অবৈধ বিদেশি ঠেকাতে কঠিন হচ্ছে ভিসানীতি । খবরের কাগজ
ঢাকা ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, বুধবার, ১৫ মে ২০২৪

অবৈধ বিদেশি ঠেকাতে কঠিন হচ্ছে ভিসানীতি

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:০৩ এএম
অবৈধ বিদেশি ঠেকাতে কঠিন হচ্ছে ভিসানীতি
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

দেশে চার থেকে পাঁচ লাখ বিদেশি অবৈধভাবে অবস্থান করছেন। তারা আইনের নানা ফাঁকফোকর গলে টাকা রোজগার করছেন। কিন্তু কর দিচ্ছেন না। সম্প্রতি এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে এবং নতুন করে যাতে কোনো বিদেশি অবৈধভাবে অবস্থান করতে না পারেন, তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে ভিসানীতি কঠোর করার পরিকল্পনা করছে সরকার।

সম্প্রতি এ-সংক্রান্ত একটি বৈঠক হয় বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) অফিসে। সেই বৈঠকে পররাষ্ট্রসচিব মাসুদ বিন মোমেনও অংশগ্রহণ করেন। ওই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া জানান, দেশে চার থেকে পাঁচ লাখ অবৈধ বিদেশি আছেন। যদিও অবৈধ বিদেশি খেদাও আন্দোলন বলছে, বর্তমানে ১০ লাখ বিদেশি নাগরিক অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছেন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের একটি সূত্র জানায়, অবৈধভাবে অবস্থানকারী বিদেশিদের রাখার মতো কোনো ডিটেনশন সেন্টার বা আটক কেন্দ্র নেই। তাদের কারাগারে রাখতে হলে মামলা করতে হয়। সেটা সময় ও ব্যয়সাপেক্ষ ব্যাপার।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বিষয়টি নিয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক, এনবিআর, বিডা, বেপজা, বেজা, হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ ও এনজিওবিষয়ক ব্যুরো কাজ শুরু করেছে। অবৈধ নাগরিকদের দৈনিক ভিত্তিতে জরিমানা আরোপের পাশাপাশি তাদের যারা চাকরি দেবেন বা বাসা ভাড়া দেবেন তাদেরও শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র সে‌হেলী সাবরীন এ প্রসঙ্গে জানান, সম্প্রতি বিডায় মুখ্য সচিবের সভাপতিত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। পররাষ্ট্রসচিবও সেখানে অংশ নেন। সভায় অন্যান্য দেশের অবৈধ নাগরিকদের ভিসা এক্সপায়ার, এক ভিসায় এসে অন্য ক্যাটাগরিতে অবস্থান ইত্যাদি বিষয়ে বাংলাদেশের বিদ্যমান আইন অনুযায়ী অবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

বিডার ওই বৈঠকের পর এ-সংক্রান্ত অগ্রগতি জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, অবৈধ বিদেশিদের ব্যাপারে বিডার বৈঠকে কিছু সিদ্ধান্ত এসেছে। সেগুলো নিয়ে সংশ্লিষ্টরা কাজ করছেন। ভিসা পলিসি নিয়েও কাজ করা হচ্ছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, বর্তমানে ১৬৯টি দেশের নাগরিক বাংলাদেশে অবৈধভাবে বসবাস করছেন। এদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডার মতো দেশের নাগরিকরাও আছেন। এ ছাড়া প্রতিবেশী ভারত, চীন, মায়ানমার ও থাইল্যান্ডের নাগরিকরাও অবৈধভাবে বসবাস করছেন।

অভিবাসন খাতের বেসরকারি গবেষণা সংস্থা ‘রিফিউজি অ্যান্ড মাইগ্রেটরি মুভমেন্ট রিসার্চ ইউনিট’ (রামরু)-এর নির্বাহী পরিচালক সি আর আবরার খবরের কাগজকে বলেন, অবৈধভাবে অবস্থানকারী বিদেশি নাগরিকদের বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে ব্যবস্থা নিতে হবে। বৈধভাবে অবস্থানকারীরা সঠিক ভিসায় অবস্থান করছেন কি না, সেটিও খতিয়ে দেখতে হবে।

অবৈধ বিদেশির সংখ্যা কত
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব বলছেন, দেশে অবৈধভাবে অবস্থানকারী বিদেশির সংখ্যা চার-পাঁচ লাখ। আবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, ৩৪ হাজার অবৈধ বিদেশি নাগরিক দেশে অবস্থান করছে। অন্যদিকে অবৈধ বিদেশি খেদাও আন্দোলনের দাবি, এই সংখ্যা ১০ লাখ।

এ প্রসঙ্গে অবৈধ বিদেশি খেদাও আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম সারোয়ার হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, বর্তমানে ১০ লাখের বেশি বিদেশি নাগরিক বাংলাদেশে অবস্থান করছেন। তারা বিভিন্ন সেক্টরে কাজ করছেন। ফলে দেশের মানুষ যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কাজ পাচ্ছেন না।

ব্যারিস্টার সারোয়ার ক্ষোভ প্রকাশ করে আরও বলেন, একদিকে এ দেশের নাগরিকরা কর্মসংস্থান খুঁজতে গিয়ে বঙ্গোপসাগর থেকে ভূমধ্যসাগরে মৃত্যুবরণ করছেন। অন্যদিকে বাংলাদেশে কর্মরত অবৈধ বিদেশিরা ২০১৭ সাল থেকে প্রতিবছর ১০ দশমিক ২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার এ দেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছে।

সম্প্রতি বিজিএমইএ, বিটিএমইএ, এমসিসিআই, ডিসিসিআই এবং এফবিসিসিআইকে তাদের অন্তর্ভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে কর্মরত অবৈধ বিদেশি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের তথ্য চেয়ে চিঠি দিয়েছে অবৈধ বিদেশি খেদাও আন্দোলন। পাশাপাশি চিঠিটির অনুলিপি একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, শ্রম ও কর্মসংস্থান সচিব, ডিজিএফআই মহাপরিচালক, এনএসআই মহাপরিচালক, বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক, পুলিশের বিশেষ শাখা এবং বাংলাদেশ রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানকে অবগতির জন্য পাঠানো হয়েছে।

ব্যারিস্টার সারোয়ার আরও জানান, ইতোমধ্যে বাংলাদেশ অবস্থিত ভারতীয়, শ্রীলঙ্কা হাইকমিশনসহ বিভিন্ন হাইকমিশন ও দূতাবাসে চিঠি দেওয়া হয়েছে। চিঠিতে বলা হয়, আমাদের অবস্থান বিশেষ কোনো ব্যক্তি বা দেশের বিরুদ্ধে নয়। আমাদের অবস্থান হলো বিদেশিরা আইনানুগভাবে এ দেশে অবস্থান করুক এবং কাজ করুক।

কাজের ক্ষেত্রে মানসিকতা পাল্টাচ্ছে নতুন প্রজন্মের

প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৪, ১২:৫২ পিএম
কাজের ক্ষেত্রে মানসিকতা পাল্টাচ্ছে নতুন প্রজন্মের
কাজের প্রতি বিভিন্ন ট্যাবু ভেঙ্গে মানসিকতা পাল্টাচ্ছে নতুন প্রজন্মের। ছবি: সংগৃহীত

গুলশানের একটি জমজমাট কফি শপে অফার চলছে। সদ্য সন্ধ্যা নেমেছে। ছিমছাম ক্যাফের হলুদ বাতিগুলো মিষ্টি আলো ছড়াচ্ছে ভেতরে। তাজা বিন থেকে ব্রিউ করা কফির গন্ধে ম-ম করছে চারদিক। সময় যত গড়াচ্ছে, ভিড় তত বাড়ছে ছোট দোকানটাতে। কিছুক্ষণ পরই হই-হুল্লোড় আর হাসি-আড্ডায় জমজমাট হয়ে ওঠে বহু মানুষের আড্ডার এই প্রাণকেন্দ্র। 

গল্পের ফাঁকে কেউ অর্ডার করছেন এসপ্রেসো, কেউ মকা, কেউ লাটে, কেউবা ক্যাপেচিনো। কাস্টমারদের চাহিদামাফিক অর্ডার নিয়ে ছোটাছুটি করতে করতে ঘাম ছুটছে ক্যাফেতে কাজ করা তরুণ কর্মচারীদের। এদের মধ্যে একজন মাহীন। বুদ্ধিদীপ্ত চেহারার চটপটে যুবক। সদ্য স্নাতক পাস করেছেন একটি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগ থেকে। একই বিষয় নিয়ে মাস্টার্সও করার ইচ্ছে আছে তার। 

এত দূর পড়াশোনা করে কফি শপে কেন কাজ করছেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, অনেক দিন চাকরির জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ধরনা দিয়েছি। কিন্তু কোথাও সুযোগ হয়নি। অবশেষে আমার এক বন্ধুর মাধ্যমে এই কফি শপে কাজের সুযোগ পেলাম। এখানে জয়েন করার পর আসলে জায়গাটাকে উপভোগ করতে শুরু করেছি। সন্ধ্যার পর থেকে কত মানুষ এখানে আড্ডা দেন, এদের মধ্যে কত মুখ পরিচিত হয়ে ওঠে। প্রথমে এত পড়াশোনা করে একটা কফি শপে ওয়েটারের কাজ করব ভেবে এক রকম হীনম্মন্যতা কাজ করত, এটা ঠিক। তবে এখন মনে হয়, কোনো কাজই ছোট নয়। তা ছাড়া এখানকার বেতন অনেক স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানের জুনিয়র অফিসারের কাছাকাছি। 

দেশে মাত্র দুই দশক আগেও শিক্ষিত যুবসমাজের মধ্যে একধরনের সংবেদনশীলতা কাজ করত। সেটি হলো, জীবিকা নির্বাহের জন্য কাজের ধরন-সম্পর্কিত হীনম্মন্যতা। শিক্ষাগত যোগ্যতা অনুযায়ী বড় কোনো পদে বা প্রতিষ্ঠানে চাকরি না পেলে লোকলজ্জায় সামাজিক মর্যাদা হারানোর ভয়ে তটস্থ থাকতেন তরুণরা। পশ্চিমা দেশগুলোতে বৈধ কোনো কাজকেই ছোট করে দেখা হয় না। তবে আমাদের দেশ তথা দক্ষিণ এশিয়ার অনেক দেশের শিক্ষিত তরুণ-তরুণীদের মধ্যে ‘ভদ্রলোকদের’ প্রতিষ্ঠিত কাজ ছাড়া অন্য কোনো কাজ করার ক্ষেত্রে অনীহা কাজ করে। এমনকি বাবা-মা ও পাড়া-প্রতিবেশীদের মধ্যেও এমন মনোভাব থাকে যে স্নাতক পাস করলেই তরুণরা বড় প্রতিষ্ঠানে বড় পদে চাকরি করবে। 

তবে বেশ কিছু সময় ধরে দেশের এই চিত্রপটে বেশ বড় ধরনের পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। বর্তমানে অনেক শিক্ষিত তরুণ-তরুণীই কর্মস্থলের ব্যাপারে প্রচলিত ট্যাবু ভেঙে বিভিন্ন সুপার শপ, কফি শপ, চেইন শপ ও শোরুমগুলোতে কাজ শুরু করেছেন। সুপার শপ স্বপ্ন, আগোরা অথবা আড়ং-এর মতো চেইন শপগুলোতে বেশির ভাগ বিক্রয় কর্মী হিসেবে কাজ করে থাকেন উচ্চশিক্ষিত তরুণ-তরুণীরা।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ লুৎফর রহমান এ বিষয়ে খবরের কাগজকে বলেন, ‘তরুণদের এ জাতীয় কাজে আগ্রহী হওয়ার পেছনে একটি বড় কারণ হলো কর্মসংস্থানের অভাব। যে হারে উচ্চশিক্ষিত তরুণরা চাকরির বাজারে আসছে, ওই পরিমাণ কর্মসংস্থান বাংলাদেশে তৈরি হচ্ছে না। দেশে সরকারি চাকরি পাওয়ার জন্য যে প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে হয়, তা দীর্ঘমেয়াদি। আবার বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতেও যে পদগুলো খালি হচ্ছে, তার বিপরীতে চাকরিপ্রার্থীর সংখ্যা অনেক বেশি থাকে। সুতরাং কোনো প্রতিষ্ঠিত সংস্থা বা প্রতিষ্ঠানে ভালো কোনো পদে কাজ করতে হলে তরুণদের যে সময় বিনিয়োগ করতে হয়, সে সময়টা পর্যন্ত তাদের টিকে থাকতে তো হবে! এই সময়টা তারা বেকার না থেকে বিভিন্ন সুপার শপ, শোরুম বা রেস্টুরেন্টগুলোতে খণ্ডকালীন কাজে নিয়োজিত হয়।’ 

বসুন্ধরা শপিংমলে আড়ং’-এর আউটলেটে বিক্রয় কর্মী পূজা গোমেজ তার কাজের পরিবেশ বেশ উপভোগ করেন বলে খবরের কাগজকে জানান। সেখানে কাজ করার পাশাপাশি অনলাইনের একটা ব্যবসাও সামলান স্নাতকোত্তর পূজা। তিনি বলেন, ‘সব ধরনের বৈধ কাজকেই আমি সম্মানের চোখে দেখি।’ তার মতো আরও অনেক তরুণ-তরুণী কাজ করেন এই আউটলেটে। এদের মধ্যে বেশির ভাগই স্নাতক পাস। সবাই তাদের কাজ উপভোগ করেন। 

অনেক তরুণ-তরুণী পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে করছেন খণ্ডকালীন চাকরি। অনেকে এখন হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট এবং ক্যাটারিং সেক্টরেও আগ্রহ দেখাচ্ছেন। বাংলাদেশ স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের ডেপুটি ডিরেক্টর পারভেজ ববি খবরের কাগজকে বলেন, ‘দেশে উচ্চশিক্ষিত তরুণদের মধ্যে হসপিটালিটি ম্যানেজমেন্ট এবং ক্যাটারিং সেক্টরে কাজ করার আগ্রহ বাড়ছে। আগে এই সেক্টরে মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পর্যন্ত পড়াশোনা করা গড়পড়তা তরুণদের আগ্রহ বেশি ছিল। তবে বেশ কয়েক বছর ধরে স্নাতক বা স্নাতকোত্তর সম্পন্ন করা তরুণদেরও ক্যাটারিং এবং হোটেল ম্যানেজমেন্টের কাজ শেখার আগ্রহ দেখা যাচ্ছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া অনেক তরুণ-তরুণীও আমাদের এখানে ক্যাটারিং কোর্সে ভর্তি হচ্ছেন।’ 

তরুণ-তরুণীদের মধ্যে বড় একটি অংশ বিভিন্ন কফি শপে কাজ করছেন। গুলশানের বীনস অ্যান্ড বেরী’স-এর বারিস্তা ট্রেনার নাসরিন খবরের কাগজকে জানান, বারিস্তা ট্রেনিং নিতে আসা বেশির ভাগ শিক্ষার্থীই উচ্চশিক্ষিত। অনেকে দেশের বাইরে যাওয়ার আগে বারিস্তা ট্রেনিং নিতে আসেন, আবার অনেকে দেশের ভেতরই বড় বড় হোটেল বা কফি শপগুলোতে কাজ করার আকাঙ্ক্ষায় বারিস্তা কোর্সে ভর্তি হন। অনেকে আবার প্যাশন থেকেই এই কোর্স করেন।

হাইটেক পার্ক প্রকল্প: মেয়াদ বাড়ছে তিন বছর, খরচ বাড়ল ১২৭ শতাংশ

প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৪, ১২:০৭ পিএম
হাইটেক পার্ক প্রকল্প: মেয়াদ বাড়ছে তিন বছর, খরচ বাড়ল ১২৭ শতাংশ
তিনবার মেয়াদ বাড়ার পরও শেষ হয়নি হাইটেক পার্ক প্রকল্পের কাজ। এতে করে খরচ বাড়ছে প্রকল্পের। ছবি: সংগৃহীত

দফায় দফায় প্রকল্পের সময় বাড়িয়েও দেশে হাইটেক পার্ক নির্মাণে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। গত সাত বছরে আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে মাত্র ২৮ শতাংশ। এখনো শুরু হয়নি চট্টগ্রাম হাইটেক পার্ক নির্মাণকাজ। এক শতাংশও অগ্রগতি হয়নি কুমিল্লা, কক্সবাজার, সিলেট ও চট্টগ্রাম নলেজ পার্কের। প্রকল্পটি সংশোধন করে বেতন-ভাতাসহ অন্যান্য খাতে খরচ বাড়ানো হয়েছে। বৈদেশিক প্রশিক্ষণ দ্বিগুণ করা হয়েছে। পরামর্শক ফি চার গুণ বাড়ানো হয়েছে। এই প্রকল্পের মেয়াদ আগামী জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু তা হচ্ছে না। এবার মেয়াদ বাড়ানো হচ্ছে তিন বছর। সঙ্গে খরচ বাড়ছে ১২৭ শতাংশ। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) নিবিড় পরিবীক্ষণ সমীক্ষার খসড়া প্রতিবেদন সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

দেশে প্রযুক্তির জ্ঞান অর্জনে হাইটেক পার্ক নির্মাণে গুরুত্ব দিয়ে সরকার ২০১৭ সালে ‘জেলা পর্যায়ে আইটি/হাইটেক পার্ক স্থাপন (১২ জেলায়)’ নামে একটি প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিভাগের বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ। 

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এভাবে বারবার সময় বাড়িয়েও সঠিকভাবে হয়নি কাজ। এতে অর্থের অপচয় হয়েছে। মানুষ প্রযুক্তির জ্ঞান অর্জনের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান খবরের কাগজকে বলেন, ‘ সরকারি প্রায় সব প্রকল্পে বিভিন্ন অজুহাতে সময় বাড়ছে। অর্থের অপচয় হচ্ছে। প্রকল্পের সুফল পাচ্ছে না জনগণ। এই প্রকল্পও তার ব্যতিক্রম নয়। শেষ সময়েও কাজ হচ্ছে না। খরচ বাড়ছে বহুগুণ।’

২০১৭ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রকল্প পরিচালক (পিডি) হিসেবে চারজন দায়িত্ব পালন করেছেন। এর মধ্যে ২০২৩ সালের ১৫ মে থেকে এ কে এ এম ফজলুল হক (উপসচিব) দায়িত্ব পালন করছেন। প্রকল্পের ধীরগতির ব্যাপারে তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘২০১৭ সালে প্রকল্পের অনুমোদন দেওয়া হলেও প্রথম চার বছরে তিনজন পিডি দায়িত্ব পালন করেন। বিভিন্ন কারণে তেমন কোনো কাজ হয়নি। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্যাকেজ ডব্লিউডির আওতায় রংপুর, নাটোর, ময়মনসিংহ ও জামালপুর এবং ডব্লিউডি-বির আওতায় ঢাকা, গোপালপুর, খুলনা ও বরিশাল হাইটেক পার্ক নির্মাণে এলওসি ঋণের শর্ত অনুযায়ী ভারতের এলএনটি কোম্পানির সঙ্গে চুক্তি হয়। এরপর তারা সেপ্টেম্বরে কাজ শুরু করে। প্রকল্পের মেয়াদ জুনে শেষ হওয়ার কথা ছিল। এটা সত্য। গত এপ্রিল পর্যন্ত আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ২৮ শতাংশ। বাকি কাজ এই সময়ে হবে না।

দ্বিতীয়বার সংশোধন করে তিন বছর সময় বাড়ানোর প্রস্তাব অর্থাৎ ২০২৭ সালের জুনে সমাপ্ত করার জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। পরিকল্পনা কমিশনে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভা হয়েছে। খুব তাড়াতাড়ি একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য উপস্থাপন করা হবে। আশা করি, এই সময়ের মধ্যে সব কাজ হয়ে যাবে। সময় বৃদ্ধির কারণে বেতন-ভাতা বাড়ছে। রেট শিডিউলও ২০১৮ থেকে ২০২২ সালে পরিবর্তন হচ্ছে। এ কারণে খরচ বাড়ছে প্রায় ২৮ কোটি টাকা। ভারত থেকে বিভিন্ন পণ্য আনতে বন্দরে আমদানি শুল্ক (সিডি) বাবদ খরচ বাড়ছে ১ হাজার ৭৪৬ কোটি টাকা। এ ছাড়া পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় ৫৫ কোটি ডলার বা ৬০৫ কোটি টাকা খরচ বাড়ছে। মোট খরচের প্রস্তাব করা হয়েছে ৪ হাজার ১৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভারতের ঋণ ২ হাজার ১৪৯ কোটি টাকা ও দেশীয় অর্থ ২ হাজার ৪৮ কোটি টাকা। টাকা বৃদ্ধির প্রস্তাব করা হয়েছে ২ হাজার ৩৫১ কোটি ৭১ লাখ। অর্থ মন্ত্রণালয় থেকেও ২০২৩ সালের ২১ আগস্ট তিন বছর মেয়াদ বাড়ানোর সম্মতি দিয়েছে।’ 

অপর এক প্রশ্নের জবাবে এই প্রকল্প পরিচালক বলেন, ‘প্যাকেজ ডব্লিউডি-সির আওতায় চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, কুমিল্লা ও সিলেট- এই চারটি হাইটেক পার্ক নির্মাণের অগ্রগতি একটু কম হবে। কারণ অল্প কয়েক মাস আগে ২০২৩ সালের ১৯ জুলাই ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। আর চট্টগ্রামের মেয়র এখনো জায়গা বুঝিয়ে দেননি। কুমিল্লার আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে দশমিক ৫২ শতাংশ, চট্টগ্রামের দশমিক ৪৬ শতাংশ, কক্সবাজারের দশমিক শূন্য ১ শতাংশ ও সিলেটের অগ্রগতি হয়েছে দশমিক ৪৭ শতাংশ। 

পরামর্শককে অতিরিক্ত ফি দেওয়ার ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘চুক্তির মেয়াদ বৃদ্ধি হওয়ার পরে তা নিষ্পত্তিযোগ্য বলে অডিট আপত্তিতে বিবেচনা করা হয়েছে। পাজেরো জিপ গাড়ি অন্য কাজে ব্যবহারের ব্যাপারে পিডি বলেন, ‘হাইটেক পার্কের ব্যবস্থাপনা পরিচালক গাড়ি না পাওয়ায় প্রকল্পের এই গাড়িটি ব্যবহার করতেন। পরে আমাকে ব্যবহার করার সুযোগ দেন।’ 

বাংলাদেশের আইটি শিল্পের উন্নয়ন ও আইটি খাতে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার জন্য সরকার ২০১৭ সালের ২৫ এপ্রিল এই প্রকল্পের অনুমোদন দেয়। এ প্রকল্পের জন্য প্যাকেজ ডব্লিউডি-এ এবং প্যাকেজ ডব্লিউডি-বির আওতায় ৭ তলা স্টিল স্ট্রাকচার ভবন নির্মাণ এবং প্যাকেজ ডব্লিউ-সির আওতায় ৫তলা স্টিল স্ট্রাকচার ভবন নির্মাণের জন্য খরচ ধরা হয়েছিল ১ হাজার ৭৯৬ কোটি টাকা। এর মধ্যে ভারতের ঋণ ১ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা ও জিওবি ২৫২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০২০ সালের জুনে অর্থাৎ তিন বছরে বাস্তবায়ন করতে বলা হয়। 

অন্যান্য প্রকল্পের মতো এই প্রকল্পেও একই দশা হয়েছে। বাধ্য হয়ে খরচ ছাড়া এক বছর সময় বাড়ানো হয়। তারপরও কাজের কাজ হয়নি। ২০২১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি সংশোধন করে সময় বাড়ানো হয় তিন বছর অর্থাৎ ২০২৪ সালের জুনে শেষ করার জন্য সরকার সময় বেঁধে দেয়। একই সঙ্গে ৫০ কোটি টাকা বা প্রায় ৩ শতাংশ খরচ বাড়িয়ে ১ হাজার ৮৪৬ কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। প্রকল্প পরিচালক থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট অন্য কর্মকর্তাদের বেতন ও ভাতা বাড়ানো হয়েছে। বৈদেশিক প্রশিক্ষণও দ্বিগুণ করা হয়েছে। পরামর্শক ফি চার গুণ বাড়ানো হয়েছে। যানবাহনের খরচও বাড়ানো হয়েছে। ১ হাজারের বেশি মানুষকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে দেশে ১ হাজার ও জাপানে ৫০ জন। আরও প্রায় ৭ হাজার জনকে প্রশিক্ষণের সংস্থান রাখা হয়েছে। 

প্রকল্প সূত্র মতে, এপ্রিল পর্যন্ত রংপুরের ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া নলেজ পার্কের আর্থিক অগ্রগতি হয়েছে ১৮ দশমিক ৮০ শতাংশ, নাটোর নলেজ পার্কের ২৮ দশমিক ৭৯ শতাংশ, ময়মনসিংহ নলেজ পার্কের ২৯ দশমিক ৫৩ শতাংশ, জামালপুরের ২৩ দশমিক ৩৮ শতাংশ, খুলনার ২৩ দশমিক ৭৮ শতাংশ, বরিশাল নলেজ পার্কের ২০ শতাংশ, গোপালগঞ্জ নলেজ পার্কের ১২ দশমিক ৩৫ শতাংশ, ঢাকার কেরানীগঞ্জের ২৫ শতাংশ, সিলেটের ৪ দশমিক ১০ শতাংশ। তবে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার কুমিল্লা নলেজ পার্কের অগ্রগতি এক শতাংশও হয়নি। আগামী জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। এখনো খুলনা নলেজ পার্কের জন্য প্রায় ৪ একর জমি অধিগ্রহণের প্রস্তাব জেলা প্রশাসকের অফিসে প্রক্রিয়াধীন। চট্রগ্রাম নলেজ পার্ক নির্মাণে ৯ দশমিক ৫৫ একর জমি চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন এখনো বুঝিয়ে দেয়নি। 

আইএমইডির প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, প্রকল্পের কাজ সঠিকভাবে করতে ও উদ্ভূত সমস্যা দ্রুত সমাধানে তিন মাস পর পর প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটি (পিআইসি) ও প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটি (পিএসসি) সভা হওয়ার কথা। দীর্ঘ এই সময়ে ২৪টি হওয়ার কথা থাকলেও মাত্র ১৫ পিআইসি ও ১৩টি পিএসসি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। এসব সভা নিয়মিত হলে বিভিন্ন সমস্যা দ্রুত সমাধান করা যেত। 

এই প্রকল্পের কাজ করতে বিভিন্ন সময় অর্থের লেনদেন করতে কিছু ভুলত্রুটি ধরা পড়ে। ২০২১-২২ অর্থবছরে ৯টি অডিট আপত্তি উত্থাপিত হয়। তার মধ্যে পাজারো জিপ গাড়ি প্রকল্পের কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে না বলেও অডিট আপত্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া পরামর্শককে অতিরিক্ত অর্থ প্রদান করা হয়েছে। সেই অডিট আপত্তি নিষ্পত্তি হয়নি। 

প্রতিবেদনে প্রকল্পের দুর্বল দিকের মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে জেলা প্রশাসনের সহায়তা পুরোপুরি পাওয়া যায় না। এ জন্য জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। করোনাকালে ১৭ মাস কার্যক্রম বন্ধ ছিল। ভ্যাট খাতে অপ্রতুল বাজেট বরাদ্দের ফলে নির্মাণকাজ বাধাগ্রস্ত হয়েছে। প্রকল্পের প্যাকেজ ডব্লিউডি-সির আওতায় কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার ও সিলেট নলেজ পার্ক বাস্তবায়নে ২০২৩ সালের ১৯ জুলাই ঠিকাদারের সঙ্গে চুক্তি হয়েছে। সেখানে মেয়াদ ধরা হয়েছে ৩০ মাস বা আড়াই বছর। তাই পুরো কাজ শেষ করতে সময় লাগবে ২০২৫ সাল পর্যন্ত। 

ফিলিস্তিন ইস্যু যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অসন্তুষ্ট’ করতে রাজি নয় বিএনপি

প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৪, ১১:৪৭ এএম
যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অসন্তুষ্ট’ করতে রাজি নয় বিএনপি
খবরের কাগজ গ্রাফিক্স

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে হতাশা রয়েছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর মধ্যে। কিন্তু তা সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রকে অসন্তুষ্ট করতে রাজি নয় বিএনপি। এ কারণে ফিলিস্তিন ইস্যুতে কিছুটা কৌশলী অবস্থান নিয়েছে দলটি।

গত বছরের ৭ অক্টোবর থেকে ফিলিস্তিনের জনগণের ওপরে নির্বিচারে হামলা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান মিত্র ইসরায়েল। এই হামলায় এ পর্যন্ত নারী, শিশুসহ ৩৫ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তার কারণেই মধ্যপ্রাচ্যে শক্তিধর রাষ্ট্র হয়েছে ইসরায়েল। এ কারণে সারা বিশ্ব ইসরায়েলের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধেও প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশেও সরকারি দল আওয়ামী লীগের পাশাপাশি দেশের ইসলামপন্থি দলগুলো ফিলিস্তিন ইস্যুতে সোচ্চার হয়েছে।

যদিও এই ইস্যুতে বিএনপির ভেতরে ও বাইরে অনেকে দলটির বর্তমান অবস্থানকে কিছুটা ‘নমনীয়’ বলে মনে করছেন। তারা বলছেন, প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে মুসলিম উম্মাহর প্রতি একাত্মতা পোষণকারী দল বিএনপির ফিলিস্তিনি জনগণের পাশে যেভাবে দাঁড়ানোর বা সোচ্চার হওয়ার কথা, তাদের ভূমিকা ঠিক ততটা জোরালো নয়।

লেখক ও গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ মনে করেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্ররা অসন্তুষ্ট হবে, এ কারণে ফিলিস্তিন ইস্যুতে বিএনপি কথা না বলতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে ইসরায়েলের সম্পর্ক চমৎকার। আবার ভারতের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্পর্কও চমৎকার। ফলে বিষয়টি কিছুটা ঘোলাটে।’      

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরসহ ক্ষমতাসীন দলের একাধিক নেতা ও মন্ত্রী অভিযোগ তুলে বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি করতেই বিএনপি ফিলিস্তিন ইস্যুতে নীরব রয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ সারা দেশে ফিলিস্তিন ইস্যুতে প্রতিবাদ সমাবেশ করেছে। এ ছাড়া সরকারি দলের একাধিক অনুষ্ঠানে যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্যও উঠে এসেছে। কিন্তু বিএনপির সভা-সমাবেশে ফিলিস্তিন ইস্যুতে এ ধরনের কোনো বক্তব্য শোনা যায়নি। তবে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের বাইরে থাকা দল ইসলামী আন্দোলন এ প্রশ্নে সবচেয়ে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে। দলটি গত ১০ মে রাজধানীর বায়তুল মোকাররমে এক বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করে। ফিলিস্তিন ইস্যুতে আগামী ১৭ মে শুক্রবার সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করবে দলটি।

ফিলিস্তিন ইস্যুতে ইসলামপন্থি ও বিএনপির মিত্র বলে পরিচিত জামায়াতে ইসলামী কিছুটা ভূমিকা পালন করলেও দলটি যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কোনো কথা বলেনি। গত ২২ মে জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার বৈঠকে ফিলিস্তিনে অবিলম্বে হামলা বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়। এর আগে ফিলিস্তিনের গাজায় হামলার প্রতিবাদে গত ৯ মে ঢাকায় এক বিক্ষোভ সমাবেশ করে। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়, ইসরায়েলের সঙ্গে প্রকাশ্য-অপ্রকাশ্য সব সম্পর্ক ছিন্ন করতে হবে। একই দিন দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনে হামলার ঘটনায় নিন্দা জানান। দেশের বাম ও ইসলামপন্থি দলগুলোও ফিলিস্তিন ইস্যুতে কথা বলেছে। 

সরাসরি ইসলামপন্থি দল হিসেবে পরিচিত না হলেও জিয়াউর রহমানের প্রতিষ্ঠিত এবং বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বাধীন দল বিএনপিকেই ইসলামপন্থিদের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ মিত্র বলে মনে করা হয়। আওয়ামী লীগসহ বাংলাদেশের বাম এবং ধর্মনিরপেক্ষ হিসেবে দাবিদার দলগুলো সব সময়ই ইসলামি মৌলবাদী দলগুলোর সঙ্গে গাঁটছড়া বাঁধার অভিযোগের আঙুল বিএনপির দিকেই তোলে। বাংলাদেশে ভারতবিরোধী মনোভাব তৈরিতে এই ইসলামপন্থি দলগুলোর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করা হয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভারতের ভূমিকায় বিএনপির পাশাপাশি ইসলামপন্থি কিছু দলও প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছে। তবে ভারতের বিরুদ্ধে এই ক্ষোভের কিছুটা বহিঃপ্রকাশ বিএনপিতে ঘটলেও ইসরায়েলকে সমর্থনকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে দলটি কৌশলী অবস্থান নিয়েছে।  

যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে এমন অবস্থানের কারণ জানতে চাইলে বিএনপির দায়িত্বশীল একজন নেতা খবরের কাগজকে বলেন, ‘ভারতের বিষয়ে যে কারণে আওয়ামী লীগ নীরব; ঠিক একই কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বিষয়ে বিএনপি নীরব বা কৌশলী।’    

বিএনপির ঘোষণাপত্রের ২৯(ঘ)-তে ‘মুসলিম দুনিয়ার ভ্রাতৃপ্রতিম সকল দেশের সঙ্গে গভীর ও স্থায়ী বন্ধুত্ব অটুট রাখা ও সম্প্রসারিত করা  এবং (ঙ)-তে আরব ও ফিলিস্তিনি ভাইদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠা ও রক্ষায় পূর্ণ সমর্থন দান করা’র কথা উল্লেখ রয়েছে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রবীণ সদস্য নজরুল ইসলাম অবশ্য দাবি করেন, ফিলিস্তিন ইস্যুতে বিএনপির অবস্থানে কোনো সমস্যা নেই। কারণ বিএনপি স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের পক্ষে। তার মতে, ‘প্রয়াত ফিলিস্তিনি নেতা ইয়াসির আরাফাতের সঙ্গে জিয়াউর রহমান তথা বিএনপির যে সম্পর্ক ছিল, সেটা পরবর্তীকালেও অব্যাহত থাকে এবং বিএনপি এখনো ওই নীতি মেনে চলে।’

বিএনপি যুক্তরাষ্ট্রকে অসন্তুষ্ট করতে রাজি নয়, সরকারের এমন অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সরকার তো কত অভিযোগই করে। সরকারের কাজই আমাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা। কিন্তু আমাদের কথা পরিষ্কার। আমরা স্বাধীন ফিলিস্তিন এবং সে দেশের জনগণের পক্ষে। সেই জনগণের ওপরে যে নিপীড়ন ও অত্যাচার চলছে, আমরা তার বিরুদ্ধে।’ 

তবে ফিলিস্তিন ইস্যুতে বিএনপির প্রতিবাদ বক্তব্য-বিবৃতির মধ্যে সীমাবদ্ধ রয়েছে। ঘটনার প্রতিবাদে বিএনপি কোনো মিছিল-সমাবেশ করেনি। হামলার দুই দিন পর গত ৯ অক্টোবর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সোশ্যাল হ্যান্ডেল এক্সে ফিলিস্তিনের পক্ষে অবস্থান স্পষ্ট করেছেন জানিয়ে বিএনপি নেতারা বলছেন, যেখানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানই বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন, সেখানে আলাদা করে বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট করার প্রয়োজন নেই। 

তবে সম্প্রতি বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ফিলিস্তিন ইস্যুতে আলোচনা উঠেছে। দলটির প্রবীণ একজন নেতা ফিলিস্তিন ইস্যুতে বিএনপির অবস্থান স্পষ্ট করে প্রতিবাদ করা উচিত বলে মতামত ব্যক্ত করেন। তার ওই প্রস্তাবে সমর্থন দেন উপস্থিত আরও দু-একজন নেতা। কিন্তু উপস্থিত অন্য নেতারা এ বিষয়ে একমত না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত দলটি কোনো কর্মসূচি গ্রহণ করতে পারেনি। তবে বিএনপির ভেতরে আলোচনা হলো, ফিলিস্তিন ইস্যুতে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করা ঠিক হবে না। কারণ তাতে যুক্তরাষ্ট্রের রুষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সর্বশেষ গত ৮ মে বুধবার রাতে অনুষ্ঠিত দলটির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ফিলিস্তিন ইস্যুতে ‘কিছু করা উচিত’- এমন প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে  উপস্থিত দুজন নেতা বলেন, ফিলিস্তিন ইস্যুতে প্রতিবাদ কিছু না কিছু তো হচ্ছে। নতুন কিছু করার ব্যাপারে তারা নেতিবাচক মত দেন বলে জানা যায়।

খবরের কাগজের সঙ্গে আলাপকালে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান প্রশ্ন তুলে বলেন, ‘ফিলিস্তিন ইস্যুতে কথা কোথায় কম বলা হচ্ছে? বলা হচ্ছে তো। অন্যান্য দল কারা বেশি বলছে? সরকার এবং সরকারি দল বেশি বলছে। সরকারের দায়িত্ব বেশি বলে সরকার বলছে। তাদের বলতে হচ্ছে।’

স্থায়ী কমিটির অন্যতম আরেক সদস্য বেগম সেলিমা রহমান খবরের কাগজকে বলেন, সরকার তো সারাক্ষণ বিএনপির বিরুদ্ধে অভিযোগ করে। যা নয় তাই বলে বেড়াচ্ছে। তারা নিজেদের কথাগুলো বিএনপির ওপর দায় চাপাচ্ছে। সরকারের কথায় বিএনপির কিছু আসে যায় না। মুসলিম দেশ হিসেবে ফিলিস্তিনি জনগণের প্রতি বিএনপির সহানভূতি ও সহমর্মিতা সবই আছে।

‘তবে এ কথা ঠিক যে, আন্তর্জাতিক বা বিশ্ব রাজনীতির সঙ্গে সমন্বয় করেই বিএনপিকে চলতে হয়। পাশাপাশি দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের দিকে খেয়াল রাখাও আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। তা ছাড়া বিএনপি কিছু করতে গেলেই তো সরকারি দল লাঠিসোঁটা নিয়ে এসে হাজির হয়।’ যোগ করেন বিএনপির এই প্রবীণ নেতা।      

ফিলিস্তিনের গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর গণহত্যা বন্ধে পদক্ষেপ নিতে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। গত ২৪ মার্চ রাজধানীর একটি হোটেলে এক ইফতার পার্টিতে দেওয়া বক্তব্যে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ফিলিস্তিনের সমস্যার স্থায়ী সমাধানে দুই রাষ্ট্রনীতি গ্রহণের ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। ঢাকায় বিদেশি কূটনীতিকদের সম্মানে আয়োজিত ওই ইফতার অনুষ্ঠানে ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক এবং যুক্তরাষ্ট্রের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স হেলেন লাফাভসহ বাংলাদেশস্থ কূটনীতিকরা উপস্থিত ছিলেন। 

সর্বশেষ গত ১৫ এপ্রিল বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক ভার্চুয়াল সভায় ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ইসরায়েল থেকে দুটি কার্গো বিমান অবতরণের খবরে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে এ বিষয়ে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করার দাবি জানানো হয়। বলা হয়, গাজায় ইসরায়েলের ভয়াবহ আক্রমণ এবং ফিলিস্তিনে নির্বিচারে হত্যার ঘটনায় সারা বিশ্বে যখন নিন্দার ঝড় বইছে, সেই সময় ইসরায়েল থেকে ঢাকায় বিমান অবতরণ রহস্যের সৃষ্টি করছে।

ব্যবসাবান্ধব বাজেট প্রণয়নের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৪, ১১:১২ এএম
ব্যবসাবান্ধব বাজেট প্রণয়নের নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর

সাধারণ মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্যের সরবরাহ বাড়াতে বাজেটে রাজস্ব ছাড় দিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বাজেট প্রস্তুত কমিটির কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বিশেষভাবে কৃষি উৎপাদন বাড়াতে, কৃষি প্রক্রিয়াজাতকরণ শিল্প বিকাশে, গবাদি পশুখামার, পোলট্রি ও মাছ চাষে উৎসাহ দিতে বলেছেন। 

রাজস্ব জালের আওতা বাড়াতে আরও সক্রিয়ভাবে কাজ করার কঠোর নির্দেশ দেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি প্রতি অর্থবছরের শেষ সময়ে কেন লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করতে হচ্ছে এনবিআর চেয়ারম্যানের কাছে জানতে চান। আগামীতে ঘাটতি থেকে এনবিআরকে বের হয়ে আসার পরামর্শও দেন তিনি। করদাতারা হয়রানির শিকার হন- মাঠপর্যায়ের রাজস্ব কর্মকর্তাদের এমন কোনো ক্ষমতা না দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। করদাতাদের সহযোগী হয়ে রাজস্ব আদায় করার পরামর্শ দিয়ে এনবিআর কর্মকর্তাদের শহরের পাশাপাশি উপজেলায়ও যেতে বলেন তিনি। এনবিআরের কাজে ম্যানুয়াল পদ্ধতির পরিবর্তে সম্পূর্ণ অটোমেশনে আসার নির্দেশ দেন। 

একাধিক সূত্র জানায়, গতকাল বেলা ১১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী আগামী অর্থবছরের রাজস্ব বাজেট নিয়ে আলোচনার সময় এসব নির্দেশনা দেন। সরকারের উচ্চপর্যায়ের গুরুত্বপূর্ণ এ বৈঠকে অর্থ প্রতিমন্ত্রী, অর্থসচিব, এনবিআর চেয়ারম্যান, এনবিআরের শুল্ক, ভ্যাট ও কর শাখার বাজেট প্রস্তুতি কমিটির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এনবিআর চেয়ারম্যান রাজস্ব বাজেটের গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবগুলো প্রধানমন্ত্রীর কাছে ধারাবাহিকভাবে পাওয়ার পয়েন্ট আকারে উপস্থাপন করেন। প্রধানমন্ত্রী মনোযোগ দিয়ে এসব প্রস্তাব শোনেন। একাধিক প্রস্তাবের খুঁটিনাটি নিয়ে প্রশ্ন করেন। একই সঙ্গে নিজের মতামত তুলে ধরেন। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বৈঠকে উপস্থিত এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, ‘আগামী অর্থবছরের জন্য প্রধানমন্ত্রী একটি ভারসাম্যপূর্ণ বাজেট প্রণয়নে গুরুত্ব দিয়েছেন। দাম কমাতে বাজারে পণ্যের সরবরাহ বাড়াতে জোর দিয়েছেন। বিশেষভাবে খাদ্যপণ্যের সরবরাহ বাড়াতে রাজস্ব ছাড় দিতে বলেছেন। যারা দাম বাড়ানোর সঙ্গে জড়িত তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে বলেছেন। কালোবাজারিদের ধরতে জনগণকে সচেতন করতে বলেছেন। এনবিআরের রাজস্ব আদায়ে আরও জোর দিতে বলেছেন।’ 

মঙ্গলবারের বৈঠকে এনবিআরের বাজেট প্রস্তুত কমিটির এক কর্মকর্তা এমপিদের গাড়ি আমদানিতে শুল্ক আরোপের বিষয়টি তুলে ধরে বলেন, এর ফলে সরকারের প্রতি মেয়াদে গড়ে দুই শ থেকে আড়াই শ কোটি টাকা রাজস্ব কম আদায় হচ্ছে। বৈঠকে উপস্থিত কেউ এ প্রস্তাবের বিপক্ষে কোনো মতামত দেননি। 

তবে প্রধানমন্ত্রী সতর্ক করে বলেন, যেকোনো প্রস্তাব যাচাই-বাছাই করে গ্রহণ করবেন। বাজেট ঘোষণার পর যেন কোনো বিতর্ক বা অসন্তোষ না হয়। 

আলোচনার এক পর্যায়ে এনবিআর চেয়ারম্যান শিল্পের যেসব খাতে বা প্রতিষ্ঠানে বা ব্যক্তি পর্যায়ে রাজস্ব (কর, ভ্যাট ও শুল্ক) অব্যাহতি, কর অবকাশ সুবিধা বা রাজস্ব ছাড় রয়েছে তা প্রত্যাহারে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে প্রস্তাবের বিবরণ দিয়ে পরামর্শ জানতে চান। 

প্রধানমন্ত্রী জানান, দেশের শিল্প খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ে এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া যাবে না। অর্থনীতির গতিশীলতার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে শিল্প খাতেও সক্ষমতা তৈরির সুযোগ দিতে হবে। তবে কোনো ব্যক্তিকে খুশি করতে বা কারও অনুরোধ রাখতে রাজস্ব ছাড় সুবিধা দিয়ে তা যুগের পর যুগ বহাল রাখাও যাবে না। এনবিআর একটি রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান। কোনো ব্যক্তির স্বার্থ হাসিলের জন্য ব্যবহার করা যাবে না। 

বৈঠকে জনস্বার্থে সিগারেট ও তামাক জাতীয় পণ্য ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করতে পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে সবাই একমত হয়েছেন। বৈঠক সূত্র জানায়, এনবিআর শেয়ারবাজারে মুনাফা (গেইন কর) ৪০ লাখ টাকার বেশি হলে কর আরোপের প্রস্তাব করেছে। একইভাবে মোবাইল ফোনে কথা বলার ওপর কর বাড়ানোর প্রস্তাব করা হচ্ছে। বর্তমানে মোবাইল ফোনে কথা বলার ওপর অন্যান্য করের সঙ্গে ১৫ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক আরোপ আছে। প্রস্তাবি বাজেটে কথা বলার ওপর সম্পূরক শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হতে পারে। একইভাবে প্রস্তাবিত বাজেটে ইন্টারনেট সেবার ওপর সম্পূরক শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হতে পারে। শেয়ারবাজারে তালিকাভুক্ত এবং অতালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার বিদ্যমানের চেয়ে ২.৫ শতাংশ কমানো হচ্ছে। বর্তমানে তালিকাভুক্ত কোম্পানির করহার ২২.৫ শতাংশ। এটি কমিয়ে ২০ শতাংশ করা হচ্ছে। অপরদিকে বর্তমানে তালিকভুক্ত নয় (ননলিস্টেড) এমন কোম্পানির করহার ২৭.৫ শতাংশ। এ হার কমিয়ে ২৫ শতাংশ করা হচ্ছে।

বিত্তবানদের করহার বাড়ছে। যাদের বার্ষিক আয় ৫০ লাখ টাকার বেশি তাদের করহার বিদ্যমান ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ করা হচ্ছে।

বৈঠকে অপ্রদর্শিত অর্থ (কালো টাকা) বিনিয়োগের ক্ষেত্রে করণীয় কি, তা জানতে চাওয়া হয়। এনবিআর থেকে শিল্পের বিশেষ কিছু খাতে এবং পুঁজিবাজারে বিশেষ সুবিধায় কালো টাকা বিনিয়োগের সুবিধা দেওয়ার পক্ষে যুক্তি তুলে ধরা হয়। আলোচনায় উঠে আসে, ‘আবাসন খাতে এর আগেই বিশেষ ব্যবস্থায় কালো টাকা বিনিয়োগের সুবিধা দেওয়া হলেও সাধারণ মানুষের জন্য ফ্ল্যাট বা প্লট সরবরাহে কোনো ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়নি। আন্তর্জাতিক বাজারের কারণ দেখিয়ে ফ্ল্যাট ও প্লটের দাম বেড়েই চলেছে।’ বরং ঠিকঠাকমতো রাজস্ব পরিশোধ করে যেসব সৎ ব্যক্তি ব্যবসা করছেন তাদের প্রতি ন্যায় বিচার করা হয় না বলেও বৈঠকে উল্লেখ করা হয়। বিশেষ সুবিধা দেওয়ায় এ যাবৎকালের মধ্যে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায় হয়েছে এমন তথ্য জানিয়ে এনবিআর থেকে এ বিষয়ে আরও আলোচনা করতে চাইলে তা থামিয়ে দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী অর্থ পাচার রোধে কঠোর হতে বলেন। বর্তমান আইন ভালোভাবে বাস্তবায়নে নির্দেশ দেন। কঠোরভাবে আইন বাস্তবায়ন এবং বিভিন্ন সুবিধা দিয়ে অর্থ পাচার কমানোর পদক্ষেপ নিতে বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি পুঁজিবাজারে মনোযোগী হতে বলেন। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনবিআরের এক কর্মকর্তা বলেন, এনবিআর বাজেটে বিশেষ সুবিধা দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়ার পক্ষে। আইএমএফ এর বিরুদ্ধে। বিষয়টি নিয়ে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। প্রয়োজনে অর্থমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রীকে নিয়ে এনবিআর থেকে আবারও প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানানোর চেষ্টা করা হবে।

এনবিআর চেয়ারম্যান সবচেয়ে বেশি সম্পদের মালিকদের ওপর কর বাড়ানো এবং সারচার্জ (বেশি সম্পদ থাকার কারণে জরিমানা হিসেবে নিয়মিত করের বাইরে অতিরিক্ত কর) বাড়ানোর পক্ষে বিভিন্ন যুক্তি তুলে ধরেন। বৈঠকে বেশি সম্পদের মালিকদের করহার বাড়ানোর প্রস্তাবের বিপক্ষে কেউ কথা বলেননি। তবে সারচার্জ সম্পর্কে বলা হয়, বেশি সম্পদ থাকা অপরাধ না। এর জন্য অতিরিক্ত কর সহনীয় রাখা উচিত।

দুদকের মামলা এলজিইডির এক প্রকৌশলীর ৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ

প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৪, ১০:৪৮ এএম
এলজিইডির এক প্রকৌশলীর ৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ

অবৈধ উপায়ে অন্তত চার কোটি টাকার সম্পদ অর্জন ও প্রায় সোয়া কোটি টাকার তথ্য গোপনের অভিযোগে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (পিআরএল) মজিবুর রহমান সিকদারের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।

মঙ্গলবার (১৪ মে) রাজধানীর সেগুনবাগিচায় দুদক প্রধান কার্যালয়ে মামলাটি করেন দুদক উপপরিচালক জেসমিন আক্তার।

এজাহারে বলা হয়, মজিবুর রহমান সিকদার তার সম্পদ বিবরণীতে স্থাবর ও অস্থাবর মোট ১০ কোটি ৭৮ লাখ ৯০ হাজার ৯৩৬ টাকার সম্পদের মালিকানা উল্লেখ করেন। যাচাইকালে তার নামে মোট ১২ কোটি ২ লাখ ৯৪ হাজার ৯৩৬ টাকার সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়। অর্থাৎ বাকি ১ কোটি ২৪ লাখ ৪ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য তিনি গোপন করেছেন। অনুসন্ধানে তার মোট ব্যয়সহ ৮ কোটি ৬৫ লাখ ৯৮ হাজার ৪৭৭ টাকার সম্পদের বৈধ উৎস পাওয়া যায়। ফলে বাকি ৪ কোটি ২০ লাখ ৩৭ হাজার ৫২৮ টাকা জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ বলে প্রমাণিত হয়েছে।

এ ছাড়া মজিবুর রহমান সিকদার তার অবৈধ সম্পদকে বৈধতা দেখানোর অপকৌশলের অংশ হিসেবে চা বিক্রেতা, পান বিক্রেতা, মুদি দোকানদার, কাঠমিস্ত্রি, কৃষক এবং প্রবাসী শ্রমিকের কাছ থেকে দানের মাধ্যমে প্রায় দেড় কোটি টাকা মূল্যের ২০৩.৫ শতাংশ জমির মালিকানা উল্লেখ করেছেন। অনুসন্ধানে সংশ্লিষ্ট দানের বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা প্রমাণিত হয়। দানকারীরা কেউ মজিবুর রহমান সিকদারের সঙ্গে দানকারীদের কোনো রকম আত্মীয়তারও সম্পর্ক নেই।