প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস করছে মানুষ। ঘর থেকে বাইরে বের হলেই যেন গায়ে লাগছে আগুনের হলকা। কাঠফাটা রোদে প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়ার কথা চিন্তাও করছে না মানুষ। কিন্তু কর্মজীবী মানুষের তো আর সে উপায় নেই। তাপমাত্রা যতই বাড়ুক, জীবিকার টানে বাইরে বের হতেই হবে। অফিস-আদালতে এসি-ফ্যান থাকার বদৌলতে চাকরিজীবী মানুষের জীবনে স্বস্তি থাকলেও, গরমের দাবদাহ থেকে নিস্তার নেই দিনমজুর মানুষের। প্রচণ্ড গরমে খেটে খাওয়া এসব মানুষের চাহিদাকে পুঁজি করে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ফুটপাতে বসছে অস্থায়ী শরবতের দোকান।
রোদে অতিরিক্ত ঘামে সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে শরীর। অতিরিক্ত গরমে কাজ করার স্পৃহাও নেমে যায় তলানিতে। এ সময় রাস্তার ধারে বরফ দেওয়া এক গ্লাস ঠাণ্ডা লেবুর শরবতে চোখ আটকে যাবে যে কারোরই। শুধু লেবুর শরবত নয়, বিভিন্ন ফল দিয়ে বানানো রং-বেরঙের শীতল পানীয় শুধু দৃষ্টি নয়, মনেও দেয় প্রশান্তি। তপ্ত রোদে দিনভর কায়িক শ্রমের ফাঁকে এক গ্লাস ঠাণ্ডা শরবত প্রাণ জুড়িয়ে দেয় খেটে খাওয়া এই মানুষদের।
রবিবার (২৮ এপ্রিল) রাজধানীর বাংলামোটর, গুলিস্তান স্টেডিয়াম, গোলাপ শাহ মাজার, পোস্তাগোলাসহ বিভিন্ন কর্মব্যস্ত এলাকা ঘুরে দেখা যায় ভ্যানে করে জায়গায় জায়গায় বিক্রি করা হচ্ছে বরফ দেওয়া হরেক রকমের সুস্বাদু শরবত। এসব দোকান ঘিরে ভিড়ও রয়েছে ব্যাপক। শুধুমাত্র দিনমজুরই নয়, এসব দোকান থেকে শরবত কিনে খাচ্ছে বিভিন্ন পেশার মানুষ। বাদ যাচ্ছে না নারী ও শিশুরাও। চাহিদা তুঙ্গে থাকায় শরবতের বিক্রিও চলছে রমরমা।
গোলাপ শাহ মাজারের কাছে শরবত বিক্রেতা নাসির আহমেদ জানান, গত কয়েক দিনে গরম বেশি থাকার কারণে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তার দৈনিক শরবত বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ গ্লাস। প্রতি গ্লাস লেবু আর তোকমার শরবত বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা করে। লেবু আর তোকমার শরবতের পাশাপাশি নাসিরের দোকানে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ফলের শরবত। তোকমার শরবতের সঙ্গে আপেল, বেদানা, মাল্টাসহ বিভিন্ন ধরনের ফলের টুকরা মিশিয়ে বিক্রি হচ্ছে এসব ফলের শরবত। গ্লাসের সাইজ ও ফলের অনুপাত ভেদে এ শরবত বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা থেকে ৬০ টাকায়।
তবে এসব শরবত যতই সুস্বাদু আর রিফ্রেশিং হোক না কেন এর স্বাস্থ্যমান নিয়ে থেকে যায় অনেক প্রশ্ন। এসব শরবতে ব্যবহার করা পানি আর বরফ নিয়ে সন্দিহানও থাকেন অনেক মানুষ। চিকিৎসদের মতে, শরবত তৈরিতে ব্যবহৃত পানি ও বরফে থাকে নানা ধরনের রোগের জীবাণু। রাস্তার ধারে বিক্রি করা এসব পানীয় পানে হতে পারে বিভিন্ন ধরনের পানিবাহিত রোগ।
যদিও পানি আর বরফের উৎস নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে বিক্রেতা নাসির জানান, এসব শরবতে ব্যবহৃত পানি ফিল্টার করে বিশুদ্ধ করা হয়। আর বরফের যোগান দেন পরিচিত এক বরফকল। কিন্তু বরফের বিশুদ্ধতার ব্যাপারে জোর দিয়ে বলতে পারেন না নাসির। এ ব্যাপার নিয়ে তেমন কোনো চিন্তাও নেই তার। শুধু বিক্রেতা নাসির নন, এসব শরবতের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি নিয়ে সচেতনতা নেই ক্রেতাদেরও।
রোগতত্ত্ববিদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘এই গরমে আমাদের অবশ্যই পানি জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। কিন্তু অসাবধানতাবশত এই পানিটাই যেন আমাদের দুর্ভোগের কারণ না হয়ে দাঁড়ায়। খোলা জায়গায় শরবত বানানোর কারণে বিভিন্ন ধরনের রোগ জীবাণু পানিতে মিশে যায়। এ ছাড়াও এসব শরবতে বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার না করার কারণে পানিবাহিত বিভিন্ন জীবাণু থাকে। তা ছাড়া এসব শরবত যে পাত্রে বানানো হয়, অনেক সময় সেসব পাত্র পরিষ্কার থাকে না। ফলে নানা রকম রোগজীবাণু এসব পাত্র থেকে শরবতে মিশে যায়, সেখান থেকে মানবদেহে প্রবেশ করে বিভিন্ন রোগ ছড়ায়। এ ছাড়াও প্রচণ্ড গরমে শরবত খেলে তা শরীরে পানির তৃষ্ণা আরও বেশি বাড়িয়ে দেয়। সুতরাং গরম থেকে নিরাপদ থাকতে রাস্তার ধারে বিক্রি করা এসব শরবত না খেয়ে বিশুদ্ধ পানি পান করা উচিত। শরবতের বদলে স্যালাইন পানিও খাওয়া যেতে পারে।’