাড়ানোর উদ্যোগ নিন

প্রকাশ: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১০:৪৬ এএম
আপডেট: ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১:১২ এএম
রাজস্ব আয় বাড়ানোর উদ্যোগ নিন

ডলারসংকটের কারণে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে আমদানি-রপ্তানিতে। এতে বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ সংকট মোকাবিলার জন্য রাজস্ব ছাড় দিয়ে হলেও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আনার চেষ্টা করতে হবে। রপ্তানি বাড়াতে হবে। দেশি শিল্পে উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ বাড়াতে উৎসাহিত করতে হবে। এসব ক্ষেত্রে গতি এলে সমগ্র অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে রাজস্ব পরিশোধের পরিমাণও বাড়বে। এভাবে রাজস্ব ছাড়ের মাধ্যমে সরকারের আয় বাড়াতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শিল্প খাতে করপোরেট কর কমানোর বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখার নির্দেশনা রয়েছে। পাচারকৃত অর্থ ফেরতে কার্যকরী কৌশল নির্ধারণেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ডলারসংকটের কারণে সামগ্রিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ সংকট অচিরেই কাটবে বলে মনে হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে আমদানি-রপ্তানি ও বিনিয়োগ বাড়াতে রাজস্ব ছাড়ের বিকল্প নেই। এ ছাড়া বাজারে পণ্যের দাম কমাতে হলেও রাজস্ব ছাড় দিতে হবে। আগামী বাজেটে এসব বিষয় বিবেচনায় রাখা খুবই জরুরি।

সরকারের অন্যতম আয় হলো এনবিআরের রাজস্ব। রাজস্ব বাজেট জাতীয় বাজেটের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আগামী বাজেটে (২০২৪-২৫) রাজস্ব আদায়ের অন্যতম খাত হবে ভ্যাট। এরপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে আয়করকে। শুল্ক থেকে রাজস্ব আহরণের গুরুত্বকে রাখা হয়েছে তৃতীয় ধাপে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রস্তাবিত বাজেটে আগামী অর্থবছরের জন্য রাজস্বনীতি কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে তৈরি প্রতিবেদনে এসব পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন এনবিআরে পাঠানো হয়েছে। চলতি মাস থেকে এনবিআর প্রস্তাবিত রাজস্ব বাজেট প্রণয়নের যে কাজ শুরু করেছে, সেখানে এই পরামর্শকে দিকনির্দেশনা হিসেবে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে অর্থ, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, ট্যারিফ কমিশনসহ সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকেও এনবিআর পরামর্শ চেয়েছে।

প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে জানা যায়, এনবিআরকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে বাস্তবায়নযোগ্য কার্যকরী কৌশল নির্ধারণে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের কাছ থেকে পাঠানো সুপারিশ গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখে আগামী অর্থবছরের রাজস্ব বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে, সরকারের  চলতি মেয়াদের প্রথম জাতীয় বাজেটে (২০২৪-২৫) এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না, যা ক্ষমতাসীনদের সমালোচনার মুখে ফেলে। বিশেষভাবে সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়, রাজস্ব-সম্পর্কিত এমন পদক্ষেপ না নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এমনকি ঋণদানকারী সংস্থার চাপ থাকলেও তা সহনীয়ভাবে রাজস্ব বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। ভ্যাট, কর বা শুল্ক অব্যাহতির মতো পদক্ষেপও পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অটোমেশনের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ে জোর দিতে বলা হয়েছে।

এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবদুল মজিদ খবরের কাগজকে বলেন, ‌‘এনবিআর প্রতি অর্থবছরের জন্য রাজস্ব বাজেট প্রণয়ন করে থাকে। প্রস্তাবিত বাজেটে নেওয়া পদক্ষেপগুলো গতানুগতিক ধারাবাহিকতায় না নিয়ে সময়োপযোগী হওয়া উচিত। শুধু তা-ই নয়, সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠান, অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী সংগঠনসহ সবার কাছ থেকেও পরামর্শ নেওয়া উচিত। এতে একটি অর্থবহ রাজস্ব বাজেট প্রণয়ন সম্ভব হবে।’

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে শিল্পের অনেক  খাতেই আন্তর্জাতিক ক্রেতা কমেছে। দেশি শিল্পে গতি আনতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রতিবেদনে পণ্যের নতুন বাজার সম্প্রসারণে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর এলাকার জন্য মূলধন বিনিয়োগের ওপর নির্দিষ্ট পরিমাণ ভর্তুকি, উৎপাদিত পণ্যের ওপর থেকে কর ও শুল্ক অব্যাহতি দেওয়া কতটা সম্ভব, তা হিসাব করে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে বলা হয়েছে। আগামী বাজেটেও গ্রামীণ ক্ষুদ্রশিল্প, কৃষি ও মৎস্য খাত, হাঁস-মুরগি, গবাদিপশুর খামার এবং ডেইরি শিল্পের জন্য ন্যূনতম মূল্য সংযোজন কর এবং ক্ষেত্রবিশেষে অব্যাহতি প্রদানে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় শিল্পে ব্যবহারে কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক ও কর রেয়াত সুবিধা বহাল রাখা ও বাড়াতে বলা হয়েছে। সরকারের রাজস্বনীতি নিয়ে প্রতিবেদনে যে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, এ নিয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া খবরের কাগজকে বলেন, ‘বছর দুয়েক থেকে পণ্যমূল্য বাড়ায় সাধারণ মানুষ কষ্টে আছে। এর মধ্যে আগামী বাজেটে রাজস্ব বাড়ানো এবং নতুন কর আরোপ করা উচিত হবে না।’

দেশের শিল্প খাতকে গতিশীল করতে রাজস্ব ছাড় দিয়ে হলেও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। তা হলে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। করের জালকে প্রশস্ত করতে সরকারকে জোরালো উদ্যোগ নিতে হবে। করের ভিত্তি সম্প্রসারণ ছাড়া রাজস্ব আদায় করা কঠিন। এ জন্য এনবিআরকে কৌশলী ভূমিকা পালন করতে হবে।

আঘাত সামলে এগিয়ে যেতে হবে

প্রকাশ: ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১:৩৯ এএম
আপডেট: ২৬ জুলাই ২০২৪, ১১:৩৯ এএম
আঘাত সামলে এগিয়ে যেতে হবে

কোটা সংস্কার আন্দোলন ও পরবর্তী সহিংসতায় দেশজুড়ে অর্থনীতির চাকা প্রায় স্থবির হয়ে পড়ে। রপ্তানিমুখী তৈরি পোশাকসহ দেশের অধিকাংশ শিল্পকারখানা বন্ধ হয়ে যায়। বন্ধ হয় ইন্টারনেট সেবা। এর ফলে সংকটে থাকা অর্থনীতিতে বড় ধরনের আঘাত এসেছে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট অচলাবস্থায় অর্থনীতিতে যে ক্ষতি হয়েছে, তার সাময়িক হিসাব করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি ইন্টিগ্রেশন ফর ডেভেলপমেন্ট‌(র‌্যাপিড)। 

সংস্থাটির হিসাব অনুযায়ী, অচলাবস্থার সময় দেশের অর্থনীতিতে দৈনিক আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৬০ কোটি ডলার বা ৭ হাজার ৮০ কোটি টাকা। সে হিসাবে ছয় দিনে মোট আর্থিক ক্ষতি ৪২ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, সাম্প্রতিক সহিংসতায় নিঃসন্দেহে অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বন্দরে কাজ হয়নি। সারা দেশে পরিবহনব্যবস্থা বন্ধ ছিল। শ্রমিকরা কাজে উপস্থিত হতে পারেননি। সবকিছু মিলিয়ে অর্থনীতির ওপর বড় ধরনের আঘাত এসেছে। এই ক্ষতি সহজেই পূরণ হওয়ার নয়।

রপ্তানি আয়ের সবচেয়ে বড় খাত পোশাকশিল্প। মোট রপ্তানির ৮০ শতাংশ আয় এই খাত থেকে আসে। কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংসতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এই খাত। পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ এরই মধ্যে জানিয়েছে, তাদের প্রতিদিন গড়ে ১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এতে গত ছয় দিনে এই খাতের ক্ষতির অঙ্ক প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা।

উদ্যোক্তারা বলেছেন, দেড় বছরের বেশি সময় ধরে আমাদের অর্থনীতি নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে যেখানে আমাদের স্থিতিশীল একটি পরিবেশ দরকার ছিল, সেখানেই বড় ধাক্কাটি লেগেছে। এতে ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে অর্থনীতিতে নতুন করে আরেক অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। 

তাদের মতে, এই মুহূর্তে বেশি দরকার দেশের স্থিতিশীলতা। গত কয়েক দিনে দেশজুড়ে যে ভয়াবহ সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে, তাতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সরবরাহব্যবস্থা। এ কারণে সব ধরনের ব্যবসা ও শিল্পকারখানা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তথ্যমতে, সরবরাহব্যবস্থা ব্যাহত হওয়ার কারণে গত ছয় দিনে তাদের ১৫০ কোটি টাকার আর্থিক ক্ষতি হয়েছে।

বর্তমানে মানুষের জীবনযাপনের একটি বড় অংশ ই-কমার্সের ওপর নির্ভরশীল। ইন্টারনেট না থাকায় এটিও বন্ধ রয়েছে। খাতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ছয় দিনে এই খাতে ক্ষতির পরিমাণ প্রায় ৫০০ কোটি টাকা। ইন্টারনেট না থাকায় পণ্য ডেলিভারি কার্যক্রম যেমন চলছে না, তেমনি ফ্রিল্যান্সিংও প্রায় বন্ধ। 

দেশে সাড়ে ৬ থেকে ৭ লাখের মতো ফ্রিল্যান্সার রয়েছেন। তাদের কাজও থমকে আছে। এতে তাদের ১৩-১৪ মিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে। সহিংসতার কারণে ক্ষতির মুখে পড়েছে স্টিল, সিরামিক ও সিমেন্ট খাত। পুঁজিবাজারও আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। কর অফিস ও ব্যাংকিং সেবা বন্ধ থাকায় আয়করও আদায় হচ্ছে না।

সারা দেশে সাধারণ ছুটিতে ব্যাংক বন্ধ থাকায় চেক ব্যবহার করে নগদ অর্থ তুলতে না পেরে দুর্ভোগে পড়েছেন অগণিত মানুষ। সহিংস আন্দোলনের সময় ইন্টারনেটসহ সবকিছু বন্ধ থাকায় দেশের প্রধান ও বৃহৎ রপ্তানি খাত তৈরি পোশাকশিল্প বহির্বিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। 

সহিংসতায় সড়ক, মহাসড়ক ও সেতু বিভাগের বিভিন্ন স্তরের প্রায় ৯০০ কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, সহিংসতায় বিদ্যুৎ খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকা। চলমান পরিস্থিতির নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে পর্যটন খাতে।

তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, সাম্প্রতিক সহিংসতায় নিঃসন্দেহে অর্থনীতির ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আমদানি-রপ্তানি ব্যাহত হয়েছে। কারফিউর কারণে শ্রমিকরা ঠিকমতো কর্মস্থলে যেতে পারেননি। ফলে উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। দেশের অর্থনীতির ওপর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। যে ক্ষতি হয়ে গেছে এটা সহজে মেটানো যাবে না।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত বুধবার তার কার্যালয়ে সম্পাদকসহ জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। তিনি বলেন, তার একটা ধারণা ছিল এ ধরনের একটা আঘাত আসতে পারে।

নাশকতাকারীদের আগুন ও ধ্বংসযজ্ঞের শিকার রাজধানীর সরকারি স্থাপনাগুলো। ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ফলে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, মেট্রোরেলের সেবা থেকে রাজধানীবাসী বঞ্চিত হচ্ছে। এতে রাজধানীতে যানজটের ভোগান্তি বেড়েছে। 

অর্থনৈতিক কার্যক্রম সচল করতে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। সরকারের নীতিনির্ধারকরা এ বিষয়ে সঠিক কর্মকৌশল ও পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন। কারফিউ তুলে নিয়ে দ্রুত দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক ও জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে সরকার উদ্যোগী হবে। দেশ ও মানুষের কল্যাণে সব আঘাত সামলে সরকারকে এগিয়ে যেতে হবে। আমরা প্রত্যাশা করছি, অচিরেই সব কালো মেঘ কেটে যাবে। অগ্রগামী বাংলাদেশ আরও উন্নয়নের ছোঁয়া পাবে, সেটাই প্রত্যাশা।

শঙ্কা কাটিয়ে ফিরছে স্বস্তি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করুন

প্রকাশ: ২৫ জুলাই ২০২৪, ১০:৩১ এএম
আপডেট: ২৫ জুলাই ২০২৪, ১০:৩১ এএম
শঙ্কা কাটিয়ে ফিরছে স্বস্তি মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করুন

গত কয়েক দিন ধরে আন্দোলন ও সহিংসতার পর স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে দেশ। কারফিউ শিথিল এবং অফিস-আদালত, ব্যাংক-বিমা চালুর মধ্য দিয়ে অনেকটাই স্বাভাবিক রূপে ফিরছে জনজীবন। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় মানুষের চলাচল আগের তুলনায় অনেক বেশি। পরিবহনের সংখ্যাও ছিল অনেক। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সেনাবাহিনীর অবস্থান ও টহলের ফলে জনমনে স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে। 

রাজধানীর বাইরেও একই ধারায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। পোশাক কারখানা খুলেছে। এতে উৎপাদন কার্যক্রম স্বাভাবিক হয়েছে কিছু শিল্পকারখানায়। শিল্পকারখানা খুলে দেওয়াকে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন ব্যবসায়ীরা। ইন্টারনেট সংযোগও সীমিত আকারে চালু হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশে গরিব ও খেটে খাওয়া মানুষের দিকে সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিতে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের সকল পর্যায়ের নেতা-কর্মী ও বিত্তবানদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে শুরু করায় বিভিন্ন জেলা ও মিল থেকে রাজধানী ঢাকায় ডিম, মুরগি, সবজি, চিনি, আটা, তেলসহ অন্যান্য পণ্যভর্তি ট্রাক আসতে শুরু করেছে। তার পরও সরবরাহ-সংকট কাটেনি। নিত্যপণ্যের বাজার এখনো চড়া। গত কয়েক দিনের সহিংসতায় জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে। এক বছর ধরে মূল্যস্ফীতি ৯ শতাংশের বেশি। করোনার ধাক্কায় অর্থনীতিতে মন্দা অবস্থা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় চলমান অনিশ্চয়তা উচ্চ মূল্যস্ফীতি তথা অর্থনীতিতে নতুন করে সংকট তৈরি করেছে বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।

দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় নতুন করে বিপাকে পড়েছে গরিব, অসহায় ও খেটে খাওয়া মানুষ। ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় গত কয়েক দিন টিসিবির কার্ডধারী ১ কোটি পরিবার ভর্তুকি মূল্যে নিত্যপণ্য পাচ্ছে না। এমতাবস্থায় সরকারের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হলো মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ। উচ্চ মূল্যস্ফীতির প্রভাবে সাধারণ মানুষের ওপর খড়্গ নেমে আসে। সংসার চালানো তখন দায় হয়ে যায়। নিম্ন ও সীমিত আয়ের মানুষ অস্বাভাবিক চাপে পড়েছে সাম্প্রতিক সহিংস ঘটনায়।

বাণিজ্য প্রতিমন্ত্রী আহসানুল ইসলাম রাজধানীর বাজার ঘুরে পণ্যের দাম ও সরবরাহের খোঁজ নেন। তিনি জানান, কারফিউর মধ্যেও পেঁয়াজ, কাঁচা মরিচের মতো পচনশীল পণ্যের সরবরাহে যেন কোনো প্রতিবন্ধকতা না থাকে, সে জন্য সরকার কাজ করে যাচ্ছে। ফলে সরবরাহ নিয়ে কোনো সংকট তৈরি হবে না বলে আশা করেন তিনি।

এক বছর ধরে সাধারণ মানুষ সবচেয়ে বেশি মূল্যস্ফীতির চাপে রয়েছে। মানুষের আয় বাড়ছে না। আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়ায় স্বল্প আয়ের মানুষকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। বেশ কিছুদিন ধরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১০ শতাংশের ওপরে ছিল। গত বছরের আগস্ট মাসে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ১২ দশমিক ৫৪ শতাংশে উঠেছিল, যা অর্থবছরের সর্বোচ্চ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গড় মূল্যস্ফীতি হয়েছে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। যা এক যুগের মধ্যে সর্বোচ্চ বলা যায়। অন্যদিকে জাতীয় মজুরির হার বৃদ্ধি হয়েছে সাড়ে ৭ শতাংশের মতো। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা এবং ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় নতুন রপ্তানি আদেশ কমে যাওয়ায় এ আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। 

এসব বিষয় সার্বিকভাবে অর্থনীতিতে নতুন করে অস্বাভাবিক চাপ সৃষ্টি করেছে। তথ্যমতে, এ আন্দোলনকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ থাকায় প্রতিদিন দেশের ক্ষতি প্রায় ১ বিলিয়ন ডলার। স্থানীয় মুদ্রার যা প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা। গত আট দিন প্রায় অচলাবস্থা থাকায় দেশের অন্তত ১ লাখ কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে।

সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ঘটনাকে কেন্দ্র করে অর্থনৈতিক কার্যক্রম প্রায় অচল ছিল। এতে অস্বাভাবিক চাপ তৈরি হয়েছে অর্থনীতিতে। বর্তমানে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ করা সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সরকারের নীতিনির্ধারকরা এ বিষয়ে সঠিক কর্মকৌশল ও নীতি গ্রহণ করবেন। চলমান উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সরকার দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে, এটিই প্রত্যাশা।

কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন জারি শিক্ষার্থীদের দাবিই পূরণ হলো

প্রকাশ: ২৪ জুলাই ২০২৪, ০৩:৪৬ পিএম
আপডেট: ২৪ জুলাই ২০২৪, ০৩:৫০ পিএম
কোটা সংস্কারের প্রজ্ঞাপন জারি শিক্ষার্থীদের দাবিই পূরণ হলো

সরকারি, আধা সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের চাকরিতে নিয়োগের প্রজ্ঞাপন আপিল বিভাগের রায়ের আলোকে জারি করেছে সরকার। প্রজ্ঞাপনে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ ৯৩ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনার সন্তানদের জন্য ৫ শতাংশ, ১ শতাংশ ক্ষুদ্র ও নৃগোষ্ঠী এবং ১ শতাংশ প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গের জন্য রাখা হয়েছে। ৯ম থেকে ২০তম গ্রেড পর্যন্ত সরাসরি পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগের ক্ষেত্রে এই কোটাব্যবস্থা কার্যকর হবে। সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোটা পুনর্বহাল-সংক্রান্ত হাইকোর্টের রায় সামগ্রিকভাবে বাতিল (রদ ও রহিত) করেছেন দেশের সর্বোচ্চ আদালত। নারী ও জেলা কোটা বাদ দেওয়া হয়েছে। চাকরিতে নারীদের জন্য কোটা না থাকলে বৈষম্য আরও বাড়বে বলে মনে করছেন দেশের বিভিন্ন নাগরিক ও সামাজিক সংগঠনের প্রতিনিধি, গবেষক ও শিক্ষাবিদরা। তারা মনে করেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রাগুলোর (এসডিজি) একটি হলো নারী-পুরুষের সমতা। সেই লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে নারী কোটা অবশ্যই প্রয়োজন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্যানুযায়ী, সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তর, দপ্তর, করপোরেশন ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে সাড়ে ১৪ লাখের বেশি কর্মচারী কর্মরত। এর মধ্যে নারীর সংখ্যা ৪ লাখ ৯ হাজার ৬৮। আর পুরুষ ১০ লাখ ৩৪ হাজার ৪৫০ জন।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার করে আপিল বিভাগের দেওয়া রায়কে ইতিবাচক হিসেবেই দেখছেন অনেকে। বিভিন্ন মহল থেকে সরকারের এই সিদ্ধান্তে সাধুবাদ জানানো হয়েছে। দেশের চলমান সংকটময় মুহূর্তে এ-সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। গতকাল আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এক সংবাদ সম্মেলনে রায়ের প্রজ্ঞাপন পড়ে শোনান। প্রজ্ঞাপনের আদেশ অবিলম্বে কার্যকর হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘কোটা সংস্কারের যে রায় সর্বোচ্চ আদালতের আপিল বিভাগ দিয়েছেন, সরকার তা প্রতিপালন করেছে। সব ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন করে দেওয়া হয়েছে। সাধারণ ছাত্রছাত্রী যারা আহত হয়েছেন তাদের চিকিৎসার ব্যাপারে সরকার দেখভাল করবে। সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের মামলাও সরকার দেখবে। শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনা এবং সব ছাত্রছাত্রীর সুরক্ষা ও নিরাপত্তার পরিবেশ সরকার নিশ্চিত করবে। সরকার ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করার জন্য যথেষ্ট সজাগ। কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল। সরকার তা পূরণ করেছে। অতএব, শিক্ষার্থীদের কর্তব্য তাদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে ফিরে যাওয়া। সর্বোচ্চ আদালত অত্যন্ত বিচক্ষণ একটি রায় দিয়েছেন।’

তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেছেন, কোমলমতি শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে একটি শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্যে সহিংসতা ঢোকানোর পরিকল্পনা অপশক্তির আগে থেকেই ছিল। ডেটা সেন্টার জ্বালিয়ে দিয়ে ইন্টারনেট থেকে দেশকে বিচ্ছিন্ন করেছে তারা। সারা বিশ্বে তারা একটা ভুল বার্তা পৌঁছে দিয়েছে এই সুযোগে। তিনি গণমাধ্যমকে ঘটনার সঠিক তথ্য তুলে ধরার অনুরোধ জানান।

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের আন্দোলন ঘিরে দেশে সহিংস পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় স্থগিত করতে হয়েছে বিভিন্ন পরীক্ষা। এরই মধ্যে তিন শতাধিক পরীক্ষা পিছিয়ে গেছে। একাডেমিক, পাবলিক ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষাও পেছাতে হচ্ছে। ফলে পরীক্ষায় জট তৈরির আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। আদালতের প্রতি শ্রদ্ধা এবং সম্মান জানিয়ে শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানে ফিরে যেতে হবে। সরকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশ সুনিশ্চিত করবে। দ্রুত ইন্টারনেট সেবা উন্মুক্ত করে দিতে হবে। কারফিউ তুলে দিয়ে জনজীবনের শান্তি-শৃঙ্খলা ও স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে হবে। যারা নাশকতা, সহিংসতা ও জানমালের ক্ষয়ক্ষতি করেছে, তাদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে।

নাশকতাকারীদের কঠিন শাস্তির আওতায় আনতে হবে

প্রকাশ: ২৩ জুলাই ২০২৪, ১০:০০ এএম
আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২৪, ১০:০০ এএম
নাশকতাকারীদের কঠিন শাস্তির আওতায় আনতে হবে

সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার করে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ রায় দিয়েছেন। এতে করে কোটাসংক্রান্ত জটিলতা অনেকটাই অবসানের পথে। ইতোমধ্যেই আপিল বিভাগের রায়ে স্বাক্ষর করেছেন সাত বিচারপতি। রায়ের কপি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেছেন, গতকাল কোটা সংস্কারসংক্রান্ত প্রজ্ঞাপনে প্রধানমন্ত্রী স্বাক্ষর করেছেন। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার করে আপিল বিভাগের দেওয়া রায়কে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। তবে দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এখনো অনেকটা উৎকণ্ঠার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। 

ছাত্র আন্দোলনকে পুঁজি করে সহিংসতার পথ বেছে নেয় রাজনৈতিক কুচক্রী মহল। তারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ অফিস, স্থাপনা ধ্বংস করেছে। রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতিসাধন করেছে। ছাত্রদের কোটা সংস্কার আন্দোলন আর শান্তিপূর্ণ থাকেনি। সেতু ভবনের ৫৫টি গাড়ি পুড়ে কঙ্কাল হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বিআরটিএ ভবনে ব্যাপক লুটপাট হয়েছে। দুর্যোগ ভবনে ক্ষতি হয়েছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। মিরপুর বিআরটিএ অফিসের ১২১ কোটি টাকার ডিআইসি ধ্বংস করা হয়েছে। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে গুরুত্বপূর্ণ নথি। গান পাউডার দিয়ে এমনভাবে আগুন দেওয়া হয়েছে, যা দেখে বোঝাই যাচ্ছে এটা শিক্ষার্থীদের কাজ নয়। এতে অবশ্যই দক্ষ ও পেশাদার লোক জড়িত। 

বীভৎস তাণ্ডবে তছনছ বিভিন্ন ভবন। মেট্রোরেলের দুই স্টেশনে কেবলই ধ্বংসের চিত্র। নাশকতার এসব ধকল কাটাতে এক বছর লাগবে বলে জানিয়েছেন মেট্রোরেল কর্তৃপক্ষ। রাষ্ট্রীয় স্থাপনায় এমন ভয়ানক নাশকতার তাণ্ডব, সেই সঙ্গে সমানতালে চলেছে লুটপাট। সভ্যসমাজে কখনো এটি আশা করা যায় না। নরসিংদীর কারাগার থেকে ৮২৬ জন কয়েদি পালিয়েছে। এর মধ্যে ৯জন জঙ্গি সংগঠনের সদস্য। ৭জন আনসার উল্লাহ বাংলা বাহিনীর এবং ২জন নারী জেএমবির সদস্য। এদিকে দুর্বৃত্তদের হামলা ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় কারাগারটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। কারাগার থেকে বের হওয়া জঙ্গিরাও সারা দেশে নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালাতে পারে। অনেকে অস্ত্র ও গুলিসহ পালিয়েছে। তারাও দেশে বড় ধরনের নাশকতা করতে পারে। অবিলম্বে এসব অস্ত্র উদ্ধার ও কয়েদিদের ধরতে অভিযান পরিচালনা করতে হবে। সহিংসতা ও নাশকতাকারীদের ধরতে চিরুনি অভিযান শুরু করেছে ডিএমপি। পুলিশের আইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, স্বাধীনতাবিরোধী একটি চক্র সরকার উৎখাত করতে এ ধরনের নাশকতামূলক কাজ করেছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

ঢাকাসহ সারা দেশে গতকালও সহিংসতা হয়েছে। এতে ১৪ জন নিহত হয়েছেন। আহত ৫ শতাধিক। এর মধ্যে গুলিবিদ্ধ ৯৩ জন। ইতোমধ্যে বহু প্রাণ ঝরে গেছে। দেশে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বহুমুখী পদক্ষেপ নেওয়া সত্ত্বেও পরিবেশ এখনো সুবিধাজনক মনে করছে না সরকার। এ জন্য সরকারের মধ্যে অস্বস্তি রয়ে গেছে। সরকার মনে করছে, এতদিন ধরে চলা সহিংসতায় বিএনপি ও জামায়াত সরাসরি জড়িত।

এদিকে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করলেও চলমান কোটা সংস্কার আন্দোলন সম্পর্কে কোনো কিছু স্পষ্ট করেনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। তারা আন্দোলন বন্ধ রাখবে নাকি চালিয়ে যাবে, তা জানা যায়নি। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে গত রবিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবনে তিন বাহিনীর প্রধান এবং বেসামরিক প্রশাসনের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। 

জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, কারফিউ বলবৎ থাকলে সাধারণ ছুটিও বাড়তে পারে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান বলেছেন, জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত না হওয়া পর্যন্ত কারফিউ চলবে।

সারা দেশে জনমনে চরম অস্থিরতা ও উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে। স্বাভাবিক জনজীবন চরম ভোগান্তিতে পড়েছে। একটি বিশেষ পরিস্থিতি চললেও বিভিন্ন স্থানে সহিংসতার খবর পাওয়া যাচ্ছে। মানুষ মারা যাচ্ছে, সাধারণ মানুষের জানমালের নিরাপত্তার স্বার্থে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে। ডিএমপি কমিশনার হাবিবুর রহমান বলেছেন, দেশের পরিবেশ বিনষ্টকারী ও নাশকতাকারীদের কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা সব বিষয়ে সতর্ক থেকে কাজ করছি। 

কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট সহিংসতায় হতাহতের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও যুক্তরাজ্য। 

যারা নাশকতা সৃষ্টি করছে এবং জানমালের নিরাপত্তার জন্য যারা হুমকিস্বরূপ তাদের যেকোনো মূল্যে গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনতে হবে। তথ্যপ্রবাহ নিশ্চিত করতে সব ইন্টারনেট সেবা উন্মুক্ত করে দিতে হবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিয়ে শিক্ষার্থীদের শিক্ষার পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে। দেশের শান্তি-শৃঙ্খলা রক্ষার জন্য সরকারকে আরও কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। দ্রুত পরিস্থিতির উন্নতি ঘটলে কারফিউ তুলে নিতে হবে। জনজীবনের স্বাভাবিক চলাচল নিশ্চিত করতে হবে। দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ও জনজীবনে স্বস্তি ফিরে আসুক সেটিই প্রত্যাশা।

কোটা বাতিল: আদালতের রায় মেনে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরুন

প্রকাশ: ২২ জুলাই ২০২৪, ১০:০০ এএম
আপডেট: ২২ জুলাই ২০২৪, ১০:০০ এএম
কোটা বাতিল: আদালতের রায় মেনে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে ফিরুন

সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ বহুল আলোচিত সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে দিয়েছেন। গতকাল রবিবার আপিল বিভাগ কোটাসংক্রান্ত হাইকোর্টের দেওয়া রায় রদ ও রহিত করে প্রজ্ঞাপন জারির জন্য সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন। কোটা সংস্কার নিয়ে শুরু হওয়া আন্দোলন চরম সহিংসতায় রূপ নেওয়ায় আপিল বিভাগ এ রায় দিলেন। 

বিদ্যমান পরিস্থিতি মোকাবিলায় সারা দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি দেশে জারি করা হয় কারফিউ। কারফিউ আতঙ্কে বাজারে কেনাকাটারও হিড়িক পড়ে। পণ্যের সরবরাহ কম থাকায় নিত্যপণ্য পেতে জনসাধারণকে হিমশিম খেতে হচ্ছে। শুধু তাই নয়, পণ্যের দামও মানুষের ক্রয়সীমার বাইরে চলে গেছে। নিম্ন আয়ের মানুষ পেটের দায়ে কারফিউ উপেক্ষা করেই বাইরে বের হতে বাধ্য হচ্ছে। এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে পুঁজি করে একটি রাজনৈতিক কুচক্রী মহল নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে। তারা সরকারি স্থাপনা, অফিস ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা লক্ষ্য করে অগ্নিসংযোগ করে রাষ্ট্রীয় সম্পদের ক্ষতিসাধন করছে। শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, কোনো সহিংসতা তারা সমর্থন করেন না। তারা ন্যায্য দাবি আদায়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছেন। কোনো সহিংসতা তারা করেননি। সরকার উৎখাতের বিষয়টি তাদের দাবির মধ্যে নেই। কিন্তু কোটা সংস্কার আন্দোলন আর শান্তিপূর্ণ থাকেনি। সহিংসতা ও নাশকতাকারীদের ধরতে চিরুনি অভিযান শুরু করেছে ডিএমপি। পুলিশের আইজি চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেছেন, স্বাধীনতাবিরোধী একটি চক্র সরকার উৎখাত করতে এ ধরনের নাশকতামূলক কাজ করছে। তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।

কোটা আন্দোলন নিয়ে এত রক্তপাত, এত প্রাণহানি, এত সহিংসতা কখনো বাংলাদেশ দেখেনি। সব মিলিয়ে এই আন্দোলনের বিস্তৃতি ঘটেছে। অগ্নিসংযোগ, ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপ, কারাগারে আগুন ও আসামি ছিনিয়ে নেওয়া, সরকারি অফিস স্থাপনায় হামলাসহ কয়েক দিন ধরে এ দেশে যা ঘটেছে তা রীতিমতো বেদনাদায়ক ও অগ্রহণযোগ্য। যোগাযোগব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। দেশজুড়ে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ থাকায় পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে পড়েছে। আর্থিক লেনদেনব্যবস্থা এবং ব্যাংকিং সেবা এখন অনেকটাই অনলাইননির্ভর। সেটাও স্থবির হয়ে পড়েছে। যে কারণে দেশের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। গণমাধ্যমগুলো তাদের অনলাইন কার্যক্রম চালাতে পারছে না। দেশের প্রাণহানির ঘটনায় আপিল বিভাগ দুঃখ প্রকাশ করেছেন। সেই সঙ্গে শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরার অনুরোধ করেছেন। সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি (৯ম-১৩তম গ্রেডে) মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৫ শতাংশ, ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী ১ শতাংশ, প্রতিবন্ধী ও তৃতীয় লিঙ্গ ১ শতাংশ কোটা এ রায়ে নির্ধারণ করা হয়েছে।

তথ্যমতে, সরকারি চাকরিতে বিভিন্নভাবে মোট কোটা ছিল ৫৬ শতাংশ। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ। মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান করতে কারও আপত্তি কখনোই ছিল না। এমনকি তাদের সন্তানদের কোটা দেওয়া নিয়েও প্রশ্ন ওঠেনি; কিন্তু তাদের তৃতীয় প্রজন্মকে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। শিক্ষার্থীদের এ দাবি উপেক্ষা করে বিষয়টিকে জটিল থেকে জটিলতর করা হয়েছে। রায়ের প্রতিক্রিয়ায় ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধারা কোনোক্রমেই অনগ্রসর গোষ্ঠী না। মুক্তিযোদ্ধারা হচ্ছেন আমাদের গর্ব। তারা অগ্রগামী সৈনিক। আমাদের সংবিধানে যে কথাগুলো আছে, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদে যে কথাগুলো আছে, সে আলোকে এটা বুঝতে হবে।’

কোটা ইস্যুতে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘আদালতের রায় দ্রুত বাস্তবায়নের ব্যাপারে আমরা আশাবাদী। ভবিষ্যতে এটা সংস্কার করার প্রয়োজন হলে সরকার করতে পারবে। কারণ এটা নীতিনির্ধারণী ব্যাপার।’ সরকার শিক্ষার্থীদের প্রস্তাব গ্রহণ করে একটি যুগোপযোগী সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছে। এবার শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিতে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিবে সরকার। ছাত্ররা কোনো ধরনের সহিংসতা ও নাশকতায় লিপ্ত হবেন না। ছাত্রদের ব্যবহার করে কেউ যাতে দেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষতি করতে না পারে, সেদিকে বিশেষ সতর্ক থাকতে হবে। শিক্ষার্থীরা যার যার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ফিরে যেতে কোনো রকম হয়রানির শিকার না হন, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। দেশে শান্তি-শৃঙ্খলা ও জনগণের জানমালের নিরাপত্তায় সরকার আরও উদ্যোগী হবে। অচিরেই দেশে স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসবে, সেটাই সবার প্রত্যাশা।