![মায়ের চেয়ে নাম যে মধুর ত্রিভুবনে নাই](uploads/2024/05/11/rewg-1715411591.jpg)
জীবনের সফলতার প্রতিটি পদক্ষেপেই যার অবদানকে অস্বীকার করার উপায় নেই তিনি হলেন মা। সন্তানের জন্য সবচেয়ে বেশি যে আত্মত্যাগ করতে পারে সেই নামটিই হলো মা। স্বার্থপর এই দুনিয়াতে নিঃস্বার্থভাবে শুধু মা-ই আমাদের ভালোবাসতে পারেন।
মাত্র এক অক্ষরে শব্দটি গঠিত হলেও এর ব্যাপকতা সাগরের চেয়েও গভীর। এই শব্দের চেয়ে অতি আপন শব্দ আর নেই। জন্মের পর মানুষের মুখে এই শব্দই বেশি উচ্চারিত হয়।
মাকে নিয়ে লেখা হয়েছে শত-সহস্র কবিতা, গান। সেই কবিতা ও গানে ব্যক্তি মা যেমন রয়েছে তেমনি দেশকে মা সম্বোধন করেও লেখা হয়েছে গান, কবিতা। বাংলা সাহিত্যে মাকে নিয়ে লেখা বিখ্যাত বেশ কিছু কবিতা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘মনে পড়া’, শামসুর রাহমানের ‘কখনো আমার মাকে’, হুমায়ুন আজাদের ‘আমাদের মা’, আল মাহমুদের ‘নোলক’, কালিদাসের ‘মাতৃভক্তি’ উল্লেখযোগ্য।
আধুনিক বিশ্বে মে মাসের দ্বিতীয় রবিবার ‘মা দিবস’ হিসেবে পালন করা হয়। সে হিসেবে আগামীকাল বিশ্ব মা দিবস। প্রতি বছরই ক্যালেন্ডার ধরে দিবসটি আসে, চলেও যায়। এই দিনটিতে মায়ের জন্য বিশেষ কিছু করেন সন্তান, তাকে ধন্যবাদ জানান, ভালোবেসে জড়িয়ে ধরেন।
১৯০৮ সালের ১০ মে পশ্চিম ভার্জিনিয়ার আন্দ্রেউজ মেথডিস্ট এপিসকোপাল চার্চে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রথম মা দিবস পালন হয়। এরপর ১৯১২ সালে এই দিবসকে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দেওয়ার জন্য ব্যাপক প্রচার শুরু হয়। এই প্রচার ধীরে ধীরে ছড়িয়ে পড়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কানাডা, মেক্সিকো, চীন, জাপান, দক্ষিণ আমেরিকা ও আফ্রিকায়। এই প্রচারের পরিপ্রেক্ষিতে ১৯১৪ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট উড্রো উইলসন মে মাসের দ্বিতীয় রবিবারকে মা দিবস ও জাতীয় ছুটির দিন হিসেবে ঘোষণা করেন। এরপর থেকেই প্রতিটি দেশে মায়েদের সম্মান ও শ্রদ্ধা জানানোর জন্য এই দিনটি উৎসর্গ করা হয়। বর্তমানে ৪০টিরও বেশি দেশ ওই উৎসব পালন করে থাকে।
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা ‘মাকড়সা’
শুধু মানুষ নয়; প্রকৃতির অন্য প্রাণীদের ক্ষেত্রেও মায়ের ভালোবাসার প্রমাণ পাওয়া যায়। সন্তানের জন্য নিজেকে সম্পূর্ণ বিলিয়ে দেয় এসব প্রাণী। তেমন এক প্রাণীর নাম মাকড়সা। মাকড়সার ডিম ফুটে বাচ্চা বের হয়। মা মাকড়সা সেই ডিম নিজের দেহে বহন করে বাচ্চা না হওয়া পর্যন্ত। যখন বাচ্চা হয় তখন মা মাকড়সা বাচ্চাদের বাঁচিয়ে রাখার জন্য নিজের শরীর বিলিয়ে দেয় তাদের খাবারের জন্য। বাচ্চা মাকড়সারা মা মাকড়সার দেহই খেতে শুরু করে ঠুকরে ঠুকরে। সন্তানের জন্য মা নীরবে হজম করে সব কষ্ট-যন্ত্রণা। এমনি করে একসময় মায়ের পুরো দেহই চলে যায় সন্তানদের পেটে। মাকড়সা মায়ের সন্তানের জন্য এ আত্মত্যাগের কারণেই পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মা হিসেবে মাকড়সার স্থান অনেক ওপরে।
দেশে দেশে ‘মা’
পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন ভাষায় ব্যবহৃত ‘মা’ ডাকের শব্দগুলোর মধ্যকার উচ্চারণগত এই সাদৃশ্য কীভাবে ঘটল, তা এক বিরাট রহস্য। তবে ভাষাবিদ রোমান জ্যাকবসন এর পেছনে যুক্তি দেখিয়েছেন যে, শিশুরা যখন তার মায়ের দুধ পান করে, তখন তারা তাদের মুখভর্তি অবস্থায় কিছু শব্দ করে। সেই শব্দগুলো নাক দিয়ে বের হয় বলে উচ্চারণগুলো অনেক ‘ম’-এর মতো শোনা যায়। তাই প্রায় সব ভাষায়ই ‘মা’ ডাকে ব্যবহৃত শব্দগুলো ‘ম’ বা ‘এম’ দিয়ে শুরু হয়।
‘মা’ শব্দটির ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘মম’, যা পূর্বে ব্যবহৃত শব্দ ‘মাম্মা’র পরিবর্তিত রূপ। ধারণা করা হয়, ইংরেজি শব্দ মাম্মা এসেছে লাতিন শব্দ ‘মাম্মা’ থেকে। যা ‘স্তন’ বোঝাতে ব্যবহৃত হতো। এই শব্দ থেকে ‘ম্যামেল’ উৎপত্তি। যা কিনা স্তন্যপায়ী প্রাণীর ইংরেজি প্রতিশব্দ। মজার ব্যাপার হলো, পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই ‘মা’কে বোঝাতে ব্যবহৃত শব্দগুলোর উচ্চারণ প্রায় কাছাকাছি। আর সবগুলো শব্দের শুরুতেই ব্যবহৃত হয়েছে ‘এম’ অথবা ‘ম’ বর্ণটি। মাকে জার্মান ভাষায় ‘মাট্টার’, ওলন্দাজ ভাষায় ‘ময়েদার’, ইতালিয়ান ভাষায় ‘মাদর’, চীনা ভাষায় ‘মামা’, হিন্দি ভাষায় ‘মা’, প্রাচীন মিসরীয় ভাষায় ‘মাত’, সোয়াহিলি ভাষায় ‘মামা’ এবং আফ্রিকান্স ও বাংলা ভাষায় ‘মা’ বলে ডাকা হয়।
কলি