![উপহার](uploads/2024/03/30/1711794499.U.jpg)
খুব উত্তেজিত হয়ে বন্ধুকে কল দিলাম। নিয়াকে কী উপহার দেওয়া যায় ঈদে, তার ধারণা নেওয়ার জন্য। আমাদের প্রথম ঈদ। তাই তাকে অবশ্যই কিছু উপহার দিতে হবে। আমাদের প্রথম ঈদটাকে স্মরণীয় করে রাখতে হবে।
নিয়ার সঙ্গে আমার পরিচয় ফেসবুকে। মানুষ কতকিছুর প্রেমে পড়ে। আমি পড়লাম তার কণ্ঠের প্রেমে। ক্রমশই তার সঙ্গে কথা বলা বাড়তে থাকে। একটা সময় গুরুত্বপূর্ণ কথা ছাড়াও এগোতে থাকে অন্যান্য কথা। আমাদের জানাশোনা বাড়তে লাগল। এক দিন সাহস করে তাকে প্রেম নিবেদন করে ফেললাম। সেও রাজি হয়ে গেল। সম্পর্কের শুরুটা সেখান থেকেই। এই পাঁচ মাসেই এখন আমরা একে অপরের পরিপূরক।
কী উপহার দেওয়া যায়, এ ব্যাপারে বন্ধু তেমন কোনো ধারণা দিতে পারল না। তাই আমিই ভাবতে থাকলাম কী দেওয়া যায়? হঠাৎ মাথায় এল, আমি তো নিয়াকে একটা নতুন শাড়ি দিতে পারি উপহার হিসেবে। যেই ভাবনা সেই কাজ। অনলাইনে অর্ডার করে ফেললাম একটা নীল রঙের শাড়ি।
আমার নিয়াকে নীলপরী লাগবে ঈদের দিন। শাড়ির সঙ্গে কিছু চুড়ি, এক জোড়া কানের দুল আর একটা গলার সেটও অর্ডার করে দিলাম। এমন সময় মায়ের ফোন এল। কথা বলার একপর্যায়ে মা বলল, ‘তোর বাপের একটু শখ হইছে শহরের কাপড় পরব। তুই একটা পাঞ্জাবি আনতে পারবি তোর বাপের জন্য?’ আমি একটু চিন্তা করে বললাম, ‘না মা, আমার কাছে তো এখন টাকা নাই।’ ফোন রেখে দেওয়ার পর মনের ভেতর কেমন জানি করছিল, এভাবে আম্মুকে না করে দিলাম। কিন্তু কী আর করব? নিয়ার জন্য উপহার কিনতে গিয়ে সব টাকা খরচ করে ফেলেছি।
এক দিন বাদেই দেখা করে নিয়ার হাতে তুলে দিলাম উপহারগুলো। সে খুশি হয়ে জড়িয়ে ধরেছিল আমায়। আমি চেয়ে চেয়ে তার আনন্দ দেখছিলাম।
আজ ঈদের দিন। বাবার ডাকে ঘুম ভাঙল। ঘুম ভেঙেই মেসেঞ্জার চেক করলাম। কই, নিয়ার কোনো মেসেজ আসেনি তো! রাতেই ‘ঈদ মোবারক’ শুভেচ্ছা বিনিময় হয়েছিল। তবুও আরেকবার শুভ সকাল বার্তার সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা পাঠিয়ে চলে গেলাম আম্মুর কাছে। অসুস্থ শরীরে সেমাই রান্না করছেন আম্মু। তার গলা জড়িয়ে রাখলাম দুই মিনিট। এরপর গোসল করে এসে আবার মোবাইল চেক করলাম। কিন্তু না, নিয়ার কোনো মেসেজ পেলাম না। দুশ্চিন্তা বাড়তে লাগল। কল দিতে লাগলাম। ফোনও ঢুকছে না। কী হলো!
এই অস্বস্তি আর দুশ্চিন্তার মধ্যেই ঈদগাহে যাওয়ার জন্য প্রস্তুত হলাম। আম্মুর রুমে গিয়েই আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। বাবা পুরোনো পাঞ্জাবির সঙ্গে পুরোনো একটা লুঙ্গি পরে প্রস্তুত হলেন ঈদগাহে যাওয়ার জন্য। আম্মু একটা পুরোনো শাড়ি পরে আমাদের জন্য সেমাই নিয়ে বসে আছেন। এমন সময় বড় ভাইও প্রবেশ করলেন রুমে। তার পরনেও রয়েছে গত ঈদের কেনা পাঞ্জাবি। আমি অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম। সবার উদ্দেশে জিজ্ঞেস করলাম, আপনাদের নতুন কাপড় কই? আমার প্রশ্ন শুনে আম্মু কেঁদে ফেলল। উত্তর দিলো, ‘আমরা কেউ এবার কাপড় কিনতে পারি নাইরে বাপ। রমজানের ভেতর তোর ভাইয়ের ছোট্ট দোকানটা আগুন লেগে পুড়ে গেছে। তুই চিন্তা করবি, তাই কিছু জানাইনি। চারদিকে এত দেনা, তাই আর কারও কাছে ধার চাওয়ার সাহস হয়নি। তোকে তো বলছিলাম, তোর বাপের জন্য কিছু নিতে। তোর কাছেও টাকা ছিল না।’
আমার চোখের পানি টলমল করছিল। বুক ফেটে কান্না আসছিল। আম্মুর সামনে দাঁড়ানোর সাহসটুকুও পেলাম না। অপরাধী মনে হচ্ছিল নিজেকে। আমার আম্মু, বাবা, ভাইয়ের আজ নতুন কাপড় নেই, আর আমি কোথায় টাকা খরচ করলাম। খুব অনুতপ্ত লাগছিল!
ইংরেজি বিভাগ, ফেনী সরকারি কলেজ।
কলি