![রমজানজুড়ে অসহায়দের পাশে নাহিদ](uploads/2024/03/16/1710567284.bito-12.jpg)
২০১৪ সাল থেকে অসহায় ও পথশিশুদের নিয়ে কাজ করছেন নাহিদ আহমেদ। এর মধ্যে অনেক অসহায় পরিবারকে ঘর দিয়েছেন। কাউকে দিয়েছেন ইজিবাইক, কারও জন্য ব্যবস্থা করেছেন টিউবওয়েল বা হুইলচেয়ার কিংবা সেলাই মেশিন। হাজারও পথশিশুকে দিয়েছেন খাবার। এ রমজানে খাবার দিচ্ছেন দুই হাজার পরিবারকে, করাচ্ছেন ইফতারও। তাকে নিয়ে লিখেছেন এফ আই মাসউদ
একজন নাহিদ আহমেদ
সাতক্ষীরা সদরের বাশদহা গ্রামে নাহিদ আহমেদের বাড়ি, জন্ম ১৯৯২ সালে। বাবা ইজ্জত আলী ছিলেন সেনাবাহিনীর সৈনিক। আলহাজ মুহাম্মদ আলী দাখিল মাদ্রাসায় পড়াশোনার হাতেখড়ি। ২০১৮ সালে ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি থেকে কম্পিউটার সায়েন্সে বিএসসি করেন। বর্তমানে থাকেন ঢাকার শাহজাদপুরে। কাজ করেন বেসরকারি আইটি ফার্মে। অসহায় মানুষ ও পথশিশুদের ভালোবাসেন। তাদের নিয়েই পড়ে থাকেন প্রায় সময়।
যেভাবে শুরু
নাহিদ তখন গ্রামের বিদ্যালয়ে ক্লাস সেভেনে পড়তেন। বিদ্যালয়ের মাঠে সকালের পিটি করছিলেন। সেসময় দেখলেন, তৃতীয় শ্রেণির সাব্বিরের খালি পা, পরনের জামা ময়লা ও ছেঁড়া। জানতে পারলেন, সাব্বিরের মা নেই। নানাবাড়ি থাকে; নানারও সামর্থ্য নেই জামা-জুতা কিনে দেওয়ার। নাহিদের মন খারাপ হয়। নাহিদ বললেন, ‘টাকা ম্যানেজ করতে পারছিলাম না। ওর জন্য আরেকজনের জমিতে কাজ নিলাম। তিন দিন কাজ করে জামা-জুতা কিনে দিলাম। তাকে খুশি হতে দেখে আমার হৃদয় ভরে গেল। এরপর মানুষের জন্য কাজ শুরু করি।’
এসএসসির বছর কাদের স্যার নাহিদকে ইংলিশ পড়াতেন। স্যার একবার ‘শখ’ নিয়ে রচনা লিখতে বললেন। নাহিদ লিখলেন, ‘সেনাবাহিনীতে চাকরি করব, নাহলে মানুষের জন্য কিছু করব।’ স্যার চমকে গিয়েছিলেন। উৎসাহ দিয়েছিলেন। চার থেকে পাঁচবার চেষ্টা করেও নাহিদ সেনাবাহিনীতে চাকরি পাননি, কিন্তু অসহায় মানুষের সেবা করার দায়িত্বটা পেয়ে গেলেন।
২০১৩ সালে ঢাকায় আসেন নাহিদ। পড়াশোনার পাশাপাশি চাকরি নিলেন, অল্প বেতনের। বেতন পেলেই অসহায় মানুষ নিয়ে হোটেলে খেতে যেতেন। কাপড় কিনে দিতেন। পথশিশুদের যত্ন নিতেন। সে সময় রাতের বেলা অফিসের কাজে উত্তরবঙ্গে যাচ্ছিলেন। আব্দুল্লাহপুরে অপেক্ষা করছিলেন বাসের জন্য। অদূরে দেখলেন, একজন জ্বরাক্রান্ত পথশিশুকে অন্য পথশিশুরা সেবা দিচ্ছে। তাকে খাইয়ে দিচ্ছে। নাহিদ তাদের ওষুধ ও খাবার কিনে দেন। এরপর সেখানে নিয়মিত যেতেন। তাদের খাবার দিতেন। ঈদে কাপড় দিতেন।
পথশিশুদের জন্য আমরা
২০১৪ সালে উত্তর বাড্ডা থাকতেন নাহিদ। প্রতি শুক্রবার চলে যেতেন কমলাপুরে। সেখানে পথশিশুদের সঙ্গে মিশতেন। ঘুরতেন। আড্ডা দিতেন। গল্পের ছলে অক্ষরজ্ঞান শেখাতেন। ছড়া পড়াতেন। এভাবে কয়েক মাস গেল। এর মধ্যে পথশিশুদের জন্য করেন ‘পথশিশুদের জন্য আমরা’ সংগঠন। তাদের জন্য স্কুল করারও পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু পারেননি। স্বপ্ন দেখছেন, একদিন স্কুল ও আবাসন নির্মাণ করবেন।
মিশন মুলকান্দি চর
নাহিদ প্রত্যন্ত গ্রামের অবহেলিত মানুষদের নিয়ে কাজ করতে ভালোবাসেন। এক বন্ধুর মাধ্যমে জানতে পারলেন, যমুনা নদীর মুলকান্দি চরে আছে দুঃখ-কষ্টে জর্জরিত মানুষ। তাদের কাছে তেমন সহযোগিতা পৌঁছায় না। নাহিদ গেলেন সেখানে। যমুনা সেতুর পূর্ব দিক থেকে ট্রলারে করে যেতে হয়েছে তিন ঘণ্টার জলপথ। বালুতে আটকা পড়েছিলেন। আধা ঘণ্টা ঠেলতে হয়েছে ট্রলার।
চারজনের পরিবার এক মাস চলতে পারবে এমন ১৫০ পরিবারকে খাদ্যসহায়তা দিয়েছেন। ইফতারের আয়োজনও ছিল সঙ্গে। ‘ছোটবেলা থেকেই মানুষের কষ্ট দেখে বড় হয়েছি। আমি কষ্ট নিতে পারি না। অন্যের কষ্ট দেখলে নিজের সব দিয়ে হলেও পাশে দাঁড়াতে ইচ্ছা করে। কিছুটা মনের তৃপ্তি মিটিয়ে কাজ করতে পারছি এখন।’ বললেন নাহিদ।
রমজানজুড়ে অসহায়ের পাশে
এর মধ্যে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ৪০০ পরিবারকে সাহরি ও ইফতারের জন্য খাদ্যসহায়তা দিয়েছেন। ইফতার করিয়েছেন এক হাজার মানুষকে। তার ইচ্ছা, রমজানে দুই হাজার পরিবারকে খাদ্য ও চার হাজার মানুষকে ইফতার করাবেন। নাহিদ বললেন, ‘পুরো রমজানে মানুষের জন্য কাজ করব। দুই হাজার পরিবারকে সাহরির জন্য খাবার ও চার হাজার মানুষকে ইফতার করাতে চাই। ঈদে দেব ঈদসামগ্রী ও নতুন জামা।’
তাদের খুশিতে আমার খুশি
২০১৮ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত একটি সামাজিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন নাহিদ। এখন নিজের মতো করে কাজ করছেন। তার হাত ধরে এ পর্যন্ত ১০টি পরিবার পেয়েছে ঘর। টিউবওয়েল পেয়েছে ৩০ জন। ইজিবাইক ও হুইলচেয়ার দিয়েছেন ৪০ জনকে। সেলাইমেশিন দিয়েছেন অনেককে।
হাজারও পথশিশু ও এতিমকে খাবার দিয়েছেন। মানুষের প্রয়োজন ও সহায়তার কথা উল্লেখ করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিলে মানুষ টাকা-পয়সা দেন নাহিদকে। সে টাকায় প্রয়োজনীয় আসবাব কিনে পৌঁছে দেন ভুক্তভোগীর কাছে। সেসব সহায়তা দেওয়ার ছবি স্বচ্ছতার জন্য ফেসবুকে পোস্ট দেন।
অনেকে তার সঙ্গে যোগাযোগ করে টাকা পাঠান। নাহিদ বললেন, ‘মানুষের সেবা করাই আমার কাজ। সব সময় সৎ ও স্বচ্ছতার সঙ্গে কাজ করার চেষ্টা করি। আমি আমার জীবনকে মানুষের জন্য উৎসর্গ করেছি। আগামীতেও মানুষের সেবায় কাজ করে যেতে চাই।’
কলি