যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক টাইমস স্কয়ারে দশ সহস্রাধিক মানুষের উপস্থিতিতে হয়ে গেলো ১৪৩১ বঙ্গাব্দ বরণ। বাঙালির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো সহস্রকণ্ঠের গানে বরণ করে নেওয়া হয় বাংলা নতুন বছর।
বাংলাদেশ সময়ের সঙ্গে মিল রেখে ১৩ এপ্রিল (শনিবার) স্থানীয় সময় দুপুরে টাইমস স্কয়ারে মঙ্গল শোভাযাত্রার মাধ্যমে শুরু হয় বর্ষবরণ আয়োজন।
এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের দুই দিনব্যাপী আয়োজন শেষ হয় ১৪ এপ্রিল মধ্যরাতে জ্যাকসন হাইসের ডাইভারসিটি প্লাজায়।
আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলের এ আয়োজনে বাংলাদেশিদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন ভারত, থাইল্যান্ড এবং নেপালের শিল্পী ও দর্শনার্থীরা।
বাংলাদেশ থেকে ফোক সম্রাজ্ঞী মমতাজ বেগম এবং পশ্চিমবঙ্গ থেকে এসেছিলেন পার্বতী দাস বাউল।
একই ডিজাইনের পোশাকে সহস্র মানুষ মেতে উঠেছিলেন আনন্দ উৎসবে।
নিউ ইয়র্ক টাইমস স্কয়ারে সহস্রকণ্ঠে বিশ্ব বাঙালির ১৪৩১ বাংলা বর্ষবরণের আহ্বায়ক সৈয়দ হাসান ইমাম মঙ্গল শুভাযাত্রা অনুষ্ঠানের উদ্বোধনে বলেন, ‘টাইমস স্কয়ারে হাজার হাজার বাঙালির উপস্থিতিতে মঙ্গল শোভাযাত্রা এবং সহস্র কন্ঠে বাংলা নতুন বছরকে বরণ করে নেওয়ার যে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে বাঙালি অভিবাসীরা, তা অবিস্মরণীয়। এ আয়োজন দেখে পৃথিবীর নানান দেশের বাঙালিরা বর্ষবরণ উদযাপন করবেন সেই স্বপ্ন দেখছি।’
ফোক সম্রাজ্ঞী মমতাজ বেগম রাত পৌনে ১০টায় টাইমস স্কয়ারের মঞ্চে উঠে দর্শক দেখে অভিভূত হয়ে বলেন, কনকনে শীতের মধ্যে হাজার দশেক মানুষ আমার গান শুনতে দাঁড়িয়ে আছেন এটা আমার জন্য অসম্ভব সম্মানের।
রাত ১০টা পর্যন্ত অনুমতি ছিল সাউন্ডের। অগণিত মানুষের আনন্দ এবং মমতাজ বেগমের গানে মুগ্ধ হয়ে টাইম স্কয়ার পুলিশ ইউনিটের সার্জেন্ট মোহাম্মদ খান মঞ্চে এসে বলেন, আমেরিকায় আপনি বাংলা গানের অ্যাম্বাসেডর। আপনার সম্মানে আমরা সময়ের সীমা তুলে নিলাম। আপনি যতক্ষণ পারেন গান করেন, আমরাও শুনবো। পরে মধ্যরাত পর্যন্ত চলে মমতাজের গান।
নিউইয়র্কে নিযুক্ত বাংলাদেশের কনসাল জেনারেল নাজমুল হুদা বলেন, ইতিহাস সৃষ্টিকারী এই আয়োজন আগামী প্রজন্মকে বাংলা সংস্কৃতি চর্চায় উদ্বুদ্ধ করবে।
আয়োজক সংগঠন এনআরবি ওয়ার্ল্ড ওয়াইডের সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল লিটনের চালনায় অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন নিউইয়র্ক সিটি মেয়র অফিসের প্রধান প্রশাসনিক কর্মকর্তা মীর বাসার।
তিনি মেয়র এরিক এডামের পক্ষ থেকে বলেন, ‘বাঙালির সর্বজনীন উৎসবের বর্ণাঢ্য এই আয়োজন দেখে আমরা অভিভূত। সকল ধর্ম বর্ণ জাতি গোষ্ঠীর মানুষের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় নিউইয়র্ক সিটিকে আমরা আরও প্রাণবন্ত এবং আনন্দমুখর গড়ে তুলব।’
এ সময় অতিথি হিসেবে নিউইয়র্ক সিটির আরও কর্মকর্তা এবং বিভিন্ন দেশের এম্বাসেডররা বক্তব্য রাখেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে, সহস্রকন্ঠে বিশ্ব বাঙালির ১৪৩১ বাংলা বর্ষবরণের প্রধান পৃষ্ঠপোষক আইএফআইসি ব্যাংকের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক শাহ আলম সারওয়ার বলেন, ‘বাংলাদেশের কল্যাণে বাঙালি সংস্কৃতির বিকাশে আইএফআইসি ব্যাংক সব সময় সঙ্গে আছে। আমেরিকার অভিবাসীরা টাইমস স্কয়ারে যে অভূতপূর্ন আয়োজন করেছেন তার সাক্ষী এবং সম্পৃক্ত থাকতে পেরে আমরা গর্বিত।’
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে গোল্ডেন এজ হোম কেয়ারের কর্ণধার শাহনেওয়াজ বলেন, আমেরিকায় বাংলাদেশিরা স্বতন্ত্র একটি অবস্থান তৈরি করতে পেরেছে। টাইম স্কয়ারের বিশাল এই আয়োজনের মাধ্যমে আমরা বিশ্ববাসীকে বাঙালি সংস্কৃতি সম্পর্কে জানাতে পেরেছি।
আয়োজক সংগঠনের সভাপতি বিশ্বজিৎ সাহা বলেন, ‘গত বছর আমরা শতকন্ঠে নতুন বছরকে বরণ করেছিলাম। এবার হয়েছে সহস্রকন্ঠে। এ আনন্দ আয়োজন অব্যাহত থাকবে। গত তিন মাস ধরে মহিতোষ তালুকদার তাপসের নেতৃত্বে মহড়া হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্য থেকে শিল্পী এবং দর্শনার্থীরা অংশগ্রহণ করেছেন। আবহমান বাংলার ঐহিত্যবাহী সংস্কৃতি, নাচ গান ও যাত্রাপালা, কোনো কিছুই বাদ ছিল না আমাদের আয়োজন।’
তিনি আরও বলেন, ১৪ এপ্রিল জ্যাকসন হাইটসের ডাইভারসিটি প্লাজায় সকাল ১১টা থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত ছিল বর্ষবরণ এবং বৈশাখী মেলা। লোকে লোকারণ্য হয়ে পড়েছিল বাংলাদেশিদের প্রাণকেন্দ্র জ্যাকসন হাইটস। ইতিহাস সৃষ্টিকারী এই আয়োজন যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসী বাঙ্গালিদের সম্মিলিত প্রচেষ্টার ফসল।
অমিয়/