ঢাকা ১০ আষাঢ় ১৪৩২, মঙ্গলবার, ২৪ জুন ২০২৫
English

উত্তেজনা-অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হবে

প্রকাশ: ২১ মে ২০২৪, ১১:৩১ এএম
উত্তেজনা-অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হবে
মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ আলী শিকদার

দুর্ঘটনা নাকি নাশকতা, সেটি এখনো পরিষ্কার না। এ জন্য অপেক্ষা করতে হবে। বর্তমানে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যে রকম সম্পর্ক, তাতে ইসরায়েলের গোয়েন্দা সংস্থা- মোসাদের প্রতি অনেকের সন্দেহ হতে পারে। কারণ মোসাদ বিভিন্ন সময়ে ইরানের রাজনীতিক, বিজ্ঞানী থেকে শুরু করে বিভিন্ন পর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের হত্যা করেছে। এর আগে সিরিয়ায় ইরানি কনস্যুলেটে হামলা চালিয়ে ইরানের ছয়-সাতজন সেনা কর্মকর্তাকে হত্যা করেছে। তাই মোসাদ জড়িত থাকতে পারে, এমন সন্দেহ করা অমূলক নয়। 

যদি ইরানের গোয়েন্দারা বুঝতে পারেন যে এটি নাশকতা, তাহলে তারা স্বাভাবিকভাবেই প্রতিশোধ নিতে চাইবে। সেটি হলে এই অঞ্চলে নিশ্চিতভাবে উত্তেজনা বাড়বে। সে ক্ষেত্রে ইরান পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নেবে। সেটি তারা কীভাবে নেবে, তা দেখার বিষয়। এমনকি সেটি সরাসরি যুদ্ধের পর্যায়েও চলে যেতে পারে। 

এমনিতেই ওই অঞ্চলে নানা সংঘাতপূর্ণ ইস্যু রয়েছে। গাজা হত্যাকাণ্ড, হুথি বিদ্রোহীদের হামলা, হিজবুল্লাহ, হামাসের গেরিলা যুদ্ধ; তার ওপর এমন ঘটনা নিঃসন্দেহ অঞ্চলটিতে উত্তেজনা ও অনিশ্চয়তার সৃষ্টি করল।

লেখক: নিরাপত্তা বিশ্লেষক

লোকসভা নির্বাচন ঘিরে আগাম প্রস্তুতি

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৫, ০৮:২৫ পিএম
লোকসভা নির্বাচন ঘিরে আগাম প্রস্তুতি
সুখরঞ্জন দাশগুপ্ত

পশ্চিমবঙ্গ এক জাতিস্মরকে আপন করে নিয়েছিল ১৯৭১-এ। প্রকাশিত হয়েছিল উপন্যাস; সোনার কেল্লা। ফেলুদার সেই কীর্তি চলচ্চিত্রে হাজির হয়েছিল ১৯৭৪-এ। সেই জাতিস্মর মুকুলকে নিয়ে সত্যজিৎ রায়ের সোনার কেল্লা অবিনশ্বর হয়ে আছে অসংখ্য হৃদয়ে।

চলচ্চিত্র হিসেবে সোনার কেল্লার প্রকাশের ৫০ বছর পূর্তির বছরে সেই পশ্চিমবঙ্গই আর এক স্বঘোষিত জাতিস্মরের খোঁজ পেয়েছিল। সেদিন ছিল ২৬ এপ্রিল, ২০২৪। সেই ‘জাতিস্মর’ নিজের গত জন্মের কথা জানালেন মালদহে। তিনি শিশু নন, তিনি ছবি আঁকেন না। গুজরাটের ভাদনগরে জন্ম নেওয়া সেই ৭৩ বছরের বৃদ্ধ সেদিন এক জনসভায় বলেছিলেন, ‘মনে হচ্ছে আমি আগের জন্মে এই বাংলার মাটিতে জন্মেছিলাম। না হয় পরের জন্মে আমি এই বাংলারই কোনো মায়ের কোলে জন্ম নেব।’

সেই জাতিস্মর, ভূত-ভবিষ্যৎ দ্রষ্টা আর কেউ নন; তিনি নরেন্দ্র মোদি। ভারতের প্রধানমন্ত্রী। তার ভারত-শাসনের ১১ বছর পূর্তি হয়েছে। দেশজুড়ে মোদি শাসনের ‘সাফল্যে’র প্রচার চলছে। গত জন্ম এবং পরজন্মের ঠিকানার জন্য এ জন্মে তার অবদানের সাফল্য খতিয়ে দেখার এটিই সময়। এই খতিয়ে দেখা আর একটি কারণেও গুরুত্বপূর্ণ। রাজ্যে ১৪ বছর মমতা ব্যানার্জির শাসন চলছে। আর নরেন্দ্র মোদিই সেই ব্যক্তি, যিনি মহাকরণের বহু আকাঙ্ক্ষিত চেয়ারে বসার জন্য উদগ্রীব তৃণমূল নেত্রীকে একটি নিদারুণ পরামর্শ দিয়েছিলেন ২০১১-এর মে-তে; ‘প্রথম রাতেই বেড়াল মেরে দিন।’ পশ্চিমবঙ্গের প্রতি তার ভাবনার সেটিই প্রথম প্রকাশ।

রাজ্যে কমিউনিস্টসহ বামপন্থিদের দুর্বল করতে না পারলে আরএসএস, বিজেপির ফণা তোলার সুযোগ ছিল না। তাই মোদির সেই পরামর্শ ছিল। মমতা ব্যানার্জি এবং তার দলের নেতারা মোদির সেই পরামর্শ অনুসারেই এগিয়েছেন। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের মদতে আরএসএস-এর শাখা-প্রশাখা বিস্তারই মোদির একমাত্র সাফল্য।

২০১৪-এর এপ্রিল। নরেন্দ্র মোদি তখনো প্রধানমন্ত্রী হননি। সিঙ্গুরে যে কারখানা হওয়ার কথা ছিল, মমতা ব্যানার্জির ‘আন্দোলনে’ ভর করে তা গুজরাটের সানন্দে পৌঁছে গেছে তার আগেই। কলকাতার একটি সংবাদপত্রের সাক্ষাৎকারে মোদি জানিয়েছিলেন, ‘এখন, যখন আমি গুজরাটের বাইরে এসে সারা দেশের উন্নয়নের কথা চিন্তা করি, আমার সিঙ্গুরের জন্যও একটি ভাবনা আছে।’ সেই ‘ভাবনা’র আশ্বাস পেয়েই চিঠি লিখেছিল সিঙ্গুর শিল্প বিকাশ ও উন্নয়ন কমিটি। দিনটি ছিল ২০১৪-এর ২৮ জুলাই। 

সেই চিঠির পর প্রায় ১১ বছর পার। জবাব তো দূরের কথা। ‘চিঠি মিলা হ্যায় মিত্রো’; এটুকুও জানাননি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। সিঙ্গুরের শিল্প বিকাশ ও উন্নয়ন কমিটির সদস্যরা চিঠিতে রাজ্য সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনা করে পদক্ষেপের আবেদনও জানিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীকে। তারা রাজ্যকে এড়িয়ে মোদিকে কিছু করতে বলেননি। কেন তারা এমন ভেবেছিলেন? কারণ, ২০১৪-এর ফেব্রুয়ারিতে ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে লোকসভা নির্বাচনের প্রচারে এসে নরেন্দ্র মোদি বলেছিলেন, ‘বাংলার মানুষ দুটো লাড্ডু পাবেন। এখানে বসে দিদি উন্নয়ন করবেন, আর দিল্লি থেকে আমি উন্নয়ন করব বাংলার।’

তার পর কৌশল বদলে গেল। মমতা বনাম মোদি; এ ধারণা মানুষের মধ্যে গড়ে তুলতে না পারলে, মোদি-মমতা ব্যানার্জি আসলে বন্ধু, তা স্পষ্ট হয়ে গেলে বামপন্থিদের প্রতি মানুষের আশা, সমর্থন বাড়বে; এই অঙ্কটি বুঝেই খেলতে নেমেছিলেন প্রধানমন্ত্রী-মুখ্যমন্ত্রী। তাই ২০১৬-এর ২৬ মার্চ খড়গপুরের সভায় নরেন্দ্র মোদির মুখে শোনা গেল, ‘‘এমন দুর্নীতির ছবি বাংলায় দেখেছিলেন। প্রথমে সারদা, এখন ‘নারদ’। গোটা তৃণমূলের নেতৃত্ব ক্যামেরার সামনে এমনভাবে টাকা নিচ্ছেন যেন হপ্তা তুলছেন। আচ্ছা বলুন, ওরা যে টাকা নিচ্ছেন, সেটা কার টাকা। আপনাদেরই টাকা তো লুট হয়ে গেছে।’’

মোদি খুব চিন্তিত হয়ে পড়েছিলেন পশ্চিমবঙ্গের মানুষের টাকা লুট নিয়ে। খুব স্বাভাবিক। সারদা, নারদ স্টিং অপারেশন, রেগা-আবাস যোজনার টাকা লুট, রেশনের চাল চুরি, কয়লা-গরু-বালি পাচার: তৃণমূল নেতা, সাংসদ, ‘জনৈক অভিষেক’সহ কারও বিরুদ্ধে কোনো তদন্ত শেষই করতে পারেনি কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলো। তাহলে সেই গত জন্মের মা, পরের জন্মের জননীর জন্য কী করলেন ‘যুগপুরুষ’ নরেন্দ্র মোদি?

তৃণমূল-বিজেপির এ বোঝাপড়ার ভিত্তিতেই পশ্চিমবঙ্গে নরেন্দ্র মোদির শাসনের ‘সাফল্য’কে বিচার করতে হবে। না হলে পুরো লাভ-লোকসানের তালিকা ‘জল জীবন মিশন’-এর রিপোর্টের মতো হয়ে যাবে। কেন্দ্রীয় সরকারের রিপোর্ট বলছে, পশ্চিমবঙ্গের প্রায় ৫৬ শতাংশ পরিবারে পাইপলাইনের মাধ্যমে জল পৌঁছে গেছে। এ রিপোর্ট রাজ্য সরকারেরও। কিন্তু বাস্তবে কেন্দ্র-রাজ্য রিপোর্টে বিস্তর ‘জল’। হিসাবে এমন অনেক গ্রাম আছে, যেখানে দুই ধরনের সমস্যা। কোথাও পাইপ বসিয়েছে ঠিকাদার। কিন্তু জল যায়নি।

 কোথাও পাইপই বসেনি। মোদি-মমতা ব্যানার্জির সরকার মিলে দেখাচ্ছে জল পৌঁছে গেছে। সম্প্রতি শিলিগুড়িতে মুখ্যমন্ত্রীর সভা ছিল। সেখানে সভামঞ্চে চা না পেয়ে মজা করে মুখ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘এরা এখানে চা-ও দেয় না।’ সঙ্গে সঙ্গে তার জন্য চা আনতে ছুটে গেছিলেন মন্ত্রী, তৃণমূল নেতারা। কিন্তু শিলিগুড়ি যে জেলায়, সেই দার্জিলিংয়ে প্রায় ৫৩ শতাংশ গ্রামীণ পরিবারে এখনো পানীয় জলের লাইনই পৌঁছায়নি। যে বাড়িগুলোতে লাইন পৌঁছেছে বলে সরকার দাবি করছে, তার একাংশে শুধু পাইপই পৌঁছেছে, জল যায় না সেই পাইপে। সংখ্যালঘু নিবিড় মুর্শিদাবাদের দাঙ্গাবিধ্বস্ত সমশেরগঞ্জের তৃণমূলের পঞ্চায়েতপ্রধানরাও স্বীকার করেছেন যে, গ্রামবাসীর একাংশ জল কিনে খান। অনেকে জল বয়ে আনেন দূর থেকে।

সম্প্রতি বিজেপির সঙ্গে সমঝোতা করে ৬৭ বছর পর পতিরামে সমবায় সমিতির দখল নিল তৃণমূল। ঘটনাকে ঘিরে জোর চর্চা দক্ষিণ দিনাজপুর জেলায়। রাজ্যে নজিরবিহীন ঘটনা, বলছে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। ওই জেলার পতিরাম কো-অপারেটিভ অ্যাগ্রিকালচারাল ক্রেডিট সোসাইটি লিমিটেডের মনোনয়ন পর্ব জমার শেষ দিনেই পাঁচ ও চার আসনের সমঝোতা করে সমবায়টির দখল নেয় তৃণমূল ও বিজেপি। গোটা রাজ্যে শাসক দল তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষই বিজেপি। পঞ্চায়েত থেকে শুরু করে পুরসভা, বিধানসভা থেকে শুরু করে লোকসভা নির্বাচন- সবতেই একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করে এসেছে। কিন্তু পতিরামের এ সমবায় নির্বাচনে তৃণমূল ও বিজেপির এমন গোপন সমঝোতা কার্যত অস্বস্তি বাড়িয়েছে উভয় শিবিরকে।

১৯৫৮ সালে গঠিত পতিরাম কো-অপারেটিভ অ্যাগ্রিকালচারাল ক্রেডিট সোসাইটির শেষ নির্বাচন হয়েছিল ২০১৫-তে। তার পর থেকে প্রশাসকের অধীনে চলছিল সমবায়। চলতি বছরে নতুন করে নির্বাচন ঘোষিত হতেই জোরদার প্রস্তুতি শুরু হয় সব পক্ষের। কিন্তু মনোনয়ন জমার শেষ দিনে চিত্র সম্পূর্ণ পাল্টে যায়; নয়টি আসনের মধ্যে পাঁচটি তৃণমূল ও চারটি বিজেপি প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত।

 বোঝাপড়ার জেরে ভোট পড়ার আগেই বোর্ড দখল দুই দলের। শাসকবিরোধী সমঝোতায় এমন ‘অঘটন’ অভাবনীয় বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তাদের মতে, এটি শুধুই স্থানীয় স্তরের ঘটনা নয়; এতে রাজনীতির ভবিষ্যৎ অভিমুখের ইঙ্গিত লুকিয়ে আছে।
যদিও এ নিয়ে কড়া মনোভাব পোষণ করেছেন দক্ষিণ দিনাজপুর জেলা তৃণমূল সভাপতি সুভাষ ভাওয়াল। তিনি জানান, ‘বিজেপির সঙ্গে কোনো প্রকার সমঝোতা দল মেনে নেবে না। বিষয়টি তদন্তসাপেক্ষ। ব্লক সভাপতির কাছ থেকে রিপোর্ট তলব করা হয়েছে।’ তৃণমূলের কোথাও জনপ্রিয়তা না থাকলে সেখানে দল হারবে, কিন্তু কোনোভাবেই বিজেপির সঙ্গে সমঝোতা করবে না।

অন্যদিকে, বিজেপির জেলা নেতৃত্বের মুখে কুলুপ। দলের জেলা সভাপতি স্বরূপ চৌধুরীর কোনো প্রতিক্রিয়া মেলেনি। মণ্ডল সভাপতি ছোটন চক্রবর্তী অবশ্য জানিয়েছেন, বিষয়টি তার জানা নেই।
পতিরাম কো-অপারেটিভ অ্যাগ্রিকালচারাল ক্রেডিট সোসাইটি লিমিটেডের ম্যানেজার হিমালয় বিশ্বাস বলেন, এতদিন ইলেকশন হলেও এবারে সিলেকশনের মাধ্যমে সমবায় গঠিত হয়েছে। নয়টি আসনের মধ্যে পাঁচটি তৃণমূল ও চারটি বিজেপি। 

উভয় দলের সদস্যদের মধ্যে সমঝোতা বাইরে হয়ে থাকলে তাদের কিছু বলার থাকে না। তবে এমন ‘চুপিসাড়ে বোঝাপড়া’ মানতে নারাজ স্থানীয় নেতৃত্বের একাংশও। এ নিয়ে পতিরাম পঞ্চায়েত প্রধান তথা ওই সমবায়ের সদস্য পার্থ ঘোষ জানিয়েছেন, ‘আমার জানা মতে নির্বাচন হওয়ার কথা ছিল।’

রাজনীতির শুদ্ধতায় এ সমঝোতা এক গভীর প্রশ্নচিহ্ন। পতিরামে যা ঘটল, তা কি নিছক ব্যতিক্রম? নাকি নিচুতলার ‘ভোটের সমীকরণে’ জোটের আগাম ইঙ্গিত? আপাতত সেই উত্তর খুঁজছে গোটা জেলা।

লেখক: ভারতের সিনিয়র সাংবাদিক

চলচ্চিত্র হিসেবে সোনার কেল্লার প্রকাশের ৫০ বছর পূর্তির বছরে সেই পশ্চিমবঙ্গই আর এক স্বঘোষিত জাতিস্মরের খোঁজ পেয়েছিল। সেদিন ছিল ২৬ এপ্রিল, ২০২৪। সেই ‘জাতিস্মর’ নিজের গত জন্মের কথা জানালেন মালদহে। তিনি শিশু নন, তিনি ছবি আঁকেন না। গুজরাটের ভাদনগরে জন্ম নেওয়া সেই ৭৩ বছরের বৃদ্ধ সেদিন এক জনসভায় বলেছিলেন, ‘মনে হচ্ছে আমি আগের জন্মে এই বাংলার মাটিতে জন্মেছিলাম। না হয় পরের জন্মে আমি এই বাংলারই কোনো মায়ের কোলে জন্ম নেব।’...

পলাশী, প্রাচুর্য ও প্রহেলিকা

প্রকাশ: ২৩ জুন ২০২৫, ০৮:২২ পিএম
পলাশী, প্রাচুর্য ও প্রহেলিকা
সৈকত ইসলাম

নবাবি আমলে বাংলা সম্পদশালী হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ ছিল এখানে কৃষি ও শিল্পজাত দ্রব্যের উচ্চমান ও কম মূল্য, যা বাংলার বাইরে এসব জিনিসের প্রচণ্ড চাহিদা তৈরি করে। এ স্বল্পমূল্য কোনো প্রাচুর্যতার লক্ষণ নয়। যে ইবনে বতুতা এ দেশের প্রাচুর্যতার বর্ণনা করেছেন, তিনি তার জবানিতেই বলেছেন- ‘এ অঞ্চলের প্রজারা ফসলের প্রায় ৫০ ভাগ খাজনা দেয়, এর বাইরেও আছে অন্য কর।...

আজ পলাশী দিবস। ১৭৫৭ সালের ২৩ জুন সিরাজউদদৌলা ইংরেজদের কাছে পরাজিত হন। উপমহাদেশে ইংরেজ শাসনের সূচনাকাল বলা যায় এ তারিখকে। বলা হয়ে থাকে, এক সুখী-সমৃদ্ধশালী অঞ্চল দারিদ্র্য আর পরাধীনতার গহ্বরে প্রবেশ করে এ পরাজয়ের মাধ্যমে, যার স্থায়িত্ব ছিল পরবর্তী ১৯০ বছর।

বাংলাকে  সুখী ও সমৃদ্ধশালী অঞ্চল হিসেবে অভিহিত করার ইতিহাস অনেক পুরোনো। মৌর্যযুগ থেকে শুরু করে মোগল আমলের প্রায় ১৮০০ বছরের যে বর্ণনা তাতে এ অঞ্চলকে দেখানো হয়েছে অতিশয় প্রাচুর্যপূর্ণ ও সম্পদশালী হিসেবে। এখানে আরব পর্যটক ইবনে বতুতার বর্ণনা উল্লেখযোগ্য। ভ্রমণকাহিনিতে ইবনে বতুতা বলেন, ভারতবর্ষ এক বিশাল দেশ। আশ্চর্যের বিষয় হলো এর অধিকাংশই অত্যন্ত উর্বর। তার মধ্যে বাংলা হলো অন্যতম। এত উর্বর দেশ পৃথিবীতে খুব কমই দেখা যায়। বাংলার সম্পদ ও ঐশর্য অতুলনীয়। 

স্বর্গরাজ্য হিসেবে প্রাচীন বাংলার যে ছবি আঁকা হয়েছে। তার শিল্পী বিদেশি বণিক বা বণিকবেশে আসা পর্যটকরা। বিদেশি পর্যটকরা ছবি এঁকেছেন সেই সব মানুষের আর তাদের অর্থনীতির, যাদের সঙ্গে তারা মিশেছেন। এ অঞ্চলে আসা এই বিদেশি বণিক আর পর্যটকরা সাধারণ মানুষের কাছে যাননি। তাদের সঙ্গী ছিলেন এ দেশে তাদের ব্যবসায়ী সহযোগী, জমিদার বা উচ্চশ্রেণির আমলা। তারা ছিলেন দেশের অন্যতম সম্পদশালী। এই বণিক আর পর্যটকদের চোখে বাংলা ছিল তাই স্বর্গের মতোই সীমাহীন সম্পদের খনি। 

এই আকর্ষণীয় বর্ণনার বাইরে কেউ কেউ জনজীবনের অবস্থা বিশ্লেষণ করেছেন। দেখিয়েছেন প্রদীপের তলার অন্ধকারকে। তেমনই একজন ফ্রাঁশোয়া বার্নিয়ের। বার্নিয়ের বলেছিলেন- এই দেশ সোনা ও রুপায় ভরপুর। সোনা-রুপা পৃথিবীর অন্য স্থান ঘুরে এসে ভারতবর্ষে পৌঁছায় এবং এর গুপ্ত গহ্বরে হারিয়ে যায়। 

অথচ এত সোনা-রুপা থাকার পরও এ দেশের অধিকাংশ মানুষ দরিদ্র। এমনকি আমির-ওমরাহদের অনেকেই ভিতরে ভিতরে শোচনীয় অবস্থায় থাকেন। এর একটা কারণ হলো এ সোনা-রুপার বড় অংশ গলিয়ে নষ্ট করে ফেলা হয়। অর্থাৎ গলিয়ে অলংকার প্রস্তুত করা, যা হাত, পা, মাথা, নাক, কান, গলা সর্বত্র অলংকৃত করার মাধ্যমে সোনার অপচয় হয়। 

এক ফরাসির মুখে এ দেশের মানুষের অর্ধাহারে-অনাহারেও থেকেও সোনার অলংকার পরার প্রতি আসক্তি যদি অতিরঞ্জন মনে হয় তবে ফরাসিদের জাতশত্রু এক ইংরেজ রালফ ফিচ তার এ অঞ্চল  ভ্রমণের বর্ণনায় উল্লেখ করেছিলেন- ‘এ দেশের মেয়েরা অসংখ্য হাতির দাঁতের তৈরি চুড়ি পরে আর তাতে তারা এত আনন্দ পায় যে, মনে হয় তাদের আর ভালো খাবারের প্রয়োজন নেই’।  

রালফ ফিচ ছিলেন ভারতবর্ষ ভ্রমণকারী প্রথম ইংরেজ। তার ভ্রমণ বর্ণনার উদ্দেশ্য ছিল এ দেশে ইংরেজ বণিকদের ব্যবসা করার জন্য পরিবেশ সম্পর্কে তথ্য প্রদান। বিখ্যাত বা কুখ্যাত ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গঠনের সময় রালফ ফিচের ভ্রমণবৃত্তান্ত বেশ গুরুত্বের সঙ্গে নেওয়া হয় এবং তিনি ছিলেন ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি গঠনের একজন উপদেষ্টা। বার্নিয়ের তার ভ্রমণ বিবরণ ফ্রান্সের তৎকালীন অর্থমন্ত্রীকে পাঠিয়েছিলেন। 

তার উদ্দেশ্য ছিল এ দেশের বাস্তব পরিস্থিতি সম্পর্কে জানানো। তাই তাদের বর্ণনায় নিছক প্রাচুর্য আর সম্পদের বাইরে সাধারণ মানুষের অবস্থাও যেমন উঠে এসেছে, তেমনি সম্পদাশালী এ অঞ্চলের সম্পদ যে ছিল অসাম্যের প্রতীক, সেটারও ধারণা পাওয়া যায়।  যা সাধারণ জনগণের জীবনযাত্রার মান উন্নত ছিল, এমন ধারণার সমর্থনের বিপরীত প্রমাণ দেয়। 

পলাশীর যুদ্ধের ৭০ বছর আগে বার্নিয়ের লিখেছেন, দিল্লির মতো শহরের প্রতি ১০ জনের সাত/আটজন অতি দরিদ্র ও জীর্ণ। প্যারিসের ঠিক বিপরীত যেখানে ৭-৮ জনই অবস্থাসম্পন্ন। পরবর্তীতে অনেক গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলা অঞ্চলে ব্রিটিশরা আসার আগেই পশ্চিম ইউরোপের তুলনায় গরিব ছিল। 

ইউরোপীয় কর্তৃক এ অঞ্চলের লুটপাটের শুরু হয়েছিল রাজা ও ধনী ব্যক্তিদের লুকানো সম্পদ দিয়ে। সাধারণ মানুষের কাছ থেকে লুটপাট করার মতো তেমন কিছু ছিল না। এ দেশে সম্পদ ছিল সত্যি, প্রাচুর্যতাও ছিল। কিন্তু স্বর্গরাজ্য ছিল না। কারণ ছিল তীব্র অসাম্য। 

নবাবি আমলে বাংলা সম্পদশালী হওয়ার পেছনে অন্যতম কারণ ছিল এখানে কৃষি ও শিল্পজাত দ্রব্যের উচ্চমান ও কমমূল্য, যা বাংলার বাইরে এসব জিনিসের প্রচণ্ড চাহিদা তৈরি করে। এ স্বল্পমূল্য কোনো প্রাচুর্যতার লক্ষণ নয়। যে ইবনে বতুতা এ দেশের প্রাচুর্যতার বর্ণনা করেছেন, তিনি তার জবানিতেই বলেছেন- ‘এ অঞ্চলের প্রজারা ফসলের প্রায় ৫০ ভাগ খাজনা দেয়, এর বাইরেও আছে অন্য কর। এই কর এ অঞ্চলের কল্যাণে সেভাবে ব্যবহার হয় না বরং রাজাদের নজরানা দিতেই চলে যায়। ফলে উচ্চহারের কর এ অঞ্চলের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা কমিয়ে দিয়েছে’। 
  
নবাব শায়েস্তা খানের সময় টাকায় আট মণ চাল পাওয়া যেত, এ কথার ঐতিহাসিক সত্যতা আছে, তবে চালের এ মূল্যমান নিয়েও অনেক কথা আছে। পরবর্তীতে গবেষণায় দেখা গেছে, সে সময় মওসুম অনুসারে চালের মূল্য ছিল টাকায় তিন থেকে চার মণ, এ হিসেবে সাপ্তাহিকভাবে যাদের গড় আয় ছিল এক টাকা, তারা মূলত মোটামুটিভাবে শুধু পারিবারিক প্রয়োজন মেটাতে পারত, কিন্তু সেই সময়ে কতজন সপ্তাহে এক টাকা আয় করতে পারত সে হিসাব করলে সংখ্যাটি অনেক কম হয়। তাই বলা যায়, সে সময়ের ভারতবর্ষের সম্পদশালী অঞ্চল বাংলায় সম্পদের মতো বৈষম্যও ছিল বিপুল ও ব্যাপক। বরং এ অঞ্চলে ব্যাপক অসমতা না থাকাটাই হতো ব্যতিক্রম।  

রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যর্থতা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। যে রাজনৈতিক ব্যবস্থা সম্পদশালীদের গুরুত্ব দিয়ে তাদের স্বার্থে আইন ও নীতি প্রণয়ন করে তা সমাজের অপর সদস্যদের স্বার্থের মূল্যে পুনরায় সম্পদশালীদের আরও ধনসম্পদ অর্জনে সহয়তা করে। এবং এ সম্পদশালীরা যদি হয় অদক্ষ প্রকৃতির তাহলে সেই সম্পদ আসলে শেষপর্যন্ত কারোরই কাজে লাগে না। তৎকালীন এ অঞ্চল ছিল এরই প্রতিচ্ছবি। তাই ক্লাইভের সামনে সিরাজউদদৌলার সম্পদ লুঠের সামগ্রী হওয়া ছাড়া কোনো কাজে আসেনি।

লেখক: প্রাবন্ধিক

জ্বালানি খাতে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও সুশাসনের অভাব

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৫, ০১:৫৮ পিএম
জ্বালানি খাতে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও সুশাসনের অভাব
ড. এম শামসুল আলম

জ্বালানি-নিরাপত্তা খাদ্যনিরাপত্তা থেকে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়। জ্বালানি-নিরাপত্তা না থাকলে খাদ্যনিরাপত্তাও থাকবে না। জ্বালানি-নিরাপত্তা সংরক্ষণের লক্ষ্যে কত উপায়ে সহনীয় ও সাশ্রয়ী মূল্যে জনগণের কাছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা যায়, সে চেষ্টায় বিশ্বের নানা দেশের সরকার গলদঘর্ম। জ্বালানি-নিরাপত্তা অনিশ্চিত হবে। অর্থনীতি আরও বেশি কঠিন চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হবে।…

বাংলাদেশে কোনো পণ্যের মূল্যের ওপর বাজার কিংবা সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, কোনো পণ্যের আমদানি বা বিক্রি সবকিছু বেসরকারি খাতে ছেড়ে দিতে হলে বাজারে পূর্ণ প্রতিযোগিতা থাকতে হয়। নাহলে সরকারকেই বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে হয়। বাংলাদেশের বাজারে প্রতিযোগিতা নেই। ভোজ্যতেল, আটা, চাল, ডিম ও চিনি- এসব নিত্যপণ্যের দাম ব্যবসায়ীরা যখন ইচ্ছা তখন বাড়ায়, সেটা থেকেই বোঝা যায় যে বাজারে কোনো প্রতিযোগিতা নেই। এসব পণ্য সরবরাহ গুটিকয়েক ব্যবসায়ীর নিয়ন্ত্রণে। 

জ্বালানি বাজার বিদ্যমান আইন অনুযায়ী রেগুলেটেড বা নিয়ন্ত্রিত। আইনের আওতায় প্রতিষ্ঠিত নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। তবুও জ্বালানি খাত নিয়ন্ত্রণে নেই। অন্যায়, অযৌক্তিক ও লুণ্ঠনমূলক ব্যয় ও মুনাফা বৃদ্ধি তথা অসাধু ব্যবসা প্রতিরোধ করা যায়নি। বেসরকারি কোম্পানিগুলোকেও নিয়ন্ত্রণে আনা যায়নি। বরং সরকার নানা পলিসি ও আইন তৈরির মাধ্যমে তাদের স্বার্থ সুরক্ষা করে যাচ্ছে বছরের পর বছর। বাংলাদেশে এলপিজি আমদানি হয় বেসরকারি খাতে।

সরকারি খাতে উৎপাদিত যৎসামান্য এলপিজি সরকারি মালিকানাধীন কোম্পানি এলপিজিসিএল বাজারজাত করে। সে এলপিজি খোলা বাজারে আসে না। আমদানি করা এলপিজির মূল্য অপেক্ষা প্রায় অর্ধেক মূল্যে এ এলপিজি সমাজের এক শ্রেণির সুবিধাভোগী গ্রাহক পায়। ক্যাবের পক্ষ থেকে সাশ্রয়ী মূল্যের এ এলপিজি বস্তিবাসীকে এবং ক্ষুদ্র হোটেল ও রেস্তোরাঁগুলোয় সরবরাহ করার দাবি করা হয়। কিন্তু সে দাবি জ্বালানি বিভাগ আমলে নেয়নি। বরং নানা পলিসি প্রণয়ন করে এলপিজির বাজারে অলিগোপলি প্রতিষ্ঠিত করে।

 সরকারি এলপিজি সাশ্রয়ী দামে না দিয়ে একদিকে সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করছে, অন্যদিকে কিছু এলপিজি ব্যবসায়ীকে বাজার নিয়ন্ত্রণ করে বেশি লাভ করার সুযোগ দিচ্ছে। এতে জ্বালানি বিভাগ সাধারণ মানুষকে ন্যায্য দামে এলপিজি পাওয়ার অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে এবং তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। অবশেষে হাইকোর্টের বাধ্যতামূলক আদেশে বিইআরসি এলপিজির মূল্যহার প্রতি মাসেই পুনর্নির্ধারণের আদেশ দেয়। সে আদেশ না মানা বিইআরসি আইন মতে দণ্ডনীয় অপরাধ। অথচ এলপিজি ব্যবসায়ীরা সে আদেশ মতে নির্ধারিত মূল্যহার অপেক্ষা অধিক মূল্যহারে এলপিজি বিক্রি করে লুণ্ঠনমূলক মুনাফা করে বলে অভিযোগ রয়েছে। অথচ এ অভিযোগ নিষ্পত্তিতে বিইআরসি নিষ্ক্রিয়। জ্বালানি তেল আমদানিতে তিনটি পর্যায়ে ব্যবসা হয়- (ক) আমদানি, (খ) মজুত ও (গ) বিতরণ। এ তিনটি ব্যবসার জন্য পৃথক পৃথক তিনটি লাইসেন্সের বিধান রয়েছে। বিইআরসি আইন অনুযায়ী, এ তিনটি ব্যবসা তিন আলাদা আলাদা প্রবিধান দ্বারা বিইআরসির আওতাধীনে নিয়ন্ত্রিত ও পরিচালিত হওয়ার কথা। কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো, আইন লঙ্ঘন করে বিইআরসির পরিবর্তে জ্বালানি বিভাগ নিজেই তিনটি পর্যায়েরই ব্যয়হার গণশুনানি ছাড়াই জ্বালানির মূল্যহার নির্ধারণ করে। এ অবৈধ উপায়ে নির্ধারিত মূল্যহারে লুণ্ঠনমূলক ব্যয় ও মুনাফা সম্পৃক্ত থাকে।

বিশ্বের বহু দেশেই বেসরকারি খাত জ্বালানি সরবরাহ করে। সেসব দেশে শক্তিশালী নিয়ন্ত্রক সংস্থা আছে, আছে আইনের কঠোর প্রয়োগ। আবার বাজারে প্রতিযোগিতাও আছে। বাংলাদেশে এর কোনোটিই নেই। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় যেখানে সামান্য ভোজ্যতেলের দামই নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে না, সেখানে জ্বালানি পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে থাকবে, তা কোনোভাবেই ভাবা যায় না।

 আইনের কার্যকারিতা অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায় না। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নেই। বেসরকারি খাতের অবস্থা আরও নাজুক। কী দরে পণ্য আমদানি হয়, আর কী দরে বিক্রি হয়, তার হিসাব কে রাখে? এলপিজি ব্যবসায় কী চলছে? বিইআরসি যে দাম নির্ধারণ করে দেয়, বাজারে সে দামে এলপিজি বিক্রি হয় না। জ্বালানি তেল ও গ্যাস আমদানি বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হলে এ অবস্থাই হবে। তাতে ভোক্তার কী অবস্থা হবে! শুধু ভোক্তা কেন, শিল্পোদ্যোক্তাদেরই-বা কী অবস্থা হবে! উৎপাদন খাতে জ্বালানি নিরাপত্তা কতটা ঝুঁকিতে পড়বে? নিশ্চিতভাবেই বলা যায়, এসব কোনো কিছুই না ভেবে জ্বালানি আমদানি বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার কথা তোতাপাখির শেখানো কথার মতো করে বলা হচ্ছে। 

ব্যক্তি খাতে ছেড়ে দেওয়ায় এখন বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় মাত্রাতিরিক্ত হারে বাড়ছে। ভোক্তাও বাড়তি দামে বিদ্যুৎ কিনছে। বিদ্যুৎ সঞ্চালনও বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার পর্যায়ে। তাতে বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যয় বাড়বে। গ্যাস সরবরাহ কমলেও সঞ্চালন ক্ষমতা ও ব্যয় বাড়ছে। বিদ্যুৎ আমদানি বাড়ছে। ফলে ব্যয় বাড়ায় মূল্যহার ও ভর্তুকি বাড়ছে। গ্যাস আমদানি বৃদ্ধিতে গ্যাসে ভর্তুকি ও মূল্যহার বাড়ছে। আবার জ্বালানি আমদানি বেসরকারি খাতে হবে। তাতেও জ্বালানি সরবরাহ ব্যয় বৃদ্ধিতে জ্বালানি মূল্যহার আরও বাড়বে। সর্বোপরি লুণ্ঠনমূলক মুনাফা স্ফীত হবে। জনগণ ও রাষ্ট্রের ক্ষত বাড়বে। চাহিদার তুলনায় এলপিজি সরবরাহ ক্ষমতা প্রায় আড়াই গুণ। 

কাজ লাগে কম-বেশি ৪০ শতাংশ। বাদবাকি ৬০ শতাংশই কাজে লাগে না। তাতে সরবরাহ ব্যয় বাড়ে। এ ব্যয়বৃদ্ধি ব্যবসায়ীর মুনাফা বাড়ায় এবং ভোক্তাকে ন্যায্য ও সঠিক মূল্য অপেক্ষা অধিক মূল্যে এলপিজি কিনতে হয়। শুধু তাই নয়, আশ্চর্যের বিষয় হলো, ২০২১ সালে গণশুনানিতে উপস্থাপিত তথ্যাদিতে জানা যায়, এলপিজি আমদানিতে জাহাজ ভাড়া বাবদ টনপ্রতি ব্যয় ভারতে কম-বেশি ২০ ডলার। বাংলাদেশে কম-বেশি ১১২ ডলার। এমন অসংগতির কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।

ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগকৃত মূলধনের ওপর ১৮ শতাংশ এবং মোটের ওপর আরও ১৮ শতাংশ হিসেবে মুনাফা চায়। বিইআরসির মানদণ্ডে তা ৪.১৮-৪.৫৮ শতাংশ। এ দৃষ্টান্ত থেকে বোঝা যায়, তেল-গ্যাস আমদানি বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হলে মূল্যবৃদ্ধির অভিঘাতে ভোক্তারা কী পরিণতির শিকার হবে। এ কথা সত্য, বিপিসিতে প্রচুর অনিয়ম ও দুর্নীতি হয়। সেখানে প্রশাসনিক অস্বচ্ছতা এবং সুশাসনের বড় অভাব। জবাবদিহি নেই। তাদের অন্যায়, দুর্নীতি ও লুণ্ঠনমূলক কর্মকাণ্ডে জ্বালানি বিভাগের প্রশ্রয় রয়েছে। আমরা এসবের প্রতিকার ও প্রতিরোধ চাই। অথচ বিপিসির দুর্নীতি বন্ধ না করে, তার সার্বিক সক্ষমতা উন্নয়নে দৃষ্টি না দিয়ে বেসরকারি খাতকে জ্বালানি আমদানি করার ক্ষমতা প্রদান দেশের স্বার্থ বিনষ্টের শামিল। সরকার জনসাধারণের স্বার্থ সুরক্ষার দায় 
নিতে অনাগ্রহী। সরকারে এমন অবস্থা রাষ্ট্রের দর্শনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।


ব্যক্তি খাত বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত ফার্নেসওয়েল আমদানি যখন বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হয়, তখন পিডিবির বিদ্যুৎ উৎপাদনে বিপিসি কর্তৃক সরবরাহকৃত ফার্নেসওয়েলে কোনো দোষ-ত্রুটি পিডিবি পায়নি। অথচ এমন অজুহাতে বেসরকারি খাতকে ফার্নেসওয়েল আমদানির সুযোগ দেওয়া হয়। ২০২২ সালে গণশুনানিতে বলা হয়, বিপিসির কাছ থেকে পিডিবি প্রতি টন ফার্নেসওয়েল কেনে ৭৪ ডলার মূল্যে। অথচ বেসরকারি খাতকে দিতে হয় ৯২ ডলার। তাতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ব্যয় বাড়ে বছরে কম-বেশি ৮ হাজার কোটি টাকা। বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যবহৃত ফার্নেসওয়েলের প্রায় ৯০ শতাংশই আমদানি হয় বেসরকারি খাতে। জ্বালানি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন বেশি বৃদ্ধি হয় কেন- এ প্রশ্নের উত্তর ওই ৮ হাজার কোটি টাকা বাড়তি ব্যয়েই নিহিত এবং তেল ও গ্যাস আমদানি বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়ার কারণও এখানেই নিহিত।
জ্বালানি-নিরাপত্তা খাদ্যনিরাপত্তা থেকে কম গুরুত্বপূর্ণ নয়।

 জ্বালানি-নিরাপত্তা না থাকলে খাদ্যনিরাপত্তাও থাকবে না। জ্বালানি-নিরাপত্তা সংরক্ষণের লক্ষ্যে কত উপায়ে সহনীয় ও সাশ্রয়ী মূল্যে জনগণের কাছে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরaবরাহ নিশ্চিত করা যায়, সে চেষ্টায় বিশ্বের নানা দেশের সরকার গলদঘর্ম। অথচ বিগত সরকার এ খাতকে বেসরকারি খাতের হাতে তুলে দিয়ে নিজে দায়মুক্ত হতে চেয়েছিল। খাদ্য ব্যবসায়ীরা লুণ্ঠনমূলক মুনাফা লাভের সুযোগ পায়। জ্বালানি আমদানি বেসরকারি খাতে ছেড়ে দেওয়া হলে জ্বালানি ব্যবসায়ীরাও লুণ্ঠনমূলক মুনাফা লাভের সুযোগ পাবে। জ্বালানি নিরাপত্তা অনিশ্চিত হবে। অর্থনীতি আরও বেশি কঠিন চ্যালেঞ্জের 
সম্মুখীন হবে।

লেখক: জ্বালানি বিশেষজ্ঞ

আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার চেষ্টা হবে বড় ভুল

প্রকাশ: ২২ জুন ২০২৫, ০১:৩৪ পিএম
আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার চেষ্টা হবে বড় ভুল

কিছু মানুষ যুদ্ধের নেশায় একেবারেই আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। অপ্রতিরোধ্য সামরিক শক্তি এবং অস্থায়ী জয়ের নেশায় অন্ধ হয়ে যায়। যদি সেই যুদ্ধে তারা জয়ী না হয়, তাহলে তাদের প্রতি এমন ঘৃণা তৈরি হয়, যা দশক বা শতাব্দীজুড়ে টিকে থাকতে পারে। নিঃসন্দেহে বলা যায়, ইসরায়েলের উচ্চতর গোয়েন্দা ক্ষমতা এবং অপ্রতিরোধ্য ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা রয়েছে, যা তাদের ইরানের গভীরে প্রবেশ করে ধ্বংস করে দিতে পারে। তার নেতৃত্বের আস্তানায় পৌঁছাতে পারে, যেমনটি লেবানন ও গাজায় তারা করেছে। কিন্তু ইরানের সর্বোচ্চ নেতাকে হিজবুল্লাহর মহাসচিব হাসান নাসরুল্লাহর সঙ্গে তুলনা করা যাবে না, যিনি গত বছর নিহত হন। তাদের প্রতীকী ওজনের পার্থক্য অনেক। ভুল হিসাবের পরিণতি হবে অনেক ভয়াবহ।... 


গত সপ্তাহে সবার মধ্যে এই ধারণাটি জেগে উঠেছিল, ইসরায়েল ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে হত্যার চেষ্টা করতে পারে। ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে ভয়াবহ যুদ্ধের আরেকটি সহজ সামরিক লক্ষ্য হতে পারে এটি। এর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রও থাকতে পারে জড়িত। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট করে দিয়েছেন, তিনি ইসরায়েলের পদক্ষেপের বিরোধিতা করছেন এবং এটিকে সমর্থন করেন না।

এই বিষয়টি অন্য কোনো সামরিক লক্ষ্যের চেয়ে অনেক বেশি গুরুতর। এটি আদর্শের অন্যতম বিষয় হয়ে উঠতে পারে। প্রতিশোধের জন্য এটি গভীর এবং বিপজ্জনক চক্রের সূত্রপাত করতে পারে। ইতিহাসে এমন সময়ও ছিল, যখন যুদ্ধরত পক্ষগুলো সামরিক হামলার মাধ্যমে কোনো বড় নেতা এবং প্রতীকী ব্যক্তিত্বদের লক্ষ্যবস্তু করা থেকে বিরত ছিল। 

উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, জাপানের সম্রাট হিরোহিতো ছিলেন একজন শাসক এবং একজন পবিত্র প্রতীক। নথিপত্র নিশ্চিত করে জানা যায়, তিনি তার সামরিক নেতাদের যুদ্ধে যাওয়ার, মাঞ্চুরিয়া আক্রমণ করা এবং পার্ল হারবার আক্রমণ করার অনুমতি দিয়েছিলেন। যার ফলে আমেরিকা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু যুদ্ধের সময় এবং জেনারেল ডগলাস ম্যাকআর্থারের নির্দেশে, মার্কিন সরকার তাকে লক্ষ্যবস্তু না করার সিদ্ধান্ত নেয়। মিত্রশক্তির বিজয় এবং টোকিও দখলের পর অভিযুক্ত জাপানি নেতাদের তালিকা থেকেও তাকে বাদ দেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্ত যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপানের মধ্যে পুনর্মিলনের পথ প্রসারিত হয়। জাপানি জনগণকে আমেরিকানদের গ্রহণ করতে সাহায্য করে। হিরোহিতো তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সম্রাট সম্মানের সঙ্গে রাজত্ব করেছেন। তিনি আরও ৪৫ বছর বেঁচে ছিলেন।

আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি একজন আধ্যাত্মিক নেতা। তাঁর ওপর যে কোনো ধরনের ক্ষতি হলে এমন ক্ষত হবে যা কখনো নিরাময় হবে না। যুদ্ধক্ষেত্রে ইসরায়েল বা আমেরিকান বিজয় যতই নির্ণায়ক হোক না কেন এর বেগ পেতে অনেক কঠিন হবে। 

সর্বোচ্চ নেতা একজন আজীবন কর্তৃত্বশীল ব্যক্তি, শুধু রাষ্ট্রপতি নন। তিনি বিশ্বব্যাপী শান্তি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকেন। আয়াতুল্লাহ খোমেনি ১৯৮৮ সালে একতরফাভাবে ইরাকের সঙ্গে যুদ্ধের সমাপ্তি ঘোষণা করেছিলেন। সেই যুদ্ধ এমন ছিল, যা আমরা ভেবেছিলাম কেবল একটি বা উভয় দেশের সম্পূর্ণ ধ্বংসের মাধ্যমেই তা শেষ হবে। আমরা মনে করি, সেই সময়ে ইরান শাসনব্যবস্থার কেউই ইরাকের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাতে সাহস করেনি। একমাত্র এই সাহসী নেতার দ্বারাই তা সম্ভব হয়েছিল। 

কিছু মানুষ যুদ্ধের নেশায় একেবারেই আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। অপ্রতিরোধ্য সামরিক শক্তি এবং অস্থায়ী জয়ের নেশায় অন্ধ হয়ে যায়। যদি সেই যুদ্ধে তারা জয়ী না হয়, তাহলে তাদের প্রতি এমন ঘৃণা তৈরি হয়, যা দশক বা শতাব্দীজুড়ে টিকে থাকতে পারে। নিঃসন্দেহে বলা যায়, ইসরায়েলের উচ্চতর গোয়েন্দা ক্ষমতা এবং অপ্রতিরোধ্য ধ্বংসাত্মক ক্ষমতা রয়েছে, যা তাদের ইরানের গভীরে প্রবেশ করে ধ্বংস করে দিতে পারে। তার নেতৃত্বের আস্তানায় পৌঁছাতে পারে যেমনটি লেবানন ও গাজায় তারা করেছে। কিন্তু ইরানের সর্বোচ্চ নেতাকে হিজবুল্লাহর মহাসচিব হাসান নাসরুল্লাহর সঙ্গে তুলনা করা যাবে না, যিনি গত বছর নিহত হন। তাদের প্রতীকী ওজনের পার্থক্য অনেক। ভুল হিসাবের পরিণতি হবে অনেক ভয়াবহ। 

এদের তুলনা করা কখনোই সঠিক হবে না। ২০০৬ সালে ঈদুল আজহায় সাদ্দাম হোসেনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছিল। যদিও তিনি একজন বামপন্থি ছিলেন এবং ধর্মীয় বা উপজাতি নেতা ছিলেন না। তার মৃত্যুর জন্য চরম মূল্য দিতে হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের জেনারেলরা পরে সুন্নি শক্তির সঙ্গে পুনর্মিলনের চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু ব্যর্থ হন। ওয়াশিংটন এখনো সেই ঘটনার পরিণতি ভোগ করে যাচ্ছে, বিশেষ করে অর্ধেক ইরাকি জনগণের সঙ্গে এখনো সংগ্রাম করে যাচ্ছে। সেই গুরুতর ভুল এড়ানো যেত এবং তাদের সামরিক বিজয়ের পর এর ফলে সৃষ্ট বিভেদ সেরে যেত।

ইসরায়েল ১৯৬৭ সালে এবং গত বছর যেমনটি অর্জন করেছিল, তেমনই অসাধারণ সামরিক বিজয় অর্জন করতে সক্ষম। কিন্তু এর অর্থ এই নয় যে, তারা বৃহত্তর যুদ্ধে জয়লাভ করবে। আমরা সত্যিই ইতিহাসের নতুন এবং গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের দ্বারপ্রান্তে আছি, যা গত অর্ধ শতাব্দী ধরে আমরা যা জেনেছি এবং যাপন করেছি তা পুনর্নির্মাণ করবে। এখন যা প্রয়োজন তা হলো সর্বোচ্চ সীমায় না পৌঁছে বলপ্রয়োগের হুমকি। যতটা সম্ভব ঐকমত্যের মাধ্যমে পরিবর্তন আনা দরকার। এতে ইসরায়েল, যুক্তরাষ্ট্র, ইরান এবং এই অঞ্চলের সব জাতি সবারই কল্যাণ হবে। বিজয়ী এবং পরাজিত উভয় পক্ষই উত্তেজনা হ্রাস করা দরকার এবং সম্মিলিতভাবে সবার শান্তি কামনা করা উচিত। 

লেখক: সাবেক প্রধান সম্পাদক, আশার্ক আল-আওসাত। আরব নিউজ থেকে সংক্ষেপিত অনুবাদ: সানজিদ সকাল 



প্লাস্টিকের বাঁধনছাড়া ব্যবহার

প্রকাশ: ২১ জুন ২০২৫, ০৭:১১ পিএম
প্লাস্টিকের বাঁধনছাড়া ব্যবহার

ঢাকার রাস্তাঘাটে চলতে গিয়ে অভিজ্ঞতায় মনে হচ্ছে বুঝি প্লাস্টিক ব্যবহারের ওপর সরকারি নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়েছে। যত্রতত্র প্লাস্টিকের বাঁধনছাড়া ব্যবহার, পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের স্তূপাকারে জমে থাকা চলার পথে, মাঠে-ময়দানে, উৎসব-মেলাপ্রাঙ্গণে, কবরস্থানে, চিকিৎসালয়ে...! বীভৎস অবস্থা, জমে থাকা পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের সৌজন্যে নালা-নর্দমার পানি চলার পথেই প্রবাহিত। দূষণে জর্জরিত গোটা পরিবেশ! বাড়তি পাওনা হিসেবে নির্বিচারে গাছ কেটে ফেলা, বহুতল নির্মাণের জন্য পুকুর ভরাট করা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের দাপটে সবুজের অপমৃত্যু! প্রসঙ্গক্রমে বলতে হয়, ঢাকাসহ বহু শহর এখন প্রশাসনিক শিথিলতায় দূষণনগরী হিসেবে চিহ্নিত।

 আবার সেখানে লোকালয়ের অনতিদূরে কলকারখানা থেকে নির্গত অনর্গল বিষাক্ত ধোঁয়ায় বিপর্যস্ত! প্রশাসন উঁকি দিয়ে সবকিছু দেখেও হিরন্ময় নীরবতায় আচ্ছন্ন। ঘোষিত শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ তো দূরের কথা, সব রকমের পর্যবেক্ষণ এবং কঠোরতা অদ্ভুত এক উদাসীনতায় আক্রান্ত। দায়ী তামাম জনতাও, তাৎক্ষণিক সুবিধা পাওয়ার জন্য একেবারে গদগদভাবে প্লাস্টিক ব্যাগ ভরে বাজার করে গতানুগতিকতার স্রোতে গা ভাসিয়ে চলেছে। আসলে দায়বদ্ধতার শ্বেতশুভ্র ক্যানভাসে স্বেচ্ছাচারিতা এবং ঔদ্ধত্যের আঁচড় ক্রমশ স্পষ্ট থেকে স্পষ্টতর হচ্ছে। কিশোর কবির সেই মানবিক বহিঃপ্রকাশ ‘এ বিশ্বকে এ শিশুর বাসযোগ্য করে যাব আমি, নবজাতকের কাছে এ আমার দৃঢ় অঙ্গীকার!’ কবিতার পাতায় মুচকি হেসেই চলেছে। বলি, মানুষ আর কতকাল স্বার্থপর হয়ে থাকবে। 
লিয়াকত হোসেন খোকন 
রূপনগর, ঢাকা
[email protected]