
বিশ্ব ঋণদাতা সংস্থা আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত পূরণ করতে গিয়ে সরকার গত বৃহস্পতিবার প্রায় ১০০ পণ্য ও সেবায় ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়িয়েছে। আগে বিভিন্ন পণ্যের ওপর ভ্যাট ৫ থেকে সর্বোচ্চ ১০ শতাংশ আরোপ করা হলেও তা ১৫ শতাংশে ঠেকেছে। সম্প্রতি শিল্পে গ্যাসের দাম ৩১ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৭৫ টাকা ৭২ পয়সা বাড়িয়ে দ্বিগুণের বেশি করার প্রস্তাব করেছে পেট্রোবাংলা। এর প্রভাব বাজারে পড়তে শুরু করেছে। যেসব পণ্যে শুল্ক আরোপ করা হয়নি বা ভ্যাট বাড়ানো হয়নি, তারপরও দাম বেড়ে গেছে। মুরগির কেজিতে বেড়েছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। সবজির দামও একটু চড়ে গেছে। চালও বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, ‘কয়েক দিন ধরে গোড়াতে দাম বাড়ছে। এ জন্য আমাদেরও বেশি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। নতুন সরকারের কাছে দাম কমার আশা করা হলেও উল্টো চিত্র দেখা গেছে।’ গতকাল সোমবার রাজধানীর হাতিরপুল, কারওয়ান বাজারসহ বিভিন্ন বাজার ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।
বৃহস্পতিবার বিভিন্ন বাজারে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা কেজি আলু বিক্রি হয়েছে। গতকাল তা ৪০ টাকা হয়ে গেছে। পেঁয়াজের দামও ৫০ টাকা টাকা থেকে বেড়ে ৬০ টাকা হয়েছে। সবজি বিক্রেতারা বলছেন, ‘আড়তে বেড়েছে দাম। এ জন্য আমাদেরও বেশি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। কারণ লোকসান করে ব্যবসা করা যায় না।’ হাতিরপুল বাজারের সবজি বিক্রেতা একরাম হোসেনসহ অন্য বিক্রেতারা বলেন, ‘আগের চেয়ে গত শুক্রবার থেকে আড়তেই বিভিন্ন পণ্যে ৫ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। এ জন্য বেশি দরে বিক্রি করতে হচ্ছে। আলু ৪০ টাকা, পেঁয়াজ ৬০ টাকা কেজি।’ কারওয়ান বাজারের খুচরা বিক্রেতা সবুর হোসেন বলেন, পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৬০ টাকা কেজি, ৩০ থেকে আলু ৪০ টাকা হয়েছে। তবে আগের মতোই দেশি আদার কেজি ১২০-১৩০ টাকা, আমদানি করাটা ২৪০-২৫০ টাকা ও রসুন ২২০-২৪০ টাকা।
মোহাম্মদপুরের টাউন হল বাজারের সবজি বিক্রেতা কালু ব্যাপারীসহ অন্য সবজি বিক্রেতারা বলেন, বেগুনের কেজি ৫০ থেকে ৬০ টাকা। তবে বড় গোলটা ৭০ থেকে ৮০ টাকা কেজি। ৩০ থেকে ৫০ টাকার শিমের দাম বেড়ে ৪০ থেকে ৭০ টাকা হয়েছে। কাঁচা মরিচের দামও ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়ে ৮০ থেকে ১০০ টাকা কেজি বিক্রি করা হচ্ছে।
খুচরা বিক্রেতারা বলেন, আগের মতোই শসার ৫০ থেকে ৬০ টাকা, ফুলকপির পিস ২০ থেকে ২৫ টাকা, বাঁধাকপি ২৫ থেকে ৩০ টাকা, টমেটোর কেজি ৫০ থেকে ৭০ টাকা, মুলা ২০ থেকে ২৫ টাকা, গাজর ৬০ টাকা, পেঁপে ৪০ থেকে ৫০ টাকা, শসা ৫০ থেকে ৭০ টাকা, লাউ, চালকুমড়ার পিস ৪০ থেকে ৫০ টাকা বিক্রি করা হচ্ছে। লালশাক, পালংশাক, কলমিশাকও ১০ টাকা আঁটি বিক্রি হতে দেখা যায়।
বিভিন্ন বাজারের খুচরা বিক্রেতারা বলেন, আগের মতোই ছোলা ১২০ থেকে ১৩০ টাকা কেজি, মুগ ডাল ১৮০ টাকা কেজি, মসুর ডাল ১১০ থেকে ১৩৫ টাকা, ২ কেজি ওজনের প্যাকেট আটা ১০০-১৩০ টাকা, খোলা আটা এক কেজি ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ১ লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১৭৫ টাকা, চিনি ১২০ থেকে ১২৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে।
বেড়েছে মুরগির দাম
বৃহস্পতিবার সরকার শুল্ক ও ভ্যাট বাড়ানোর ঘোষণা এবং পেট্রোবাংলা গ্যাসের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করায় মুরগির দামও বেড়ে গেছে। খুচরা বিক্রেতারা বলেন, ‘আমরা কিছু লাভ করে বিক্রি করি। দাম বাড়লে ভোক্তাদের বাড়তি টাকা গুনতে হয়। এতে আমাদেরও খারাপ লাগে। কিন্তু করার কিছু নেই।’ হাতিরপুল বাজারের সবুজ পোলট্রি ফার্মের আবুল বাসার অন্য খুচরা বিক্রেতারা খবরের কাগজকে বলেন, ‘শুক্রবার থেকে মুরগির দাম বেড়েছে। আর কমে না। এ জন্য আমাদেরও বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।
ব্রয়লার ২১০ থেকে ২২০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩৬০ থেকে ৩৮০ টাকা কেজি। দেশি মুরগির দামও বেড়ে ৫৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি হয়েছে।’ এ সময় কলিমুদ্দিন নামে এক ক্রেতা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘নতুন সরকারের কাছে দাম কমার আশা করা হলেও উল্টো চিত্র দেখা গেছে। এই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হবে। তা না হলে খাব কী?’ তবে আগের মতোই গরুর মংস ৭০০-৭৫০ টাকা ও খাসির মাংসের কেজি ১ হাজার ৫০-১ হাজার ১০০ টাকা কেজি বিক্রি করতে দেখা গেছে। তবে ডিমের দাম ডজনে ৫ টাকা কমেছে। বিভিন্ন বাজারে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকা ডজন ডিম বিক্রি করতে দেখা গেছে।
বাড়তি দামে চাল বিক্রি
খেত থেকে ধান উঠে গেলেও কমেনি চালের দাম। বিক্রেতারা বলছেন, রাইস মিল থেকে দাম বাড়ার কারণে খুচরা বাজারেও কমছে না। আগের মতোই বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে। বিভিন্ন বাজারের খুচরা চাল বিক্রেতারা বলেন, ‘মিনিকেট ৭২-৮০ টাকা, আটাশ চাল ৬২-৬৪ টাকা ও মোটা চালের দাম ৫৪-৫৬ টাকা, নাজিরশাইল ৭৬-৮২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।