এখন প্রচণ্ড গরম! বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে সূর্য তার উষ্ণতা বাড়াচ্ছে। উচ্চ তাপমাত্রা শিশুদের জন্য বেশি কষ্টকর ও অসহনীয়। গরমে জ্বর, পেট খারাপ, সর্দি-কাশিসহ নানা ধরনের অসুস্থতা দেখা দেয়। যেহেতু শিশুরা অত্যন্ত স্পর্শকাতর, তাই এই গরমে তাদের অতিরিক্ত যত্ন নিতে হবে। তাদের ব্যাপারে থাকতে হবে আরও বেশি সচেতন। গরমে শিশুর যত্নের বিষয়ে জানিয়েছেন শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. কাজী আশরাফ হোসেন। তার সঙ্গে কথা বলে লিখেছেন হাসিবা আক্তার
কী কী সমস্যা হতে পারে
গরমে শিশুরা খুব বেশি ঘামে আর এই অতিরিক্ত ঘাম থেকে হতে পারে শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা, নিউমোনিয়া বা ঠান্ডা লাগার মতো মারাত্মক সমস্যা হয়।
অতিরিক্ত ঘামের কারণে শরীর থেকে লবণ-পানি বেরিয়ে যায়। ফলে দেখা দেয় পানিশূন্যতা। আবার ঘামের কারণে চামড়ায় র্যাশ বা ঘামাচি হয়ে থাকে। বারবার সেগুলো চুলকানোর ফলে তা থেকে ত্বক ছিলে যাওয়া বা ঘায়ের মতো হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। অতিরিক্ত ঘামের ফলে মাথার চুল ভিজে খুশকি হতে পারে। অতিরিক্ত গরমে শিশুদের হজমে সমস্যা দেখা দেয়। হজমশক্তির সমস্যার ফলে শিশুদের পেট খারাপ বা ডায়রিয়া হতে পারে।
শিশুর যত্নে করণীয়
গরমে বারবার ঘামের কারণে যেন শিশুর পানিশূন্যতা না হয়, সেদিকে খেয়াল রাখাতে হবে। শিশু বেশি পানি না খেতে চাইলে পানির পরিবর্তে নির্দিষ্ট সময় পর পর মৌসুমি ফলের জুস খাওয়ানো যেতে পারে। এ ছাড়া শিশুর পছন্দ অনুযায়ী বিভিন্ন ফলও খাওয়াতে পারেন। তাতে শরীর ঠান্ডা থাকবে। চাইলে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী স্যালাইন কিংবা গ্লুকোজ খাওয়াতে পারেন। ছয় মাসের কম বয়সী শিশুদের যেহেতু পানি পান করানোর সুযোগ নেই, তাই তাদের ক্ষেত্রে মায়ের বুকের দুধই বারবার খাওয়াতে হবে হাইড্রেট রাখার জন্য।
সহজে পরিপাক ও শোষণ হবে এমন খাদ্য যেমন- শাকসবজি, মাছ, খিচুড়ি শিশুকে দিতে হবে। তরল বা নরম খাবার দেওয়ার চেষ্টা করতে হবে। এই গরমে অতিরিক্ত মসলা, তেলে ভাজা, ঝাল খাবার এড়িয়ে চলতে হবে। গরমে শিশুদের পোশাক ও রঙের বিষয়ে দরকার বাড়তি যত্ন। এই গরমে যেকোনো জাঁকজমক বা ফ্যাশনেবল পোশাকের চেয়ে সুতি ঢিলেঢালা আরামদায়ক জামা শিশুর জন্য উপযুক্ত। সুতি কাপড় দিয়েই নানান ডিজাইনের জামা বানানো সম্ভব। তাতে শিশুর ফ্যাশনও বজায় থাকে। শিশুরা যেহেতু সারাক্ষণ ছোটছুটিতে ব্যস্ত থাকে, তাই ঘাম হয় বেশি। জামা ভিজে গেলে সঙ্গে সঙ্গে জামা খুলে শরীরের ঘাম মুছিয়ে দিন।
চাইলে ঘামাচির জন্য পাউডার ব্যবহার করতে পারেন। ঘাম যেন গায়েই না শুকায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। একটু বেশি বয়সের শিশুদের সাধারণত বিকালে মাঠে বা বাইরে খেলতে যাওয়ার একটা প্রবণতা আছে। খেলাধুলা শারীরিক ও মানসিক বিকাশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
যেহেতু এই গরমে দৌড়াদৌড়ি, ছোটাছুটি করলে শিশু ঘেমে গিয়ে সে ঘাম গায়ে শুকিয়েই তার ঠান্ডা লাগতে পারে। তাই ঠান্ডা কোনো পরিবেশে কিছুদিন খেলার ব্যবস্থা করলে ভালো হয়। এ ক্ষেত্রে ইনডোর গেমস হতে পারে ভালো সমাধান।
ছোট শিশুদের নিয়ে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সচেতন থাকতে হবে। গরমে শিশুদের নিয়ে দূরপাল্লার ভ্রমণে বের হলে যথাযথ পানি এবং সুতির আরামদায়ক পোশাক সঙ্গে নিতে হবে। শিশুকে নিয়ে বাইরে বের হলে হাতে ছাতা নিয়ে বের হওয়া ভালো। সম্ভব হলে ক্যাপ বা পাতলা স্কার্ফ দিয়ে শিশুর মাথা ঢেকে দিতে পারেন। অবশ্যই শিশুকে প্রতিদিন গোসল করাতে হবে।
অনেকেই ভাবেন, প্রতিদিন গোসল করলে শিশুর ঠান্ডা লেগে যাবে, এই ধারণা একদমই ঠিক নয়। প্রয়োজন হলে হালকা কুসুম গরম পানি ব্যবহার করা যেতে পারে। গোসলের পর শিশুর মাথা ভালোভাবে মুছে দিন, না হলে হেয়ার ড্রায়ার দিয়ে শুকিয়ে নেওয়া যেতে পারে। কোনোভাবেই চুল ভেজা রাখা যাবে না। চুল শুকানো ঝামেলা মনে হলে শিশুর চুল কেটে ছোট রাখতে পারেন।
কলি