সমুদ্রসৈকত পছন্দ করে না এমন মানুষ খুব কম। অবসর পেলেই মানুষ ছুটে চলে সমুদ্রসৈকতে। পৃথিবীতে অনেক সমুদ্রসৈকত আছে। নানা ধরনের সৈকতের মধ্যে সবচেয়ে বড় সমুদ্রসৈকতটি অবস্থান করছে আমাদের দেশে। তবে গতানুগতিক সমুদ্রসৈকতের পাশাপাশি অপরূপ এই পৃথিবীতে কিছু অদ্ভুদ সৈকত আছে। সে রকমই কিছু সৈকত নিয়ে জানাব আজকে।
লুকানো সৈকত: মেক্সিকোর পুয়ের্তো ভাল্লার্তা থেকে ২২ নটিক্যাল মাইল পশ্চিমে বান্দেরাস উপসাগরের মুখে মারিটা দ্বীপপুঞ্জে আছে এক অদ্ভুদ সৈকত। যাকে বলে লুকানো সৈকত বা প্লায়া দেল আমর। বিরাট বড় গুহার মাঝখানে এক বালুকাময় সৈকত। দেখলে মনে হতে পারে প্রশান্ত মহাসাগরের নীল জল উঠে এসেছে মাটি ফুঁড়ে। ১৯০০-এর দশকে, মেক্সিকান সরকার দ্বীপগুলোকে একটি সামরিক পরীক্ষার সাইট হিসেবে ব্যবহার করেছিল। তখন বোমা পরীক্ষা করার কারণে দ্বীপে তৈরি হয় গর্ত। পরবর্তী সময়ে ওই গর্তে এক বালুকাময় সৈকত তৈরি হয়। লুকানো সৈকতে যেতে হলে দ্বীপের একটি টানেলের মধ্য দিয়ে যেতে হয়। সাঁতারুরা দ্বীপের একটি জলের টানেলের মাধ্যমে ৪০-৫০ ফুট সাঁতারের মাধ্যমে সৈকতে যেতে পারে।
কালো বালির সৈকত: আমরা সাধারণত সাদা বালির সৈকত দেখেই অভ্যস্ত। কিন্তু কখনো কি কালো বালির সৈকত দেখেছেন? আইসল্যান্ডের ভিক শহরেই দেখা মিলবে এমন এক সৈকতের। অদ্ভুদ সুন্দর কালো বালিময় সৈকতটির নাম রেনিসফজারা ব্ল্যাক স্যান্ড বিচ। আইসল্যান্ডের দক্ষিণ উপকূলে ভিক শহরের কাছেই রেনিসফজারা বিচ। এই সৈকতে দেখা যায় অদ্ভুদ কালো বালির স্তূপ, গর্ত আর কালো পাথর। বলা হয় আগ্নেয়গিরির ক্রিয়াকলাপে কারণে আইসল্যান্ডের কিছু সমুদ্রসৈকতে কালো বালি রয়েছে। কারণ লাভা ঠাণ্ডা এবং শক্ত হয়ে গেলে তা থেকে তৈরি কালো আগ্নেয় শিলা থেকে বালি মাটিতে পড়ে। রেনিসফজারার ক্ষেত্রে কোনো কালো আগ্নেয়গিরি কয়েক শতাব্দী আগে অগ্ন্যুৎপাত হয়েছিল এবং যখন গলিত উত্তপ্ত লাভা হিমায়িত ঠাণ্ডা উত্তর আটলান্টিক সাগরে কালো শিলা তৈরি হয়েছিল এবং কালো বালিতে রূপান্তর হয়। দেখতে সুন্দর সৈকত হলেও এখানে সাঁতার কাটার ক্ষেত্রে বেশ বেগ পেতে হয় এবং বিপজ্জনক।
সবুজ বালির সৈকত: কালো বালির মতো সবুজ বালির এক সৈকত আছে হাওয়াইয়ে। পৃথিবীর চারটি সবুজ বালির সৈকতের মধ্যে এটি অন্যতম। পাপাকোলিয়া গ্রিন স্যান্ড বিচ নামে পরিচিত এই সৈকত। ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে অনুসারে, সৈকতের স্বতন্ত্র সবুজ রংটি মূলত অলিভাইন স্ফটিক দ্বারা গঠিত, যা বেসাল্ট নামক লাভাপ্রবাহ থেকে আসে। পাপাকোলিয়ার সবুজ বালি ৪৯ হাজার বছরেরও বেশি আগে গঠিত। সৈকতের বালিতে আছে অলিভিন নামক আগ্নেয় পদার্থ। যার ফলে সবুজ বর্ণ ধারণ করেছে এর বালু। যদি অলিভিনের সরবরাহ ফুরিয়ে যায়, তা হলে সৈকতটি তার সবুজ রং হারাবে।
তারা বালির সৈকত: জাপানের এই সৈকতের বালি আরও অদ্ভুদ। হোশিজুনা-নো-হামা বা স্টার স্যান্ড বিচ নামের এই সমুদ্রসৈকতে দেখা মেলে এক ধরনের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র তারকা আকৃতির বালির। সৈকতে হাঁটতে হাঁটতে দিনে-দুপুরে তারার দেখা মিললে এখানে অবাক হওয়ার কিছু নেই। কেননা এই তারা আকৃতির বালুগুলো আসলে আণুবীক্ষণিক জীবের খোলস যা ফোরামিনিফেরা নামে পরিচিত। যখন ফোরামিনিফেরা মারা যায়, তখন তাদের খোলস সমুদ্রে থাকে এবং জোয়ার তাদের উপকূলে নিয়ে আসে। তাদের সেলগুলো ৫০০ মিলিয়ন বছর ধরে সমুদ্রতলে বাস করছে। তাই তাদের খোলসগুলোই জাপানের এই সৈকতকে তারার সৈকত বানিয়ে ফেলেছে।
জায়ান্টস কজওয়ে বিচ: উত্তর আয়ারল্যান্ডের অদ্ভুদ সুন্দর এই সৈকতটি ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজের অন্তর্ভুক্ত। সাধারণ সৈকত থেকে একেবারেই আলাদা এই সৈকত। এখানে নেই কোনো সমতল স্থান। তার বদলে আছে ছোট ছোট কলাম ব্লকের স্তূপ। দেখলে মনে হবে কেউ বাঁধ দিয়ে রেখেছে। প্রায় ৪০ হাজারের মতো ব্লক আছে এই সৈকতে। বলা হয় ৫০ থেকে ৬০ মিলিয়ন বছর আগে আগ্নেয়গিরির ক্রিয়াকলাপের ফলে সমুদ্র উপকূলে বেসল্ট কলামগুলো তৈরি হয়েছে। তবে কিংবদন্তি অনুসারে একজন আইরিশ জায়ান্ট যিনি স্কটিশ ‘বিগ ম্যান’ বেনান্ডোনারের সঙ্গে লড়াই করেছিলেন। তাদের যুদ্ধের কারণে পাথুরে আকৃতির কলাম তৈরি হয়েছে। পর্যটকরা এই সৈকতে অন্যান্য সৈকতের মতো শুতে না পারলেও পাথুরে ব্লকের ওপর বসে উপভোগ করতে পারবেন সমুদ্রের বিশালতা।
কলি