ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারকে হত্যার উদ্দেশ্যে অপহরণ করার মামলায় তিন আসামির আরও পাঁচ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। শুক্রবার (৩১ মে) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শান্ত ইসলাম মল্লিকের আদালত এই আদেশ দেন। রিমান্ড মঞ্জুর হওয়া তিন আসামি হলেন সৈয়দ আমানুল্লাহ আমান ওরফে শিমুল ভূঁইয়া, ফয়সাল আলী সাজী ওরফে তানভীর ভূঁইয়া ও শিলাস্তি রহমান।
শুনানিতে তিন আসামির পক্ষে কোনো আইনজীবী ছিলেন না। শুনানি শুরু হওয়ার আগে কয়েকজন আইনজীবী আসামিদের পক্ষে মামলায় লড়ার জন্য ওকালতনামায় তাদের স্বাক্ষর নিতে চান। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিত সদস্যরা আইনজীবীদের বলেন আদালতের (বিচারক) সামনে আবেদন করে স্বাক্ষর নিতে। শুনানিতে বিচারক শিলাস্তি রহমানের কাছে জানতে চান, তিনি আইনজীবী নিয়োগ করতে চান কি না? উত্তরে তিনি আইনজীবী নিয়োগ দিতে চান না বলে জানান। অন্য দুই আসামিকে জিজ্ঞেস করলে তারা একে অপরের দিয়ে চাওয়া-চাওয়ি করে পুলিশ সদস্যদের জানান তাদের পক্ষে আইনজীবী নেই, তবে মামলায় লড়তে আইনজীবী চান তারা। পরে শুনানি নিয়ে আদালত তাদের পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
আট দিনের রিমান্ড শেষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও ডিবি পুলিশের ওয়ারী জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মাহফুজুর রহমান শুক্রবার তিন আসামিকে ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে তোলেন। এ সময় তিনি মামলার সুষ্ঠু তদন্তের স্বার্থে তাদের আরও আট দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। শুনানি নিয়ে আদালত রিমান্ড মঞ্জুর করে আদেশ দেন।
এমপি আনারকে খুন করার উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগে মামলাটি করেন তার মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস ডরিন। ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় এই মামলা করা হয়।
মামলা সূত্রে এবং এই ঘটনার পর দেশি-বিদেশি গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, গত ১২ মে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে যান এমপি আনার। সেদিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে কলকাতায় তার পারিবারিক বন্ধু গোপাল বিশ্বাসের সঙ্গে দেখা করতে যান। পরের দিন ১৩ মে চিকিৎসক দেখাতে হবে জানিয়ে বেলা ১টা ৪১ মিনিটে গোপালের বাড়ি থেকে বের হন তিনি। সন্ধ্যায় ফিরবেন বলেও জানান। পরে বিধান পার্কের কাছে কলকাতা পাবলিক স্কুলের সামনে থেকে ট্যাক্সিতে উঠেছিলেন।
আনার সন্ধ্যায় গোপালকে জানান, তিনি দিল্লি যাচ্ছেন এবং সেখানে পৌঁছে ফোন করবেন। গত ১৫ মে হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো বার্তায় বন্ধু গোপালকে জানান, তিনি দিল্লি পৌঁছেছেন এবং ভিআইপিদের সঙ্গে আছেন। তাকে ফোন করার দরকার নেই। একই বার্তা পাঠান বাংলাদেশে তার ব্যক্তিগত সহকারী রউফের কাছেও।
এক দিন পর ১৭ মে আনারের পরিবার তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে গোপালকে ফোন করে। ওই সময় তারা গোপালকে জানান, তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছেন না তারা। পরিবারের পক্ষ থেকে ওই দিনই ঢাকায় থানায় অভিযোগ করা হয়। এর পর থেকে এমপি আনারের খোঁজ পাওয়া যায়নি।
২০ মে এমপি আনারের খোঁজ করতে গিয়ে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তার মোবাইল লোকেশন ট্র্যাক করে। তারা জানতে পারেন, কলকাতায় বন্ধুর বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর তার মোবাইলের লোকেশন একবার পাওয়া গিয়েছিল সেখানকার নিউ মার্কেট এলাকায়। পরে ১৭ মে তার ফোন কিছুক্ষণের জন্য সচল ছিল বিহারে।
পরে ২২ মে ভারতীয় গণমাধ্যমে খবর প্রকাশ হয় যে, ওই দিন সকালে তার খুনের ব্যাপারে নিশ্চিত হয় দেশটির পুলিশ। এদিকে ওই দিনই বাংলাদেশে ঢাকার শেরেবাংলা নগর থানায় খুন করার উদ্দেশ্যে অপহরণের অভিযোগে এই মামলা করেন এমপি আনারের মেয়ে ডরিন।