স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়েই গরমে স্বস্তির খোঁজ ফুটপাতের শরবতে । খবরের কাগজ
ঢাকা ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, বৃহস্পতিবার, ১৬ মে ২০২৪

স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়েই গরমে স্বস্তির খোঁজ ফুটপাতের শরবতে

প্রকাশ: ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬:২৩ পিএম
স্বাস্থ্যঝুঁকি নিয়েই গরমে স্বস্তির খোঁজ ফুটপাতের শরবতে
প্রচণ্ড গরম থেকে স্বস্তি পেতে পোস্তগোলা এলাকায় শরবত পান করছেন এক ব্যক্তি। এই শরবতই তার স্বাস্থ্যঝুঁকির কারণ হতে পারে। ছবি : খবরের কাগজ

প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস করছে মানুষ। ঘর থেকে বাইরে বের হলেই যেন গায়ে লাগছে আগুনের হলকা। কাঠফাটা রোদে প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে বের হওয়ার কথা চিন্তাও করছে না মানুষ। কিন্তু কর্মজীবী মানুষের তো আর সে উপায় নেই। তাপমাত্রা যতই বাড়ুক, জীবিকার টানে বাইরে বের হতেই হবে। অফিস-আদালতে এসি-ফ্যান থাকার বদৌলতে চাকরিজীবী মানুষের জীবনে স্বস্তি থাকলেও, গরমের দাবদাহ থেকে নিস্তার নেই দিনমজুর মানুষের। প্রচণ্ড গরমে খেটে খাওয়া এসব মানুষের চাহিদাকে পুঁজি করে রাজধানীর বিভিন্ন জায়গায় ফুটপাতে বসছে অস্থায়ী শরবতের দোকান।

রোদে অতিরিক্ত ঘামে সহজেই ক্লান্ত হয়ে পড়ে শরীর। অতিরিক্ত গরমে কাজ করার স্পৃহাও নেমে যায় তলানিতে। এ সময় রাস্তার ধারে বরফ দেওয়া এক গ্লাস ঠাণ্ডা লেবুর শরবতে চোখ আটকে যাবে যে কারোরই। শুধু লেবুর শরবত নয়, বিভিন্ন ফল দিয়ে বানানো রং-বেরঙের শীতল পানীয় শুধু দৃষ্টি নয়, মনেও দেয় প্রশান্তি। তপ্ত রোদে দিনভর কায়িক শ্রমের ফাঁকে এক গ্লাস ঠাণ্ডা শরবত প্রাণ জুড়িয়ে দেয় খেটে খাওয়া এই মানুষদের।

রবিবার (২৮ এপ্রিল) রাজধানীর বাংলামোটর, গুলিস্তান স্টেডিয়াম, গোলাপ শাহ মাজার, পোস্তাগোলাসহ বিভিন্ন কর্মব্যস্ত এলাকা ঘুরে দেখা যায় ভ্যানে করে জায়গায় জায়গায় বিক্রি করা হচ্ছে বরফ দেওয়া হরেক রকমের সুস্বাদু শরবত। এসব দোকান ঘিরে ভিড়ও রয়েছে ব্যাপক। শুধুমাত্র দিনমজুরই নয়, এসব দোকান থেকে শরবত কিনে খাচ্ছে বিভিন্ন পেশার মানুষ। বাদ যাচ্ছে না নারী ও শিশুরাও। চাহিদা তুঙ্গে থাকায় শরবতের বিক্রিও চলছে রমরমা।

গোলাপ শাহ মাজারের কাছে শরবত বিক্রেতা নাসির আহমেদ জানান, গত কয়েক দিনে গরম বেশি থাকার কারণে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত তার দৈনিক শরবত বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ গ্লাস। প্রতি গ্লাস লেবু আর তোকমার শরবত বিক্রি হচ্ছে ১০ টাকা করে। লেবু আর তোকমার শরবতের পাশাপাশি নাসিরের দোকানে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন ফলের শরবত। তোকমার শরবতের সঙ্গে আপেল, বেদানা, মাল্টাসহ বিভিন্ন ধরনের ফলের টুকরা মিশিয়ে বিক্রি হচ্ছে এসব ফলের শরবত। গ্লাসের সাইজ ও ফলের অনুপাত ভেদে এ শরবত বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা থেকে ৬০ টাকায়।

তবে এসব শরবত যতই সুস্বাদু আর রিফ্রেশিং হোক না কেন এর স্বাস্থ্যমান নিয়ে থেকে যায় অনেক প্রশ্ন। এসব শরবতে ব্যবহার করা পানি আর বরফ নিয়ে সন্দিহানও থাকেন অনেক মানুষ। চিকিৎসদের মতে, শরবত তৈরিতে ব্যবহৃত পানি ও বরফে থাকে নানা ধরনের রোগের জীবাণু। রাস্তার ধারে বিক্রি করা এসব পানীয় পানে হতে পারে বিভিন্ন ধরনের পানিবাহিত রোগ।

যদিও পানি আর বরফের উৎস নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে বিক্রেতা নাসির জানান, এসব শরবতে ব্যবহৃত পানি ফিল্টার করে বিশুদ্ধ করা হয়। আর বরফের যোগান দেন পরিচিত এক বরফকল। কিন্তু বরফের বিশুদ্ধতার ব্যাপারে জোর দিয়ে বলতে পারেন না নাসির। এ ব্যাপার নিয়ে তেমন কোনো চিন্তাও নেই তার। শুধু বিক্রেতা নাসির নন, এসব শরবতের স্বাস্থ্যগত ঝুঁকি নিয়ে সচেতনতা নেই ক্রেতাদেরও।

রোগতত্ত্ববিদ ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উপদেষ্টা ডা. মুশতাক হোসেন খবরের কাগজকে বলেন, ‘এই গরমে আমাদের অবশ্যই পানি জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। কিন্তু অসাবধানতাবশত এই পানিটাই যেন আমাদের দুর্ভোগের কারণ না হয়ে দাঁড়ায়। খোলা জায়গায় শরবত বানানোর কারণে বিভিন্ন ধরনের রোগ জীবাণু পানিতে মিশে যায়। এ ছাড়াও এসব শরবতে বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার না করার কারণে পানিবাহিত বিভিন্ন জীবাণু থাকে। তা ছাড়া এসব শরবত যে পাত্রে বানানো হয়, অনেক সময় সেসব পাত্র পরিষ্কার থাকে না। ফলে নানা রকম রোগজীবাণু এসব পাত্র থেকে শরবতে মিশে যায়, সেখান থেকে মানবদেহে প্রবেশ করে বিভিন্ন রোগ ছড়ায়। এ ছাড়াও প্রচণ্ড গরমে শরবত খেলে তা শরীরে পানির তৃষ্ণা আরও বেশি বাড়িয়ে দেয়। সুতরাং গরম থেকে নিরাপদ থাকতে রাস্তার ধারে বিক্রি করা এসব শরবত না খেয়ে বিশুদ্ধ পানি পান করা উচিত। শরবতের বদলে স্যালাইন পানিও খাওয়া যেতে পারে।’

 

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব দিতে হবে: মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৪, ১২:০০ পিএম
মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে গুরুত্ব দিতে হবে: মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম
এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম

মূল্যস্ফীতি বেড়েই চলেছে। সাধারণ মানুষ কষ্ট পাচ্ছেন। আগামী অর্থবছরের বাজেটে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সবচেয়ে গুরুত্ব দিতে হবে। কৃষি উৎপাদনে বিভিন্ন সুবিধা দিতে হবে। একই সঙ্গে খাদ্যপণ্য আমদানিতে ছাড় দিতে হবে। বাজার নিয়ন্ত্রণে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। আগামী ২০২৪-২৫ অর্থবছরের জন্য কেমন বাজেট চান, জানতে চাওয়া হলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এ বি মির্জ্জা মো. আজিজুল ইসলাম খবরের কাগজকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন। রাজধানীর মহাখালীতে নিজস্ব কার্যালয়ে তিনি কথা বলেন। 

অর্থনীতির এ বিশ্লেষক বলেন, করোনা শেষ না হতেই শুরু হয়েছে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ। ডলারসংকট চলছে। এতে খাদ্যপণ্য উৎপাদন এবং আমদানিতে খরচ বেড়েছে। ফলে বাজারে ন্যূনতম লাভ রেখে বিক্রি করলেও দাম আগের চেয়ে বেড়েছে। এর সঙ্গে যোগ হয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীদের কারসাজি। দাম যতটা বাড়ার কথা, বিভিন্ন অজুহাতে বাড়ানো হয়েছে তারচেয়ে অনেক বেশি। 

মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘প্রতি অর্থবছর জাতীয় বাজেটের আকার বাড়ানো হচ্ছে। কিন্তু আকার বাড়ানোর সঙ্গে আনুপাতিক হারে বাড়ছে না শিক্ষা ও স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দ। আমরা স্বাস্থ্য খাতে কতটা পিছিয়ে আছি, তা করোনা ব্যাধির প্রকোপ শুরু হওয়ার পর পরিষ্কার হয়েছে। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসার মান বাড়াতে হবে। এ জন্য কম দামে আধুনিক চিকিৎসাসামগ্রী আমদানির সুযোগ বাড়াতে হবে। শুধু সরকারি খাতে নজর দিলেই হবে না, বেসরকারি খাতেও কম খরচে চিকিৎসার ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।’ 

আগামী বাজেটে শিক্ষা খাতে বরাদ্দ বাড়ানোর পক্ষে যুক্তি তুলে ধরে এই বিশেষজ্ঞ বলেন, খাতা, কলম, স্কুল ব্যাগ, কাগজসহ প্রায় সব ধরনের শিক্ষা উপকরণের দাম বেড়েছে। বেতন বেড়েছে বেসরকারি স্কুলের। কোচিং সেন্টারগুলোও রমরমা বাণিজ্য করছে। সব মিলিয়ে সাধারণ মানুষ বিপাকে পড়েছেন। আগামী বাজেটে শুধু শিক্ষা বরাদ্দ বাড়ালেই হবে না। শিক্ষা খাতে সুশাসন নিশ্চিত করতে হবে। 

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের এ উপদেষ্টা বলেন, বাজেটের আকার বাড়ানো হচ্ছে। তার সঙ্গে কাগজ-কলমে হিসাব মেলানোর জন্য রাজস্ব বোর্ডের রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রাও বাড়ানো হচ্ছে, যা উচ্চাভিলাষী পরিকল্পনা। ডলারসংকটের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ প্রভাবে ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো যাচ্ছে না। শিল্প খাতেও নেতিবাচক ধারা। অনেকের চাকরিও চলে গিয়েছে। বেতন কমিয়ে দেওয়া হয়েছে অনেকের। এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের পক্ষে সময়মতো রাজস্ব পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা বাড়ানোয় সাধারণ মানুষের ওপর চাপ বাড়ছে। এনবিআর রাজস্ব আদায়ে উচ্চ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করায় অর্থনীতিতে ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। সরকারকে এ ধারা থেকে সরে এসে বাস্তব পরিস্থিতি বিবেচনায় রেখে আগামী অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ সম্পদ থেকে রাজস্ব আয় নির্ধারণের পরামর্শ দেন অর্থনীতিবিদ মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম। তিনি আরও বলেন, বাহবা পাওয়ার জন্য বড় বড় উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ না করে বাস্তবমুখী পদক্ষেপ নিতে হবে। 

মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের দেশে অর্থনীতির বড় ব্যাধি অর্থ পাচার। স্থানীয় বিনিয়োগ উৎসাহিত করতে বিভিন্ন সুবিধা বাড়াতে হবে। মনে রাখতে হবে, দেশের উদ্যোক্তারা বিনিয়োগে এলে বিদেশি উদ্যোক্তারা আগ্রহী হন। দেশের মধ্যে বিনিয়োগে আগ্রহী হলে অর্থপ্রবাহ বাড়তে হবে। ফলে অর্থ পাচার কমবে। অন্যদিকে পুঁজিবাজারেও গতি আনতে হবে।’ এসব সুবিধা দেওয়ার পাশাপাশি আগামী বাজেটে অর্থ পাচার বন্ধে কঠোর আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের পরামর্শ দেন এ অর্থনীতিবিদ। 

জীবনযাত্রার ব্যয় অনেক বেড়েছে- এই অভিমত ব্যক্ত করে সাবেক এ উপদেষ্টা বলেন, চাল, ডাল, লবণ, তেলসহ প্রায় সব খাবারেরই দাম বেড়েছে। আর্থিক সংকটে সাধারণ মানুষ খাবার তালিকা কাটছাঁট করেছেন। শুধু তা-ই নয়, খাবার বাদে অন্যান্য খরচও বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আসছে বাজেটে নতুন কর আরোপ করে সাধারণ মানুষের ভার বাড়ানো যাবে না। করের আওতা বাড়ানোর ওপর জোর দিতে হবে। এ জন্য উপজেলা পর্যায়ে এনবিআরকে পৌঁছাতে হবে।

মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, এনবিআরের রাজস্ব আদায়ের সক্ষমতা বাড়ানো প্রয়োজন। এ জন্য প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর জোর দিতে হবে। কয়েক বছর থেকে এনবিআর এ বিষয়ে বিভিন্ন উদ্যোগের কথা শোনালেও তা সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হয়নি।

তিনি আরও বলেন, হুন্ডিতে অর্থ লেনদেন কমানোর ওপর নজর দিতে হবে। অনেকে হুন্ডিতে প্রবাসী আয় আনছেন। ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রবাসী আয় আনতে উৎসাহিত করতে হবে। এ জন্য নীতিসহায়তা জরুরি। আগামী বাজেটে এ বিষয়ে বড় ধরনের সুবিধা দিতে হবে। বিশ্ব উন্নয়ন ও অর্থনীতির সঙ্গে তাল মিলিয়ে নিজেদের এবং দেশকে এগিয়ে নিতে হলে প্রযুক্তি নির্ভরতা বাড়াতে হবে। ইন্টারনেটের দাম কমাতে হবে। তৃণমূল পর্যায়েও এ সুবিধা পৌঁছে দিতে হবে। আগামী বাজেটে প্রযুক্তি খাতের সব সুবিধা বহাল রেখে নতুন সুবিধা দিতে হবে। 

সরকারের আয় বাড়িয়ে বিদেশি ঋণ কমানোর পরামর্শ দিয়ে অর্থনীতির এ বিশ্লেষক বলেন, সরকারের আয় বাড়াতে হবে। অপ্রচলিত খাত থেকে রাজস্ব আদায় বাড়ানো দরকার। আয়কর ও ভ্যাট আদায়ে স্বচ্ছতা আনতে হবে। যারা এখনো আয়কর ও ভ্যাট দেওয়ার যোগ্য অথচ দিচ্ছেন না, তাদের কাছ থেকে আদায়ে যেতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা, বড় মাপের করদাতা যারা বছরের পর বছর কর ফাঁকি দিয়ে চলেছেন, তাদের কাছ থেকে বকেয়াসহ নিয়মিত আদায় করতে হবে। একই সঙ্গে সরকারের কম প্রয়োজনীয় খরচ কমাতে হবে। এতে সরকারের আয় বাড়বে। বিদেশি ঋণের প্রতি নির্ভরশীলতা কমবে।

একাদশে ভর্তি নীতিমালায় কোটা পুনর্বিন্যাস

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৪, ১০:০৮ এএম
একাদশে ভর্তি নীতিমালায় কোটা পুনর্বিন্যাস
শিক্ষা মন্ত্রণালয়

২০২৪ সালে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য নীতিমালা প্রকাশ করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এতে কোটার আসন পুনর্বিন্যাস করা হয়েছে। ২০২৩ সালে ভর্তির নির্ধারিত ফি চলতি বছরও অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে।

বুধবার (১৫ মে) মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের ওয়েবসাইটে ‘একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির নীতিমালা-২০২৪’ শিরোনামে এ নীতিমালা আপলোড করা হয়।

২০২৩ সালের নীতিমালার সঙ্গে পর্যালোচনায় দেখা গেছে, প্রথম দফায় সংজ্ঞা নীতিমালায় ১.৫ উপনীতি যুক্ত করা হয়েছে। যেখানে ‘দপ্তর সংস্থা’ বলতে তফসিল-ঘ-এর একটি ব্যাখ্যা দেওয়া হয়েছে। 

২০২৩ সালের নীতিমালায় ছিল, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও অধীনস্থ দপ্তর/সংস্থায় কর্মরত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সন্তানদের ক্ষেত্রে মহানগর, বিভাগীয় ও জেলা সদরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য ন্যূনতম যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে ২ শতাংশ কোটা সংরক্ষিত থাকবে।’ 

এবার দুই ভাগ সংরক্ষিত আসনের এক ভাগ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা/কর্মচারীর সন্তান এবং আরেক ভাগ অধীনস্ত দপ্তরের কর্মকর্তা/কর্মচারীর সন্তানদের জন্য রাখা হয়েছে।

নতুন নীতিমালার ৩ ধারার (প্রার্থী নির্বাচনে অনুসরণীয় পদ্ধতি) ৩.২ উপধারায় বলা হয়েছে, ‘কলেজ/সমমানের প্রতিষ্ঠানে ভর্তির ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কলেজ/সমমানের প্রতিষ্ঠানের ৯৩ শতাংশ আসন সবার জন্য উন্মুক্ত থাকবে, যা মেধার ভিত্তিতে নির্বাচন করা হবে। শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে কর্মরত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ১ শতাংশ এবং অধীনস্ত দপ্তর/সংস্থায় (তফসিল-ঘ অনুযায়ী) কর্মরত কর্মকর্তা/কর্মচারীদের সন্তানদের ক্ষেত্রে ১ শতাংশসহ মোট ২ শতাংশ কোটা মহানগর, বিভাগীয় ও জেলা সদরের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য ন্যূনতম যোগ্যতা থাকা সাপেক্ষে সংরক্ষিত থাকবে।’

কোটার আসন পুনর্বিন্যাসের বিষয়ে জানতে চাইলে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বোর্ড ঢাকার চেয়ারম্যান ও আন্তবোর্ড সমন্বয়ক কমিটির আহ্বায়ক তপন কুমার সরকার খবরের কাগজকে বলেন, এ রকম করা হয়েছে। এটা কী কারণে করা হয়েছে মন্ত্রণালয় ভালো জানবে। এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে শিক্ষাসচিব সোলেমান খানকে কল করা হলেও কলটি রিসিভ হয়নি। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (কলেজ অনুবিভাগ) এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগগতা প্রকাশ করেন।

বাড়েনি ভর্তি ফি
গত বছরের ভর্তি ফি ২০২৪ সালেও অপরিবর্তিত রাখা হয়েছে। এমপিওভুক্ত প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ঢাকা মেট্রোপলিটনে বাংলা ভার্সন ও ইংরেজি ভার্সনে সেশন চার্জ ও ভর্তি ফি ৫ হাজার টাকা, ঢাকা ছাড়া মেট্রোপলিটনে ৩ হাজার টাকা, জেলায় ২ হাজার টাকা এবং উপজেলায় দেড় হাজার টাকা।

নন-এমপিও বা আংশিক এমপিওভুক্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে উন্নয়ন ফি, সেশন চার্জ ও ভর্তি ফি বাবদ ঢাকা মেট্রোপলিটনে বাংলা ভার্সনে ৭ হাজার ৫০০ টাকা, ইংরেজি ভার্সনে ৮ হাজার ৫০০ টাকা; ঢাকা ছাড়া অন্য মেট্রোপলিটনে বাংলা ভার্সনে ৫ হাজার টাকা, ইংরেজি ভার্সনে ৬ হাজার টাকা; জেলায় বাংলা ভার্সনে ৩ হাজার টাকা, ইংরেজি ভার্সনে ৪ হাজার টাকা এবং উপজেলা/মফস্বলে বাংলা ভার্সনে ২ হাজার ৫০০ টাকা ও ইংরেজি ভার্সনে ৩ হাজার টাকা রাখা হয়েছে।

এ ছাড়া শিক্ষা বোর্ড শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ভর্তির সময় রেজিস্ট্রেশন ফি ১৪২ টাকা, ক্রীড়া ফি ৫০ টাকা, রোভার/রেঞ্জার ফি ১৫ টাকা, রেড ক্রিসেন্ট ফি ১৬ টাকা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ফি ৭ টাকা, বিএনসিসি ফি ৫ টাকা এবং শিক্ষক কল্যাণ তহবিল ও অবসর সুবিধা ভাতা ফি ১০০ টাকাসহ সর্বমোট ৩৩৫ টাকা নেবে।

একাদশে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি আজ
একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি আজ বৃহস্পতিবার প্রকাশ করা হবে। এতে ভর্তির আবেদনের শুরুর সময়, আবেদন যাচাই, দ্বিতীয় ও তৃতীয় পর্যায়ের আবেদনসহ ভর্তির সব নিয়ম উল্লেখ থাকবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বোর্ড ঢাকার চেয়ারম্যান প্রফেসর তপন কুমার সরকার খবরের কাগজকে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার সকালে আমরা বোর্ডের ওয়েবসাইটে ভর্তির বিজ্ঞপ্তি আপলোড করব।’

মালয়েশিয়ায় জনশক্তি : ঘুরেফিরে একই সিন্ডিকেট

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৪, ০৭:০০ এএম
মালয়েশিয়ায় জনশক্তি : ঘুরেফিরে একই সিন্ডিকেট
ছবি : সংগৃহীত

চলতি মাসের ৩১ তারিখের পর মালয়েশিয়ায় আবার অভিবাসী কর্মীদের দরজা বন্ধ হচ্ছে। এই সিদ্ধান্ত সব ‘সোর্স কান্ট্রির’ ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হলেও দুর্নীতি ও সিন্ডিকেটের কারণে দেশটির সরকার এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে ধারণা সংশ্লিষ্টদের। এর আগে দুই দফা বাংলাদেশের সিন্ডিকেটভুক্ত এজেন্সিগুলো কর্মীদের ২০ হাজার কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। 

প্রথম ১০ এজেন্সির সিন্ডিকেটের কারণে বন্ধ হয়েছিল মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার। কিন্তু ততদিনে শ্রমিকদের ৮ হাজার কোটি টাকা এই ১০ এজেন্সির পেটে চলে গেছে। তারপর এল ২৫ এজেন্সির সিন্ডিকেট। এই ২৫ এজেন্সি যদিও সেই পুরোনো ১০ এজেন্সির সিন্ডিকেট দিয়েই তৈরি। দ্বিতীয় দফায়ও শ্রমিকদের লুট হওয়া টাকার পরিমাণ প্রায় ১২ হাজার কোটি। 

সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি অভিযোগে বলা হয়েছে, সরকার নির্ধারিত ফি ৭৮ হাজার ৫৪০ টাকা হলেও কর্মীপ্রতি সিন্ডিকেটভুক্ত এজেন্সিগুলো নিয়েছে সাড়ে ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। বিষয়টি আমলে নিয়ে দুদক তদন্ত করছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা। 

নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংশ্লিষ্টরা বলেন, এই সিন্ডিকেট মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশে। এ কারণে সিন্ডিকেটের মূলোৎপাটন করা যাচ্ছে না। এমনকি ৩ বছর বন্ধ থাকার পর ২০২১ সালের ১৯ ডিসেম্বর ফের বাংলাদেশের সঙ্গে শ্রমিক নেওয়ার চুক্তি করা হয়। তখন মালয়েশিয়ার তৎকালীন মানবসম্পদমন্ত্রী এম সারাভানান ঢাকায় এসে বলেন, ২৫ এজেন্সি এবং তাদের অধীনে ২৫০ সাব-এজেন্ট মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠাতে পারবে। এটাই চূড়ান্ত। 

জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর (বিএমইটি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২১ সালের ডিসেম্বরে চুক্তি হওয়ার পর ২০২২ সালে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক গেছেন ৫০ হাজার ৯০ জন। ২০২৩ সালে গেছেন ৩ লাখ ৫১ হাজার ৬৮৩ জন। চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত গেছেন ২৬ হাজার ৮৫০ জন শ্রমিক।

সরকার এ ক্ষেত্রে ৭৮ হাজার ৫৪০ টাকা ফি নির্ধারণ করে দিয়েই খালাস। এই বিপুলসংখ্যক কর্মী সাড়ে ৩ থেকে ৫ লাখ টাকা খরচ করে দেশটিতে গেছেন। সেই হিসাবে মাত্র দুই বছরে অতিরিক্ত আদায় করা হয়েছে ১২ হাজার কোটি টাকা। 

এ প্রসঙ্গে ঢাকায় নিযুক্ত মালয়েশিয়ার হাইকমিশনার হাজনাহ মো. হাশিম বলেন, উভয় দেশেই সিন্ডিকেটের কারণে মালয়েশিয়ায় গিয়ে বাংলাদেশি কর্মীরা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছেন। ১ থেকে ২ লাখ বাংলাদেশির কাজ না পাওয়ার বিষয়টি মালয়েশিয়ার সরকার খুব গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। 

আগেও শ্রমিকদের পকেট কাটা হয়েছে ৮ হাজার কোটি টাকা

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর ক্ষেত্রে প্রথম সিন্ডিকেট দৃশ্যমান হয়েছিল ২০১৭ সালে। ওই বছর দেশটিতে কর্মী পাঠাতে জিটুজি প্লাস পদ্ধতি প্রণয়ন করা হয়েছিল। জিটুজি প্লাস পদ্ধতিতে মাত্র ১০টি প্রতিষ্ঠান কর্মী পাঠাতে পারত। সেই সময় সরকার ফি নির্ধারণ করেছিল জনপ্রতি ৩৩ হাজার ৫৭৫ টাকা। কিন্তু সে সময় ৩ থেকে সাড়ে ৩ লাখ টাকায় কর্মী নেয় সিন্ডিকেটভুক্ত ১০টি এজেন্সি। 

জিটুজি প্লাস চুক্তির পর বিএমইটির হিসাব অনুযায়ী, ২০১৭ সালে মালয়েশিয়ায় গেছেন ৯৯ হাজার ৭৮৭ জন কর্মী। পরের বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালে গেছে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৯২ জন। একটি হিসাবে এসব কর্মী পাঠাতে অতিরিক্ত আদায় করা হয়েছিল ৮ হাজার ২৯৭ কোটি ৯৭ লাখ টাকা। 

সেই সময় যে রিক্রুটিং এজেন্সিগুলোর নাম আসে সেগুলো হলো আইএসএনটি হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট, ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল, ইউনিক ইস্টার্ন প্রাইভেট লিমিটেড, আল ইসলাম ওভারসিস, আমি ট্যুর্স অ্যান্ড ট্রাভেলস, সাজনারি ইন্টারন্যাশনাল, মেসার্স রাব্বি ইন্টারন্যাশনাল, ক্যারিয়ার ওভারসিজ কনসাল্ট্যান্ট লিমিটেড, মেসার্স প্রান্তিক ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরিজম লিমিটেড এবং প্যাসেজ অ্যাসোসিয়েটস।
 
তখন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) একটি হিসাবে বলা হয়, শ্রমিকপ্রতি নেওয়া বাড়তি টাকা থেকে ১ লাখ টাকা দিতে হয় মালয়েশীয় নিয়োগদাতাসহ সে দেশের সিন্ডিকেটকে। ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা নিয়ে যায় মাঠের দালালরা। ৫০ থেকে ৬০ হাজার টাকা চলে যায় যাতায়াত, আনুষঙ্গিক খরচ ও সরকারি অফিসে ঘুষ দেওয়া বাবদ। বাকি ১ লাখ টাকা মুনাফা থাকে এজেন্সির। 

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) যুগ্ম মহাসচিব টিপু সুলতান খবরের কাগজকে বলেন, জিটুজি প্লাসের সময়কার সেই সিন্ডিকেটই এখনো বহাল। তাদের কারণেই মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রপ্তানিতে এই স্থবিরতা। 

টিপু সুলতান বলেন, মালয়েশিয়া বাংলাদেশসহ মোট ১৪টি দেশ থেকে কর্মী নেয়। কিন্তু বাকি ১৩ দেশের ক্ষেত্রে রিক্রুটিং এজেন্সি দেশটি নির্ধারণ করে দেয় না। শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই এমনটা হয়।

৩১ মের পর মালয়েশিয়ায় কর্মী যাওয়া বন্ধ

৩১ মের পর মালয়েশিয়া নতুন করে আর কোনো কর্মী নেবে না। এ ক্ষেত্রে দুর্নীতির কথা বলা হলেও দেশটির অভিবাসন দপ্তর বলছে, নতুন করে আর কর্মী দরকার নেই। তাই অভিবাসী কর্মী নেওয়া বন্ধ। 

কিন্তু বায়রার সংশ্লিষ্টরা জানান, গত এক বছর ধরেই নতুন কোনো ডিমান্ড দিচ্ছে না মালয়েশিয়া। পাশাপাশি মালয়েশিয়ার দুর্নীতি দমন কমিশনে সিন্ডিকেট করে প্রতারণা করার কারণে বেশ কয়েকটি মামলাও বিচারাধীন।

এ প্রসঙ্গে বায়রা মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী বলেন, দেশটি কী করতে চাইছে স্পষ্ট নয়। তাই সবাই অনিশ্চয়তার মধ্যে আছেন। 

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেছেন, মালয়েশিয়ার সঙ্গে বাংলাদেশের সুসম্পর্ক রয়েছে। তাই ধীরে ধীরে সব সমস্যার সমাধান হবে।

৩ এমপির ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে সিদ্ধান্ত নেয় আ.লীগ

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৪, ০৫:৩০ এএম
৩ এমপির ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে সিদ্ধান্ত নেয় আ.লীগ
খবরের কাগজ ডেস্ক

মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নিষেধাজ্ঞা রয়েছে আওয়ামী লীগের। দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নির্বাচনকে প্রভাবমুক্ত রাখতে এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু দলের একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র খবরের কাগজকে জানিয়েছে, প্রভাবশালী তিন এমপির ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে আওয়ামী লীগ। আর এই সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে নেপথ্যে কাজ করেছেন আওয়ামী লীগের দুই প্রভাবশালী নেতা। 

তবে নির্দেশ অমান্যকারীদের আনুষ্ঠানিকভাবে বহিষ্কার করা না হলেও তাদের শাস্তি হবে ভিন্ন মাত্রায়। জানা গেছে, যেসব নেতা দলের হাইকমান্ডের বিরাগভাজন হয়েছেন, ভবিষ্যতে তারা আওয়ামী লীগের পদ-পদবি, পদোন্নতি, মনোনয়ন সর্বোপরি রাজনৈতিক সুবিধার ক্ষেত্রে বঞ্চিত হবেন। অর্থাৎ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ দলের শীর্ষ নেতৃত্ব তাদের ‘কর্মকাণ্ড’ বিবেচনায় রাখবেন। এমনকি যেসব মন্ত্রী ও এমপি নির্দেশ অমান্যকারীদের মদদ দিয়েছেন, তাদের কর্মকাণ্ড নজরদারিতে রাখবেন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। 

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম খবরের কাগজকে বলেন, তাদের (নির্দেশ অমান্যকারী) বিষয়ে দল কঠোর সিদ্ধান্ত নেবে। এই নির্বাচন (উপজেলা) শেষ হবে, সামনে আরও বহু নির্বাচন আছে। দলের কমিটিতে পদ-পদবির বিষয় রয়েছে। তাদের (নির্দেশ অমান্যকারী) বিষয়ে তখনো ভাবা হতে পারে। 

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানিয়েছে, টাঙ্গাইল-১ আসনের সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক, মাদারীপুর-২ আসনের সংসদ সদস্য শাজাহান খান এবং নোয়াখালী-৪ আসনের সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর ভূমিকায় ক্ষুব্ধ হয়ে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের উপজেলা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতার বিষয়ে ঢালাওভাবে নিষেধাজ্ঞা দেন। ড. আবদুর রাজ্জাকের দুই ভাই এবং শাজাহান খান ও একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলেরা প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তবে দলে বিভেদ সৃষ্টি হবে- এই আশঙ্কায় নিষেধাজ্ঞা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি বলে জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের একজন নীতিনির্ধারক। 

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, দলীয় নির্দেশ অমান্য করলে শাস্তি পেতেই হবে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ৭৩ জন এমপি দলের মনোনয়ন পাননি, ২৫ জন মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়েছেন। শাস্তিটা অনেকভাবেই আসতে পারে। 

জাতীয় সংসদের হুইপ ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন খবরের কাগজকে বলেন, যারা (নির্দেশ অমান্যকারী) দলের নির্দেশনা মানেননি, তারা প্রকাশ্য অথবা অপ্রকাশ্য শাস্তি ভোগ করবেন। 

প্রথম ধাপের উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন সংসদ সদস্য ও সাবেক মন্ত্রী শাজাহান খানের ছেলে আসিবুর রহমান খান এবং সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে আতাহার ইশরাক সাবাব। নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের আগেই শাজাহান খান ও একরামুল করিম চৌধুরীকে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড নির্দেশ দিয়েছিলেন তাদের ছেলেরা যেন সরে দাঁড়ান। কিন্তু দলীয় হাইকমান্ডের নির্দেশ অমান্য করেন তারা দুজন। 

শাজাহান খান আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য। তার সঙ্গে বিরোধ রয়েছে দলের প্রভাবশালী নেতা, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও রাজধানী ঢাকার দলীয় সংসদ সদস্য আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিমের। এই দুই নেতা প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে গণভবনে অনুষ্ঠিত আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের একাধিক বৈঠকে বাগবিতন্ডায় জড়িয়েছেন। শাজাহান খানের ছেলে আসিবুর রহমান খান মাদারীপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হয়েছেন। আর একরামুল করিম চৌধুরীর ছেলে আতাহার ইশরাক সাবাব চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন সুবর্ণচর উপজেলায়। নিজ জেলার সংসদ সদস্য একরামুল করিম চৌধুরীর সঙ্গে তীব্র বিরোধ রয়েছে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের।

জাতীয় সংসদ সদস্য এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আবদুর রাজ্জাকের খালাতো ভাই হারুনার রশিদ হীরা ও মামাতো ভাই খন্দকার মঞ্জুরুল ইসলাম তপন সদ্য সমাপ্ত উপজেলা পরিষদের প্রথম ধাপের (৮ মে) নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে পরাজিত হয়েছেন। এ নির্বাচনে ড. রাজ্জাক হারুনার রশিদ হীরাকে সমর্থন করেন। টাঙ্গাইলের ধনবাড়ী উপজেলা পরিষদের এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবদুল ওয়াদুদ তালুকদার সবুজ। 

আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী ছিলেন ড. আবদুর রাজ্জাক। সে সময় কৃষিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করছিলেন তিনি। দলের সাধারণ সম্পাদক পদ পাওয়ার আগ্রহ ব্যক্ত করার পর থেকেই ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে তার সম্পর্ক শীতল রূপ ধারণ করে। তবে সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আবুল হাসান চৌধুরীর সঙ্গেও বিরোধ রয়েছে ড. আবদুর রাজ্জাকের। আবুল হাসান চৌধুরী তার আসনেই আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য ছিলেন। 

জানা গেছে, শাসক দলের এই তিন এমপির নির্বাচনি এলাকায় অনেক আগে থেকেই আওয়ামী লীগ দ্বিধাবিভক্ত। দিন দিন স্থানীয় নেতাদের মধ্যকার দূরত্ব ও সংকট প্রকট আকার ধারণ করছে। এ নিয়ে প্রায়ই অভিযোগ আসে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ডে। তেমনি প্রথম ধাপে অনুষ্ঠিত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে তিন এমপির স্বজনদের প্রতিদ্বন্দ্বিতা করা নিয়ে অভিযোগ আসে। আর এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ক্ষুব্ধ হয়ে উপজেলা নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপির স্বজনদের প্রার্থিতায় নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন হাইকমান্ড। অন্য মন্ত্রী-এমপিরা নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে হাইকমান্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তাদের বিষয়টি জানিয়ে গোপন রাখতে বলা হয়। তাদেরই একাধিক সূত্র খবরের কাগজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

যদিও এ বছর জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দল মনোনীত প্রার্থী ছাড়াও সব পর্যায়ের নেতা-কর্মীর জন্য প্রার্থিতা উন্মুক্ত করে দিয়েছিল আওয়ামী লীগ। আর এই সুযোগ নিয়ে দলীয় মনোনয়ন না পেয়েও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মী। যার মধ্য থেকে নির্বাচিত হয়েছেন বিপুলসংখ্যক স্বতন্ত্র এমপি।

এমভি আবদুল্লাহর ক্যাপ্টেন নিজের চেয়েও বেশি নাবিকদের নিয়ে চিন্তা করেছি

প্রকাশ: ১৬ মে ২০২৪, ০১:২৫ এএম
নিজের চেয়েও বেশি নাবিকদের নিয়ে চিন্তা করেছি
এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের ক্যাপ্টেন আবদুর রশিদ

প্রায় ছয় মাস পর বাসায় পৌঁছে মেয়ের আবদার রক্ষায় কেক কাটলেন এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের ক্যাপ্টেন আবদুর রশিদ। গতকাল মঙ্গলবার (১৪ মে) বিকেলে চট্টগ্রামের মাটিতে পা রেখেই প্রথমে যান জাহাজের মালিকপক্ষ কবির গ্রুপের প্রধান কার্যালয়ে। সেখানে আনুষ্ঠানিকতা সেরে রাত পৌনে ১০টার দিকে ফ্লাইটে ঢাকা যান তিনি। শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ক্যাপ্টেনকে রিসিভ করেন স্ত্রী ও একমাত্র মেয়ে। সেখান থেকে বসুন্ধরা আবাসিকের বাসায় পৌঁছে মেয়ের আবদারের কেক কেটে বাবার আগমনের উৎসব করেন বাসায়। 

ক্যাপ্টেন আবদুর রশিদের বাড়ি চট্টগ্রামের গোসাইলডাঙ্গা এলাকায়। পরিবার নিয়ে থাকেন ঢাকার বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায়। মেয়ের লেখাপড়ার সুবিধার কথা বিবেচনা করেই ঢাকায় বসবাস করছেন। তবে আগামী কোরবানির ঈদে পরিবার নিয়ে চট্টগ্রামে আসবেন। বাসায় ফেরার প্রথম দিনে ক্যাপ্টেনকে সাবেক কলিগ ও বন্ধুবান্ধব এবং আত্মীয়স্বজনরা ফোন করেছেন। খোঁজখবর নিয়েছেন সবাই।
 
বাসায় পরিবারের কাছে ফেরার অনুভূতির কথা জানতে চাইলে ক্যাপ্টেন আবদুর রশিদ খবরের কাগজকে বলেন, ‘বাসায় পৌঁছে বাবা-মেয়ে কেক উৎসব করেছি। আমার জন্য স্পেশাল কেক করা হয়েছে। সেটি কেটে খেয়েছি পরিবারের সবাই মিলে। বাসায় পরিবারের কাছে থাকা প্রশান্তির ব্যাপার। গতকাল বিভিন্ন জনের ফোন রিসিভ করে কথা বলতে বলতে দিন পার করেছি। সবাই খোঁজখবর নিচ্ছেন, ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইছেন। অনেকে ফোন করে বলেছেন জিম্মি থাকা অবস্থায় দোয়া করেছেন।’
 
জিম্মি থাকার বিষয়টি দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ক্যাপ্টেন বলেন, ‘জিম্মিদশায় মুখে সাহসের কথা বললেও অন্তরে ভয় ছিল। সেই দিনগুলোর কথা স্মরণ করতে চাই না। তবু বলতে হয়, অন্য ২২ নাবিকের দায়িত্ব আমার ওপর ছিল। আমি জাহাজের মাস্টার। তাদের জীবন রক্ষা, নির্যাতন থেকে রক্ষা করা এসব বিষয় সব সময় চিন্তা করতাম। তাদের খাবার, পানির ব্যবস্থার চিন্তা করতে হতো। আমার নিজের চেয়েও বেশি নাবিকদের নিয়ে চিন্তা করেছি। কবে এই জিম্মিদশা থেকে মুক্ত হব, সেটিই মাথায় বারবার ঘুরপাক করত। অবশেষে আমরা মুক্ত করতে পেরেছি এবং নাবিকরা ফিরে এসেছেন বাড়িতে।’ 

ক্যাপ্টেনের মনোবল শুরু থেকেই শক্ত ছিল। ফলে জাহাজ জিম্মি হওয়ার পর থেকে ক্যাপ্টেনের স্ত্রী ফাহমিদা আক্তার এনি তেমন বিচলিত ছিলেন না। কারণ তিনি জানতেন চলার পথে এ ধরনের বিপদ আসতে পারে। তবে আজ হোক কাল হোক- এর একটা সমাধান হবেই। 

বুধবার বিকেলে ফাহমিদা আক্তার এনি খবরের কাগজকে বলেন, ‘বাসায় মেয়ের আবদারের কেক কেটে উৎসব করেছি। ক্যাপ্টেনকে সুস্থ অবস্থায় পেয়েছি এটিই কাম্য ছিল। তবে আমার মনোবল শক্ত থাকার একটিই কারণ, আমি সব সময় ক্যাপ্টেনের সঙ্গে কথা বলতে পেরেছি। সার্বক্ষণিক যোগাযোগ ছিল আমার সঙ্গে। ফলে আমার চিন্তিত হওয়ার কোনো কারণই ছিল না। জিম্মি থাকা অবস্থায় জাহাজে কী ঘটত সবই আমার জানা ছিল, ক্যাপ্টেন জানাতেন। নাবিকদের এমনই জীবন বাসা থেকে গেলেই ৬-৭ মাস ফিরতে পারেন না। এভাবেই আমিও শক্ত হয়ে গেছি।’ 

ক্যাপ্টেন গত ২২ নভেম্বর দক্ষিণ কোরিয়ায় এমভি আবদুল্লাহ জাহাজের দায়িত্ব নেন। সেখান থেকে কার্গো নিয়ে আসেন সিঙ্গাপুর। সেখান থেকে চট্টগ্রাম এবং পরে ভারত ও শ্রীলঙ্কা হয়ে আফ্রিকার মোজাম্বিকে যায় জাহাজটি। ৪ মার্চ মোজাম্বিক ছেড়ে দুবাই যাওয়ার পথে ১২ মার্চ সোমালি জলদস্যুদের কবলে পড়ে এমভি আবদুল্লাহ জাহাজ। ফলে জিম্মি হন তিনিসহ ২৩ নাবিক। ১৪ এপ্রিল মুক্ত হয়ে দুবাই যায় জাহাজটি। সেখানে কয়লা খালাস করে পুনরায় চুনাপাথর লোড করে চট্টগ্রামে পৌঁছে এমভি আবদুল্লাহ। গত সোমবার নোঙর করে কক্সবাজারের কুতুবদিয়ায়। ১৪ মে চট্টগ্রাম বন্দরে উষ্ণ সংবর্ধনার মাধ্যমে পরিবারের কাছে ফেরেন নাবিকরা।