চলতি মৌসুমে দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস গতকাল সোমবার চুয়াডাঙ্গায় রেকর্ড করা হয়েছে। রাজধানীতেও ছিল সর্বোচ্চ তাপমাত্রা (৪০.৫)। এ ছাড়া দেশের অধিকাংশ স্থানের তাপমাত্রা ছিল ঊর্ধ্বমুখী। অতিরিক্ত গরমে নড়াইলের একটি স্কুলের ১৫ শিক্ষার্থী ও কুমিল্লায় ৭ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। অন্যদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ নিয়ে সমন্বয়হীনতা লক্ষ করা গেছে। হাইকোর্ট দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিলেও শিক্ষা মন্ত্রণালয় ঢাকাসহ শুধু ২৭ জেলার মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখতে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে। একই সঙ্গে হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাবেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তবে প্রাথমিক বিদ্যালয় হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর জানায়, গতকাল দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় চুয়াডাঙ্গা জেলায় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। যশোর জেলার তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। রাজধানী ঢাকায় তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর ঢাকা বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ফরিদপুর বিভাগে ৪১ দশমিক ২। রাজশাহীর তাপমাত্রা ছিল ৪২ দশমিক ৬।
চলতি মৌসুমের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা গেছে, গতকাল সোমবার ছিল সবচেয়ে তপ্ত দিন। খুলনা বিভাগের সব জেলার তাপমাত্রা ছিল ৪২ ডিগ্রি ছুঁইছুঁই। দেশের অধিকাংশ জেলার তাপমাত্রা ছিল গত কয়েক দিনের তুলনায় ১-২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি। ঢাকা, রাজশাহী, রংপুর ময়মনসিংহ বিভাগের প্রায় সব জেলার তাপমাত্রা ছিল তাপপ্রবাহের আওতায়। তুলনামূলক চট্টগ্রাম বিভাগের তাপমাত্রা কম ছিল। তাই গতকালও যশোর, চুয়াডাঙ্গা, পাবনা ও রাজশাহী জেলার ওপর দিয়ে অতি তীব্র তাপপ্রবাহ এবং খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের অবশিষ্টাংশ এবং ঢাকা বিভাগের ওপর দিয়ে তীব্র তাপপ্রবাহ ঘোষণা করা হয়। এ ছাড়া তাপমাত্রা ৩৬ থেকে ৪০ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে থাকায় ময়মনসিংহ জেলাসহ বরিশাল, রংপুর ও চট্টগ্রাম বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ ঘোষণা করা হয়।
আবহাওয়া-সংশ্লিষ্টদের তথ্য অনুযায়ী, দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৯৭২ সালের ১৮ মে রাজশাহীতে। সেদিন তাপমাত্রা ছিল ৪৫ দশমিক ১ ডিগ্রি সেলসিয়াস। তারপর চুয়াডাঙ্গায় ২০১৪ সালে রেকর্ড হওয়া ৪৩ দশমিক ২ ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ তাপমাত্রা। চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ এবং দেশের ইতিহাসে তৃতীয় ৪৩ ডিগ্রি রেকর্ড করা হয়েছে গতকাল সোমবার। রাজধানী ঢাকায় গত ২০ এপ্রিল রেকর্ড হওয়া ৪০ দশমিক ৪ ডিগ্রিকে ছাড়িয়ে গতকাল রেকর্ড হয় ৪০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। দেশের অধিকাংশ জেলার তাপমাত্রা ছিল গতকাল বেশি। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে আবহাওয়াবিদ তরিফুল নেওয়াজ কবির খবরের কাগজকে বলেন, তাপমাত্রা বিবেচনায় সোমবার চলতি মৌসুমের সবচেয়ে উত্তপ্ত দিন। আগামীতে তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে। তবে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। পর্যায়ক্রমে বৃষ্টিপাতের এলাকা বাড়বে।
তাপমাত্রা আরও বাড়ার পূর্বাভাস
মঙ্গল ও বুধবার তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে বলে আবহাওয়ার নিয়মিত পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের দু-এক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা/ঝোড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। বিক্ষিপ্তভাবে হতে পারে শিলাবৃষ্টি। তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকবে। একই সঙ্গে সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। জলীয় বাষ্পের আধিক্যের কারণে অস্বস্তিভাব বিরাজমান থাকতে পারে। আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৬টা থেকে পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় সিলেট বিভাগে একই ধরনের বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। বিরাজমান তাপপ্রবাহ অব্যাহত থাকতে পারে। সারা দেশে দিনের তাপমাত্রা সামান্য বৃদ্ধি পেতে পারে এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে। আগামী পাঁচ দিনে সারা দেশে বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে এবং তাপমাত্রা হ্রাস পেতে পারে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ নিয়ে সমন্বয়হীনতা
চলমান তাপপ্রবাহে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ নিয়ে সমন্বয়হীনতা চলছে। এ জন্য ক্ষুব্ধ অভিভাবকরা। গতকাল হাইকোর্ট বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার নির্দেশ দেন। কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় শুধু ঢাকাসহ দেশের ২৭ জেলায় মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান আজ মঙ্গলবার বন্ধ রাখার বিজ্ঞপ্তি দেয়।
সোমবার বিকেলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য ও জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়ের স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, দেশে চলমান তাপপ্রবাহের কারণে আবহাওয়া অধিদপ্তরের সঙ্গে পরামর্শক্রমে খুলনা ও রাজশাহী বিভাগের সব জেলা, ঢাকা বিভাগের ঢাকা, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, গাজীপুর ও মানিকগঞ্জ জেলা, রংপুর বিভাগের কুড়িগ্রাম ও দিনাজপুর জেলা এবং বরিশাল বিভাগের পটুয়াখালী জেলার সব মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান মঙ্গলবার বন্ধ থাকবে। আদালতের নির্দেশনার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তথ্য কর্মকর্তা জানান, আদালতের আদেশ পেলে তারপর যদি কোনো পরিবর্তন হয় সেটি জানিয়ে দেওয়া হবে।
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ নিয়ে ক্ষুব্ধ অভিভাবক রাশেদুল হাসান খবরের কাগজকে বলেন, ‘সোমবার ঢাকাসহ পাঁচ জেলায় বন্ধ ঘোষণা করা হলো মাধ্যমিকের স্কুল। কিন্তু খোলা ছিল প্রাথমিক বিদ্যালয়। আবার এখন প্রাথমিক বিদ্যালয় বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ দেওয়া হলো। কিন্তু মাধ্যমিকে দেওয়া হলো এক দিন।
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে
এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বৃহস্পতিবার পর্যন্ত বন্ধ রাখার হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে যাবেন বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তিনি বলেন, সারা দেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধে একধরনের মানসিকতা তৈরি হচ্ছে। সবকিছুতেই কেন শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওপর আদালতের নির্দেশনা নিয়ে আসতে হবে? আমরা আপিলে যাব। গতকাল বিকেলে রাজধানীর আগারগাঁওয়ে বিজ্ঞান কমপ্লেক্সে এক অনুষ্ঠান শেষে গণমাধ্যমকর্মীদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এসব কথা বলেন।
নড়াইলে ১৫ শিক্ষার্থী অসুস্থ
নড়াইল: নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ইতনা স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রচণ্ড গরমের কারণে স্কুল শাখার ১৫ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। এদের মধ্য ৬ শিক্ষার্থী জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। গতকাল বেলা সোয়া ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। জ্ঞান হারানো ৬ শিক্ষার্থীর মধ্যে ২ জন ছাত্রী ও ৪ জন ছাত্র। এ ছাড়া অন্য শিক্ষার্থীদের মাঝে বমি, মাথাঘোরাসহ বিভিন্ন উপসর্গ দেখা দেয়। প্রতিষ্ঠানটির ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অনিদ্য সরকার বলেন, স্কুল চলাকালে বেলা সোয়া ১১টার দিকে ১৫ জনেরও বেশি শিক্ষার্থী প্রচণ্ড গরমে অসুস্থ হয়ে পড়ে। এদের মধ্য ৬ শিক্ষার্থী জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। এ সময় ইতনা সরকারি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের ডা. বজলুর রহমানকে খবর দেওয়া হলে তিনি দ্রুত স্কুলে আসেন। পরে অসুস্থ শিক্ষার্থীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
কুমিল্লায় ৭ শিক্ষার্থী অসুস্থ
কুমিল্লা: কুমিল্লায় তীব্র তাপপ্রবাহে একটি স্কুলে ক্লাস চলাকালে ৭ শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। গতকাল দুপুরে জেলার মুরাদনগর উপজেলার তায়মোস বেগম উচ্চবিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে। পরে অভিভাবকদের স্কুলে ডেকে এনে অসুস্থ শিক্ষার্থীদের বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়ে বিদ্যালয়টি ছুটি ঘোষণা করা হয়। অসুস্থ হয়ে পড়া শিক্ষার্থীরা হচ্ছে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী সামিয়া আক্তার, সপ্তম শ্রেণির ফাহিমা আক্তার, অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী ঊর্মি আক্তার, হেপি আক্তার, সামিয়া সায়মা, নবম শ্রেণির মারিয়া আক্তারসহ আরও এক শিক্ষার্থী। স্কুলের প্রধান শিক্ষক মাসুদা আক্তার বলেন, ‘ক্লাস চলাকালে কয়েকজন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে পড়ে। পরে তাদের অভিভাবককে খবর দিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দিই।’