![রাজস্ব আয় বাড়ানোর উদ্যোগ নিন](uploads/2024/02/09/1707454004.Editorial.gif)
ডলারসংকটের কারণে মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে আমদানি-রপ্তানিতে। এতে বিনিয়োগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। এ সংকট মোকাবিলার জন্য রাজস্ব ছাড় দিয়ে হলেও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ এবং ব্যবসা-বাণিজ্যে গতি আনার চেষ্টা করতে হবে। রপ্তানি বাড়াতে হবে। দেশি শিল্পে উদ্যোক্তাদের অংশগ্রহণ বাড়াতে উৎসাহিত করতে হবে। এসব ক্ষেত্রে গতি এলে সমগ্র অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে রাজস্ব পরিশোধের পরিমাণও বাড়বে। এভাবে রাজস্ব ছাড়ের মাধ্যমে সরকারের আয় বাড়াতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শিল্প খাতে করপোরেট কর কমানোর বিষয়টিও গুরুত্বের সঙ্গে দেখার নির্দেশনা রয়েছে। পাচারকৃত অর্থ ফেরতে কার্যকরী কৌশল নির্ধারণেও গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ডলারসংকটের কারণে সামগ্রিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। এ সংকট অচিরেই কাটবে বলে মনে হচ্ছে না। এ ক্ষেত্রে আমদানি-রপ্তানি ও বিনিয়োগ বাড়াতে রাজস্ব ছাড়ের বিকল্প নেই। এ ছাড়া বাজারে পণ্যের দাম কমাতে হলেও রাজস্ব ছাড় দিতে হবে। আগামী বাজেটে এসব বিষয় বিবেচনায় রাখা খুবই জরুরি।
সরকারের অন্যতম আয় হলো এনবিআরের রাজস্ব। রাজস্ব বাজেট জাতীয় বাজেটের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আগামী বাজেটে (২০২৪-২৫) রাজস্ব আদায়ের অন্যতম খাত হবে ভ্যাট। এরপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে আয়করকে। শুল্ক থেকে রাজস্ব আহরণের গুরুত্বকে রাখা হয়েছে তৃতীয় ধাপে। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রস্তাবিত বাজেটে আগামী অর্থবছরের জন্য রাজস্বনীতি কেমন হওয়া উচিত তা নিয়ে তৈরি প্রতিবেদনে এসব পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এ-সংক্রান্ত প্রতিবেদন এনবিআরে পাঠানো হয়েছে। চলতি মাস থেকে এনবিআর প্রস্তাবিত রাজস্ব বাজেট প্রণয়নের যে কাজ শুরু করেছে, সেখানে এই পরামর্শকে দিকনির্দেশনা হিসেবে গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। একই সঙ্গে অর্থ, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, ট্যারিফ কমিশনসহ সংশ্লিষ্টদের কাছ থেকেও এনবিআর পরামর্শ চেয়েছে।
প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে জানা যায়, এনবিআরকে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা পূরণে অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে বাস্তবায়নযোগ্য কার্যকরী কৌশল নির্ধারণে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের কাছ থেকে পাঠানো সুপারিশ গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখে আগামী অর্থবছরের রাজস্ব বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদনে সতর্ক করা হয়েছে, সরকারের চলতি মেয়াদের প্রথম জাতীয় বাজেটে (২০২৪-২৫) এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না, যা ক্ষমতাসীনদের সমালোচনার মুখে ফেলে। বিশেষভাবে সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী, উদ্যোক্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি হয়, রাজস্ব-সম্পর্কিত এমন পদক্ষেপ না নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এমনকি ঋণদানকারী সংস্থার চাপ থাকলেও তা সহনীয়ভাবে রাজস্ব বাজেটে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। ভ্যাট, কর বা শুল্ক অব্যাহতির মতো পদক্ষেপও পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়নের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অটোমেশনের মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ে জোর দিতে বলা হয়েছে।
এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান ড. আবদুল মজিদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘এনবিআর প্রতি অর্থবছরের জন্য রাজস্ব বাজেট প্রণয়ন করে থাকে। প্রস্তাবিত বাজেটে নেওয়া পদক্ষেপগুলো গতানুগতিক ধারাবাহিকতায় না নিয়ে সময়োপযোগী হওয়া উচিত। শুধু তা-ই নয়, সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠান, অর্থনীতিবিদ, ব্যবসায়ী সংগঠনসহ সবার কাছ থেকেও পরামর্শ নেওয়া উচিত। এতে একটি অর্থবহ রাজস্ব বাজেট প্রণয়ন সম্ভব হবে।’
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে শিল্পের অনেক খাতেই আন্তর্জাতিক ক্রেতা কমেছে। দেশি শিল্পে গতি আনতে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রতিবেদনে পণ্যের নতুন বাজার সম্প্রসারণে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে অর্থনৈতিকভাবে অনগ্রসর এলাকার জন্য মূলধন বিনিয়োগের ওপর নির্দিষ্ট পরিমাণ ভর্তুকি, উৎপাদিত পণ্যের ওপর থেকে কর ও শুল্ক অব্যাহতি দেওয়া কতটা সম্ভব, তা হিসাব করে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে বলা হয়েছে। আগামী বাজেটেও গ্রামীণ ক্ষুদ্রশিল্প, কৃষি ও মৎস্য খাত, হাঁস-মুরগি, গবাদিপশুর খামার এবং ডেইরি শিল্পের জন্য ন্যূনতম মূল্য সংযোজন কর এবং ক্ষেত্রবিশেষে অব্যাহতি প্রদানে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্থানীয় শিল্পে ব্যবহারে কাঁচামাল আমদানিতে শুল্ক ও কর রেয়াত সুবিধা বহাল রাখা ও বাড়াতে বলা হয়েছে। সরকারের রাজস্বনীতি নিয়ে প্রতিবেদনে যে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে, এ নিয়ে এনবিআরের সাবেক চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া খবরের কাগজকে বলেন, ‘বছর দুয়েক থেকে পণ্যমূল্য বাড়ায় সাধারণ মানুষ কষ্টে আছে। এর মধ্যে আগামী বাজেটে রাজস্ব বাড়ানো এবং নতুন কর আরোপ করা উচিত হবে না।’
দেশের শিল্প খাতকে গতিশীল করতে রাজস্ব ছাড় দিয়ে হলেও দেশি-বিদেশি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। তা হলে সরকারের রাজস্ব আয় বাড়বে। করের জালকে প্রশস্ত করতে সরকারকে জোরালো উদ্যোগ নিতে হবে। করের ভিত্তি সম্প্রসারণ ছাড়া রাজস্ব আদায় করা কঠিন। এ জন্য এনবিআরকে কৌশলী ভূমিকা পালন করতে হবে।