উপজেলা নির্বাচন: দলীয় প্রতীকে মাঠে ৯ প্রার্থী । খবরের কাগজ
ঢাকা ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, বুধবার, ১৫ মে ২০২৪

উপজেলা নির্বাচন: দলীয় প্রতীকে মাঠে ৯ প্রার্থী

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ১১:২৫ এএম
উপজেলা নির্বাচন: দলীয় প্রতীকে মাঠে ৯ প্রার্থী

স্থানীয় সরকার নির্বাচনের প্রথম ও দ্বিতীয় দফায় নিবন্ধিত ৪৪টি রাজনৈতিক দলের মধ্যে মাত্র চারটি দল চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে প্রার্থী দিয়েছে। এগুলো হলো জাতীয় পার্টি, জেপি, জাসদ ও ওয়ার্কার্স পার্টি। এই চারটি দলের দলীয় প্রতীকে ভোটে অংশগ্রহণকারী প্রার্থী মাত্র ৯ জন।

প্রথম ধাপে দলীয় প্রতীকে মাত্র একটি মনোনয়নপত্র জমা পড়ে। সেটি দিয়েছে জাতীয় পার্টি। এর বাইরে দ্বিতীয় ধাপে দলটির চারজন দলীয় প্রতীক ‘লাঙ্গল’ নিয়ে প্রার্থী হয়েছেন। এ ছাড়া ১৪ দলের শরিক জাতীয় পার্টির (জেপি) দুজন, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) একজন এবং ওয়ার্কার্স পার্টির একজন দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে দলীয় প্রতীকে প্রার্থী হয়েছেন।

এ বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ খবরের কাগজকে জানিয়েছেন, ‘স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচন দলীয় প্রতীকে অথবা নির্দলীয় প্রতীকে অংশ নিতে আইনি কোনো বাধা নেই। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে চিঠি দিয়ে আমরা জানতে চেয়েছি যে তারা দলীয়ভাবে প্রার্থী দেবেন কি না। তবে বড় দলগুলো দলীয় প্রতীক না দেওয়ায় ছোট দলগুলোর পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে তেমন ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়নি। তাই দলীয় প্রতীকে এবার প্রার্থীর সংখ্যা এত কম।’

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এবার দলীয় প্রতীকে নির্বাচন করছে না। তাদের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির অনুপস্থিতিতে নির্বাচনকে প্রতিযোগিতামূলক করতে ও দলের তৃণমূলের বিভেদ নিরসনে তারা এই কৌশল নিয়েছে। প্রায় সব উপজেলাতেই আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন। মন্ত্রী-সংসদ সদস্যদের সন্তান-স্বজনরাও অনেক জায়গায় প্রার্থী হয়েছেন। নির্বাচনে মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের হস্তক্ষেপ ঠেকাতে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়ার কঠোর হুমকি দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে দলের সিদ্ধান্ত অমান্য করে উপজেলা নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ায় এ পর্যন্ত ৭৬ জনকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে বিএনপি। দলটির সঙ্গে আন্দোলনে থাকা অন্য দলগুলোও উপজেলা ভোটে অংশ নিচ্ছে না।

এদিকে ইসির ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, আগামী ৮ মে ১৪৪ উপজেলায় প্রথম ধাপের ভোট দিয়ে শুরু হবে আনুষ্ঠানিকতা। এরপর পর্যায়ক্রমে চার ধাপে দেশের পৌনে ৫০০ উপজেলায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এরই মধ্যে এই ধাপে ভোটে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীরা গত ২৩ এপ্রিল থেকে নির্বাচনি প্রচারে মাঠে নেমেছেন। তবে এবার রাজনৈতিক বা দলগতভাবে ভোটের মাঠে নেই প্রধান দুই দল। ফলে এই নির্বাচনি প্রচারে এবার ‘নৌকা’ বা ‘ধানের শীষ’ প্রতীক নেই। ফলে দলগতভাবে ভোটের সেই রাজনৈতিক আমেজও নেই। অবশ্য এ দুটি দলের অনেক নেতা-কর্মীই স্বতন্ত্র হিসেবে ভোটে প্রার্থী হয়েছেন। আর দল থেকে প্রতীক না দেওয়ায় প্রতিটি উপজেলায় ক্ষমতাসীন দলের একাধিক প্রার্থী থাকায় বলা যায় ভোটের মাঠে বেশির ভাগ উপজেলায়ই আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী ওই দলের প্রার্থীরাই।

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তিন মাস পর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে স্থানীয় সরকারের এই নির্বাচন। স্থানীয় সরকার (উপজেলা) (সংশোধন) বিল-২০১৫-এ বলা হয়েছে, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও দুটি ভাইস চেয়ারম্যান (সাধারণ ও সংরক্ষিত) পদের নির্বাচনের জন্য প্রার্থীকে রাজনৈতিক দল কর্তৃক মনোনীত অথবা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে হবে। আইনটি পাস হওয়ার পর ২০১৭ সালের মার্চে প্রথমবারের মতো দলীয় প্রতীকে ভোট হয় উপজেলায়। তার পর থেকে সব স্থানীয় সরকারের নির্বাচন দলীয় প্রতীকেই হচ্ছে। তবে ২০১৯ সালে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদ সবার জন্য উন্মুক্ত রাখে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। সেই সময়ে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভাইস চেয়ারম্যান পদে কোনো দলীয় প্রার্থী রাখা হয়নি। তবে চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রার্থীরা নৌকা প্রতীকেই নির্বাচন করেছিলেন। এখনো আইনে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের বিধান আছে। কিন্তু এবার আওয়ামী লীগ দলীয় প্রতীক দেয়নি। আর বিএনপি বর্জন করছে এই ভোট।

দেশের মোট ৪৯৫টি উপজেলার মধ্যে এ পর্যায়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে নির্বাচনযোগ্য ৪৭৬টি উপজেলা পরিষদের নির্বাচন। ইসির তফসিল অনুযায়ী চার ধাপে অনুষ্ঠিত হবে এই নির্বাচন। প্রথম ধাপে ১৪৪টি উপজেলায় ৮ মে, দ্বিতীয় ধাপে ১৬০ উপজেলায় ২১ মে, তৃতীয় ধাপে ১১২ উপজেলায় ২৯ মে ও চতুর্থ ধাপে ৫৫ উপজেলায় ৬ জুন ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। তৃতীয় ও চতুর্থ ধাপের নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার এখনো সময় আছে। প্রথম ধাপে ২২টি, দ্বিতীয় ধাপে ২৪টি, তৃতীয় ধাপে ২১টি ও চতুর্থ ধাপে ২টি উপজেলায় ইলেকট্রনিক মেশিনে (ইভিএম) ভোট গ্রহণ করা হবে।

কিডনি বিক্রির অভিযোগ, প্রমাণ চান আশ্রমের বাসিন্দারা

প্রকাশ: ১৫ মে ২০২৪, ০৯:২৩ এএম
কিডনি বিক্রির অভিযোগ, প্রমাণ চান আশ্রমের বাসিন্দারা
চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারে কয়েকজন অসহায় বৃদ্ধ। ছবি: খবরের কাগজ

ট্রেনের ধাক্কায় গুরুতর আহত হয়ে ভৈরব বাজার রেলস্টেশনে পড়ে ছিল মো. আশিক। সেখান থেকে তার জায়গা হয় আলোচিত মিল্টন সমাদ্দারের চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ারে। ফিরে পায় নতুন জীবন।

সোশ্যাল মিডিয়া আর কিছু গণমাধ্যমের বরাতে কিশোর আশিক জানতে পারে তার নাকি কিডনি বিক্রি হয়ে গেছে। সত্যিই কী আশিকের কিডনি বিক্রি করেছেন মিল্টন? 

খোঁজ নিতে সাভার থানার কমলাপুর বাহের টেকে অবস্থিত মিল্টনের আশ্রমে হাজির হয় খবরের কাগজ। 

ছয় তলা ভবনের চতুর্থ তলায় অবস্থিত পুরুষ বেডে গিয়ে সন্ধান মেলে আশিকের। তোমার নাকি কিডনি বিক্রি হয়ে গেছে? প্রশ্ন শুনতেই এক গাল হেসে আশিক বলল, ‘সব মিথ্যা কথা। বিশ্বাস না হইলে আপনারাই দেখেন।’ বলে নিজের পরনে থাকা টি-শার্ট খুলে শরীর দেখায় আশিক। 

তার পেটের ডান পাশ এবং বাঁ পাশ কোথাও কোনো কাটাছেঁড়ার চিহ্ন মেলেনি। 

একই ফ্লোরে পুরুষদের ওয়ার্ডে থাকেন ময়মনসিংহের দেলোয়ার হোসেন। একমাত্র ছেলে বিয়ে করার পর সেই ঘরে নতুন বউয়ের জায়গা হলেও ঠাঁই হয় না মোবারকের। ছিলেন রাস্তায় রাস্তায়। তাকে অসুস্থ অবস্থায় রাস্তা থেকে তুলে আনেন মিল্টন। নিজের গল্প বলতে গিয়ে চোখের জল আটকে রাখতে পারেননি এই বৃদ্ধ বাবা। তার কাছে এখন সন্তানের চেয়েও বেশি প্রিয় মিল্টন। আপনাদের কিডনি নাকি খুলে নিয়ে যায় মিল্টন? প্রশ্নটা শুনে কিছুটা ক্ষেপে গেলেন ষাটোর্ধ্ব এই মানুষটি। তার ভাষ্য, ‘আপনারা আসছেন। এক তলা থিকা ছয় তলা পর্যন্ত লোক আছে, আপনারা যাচাই-বাছাই কইরা দেখেন কার কিডনি খুইলা নিছে, আমার বাবার কী দোষ। মিথ্যা মামলা দিয়া আমার বাবারে জেলে আটকাইয়া রাখছে। আমি যদি পারতাম জজ কোর্টে গিয়া এই কথাডি কইতাম।’ 

আশ্রমের বাসিন্দাদের মারধর করেন বলেও কিছু অভিযোগ আছে মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে। এই বিষয়ে খবরের কাগজ কথা বলে আশ্রমের কয়েকজনের সঙ্গে। তাদের একজন চট্টগ্রামের নূরজাহান। তিনি মিল্টনের কাছে আছেন প্রায় ৭ বছর ধরে। থাকেন আশ্রমের ৪নং মহিলা ওয়ার্ডে। পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত হওয়ায় নিজের বিছানায় বসেই কাঁপছিলেন। কাঁপা কণ্ঠেই বলেন, ‘এত বছর ধরে আছি, কোনো একটা মানুষের গায়ে একটা দাগ আছে দেখাইতে পারব কেউ, কিডনি বিক্রি, নারী পাচার এইসব মিথ্যা কথা। আমগো মা-বাপ কেউ নাই, হেরে পাইয়া আমরা আকাশের তারা পাইছি। নামাজ পইড়া দোয়া করি আল্লাহর কাছে। সরকারের কাছে বলতে চাই আমার বাবারে মুক্তি দেন।’ 

শুধু নূরজাহান না, বরিশালের তাসলিমাও এখানে আছেন ৭ বছর ধরে। তিনি বলেন ‘ওনাকে [মিল্টন] ষড়যন্ত্র করে ফাঁসানো হয়েছে। উনি খুবই ভালো মানুষ। মা ছাড়া সে আমাদের সঙ্গে কথাই বলত না। ওনার নামে সব মিথ্যা কথা রটানো হইছে। উনি না থাকলে আমরা কোথায় যাব কোথায় থাকব।’ বলেই কাঁদতে থাকেন সবহারা এই অসহায় মা। শিশু থেকে বৃদ্ধ, নারী থেকে পুরুষ আশ্রমের এমন প্রায় ২০ জনের সঙ্গে কথা বলে খবরের কাগজ। মিল্টন সমাদ্দারকে নিয়ে কারও কোনো অভিযোগ নেই। তাদের প্রত্যেকের একটাই কথা, তারা মিল্টন সমাদ্দারকে ফেরত চান। প্রয়োজনে তারা সবাই মিলে মিল্টনের পক্ষে সাক্ষ্য দিতেও রাজি আছেন। 

বর্তমানে সাময়িক সময়ের জন্য ‘চাইল্ড অ্যান্ড ওল্ড এজ কেয়ার’ এর দায়িত্ব পেয়েছে আলহাজ শামসুল হক ফাউন্ডেশন। কথা হয় এই ফাউন্ডেশনের এক কর্মকর্তার সঙ্গে। তিনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘বেশ কিছু দিন ধরেই আমি এই আশ্রমটিতে আছি। যেসব বিষয় শোনা যাচ্ছে চারদিকে এমন কিছুই আমি এখানে এসে দেখতে পাইনি। সবই ঠিকঠাক আছে।’

মিল্টন সমাদ্দারের বিরুদ্ধে মামলা, জেল হাজত, থানা পুলিশ এই বিষয়গুলোতে অনেকটাই মুষড়ে পড়েছেন আশ্রমের বাসিন্দারা। তাদের চোখে মুখে অজানা শঙ্কা। তাদের দাবি, মিথ্যা মামলা থেকে মিল্টন সমাদ্দার যত দ্রুত মুক্ত হয়ে তাদের কাছে ফিরে আসবেন ততই দ্রুত তাদের মুখে হাসি ফুটবে।

> ‘৬ ফুট রাস্তা’ই কাল হলো মিল্টনের
> মিল্টনের সাভারের আশ্রম, অভিযোগের সত্যতা মেলেনি

আসছে বাজেট ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা

প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৪, ০২:৪২ পিএম
আসছে বাজেট ইতিহাসের সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা
ছবি: সংগৃহীত

আগামী অর্থবছরের বাজেটে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) জন্য বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় অঙ্কের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বেঁধে দিলেন অর্থমন্ত্রী। আর এ জন্য ভ্যাট ও আয়কর আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হলো। 

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর ফলে এনবিআর নতুন কর, ভ্যাট ও শুল্ক আরোপ করবে। শেষ পর্যন্ত যা সাধারণ মানুষের ওপর চাপ বাড়াবে। আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য নষ্ট হবে। অর্থনীতি ঝুঁকিতে পড়বে। 

এতে এ লক্ষ্যমাত্রা কমাতে এনবিআর জোরালো আবেদন জানায়। তবে তা আমলে নেননি অর্থমন্ত্রী। এনবিআর সূত্র এসব জানায়। 
সূত্র আরও জানায়, অতীতে পরোক্ষ করের ওপর নির্ভরতায় রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা পূরণের হিসাব কষলেও এবারে চিত্র ভিন্ন। এর আগের বছরগুলোতে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের সবচেয়ে বড় খাত রাখা হয় ভ্যাট (ভ্যালু অ্যাডেড ট্যাক্স) বা মূসক (মূল্য সংযোজন কর)। এরপর আয়কর, সবচেয়ে কম শুল্ক। আগামী অর্থবছরের জন্য এনিবআরের আয়কর ও ভ্যাট আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা একই রাখলেন অর্থমন্ত্রী। 

অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে আগামী অর্থবছরের জন্য এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ৪ লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা চাপিয়ে দিলেন। এর মধ্যে ভ্যাট খাত থেকে ১ লাখ ৭৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকা, আয়কর ১ লাখ ৭৭ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং শুল্ক ১ লাখ ২৪ হাজার কোটি টাকা। 
চলতি অর্থবছর এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্য ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা। যার মধ্যে মূসক থেকে ১ লাখ ৫৯ হাজার ১০০ কোটি টাকা, আয়কর থেকে ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ও আমদানি-রপ্তানি শুল্ক থেকে ১ লাখ ১৬ হাজার ১০০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা ঠিক করা হয়েছে।

ঋণ অনুমোদনের আগেই আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকে রাজস্ব আদায় বাড়ানোর শর্ত দেওয়া হয়। এ শর্ত মেনেই ঋণ নেয় সরকার। চলতি অর্থবছরের শুরুতে এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ৪ লাখ ৩০ হাজার কোটি টাকা নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু এরই মধ্যে এনবিআরের রাজস্ব ঘাটতি ২০ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। বাধ্য হয়েই এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা সংশোধন করতে হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ২০ হাজার কোটি টাকা কমিয়ে ৪ লাখ ১০ হাজার কোটি টাকা ধার্য করা হয়েছে। এতে খুশি হয়নি আইএমএফ। তারা আগামী অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা বাড়িয়ে এবারের ঘাটতি পুষিয়ে নিতে বলেছে। 

আইএমএফ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, রাজস্ব খাত সংস্কারের মাধ্যমে এনবিআরকে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশের কর-জিডিপির অনুপাত দশমিক ৫ শতাংশ বাড়িয়ে ৮ দশমিক ৩ করতে হবে। এ শর্ত পূরণ করতে গেলে বর্তমানে আমাদের যে রাজস্ব আয় আছে, তার চেয়ে প্রায় ৬৫ হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত আয় করতে হবে। অথচ এরই মধ্যে এনবিআরের ঘাটতি ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি। আগামী অর্থবছর অর্থাৎ, ২০২৪-২৫ অর্থবছরের শেষে কর-জিডিপির অনুপাত ৮ দশমিক ৮ শতাংশে উন্নীত করতে হবে। এ লক্ষ্য অর্জন করতে হলে রাজস্ব থেকে ২০২৪-২৫ অর্থবছরে অতিরিক্ত আয় করতে হবে ৭৩ হাজার কোটি টাকার বেশি। আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির সর্বশেষ বছর অর্থাৎ, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে কর-জিডিপির অনুপাতের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করতে বলেছে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ। এ অর্থবছরে এনবিআরকে বর্তমান আয়ের তুলনায় অতিরিক্ত আরও ৯৬ হাজার কোটি টাকা আয় করতে হবে। সব মিলিয়ে তিন অর্থবছর শেষে ২ লাখ ৩৪ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত রাজস্ব আদায় করতে হবে এনবিআরকে। 

সাবেক তত্ত্বধায়ক সরকারের উপদেষ্টা মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম খবরের কাগজকে বলেন, প্রতি অর্থবছরই ঘাটতি থাকছে, তারপরও এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানো হয়েছে। এতে সমগ্র আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য নষ্ট হবে। অর্থনীতির ঝুঁকি বাড়বে। বড় বাজেট দিয়ে বড় লক্ষ্যমাত্রা চাপিয়ে দেওয়ার অর্থ হলো উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা। 

তিনি আরও বলেন, মূল্যস্ফীতি বাড়ছে। সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়ছে। এমন পরিস্থিতিতে রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোর অর্থ হলো নতুন কর, ভ্যাট ও শুল্ক চাপাতে এনবিআরকে বাধ্য করা, যা শেষ পর্যন্ত সাধারণ মানুষকে বহন করতে হবে। জিনিসপত্রের দাম বাড়বে। বাড়তি খরচের অর্থ কোথা থেকে জোগাড় করবে? আয় বাড়ার কথা তো শোনা যায় না। 

ভ্যাটের হার বাড়ানোয় পণ্যের দাম বাড়বে। ভ্যাট যোগ করে পণ্যের মূল্যের সঙ্গে দাম আদায় করা হয়। ভোক্তা না জেনেই তা পরিশোধ করেন। আগামী অর্থবছরের বাজেট ভ্যাটের হার বাড়ানোর ফলে পণ্যসামগ্রীর দাম আরেক ধাপ বাড়বে।  

বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও সামাজিক সুরক্ষা বাড়ানোর তাগিদ

প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৪, ০১:১৮ পিএম
বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও সামাজিক সুরক্ষা বাড়ানোর তাগিদ

আগামী অর্থবছরের বাজেটে (২০২৪-২৫) কর্মসংস্থান বৃদ্ধি ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ থাকবে। এ ছাড়া সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ সংকটের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যয় সংকোচনের নীতি অনুসরণ করছে সরকার। সেই বিবেচনায় আসন্ন বাজেটের আকার তুলনামূলক ছোট হবে।

সোমবার (১৪ মে) গণভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে আগামী বাজেট সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে উপস্থাপনকালে এ অভিমত তুলে ধরেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। 

আগামী ৬ জুন জাতীয় সংসদে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেট পেশ করবেন অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। প্রস্তাবিত বাজেটে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে তা অবহিত করতে এই বৈঠকের আয়োজন করা হয়। অর্থমন্ত্রী অসুস্থ থাকায় ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত ছিলেন তিনি। তবে অর্থপ্রতিমন্ত্রী ওয়াশিকা আয়শা খান বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় অর্থসচিব ড. খায়রুজ্জামানসহ বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে জড়িত অর্থ বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। আজ রাজস্ববিষয়ক প্রস্তাবসমূহ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) বৈঠক হবে। বাজেট ঘোষণার আগে প্রতিবছর নতুন বাজেটে গৃহীত প্রস্তাবগুলো নিয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় ও এনবিআরের কর্মকর্তারা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। প্রতিবারের মতো এবারও বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর দিকনির্দেশনা পাওয়ার পরই চূড়ান্ত করা হবে বাজেট। 

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, আগামী বাজেটের বিভিন্ন পদক্ষেপগুলো পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেনটেশনের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরা হয়। প্রধানমন্ত্রী মনোযোগ দিয়ে প্রস্তাবগুলো শোনেন। বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলেছেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে নিম্নআয়ের মানুষকে স্বস্তি দিতে সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির আওতায় ভাতাভোগীর সংখ্যা আরও বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছেন তিনি। 

অন্য বছরগুলোতে আগের চেয়ে কমপক্ষে ১০ থেকে ১২ শতাংশ বেশি বরাদ্দ রেখে নতুন বাজেটের আকার নির্ধারণ করা হয়। এবার পরিস্থিতি ভিন্ন। 

মাত্র ৫ শতাংশ বেশি ব্যয়ের লক্ষ্য ধরে আগামী বাজেটের আকার ধরা হচ্ছে। কারণ বৈশ্বিক এবং অম্ভ্যন্তরীণ প্রেক্ষাপটে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপি কমে গেছে। তা ছাড়া রাজস্ব আহরণে বিশাল ঘাটতি থাকায় সম্পদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এসব কারণে বাজেটের আকার তুলনামূলক ছোট করা হচ্ছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র বলেছে, আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটের সম্ভাব্য আকার হবে ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। বাজেটের এই আকার চলতি অর্থবছরের মূল বাজেট অপেক্ষা ৪ দশমিক ৬২ শতাংশ বেশি। উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটের আকার ৭ লাখ ৬১ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা।

বৈঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের উপস্থাপনায় বলা হয়, বিশ্ব অর্থনীতি এবং অভ্যন্তরীণ সামষ্টিক অর্থনৈতিক অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে মুদ্রানীতির সঙ্গে সমন্বয় রেখে আগামী বাজেট কিছুটা সংকোচনমূলক করার পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে। একই সঙ্গে বাজেট ঘাটতি সহনীয় পর্যায়ে রেখে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণসহ সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনাকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। 

চলতি অর্থবছরের মূল বাজেটে মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬ শতাংশে ধরে রাখার লক্ষ্য থাকলেও বিশ্ব অর্থনৈতিক পরিস্থিতি ও অভ্যন্তরীণ নানা কারণে তা সংশোধিত বাজেটে বাড়িয়ে সাড়ে ৭ শতাংশ করা হয়। তবে বাস্তবতায় এটি কিছুটা বাড়বে। তবে নানা উদ্যোগের কারণে আগামী অর্থবছর মূল্যস্ফীতি সাড়ে ৬-এ নামিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা মনে করছেন।

বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলেছে, মূল্যস্ফীতি এখন অর্থনীতির বড় চ্যালেঞ্জ। তাই মূল্যস্ফীতির লাগাম টেনে ধরতে চায় সরকার। এ জন্য আগামী বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বাজেট প্রণয়নের সঙ্গে সম্পৃক্ত অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা খবরের কাগজকে বলেন, সরকারের লক্ষ্য হচ্ছে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনা। কারণ এটি এখন অর্থনীতির বড় ইস্যু। বাংলাদেশ ব্যাংক নীতি সুদহার বৃদ্ধির ফলে মূল্যস্ফীতির ওপর বিছুটা ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। আশা করা যাচ্ছে, আগামী ছয় মাসের মধ্যে মূল্যস্ফীতি কমে আসবে। 

বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হয়, মূল্যস্ফীতির আঘাত থেকে দরিদ্রদের সুরক্ষায় সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় উপকারভোগীর সংখ্যা অন্তত সাড়ে পাঁচ লাখ বাড়ানোর পরিকল্পনায় রয়েছে। একই সঙ্গে খোলা ট্রাকে খাদ্যশস্য বিক্রি কার্যক্রম বাড়ানোর পাশাপাশি টিসিবির মাধ্যমে বর্তমানে এক কোটি পরিবার যে কম মূল্যে খাদ্যপণ্য পাচ্ছে, সেখানে পরিবারের সংখ্যা এবং পণ্যসংখ্যা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার পাশাপাশি সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর আওতায় উপকারভোগীর সংখ্যা আরও কিছুটা বাড়ানোর তাগিদ দেন বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।

ডিসেম্বর নাগাদ অর্থনীতিতে চাপ কমে আসবে

সামষ্টিক অর্থনীতি বিষয়ে বৈঠকে আলোচনার পর্যায়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়, আগামী ডিসেম্বর নাগাদ অর্থনীতিতে গতি আসবে। এর পক্ষে যুক্তি দিয়ে বলা হয়, বৈদেশিক লেনদেনের ক্ষেত্রে রেমিট্যান্স ও রপ্তানি কিছুটা বাড়ায় ইতোমধ্যে চলতি হিসাবে বেশ উন্নতি হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজারে সুদহার বেশি হওয়ায় দায় পরিশোধের জন্য বেসরকারি উদ্যোক্তারা কিস্তির বাইরেও বাড়তি পেমেন্ট করেছেন। এ কারণেই আর্থিক হিসাবে বড় ঘাটতি দেখা দিয়েছে।

তবে আশার কথা হচ্ছে, অল্পকিছু দিনের মধ্যে এ ঘাটতি কমে আসবে। তা ছাড়া নতুন বিনিময় হার ঘোষণার ফলে রপ্তানির বিপরীতে অর্থ আসা এবং রেমিট্যান্স বাড়বে বলে আশা করা যাচ্ছে। একই সঙ্গে বিদেশি বিনিয়োগ প্রবাহ বাড়ার সম্ভাবনাও রয়েছে।  

এমপিদের গাড়ি আমদানিতে শুল্ক আরোপের প্রস্তাব

প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৪, ০১:০৬ পিএম
এমপিদের গাড়ি আমদানিতে শুল্ক আরোপের প্রস্তাব
ছবি: সংগৃহীত

এরশাদ সরকারের আমল (১৯৮৮ সালের ২৪ মে এসআরও জারি করে) থেকে জাতীয় সংসদ সদস্যদের (এমপি) শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা দেওয়া হয়েছে। আগামী অর্থবছরের বাজেটে দীর্ঘদিনের এ সুবিধা কিছুটা কমানোর প্রস্তাব করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। 

সূত্র জানায়, এনবিআরের প্রস্তাবে ৫ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপের কথা বলা হয়েছে। তবে শেষ পর্যন্ত জাতীয় বাজেটে এনবিআরের এ প্রস্তাব অন্তর্ভুক্ত হবে কি না, তা নিয়ে এখনো পক্ষে-বিপক্ষে মত দেননি অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী এবং প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক সম্পর্কবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। 

সূত্র জানায়, এরই মধ্যে সরকারের অনেক প্রভাবশালী মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য এনবিআরের এ প্রস্তাবের বিরোধিতা করে অর্থমন্ত্রীসহ সরকারের নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের একাধিক ব্যক্তির কাছে বার্তা পাঠিয়েছেন। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) থেকেও সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানিতে শুল্ক সুবিধা কমানোর পরামর্শ দিয়েছে। 

সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা বাতিলসংক্রান্ত এনবিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সংসদ সদস্যদের আমদানি করা গাড়ির অধিকাংশই উচ্চমূল্যের, বিলাসবহুল। অধিকাংশ সংসদ সদস্য শুল্কমুক্ত সুবিধায় জাপানের তৈরি টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার স্টেশন ওয়াগন ব্র্যান্ডের প্রাডো টিএক্স ও ডিজেলচালিত ভিএক্স মডেলের গাড়ি আমদানি করেছেন। এ ছাড়া উচ্চমূল্যের অন্য ব্র্যান্ডের গাড়িও আমদানি করেছেন তারা।

সংসদ সদস্যরা শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানি করায় সরকারের এক মেয়াদে গড়ে ২৫০ কোটি থেকে ৩০০ কোটি টাকা রাজস্ব কম আদায় হয়। সে হিসাবে এ পর্যন্ত এনবিআর গড়ে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব কম পেয়েছে। এক/এগারো-পরবর্তী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে এ সুবিধা স্থগিত করা হয়। ২০১০ সালের ২৯ জুন অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পুনর্বহাল করে আবারও এসআরও জারি করে বলা হয়, সংসদ সদস্য হিসেবে ন্যূনতম দুই বছর মেয়াদ হলেই শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানির সুযোগ পাওয়া যাবে।

এনবিআরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, জাপানের তৈরি বিলাসবহুল টয়োটা ল্যান্ডক্রুজার স্টেশন ওয়াগন ব্র্যান্ডের প্রাডো টিএক্স ও ডিজেলচালিত ভিএক্স মডেলের গাড়ির বাজারমূল্য ৫০ লাখ থেকে ৭০ লাখ টাকা বা তার বেশি। শুল্ক কর হিসেবে এসব গাড়ি আমদানিতে এনবিআরের আইনানুযায়ী ক্রয়মূল্যের ৮ থেকে ১০ গুণ সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়ার কথা। সে হিসাবে বিলাসবহুল এসব গাড়ির প্রতিটি থেকে শুধু শুল্ক করই আসার কথা কমপক্ষে ৪ কোটি। ২০১০ সালের এসআরও অনুযায়ী, বর্তমান সরকারের শেষ সময়ে নির্বাচিত সংসদ সদস্যরা শুল্কমুক্ত গাড়ি আমদানির সুবিধা পান না। এ আইন পরিবর্তন করে ২০১৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর এসআরও জারি করে বলা হয়, এক দিনের সংসদ সদস্যও শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আনতে পারবেন। 

এনবিআরের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে খবরের কাগজকে বলেন, যে সরকারই ক্ষমতায় আসে তারাই শুল্কমুক্ত সুবিধায় সংসদ সদস্যদের গাড়ি আমদানির সুবিধা দিয়ে থাকে। এখানে এনবিআরের কিছু করার থাকে না। এবার আইএমএফের সুপারিশে এনবিআর থেকে শুল্কমুক্ত সুবিধায় গাড়ি আমদানির সুবিধা কমানো হয়েছে। শেষ পর্যন্ত প্রভাবশালীদের দাপটে এ প্রস্তাব রাখা যাবে কি না জানি না। 

নির্বাচনি ব্যয়ের হিসাব আইনের তোয়াক্কা করে না কেউ

প্রকাশ: ১৪ মে ২০২৪, ১২:৪৬ পিএম
আইনের তোয়াক্কা করে না কেউ
খবরের কাগজ গ্রাফিকস

গত ৭ জানুয়ারি দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর চার মাস পেরিয়ে গেলেও নির্বাচনি ব্যয়ের হিসাব (রিটার্ন) নির্বাচন কমিশনে জমা দেননি শতাধিক প্রার্থী ও ৯টি রাজনৈতিক দল। চট্টগ্রামসহ তিন জেলার প্রার্থীদের ব্যয়ের হিসাব এখনো পুরোপুরি বুঝে পাননি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। নির্বাচন বিশ্লেষকরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে এ বিষয়ে আইনের যথাযথ প্রয়োগ ও বাস্তবায়নে দুর্বলতার কারণেই বন্ধ হচ্ছে না এসব অনিয়ম।

গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) অনুসারে, ভোটের ফল গেজেট আকারে প্রকাশের পরবর্তী এক মাসের (৩০ দিন) মধ্যে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব প্রার্থী এবং তিন মাসের (৯০ দিন) মধ্যে সব দলের ইসিতে নির্বাচনি ব্যয়ের হিসাব বিবরণীর সত্যায়িত কপি দাখিল করা বাধ্যতামূলক। সংসদ নির্বাচনের পর সংস্থাটির নির্বাচন পরিচালনা শাখা থেকে এ বিষয়ে প্রজ্ঞাপন আদেশ জারি করা হয়। তাতে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সব প্রার্থী ও দলকে নির্বাচনি ব্যয়ের রিটার্ন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়।

আইন অনুযায়ী, এই দলগুলোর নির্বাচনি ব্যয়ের হিসাব জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল গত ৭ এপ্রিল। আর প্রার্থীদের হিসাব জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল গত ৭ ফেব্রুয়ারি। এবারের সংসদ নির্বাচনে ভোটের লড়াইয়ে অংশ নেয় ২৮টি রাজনৈতিক দল। 

সংসদ নির্বাচনে দেশের বিভিন্ন আসনের দায়িত্বপ্রাপ্ত রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে এ বিষয়ে খবরের কাগজের পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, আরপিও আইনে উল্লিখিত ভোট-পরবর্তী নির্ধারিত সময়ে ২৮টি দলের মধ্যে নির্বাচনি ব্যয়ের হিসাব (রিটার্ন) ইসিতে জমা দিয়েছে মোট ১৯টি রাজনৈতিক দল। তাদের মধ্যে সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর সংস্থার পক্ষ থেকে পাঠানো চিঠির পর ১০ হাজার টাকা জরিমানাসহ রিটার্ন জমা দিয়েছে চারটি দল। এখনো ব্যয়ের হিসাব জমা দেয়নি ৯টি দল। তারা হলো বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি- বাংলাদেশ ন্যাপ, বাংলাদেশ তরিকত ফেডারেশন, গণফোরাম, গণফ্রন্ট, জাকের পার্টি, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি। তাদের মধ্যে বাড়তি এক মাস সময় চেয়ে ইসিতে আবেদন করেছে দুটি দল- জাকের পার্টি ও বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট।

সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনের বিপরীতে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন মোট ১ হাজার ৯৭৭ জন। তাদের মধ্য থেকে ভোটের পর নির্বাচনি ব্যয় বিবরণী জমা দিয়েছেন ১ হাজার ৭৪৮ প্রার্থী। অন্যদিকে নির্ধারিত সময় শেষ হওয়ার পর চার মাস পেরিয়ে গেলেও এখনো নির্বাচনি ব্যয় বিবরণী জমা দেননি এক শর বেশি প্রার্থী। এ ছাড়া তিন জেলার (চট্টগ্রাম, হবিগঞ্জ ও নাটোর) প্রার্থীদের ব্যয়ের হিসাব এখনো পুরোপুরি বুঝে পাননি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। এবার প্রার্থীদের জন্য ভোটারপ্রতি সর্বোচ্চ ব্যয় ১০ টাকা এবং ভোটার সংখ্যা যা-ই হোক না কেন, একজন প্রার্থীর জন্য সর্বোচ্চ ২৫ লাখ টাকা নির্বাচনি ব্যয়সীমা নির্ধারণ করে দিয়েছিল ইসি। 

গণপ্রতিনিধিত্ব আইনে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর থেকে ভোট শেষ হওয়া পর্যন্ত রাজনৈতিক দলকে প্রার্থী অনুপাতে ব্যয়ের পরিমাণ নির্ধারণ করে দেওয়া হয়েছে। যেমন- কোনো দলের প্রার্থী ২০০ জনের বেশি হলে সর্বোচ্চ ৪ কোটি ৫০ লাখ টাকা, প্রার্থীর সংখ্যা ১০০ জনের বেশি, তবে ২০০ জনের কম হলে ব্যয়সীমা ৩ কোটি টাকা। এ ছাড়া কোনো দলের প্রার্থীর সংখ্যা ৫০ থেকে ১০০ হলে সেই দল দেড় কোটি টাকা এবং প্রার্থীর সংখ্যা ৫০ জনের কম হলে তাদের সর্বোচ্চ ব্যয়সীমা ৭৫ লাখ টাকা। 

বিগত দিনে আইন লঙ্ঘনের শাস্তি ও ব্যবস্থা
আইনে নির্ধারিত সময়ে নির্বাচনি ব্যয়ের বিবরণী জমা না দিলে সংশ্লিষ্ট প্রার্থীদের বিরুদ্ধে ন্যূনতম দুই থেকে সাত বছরের কারাদণ্ডের শাস্তি বা জরিমানার বিধান রয়েছে। আর দলের ক্ষেত্রে ১০ লাখ টাকা জরিমানা, এমনকি নিবন্ধন বাতিলের বিধান রয়েছে। 

বিগত বেশ কয়েকটি সংসদ নির্বাচনের নির্বাচনি ব্যয়ের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০৯ সালে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর নির্ধারিত সময়ে নির্বাচনি ব্যয় বিবরণী জমা না দিয়ে আইন লঙ্ঘনকারী অর্ধশতাধিক প্রার্থীর মধ্যে অন্তত ২৩ জনের বিরুদ্ধে ইসি মামলা করেছিল। যেটি ছিল সংসদ ভোটের পর নির্বাচনি ব্যয়ের রিটার্ন দাখিলে ব্যর্থ প্রার্থীদের বিরুদ্ধে মামলার প্রথম ঘটনা। 

তার আগে অষ্টম সংসদে প্রায় দুই হাজার প্রার্থীর মধ্যে পাঁচ শতাধিক প্রার্থীই রিটার্ন দাখিল না করে পার পেয়ে যান।

অন্যদিকে দলের ক্ষেত্রে নির্বাচনি ব্যয় বিবরণী জমা না দেওয়ার কারণে এ পর্যন্ত কোনো দলের রেজিস্ট্রেশন বাতিলের নজির নেই। তবে ২০১৪ সালে দশম সংসদ নির্বাচনের পর জাতীয় পার্টি নির্বাচনি ব্যয়ের হিসাব জমা না দেওয়ায় দলটির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের বিরুদ্ধে ইসি মামলা করেছিল। এ ছাড়া বিভিন্ন নির্বাচনে বেশির ভাগ দল ও প্রার্থীই সময়মতো তাদের ব্যয়ের রিটার্ন দাখিল না করে পার পেয়ে গেছেন। একই সঙ্গে প্রকৃত নির্বাচনি ব্যয়ের তথ্য তারা কৌশলে গোপন করেন। 

অনিয়ম নিয়ে টিআইবির বিশ্লেষণ
একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটে অংশ নেন ৩৯টি রাজনৈতিক দলের মোট ১ হাজার ৭৩৩ প্রার্থী। ওই নির্বাচনের পর ২১টি আসনের ৪৫ জন প্রার্থীর নির্বাচনি ব্যয়ের রিটার্ন নিয়ে গবেষণা করে আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থা টিআইবি। 

তাদের তথ্য অনুযায়ী, ব্যয়ের রিটার্ন জমা দেওয়া এসব প্রার্থীর মধ্যে ৪০ জন প্রার্থী ব্যয়ের রিটার্ন জমা দিয়েছেন। এই প্রার্থীদের নির্বাচনি ব্যয়ের হিসাবের তথ্য গবেষণা করে টিআইবি দেখতে পায়, বেশির ভাগ প্রার্থীই তাদের প্রকৃত ব্যয়ের তথ্য গোপন করেছেন। কোনো প্রার্থীই রিটার্নে ২৫ লাখ টাকার বেশি ব্যয় দেখাননি, বরং অনেক কম দেখিয়েছেন। ৪০ জনের মধ্যে একজন সর্বনিম্ন ব্যয় দেখিয়েছেন ৭১ হাজার ৩০০ টাকা। আর সর্বোচ্চ ব্যয় দেখিয়েছেন একজন, ২৫ লাখ টাকা। 

অথচ মাঠের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ৫৭ দশমিক ৯ শতাংশ প্রার্থীই প্রচারের জন্য অনুমোদিত সময়ে নির্ধারিত ব্যয়সীমার অনেক বেশি ব্যয় করেছেন।

এবারের সংসদ নির্বাচনে ২৮টি রাজনৈতিক দল ছাড়াও স্বতন্ত্র হিসেবে ভোটে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ৪৩৭ জন। সব মিলিয়ে ৩০০ আসনে ভোটের মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন ১ হাজার ৯৭৭ জন। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রার্থী দেয় জাতীয় পার্টি ২৬৪ জন, দ্বিতীয় স্থানে আওয়ামী লীগ ২৬৫ জন। দল দুটি সাড়ে ৪ কোটি টাকা ব্যয় করার সুযোগ পায়। এ ছাড়া তৃণমূল বিএনপি ১৩৫ জন ও ন্যাশনাল পিপলস পার্টি ১২২ জন করে প্রার্থী দিয়েছিল। দল দুটি সর্বোচ্চ ৩ কোটি টাকা করে ব্যয় করার সুযোগ পায়।

ভোটে অংশ নিলেই ব্যয়ের হিসাব দিতে হবে: এম সাখাওয়াত হোসেন
নির্ধারিত সময়ের মধ্যে নির্বাচনি ব্যয়ের হিসাব জমা না দিলে প্রার্থীদের জন্য জেল-জরিমানা আর দলের ক্ষেত্রে নিবন্ধন বাতিলের যে বিধান রয়েছে, তা কি কখনো কার্যকর করা হয়েছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে সাবেক নির্বাচন কমিশনার এম সাখাওয়াত হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘দলের ক্ষেত্রে না হলেও নির্বাচনি ব্যয়ের হিসাব জমা না দেওয়ায় সংখ্যা মনে নেই, বেশ কয়েকজন প্রার্থীর বিরুদ্ধে আমাদের সময় মামলা করা হয়েছিল। অনেকে জেলেও গিয়েছিলেন। এ ছাড়া কয়েকজনকে জরিমানা বা অর্থদণ্ড করা হয়। অনেক প্রার্থী মনে করেন ভোটে হেরে গেলে আবার রিটার্ন কেন দিতে হবে! আইনে আছে, হারুক বা জিতুক প্রার্থী হলে তাকে নির্বাচনি ব্যয়ের হিসাব দিতেই হবে। তবে দলের ক্ষেত্রে কোনো ব্যবস্থা নিতে হয়নি কারণ সব দলই নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই হিসাব দিয়েছিল, যদিও দল-প্রার্থী কারোর জমা দেওয়া হিসাবই বিশ্বাসযোগ্য নয়। কোটি কোটি টাকা ব্যয় করে নানা কৌশলে তারা নির্ধারিত অঙ্কের মধ্যেই ব্যয়ের হিসাব দিয়ে থাকেন। নির্বাচনি ব্যয়ের হিসাব নিয়ে এই লুকোচুরি বন্ধে এ আইন করার পরামর্শ আমি দিয়েছিলাম, পরবর্তী সময়ে সে ব্যাপারে কাউকে উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।’

লুকোচুরি দৃশ্যমান, আইন প্রয়োগে ব্যর্থ কর্তৃপক্ষ: ড. ইফতেখারুজ্জামান
নির্বাচনের প্রকৃত ব্যয় লুকানো, সময়মতো রিটার্ন দাখিল না করা- ঘটনাগুলো সবারই জানা, দৃশ্যমান। এসব অনিয়ম বন্ধের এখতিয়ার কমিশনের। আইনে সুস্পষ্টভাবে তা উল্লেখও করা আছে। তারপরও দু-একটা ব্যতিক্রম পদক্ষেপ ছাড়া আইনের যথাযথ বাস্তবায়নে কার্যকর উদ্যোগ দেখা যায় না। দীর্ঘদিন ধরে চলা এসব ঘটনায় অভিযুক্তদের কোনো শাস্তি না হওয়ায় এ ধরনের প্রতারণাকে দল বা প্রার্থীদের বেশির ভাগই স্বাভাবিক, অলিখিত এখতিয়ার মনে করেন। ভাবখানা এমন যে তারা সবকিছুর ঊর্ধ্বে। জনগণের প্রতিনিধিত্ব তারা কতখানি করেন তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। 

নির্বাচনকে ঘিরে ভোটের মাঠে যে অর্থের খেলা হয় তার খুব সামান্যই তাদের ব্যয় বিবরণীতে প্রদর্শিত হয়। কিন্তু বিষয়টি খতিয়ে দেখে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ দেখা যায় না। রাজনৈতিক শক্তির অনৈতিক প্রভাবে আইনি ব্যবস্থা কার্যকরে সংশ্লিষ্ট সংস্থার উদাসীনতা ও সক্ষমতার ঘাটতিতে তা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হচ্ছে। নির্বাচনে অনিয়মের বেড়াজাল কিন্তু তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক ছত্রছায়ায়, অর্থ ও পেশিশক্তির ধারাবাহিক প্রভাবে। এসবের প্রতিকার ইসির একার পক্ষে করা সম্ভব নয় মনে করি। একমাত্র পারবে রাজনৈতিক দলগুলো, যদি তারা দায়িত্ব নিয়ে প্রতিকারের উপায় খোঁজে। অনিয়ম রোধে নৈতিক ও জনকল্যাণমুখী রাজনীতিতে কীভাবে ফিরে আসা যার তার নীতি-কৌশল দলগুলোকেই নির্ধারণ করতে হবে। 

এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব অশোক কুমার দেবনাথ জানিয়েছেন, ‘আইনে বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে প্রার্থী ও দলগুলোর কাছ থেকে তাদের নির্বাচনি ব্যয়ের হিসাব জমা নিয়ে সেগুলো ইসিতে পাঠাতে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের কাছে কয়েক দফা চিঠি দেওয়া হয়েছে। এ পর্যন্ত বেশির ভাগ প্রার্থী ও দল হিসাব জমা দিয়েছেন। আইন অনুযায়ী আবেদন সাপেক্ষে হিসাব দিতে ব্যর্থ দলের জন্য ১৫ দিন জরিমানা ছাড়া এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানাসহ সর্বোচ্চ এক মাস বর্ধিত সময় দেওয়া যাবে। ওই সময়ের মধ্যে না দিলে দলের রেজিস্ট্রেশন বাতিল করার বিধান রয়েছে। বর্ধিত সময়সীমা শেষ হওয়ায় অভিযুক্ত দল ও প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’