পিঠব্যথা প্রতিরোধে সবচেয়ে জরুরি হলো পিঠের ওপর চাপ কমানো। তাই দৈনন্দিন চলাফেরা এবং কাজকর্মের সময় দেহভঙ্গির দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কিছু কাজ আছে যেগুলোকে দৈনন্দিন জীবনে অভ্যাসে পরিণত করতে পারলে পিঠে ব্যথা বা ব্যাকপেইন থেকে সহজেই দূরে থাকা সম্ভব। চলুন এমন কিছু অভ্যাস সম্পর্কে জেনে নিই। করোনা ডটগভ ডটবিডি অবলম্বনে লিখেছেন ফখরুল ইসলাম
কম ওজন বহন করা
ভারী ব্রিফকেস, ল্যাপটপ ব্যাগ, স্যুটকেস কিংবা বাজারের ব্যাগ- এগুলো ঘাড় এবং মেরুদণ্ডে অপ্রয়োজনীয় চাপ প্রয়োগ করতে পারে। তাই শুধু প্রয়োজনীয় জিনিসই বহন করতে হবে। এমন ব্যাগ ব্যবহার করতে হবে যা পিঠে, ঘাড়ে, কাঁধে সমানভাবে ভর বিতরণ করে। যেমন ব্যাকপ্যাক। এটা দুই কাঁধে এক সঙ্গে নিতে হয় বলে ভর পুরো শরীরে সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ে। ভারী কিছু বহন করতে হলে চাকাওয়ালা ব্যাগ ব্যবহার করা ভালো।
ব্যায়াম করা
পেট এবং পিঠের চারপাশের পেশীগুলো আমাদের সোজা থাকতে সাহায্য করে। পাশাপাশি পুরো শরীরের ভার বহন করতে সহায়তা করে। তাই এগুলোকে শক্তিশালী করলে পিঠে ব্যথা বা ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা কমাতে পারেন। সপ্তাহে অন্তত কয়েকবার পেট ও পিঠের ব্যায়াম করা ভালো।
সোজা হওয়া
সঠিক দেহভঙ্গি মেরুদণ্ডকে সুস্থ রাখে। দেহভঙ্গি সঠিক না হলে তা মেরুদণ্ডে অপ্রয়োজনীয় চাপ প্রয়োগ করে। যারা দীর্ঘক্ষণ কম্পিউটারের সামনে কাজ করেন, তাদের ব্যাকপেইন হওয়ার আশঙ্কা অন্যদের চেয়ে অনেক বেশি থাকে। তাই চেয়ারে বসার সময় সোজা হয়ে বসতে হবে। দাঁড়ানোর সময়ও সোজা হয়ে দাঁড়াতে হবে। কম্পিউটারের মনিটর প্রয়োজনে উঁচু করে নিতে হবে যেন মাথা ও শিরদাঁড়া সোজা রেখে কাজ করা যায়।
টেবিলে ঝুঁকে কাজ না করা
অফিসের চেয়ারে বসার সময় কিংবা দাঁড়ানোর সময় ঝুঁকে যাওয়া যাবে না। বিশেষ করে যারা প্রতিদিন ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থাকেন বা ‘ডেস্ক জব’ করেন তাদের ঠিকভাবে বসা, বিশেষ করে পিঠকে পেছন থেকে সঠিকভাবে চাপ দিয়ে রাখাটা গুরুত্বপূর্ণ।
চেয়ার ভালো হওয়া খুব জরুরি। এমন চেয়ার বেছে নিতে হবে যেটা পিঠের নিচের দিককে সঠিকভাবে চাপ দিয়ে রাখতে পারবে। খেয়াল রাখতে হবে যেন বসলে হাঁটু নিতম্বের থেকে একটু উঁচুতে থাকে।
একটানা দাঁড়িয়ে অথবা বসে না থাকা
দীর্ঘসময় ধরে এক জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা, বসা বা শুয়ে থাকা পিঠের জন্য স্বাস্থ্যকর নয়। তাই যখন সম্ভব বসা থেকে ওঠা, হাঁটাহাঁটি করা এবং হাল্বা স্ট্রেচ করে পেশী, হাড় এবং মেরদণ্ডকে চাপ থেকে মুক্তি দিতে হবে। এটি পিঠে রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দেয় এবং সুস্থ রাখে।
হাঁটুর নিচে বালিশ দিয়ে ঘুমান
উপুড় হয়ে বা চিৎ হয়ে ঘুমালে মেরুদণ্ডে চাপ পড়ে। ঘুমের সময় পা সামান্য উঁচু করে রাখলে পিঠের এই চাপ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। তাই হাঁটুর নিচে বালিশ দিয়ে পিঠের ওপর চাপ অর্ধেক কমে ফেলা সম্ভব।
আপনার ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি গ্রহণের পরিমাণ বাড়ান
পর্যাপ্ত পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং ভিটামিন ডি গ্রহণ করলে মেরুদণ্ডের হাড় মজবুত থাকে। ক্যালসিয়াম অস্টিওপরোসিস প্রতিরোধ করতে সাহায্য করতে পারে, যা নারীদের পিঠে ব্যথার একটি বড় কারণ। দুধ, দই, শাকে ক্যালসিয়াম পাওয়া যায়। ভিটামিন ডি পাওয়া যায় চর্বিযুক্ত মাছ, ডিমের কুসুম, গরুর কলিজা এবং পনিরে। এ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ক্যালসিয়াম বড়ি পাওয়া যায়, যা কার্যকর। তবে ভিটামিন ট্যাবলেট খাওয়ার আগে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নিয়ে নিতে হবে।
ধূমপান বাদ
ধূমপান ব্যাকপেইন বাড়িয়ে দিতে পারে। নিকোটিন মেরুদণ্ডের ডিস্কগুলোতে রক্তপ্রবাহকে সীমিত করে দেয়, যার ফলে তারা শুকিয়ে যায় বা ফেটে যায়। ধূমপান রক্তে অক্সিজেনের পরিমাণও হ্রাস করে। ফলে পেশীতে কম পুষ্টি পৌঁছায়। এই দুর্বল, অসুস্থ পিঠ দুর্ঘটনাজনিত স্ট্রেন এবং পিঠে ব্যথা সৃষ্টিকারী টানগুলোর জন্য বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
জুতা বদলানো
হাই-হিলের জুতা পিঠের ক্ষতির কারণ হতে পারে। বিশেষ করে তা যদি কেউ নিয়মিত ব্যবহার করে। তাই অল্প উচ্চতার সমান তলিওয়ালা জুতা - স্যান্ডেল ব্যবহার করতে হবে।
কলি