তাপপ্রবাহে পুড়ছে দেশ। মানুষ হাঁসফাঁস করছেন গরমে। সবাই অপেক্ষায় আছেন মেঘ-বৃষ্টির। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় বৃষ্টির আশায় বিশেষ নামাজ-প্রার্থনা করা হচ্ছে। ঠিক এমন সময় সরকারের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক ড. মো. শাহজাহান কবির বললেন, ‘দোয়া করেন যেন এই মুহূর্তে ঝড়-বৃষ্টি না হয়।’ শুধুই কী মহাপরিচালক! দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের কৃষকরাও আতঙ্কে আছেন না জানি কখন শুরু হয়ে যায় ঝড়-বৃষ্টি। যদি এমনটি হয়েই যায়, তবে তাদের সর্বনাশ হবে!
কৃষকদের এই আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস। সোমবারই (৩০ এপ্রিল) ওই অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামী সপ্তাহজুড়ে থাকবে টানা বৃষ্টি। এমনকি কালবৈশাখীর আশঙ্কাও রয়েছে।
এমন তাপপ্রবাহের মধ্যেও কেন বৃষ্টি চাচ্ছেন না- এই প্রশ্নের মুখে ড. মো. শাহজাহান কবির খবরের কাগজকে বলেন, ‘এই তাপপ্রবাহ এবং রৌদ্রোজ্জ্বল আবহাওয়া মানুষের জন্য কষ্টকর হলেও কৃষির জন্য, বিশেষ করে বোরো ফসলের জন্য খুবই উপকারী। পোকামাকড়ের উৎপাত নেই বললেই চলে। ধানও বেশ ফ্রেশ। হারভেস্টিং চমৎকার। সিস্টেম লস কম হয়। এক কথায় উৎপাদন বেশ ভালো হবে। এমন সময় ঝড়-বৃষ্টি হলে ধানের ব্যাপক ক্ষতি হয়ে যাবে। এটি কৃষকরাও চান না, যারা চাষাবাদে কোনো না কোনোভাবে যুক্ত, তারাও কেউই চাইবেন না। আমরা তো ফসলের ক্ষতি বা কৃষকের ক্ষতি কোনোটিই চাইব না।’
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. হাসনিন জাহান খবরের কাগজকে বলেন, ‘প্রথমত এত উচ্চ তাপমাত্রা যেমন মানুষের জন্য ভালো না, তেমনি কৃষি ফসলের জন্যও ভালো না। সবকিছুরই একটি সহনশীলতার মাত্রা আছে। একেক ফসলের জন্য তাপমাত্রারও ভিন্নতা প্রয়োজন আছে। এক কথায়, বাংলাদেশের কৃষি পরিবেশের বাস্তবতায় আমাদের এখানে একই মৌসুমে রোদও দরকার, বৃষ্টিও দরকার। আবার দুটিই ভালো, দুটিই খারাপ। আমাদের দেশে ধান উৎপাদনে আগে কেবল বোরোতে সেচের দরকার হতো। আমনে তেমন সেচ দরকার হতো না। এখন কিন্তু আমনেও সেচের দরকার হয়। অর্থাৎ জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রভাবের মুখে আমাদের দেশে শুকনো মৌসুম বেশি থাকছে। এতে কৃষকের উৎপাদন খরচ বেড়ে গেছে।’
কৃষি অর্থনীতির ওই বিশেষজ্ঞ বলেন, ‘অন্যদিকে পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, ধান কাটার সময় ঝড়-বৃষ্টি হলে কৃষকের আরও ক্ষতি হয়। ধান নষ্ট হয়, ধান শুকাতে সমস্যা হয়। ভালোভাবে ধান শুকায় না। ফলে মানের সংকট দেখা দেয়। দাম কমে যায়। সেদিক বিবেচনায় এবার এখন পর্যন্ত ধান সংগ্রহ বেশ ভালো। বৃষ্টি-কাদা নেই। ধান শুকানোর মান ভালো হচ্ছে। তবু অনেক জায়গা থেকে শুনতে পাচ্ছি কৃষকদের উৎপাদন খরচ উঠছে না। এটি হয় মূলত মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে। নয়তো যেখানে চালের দাম বেশি, সেখানে কৃষকরা কেন ধানে উপযুক্ত দাম পাবেন না? এটি দেখা দরকার। কৃষকরা যেহেতু ধান-চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেন না, তাই তারা দামের দিক থেকে নানাভাবে নিগৃহীত হচ্ছেন।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ক্লাইমেট স্মার্ট এগ্রিকালচার অ্যান্ড ওয়াটার ম্যানেজমেন্ট (সিএসএডব্লিউএম) প্রকল্পের পরিচালক খন্দকার মুহাম্মদ রাশেদ ইফতেখার খবরের কাগজকে বলেন, এলাকাভিত্তিক ফসল উৎপাদনের ভিন্নতা রয়েছে। ফলে আবহাওয়ার প্রভাবেও ভিন্নতা থাকবে। যেমন নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত চলে বোরোর চাষ। আবার এপ্রিলেই ধান কাটা শুরু হয়ে যায়। অর্থাৎ দেশের এক প্রান্তে হয়তো নভেম্বর-ডিসেম্বরে চাষ শুরু হয় আবার আরেক প্রান্তে চাষ শুরু হয় ফেব্রুয়ারি-মার্চে। এখন যেমন হাওরে ও দক্ষিণাঞ্চলের অনেক জায়গায় ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে আবার উত্তরের এলাকায় ধানে সবেমাত্র ফুল ধরেছে। উত্তরে তাই এখন পানি দরকার, বৃষ্টি দরকার। আবার হাওর ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে ঝড়-বৃষ্টি হলে বিপদ হবে।
খন্দকার মুহাম্মদ রাশেদ ইফতেখার বলেন, কৃষি ফসলেরও বৈচিত্র্য আছে। যেমন ধানের জন্য এখন বৃষ্টি ক্ষতি বয়ে আনতে পারে, অন্যদিকে সবজির জন্য বৃষ্টিটা জরুরি। এসব দিক বিবেচনায় কোন এলাকায় কী ফসল হচ্ছে, সেই অনুসারে চাষিরা কোথাও বৃষ্টির আশা করছেন আবার কোথাও বৃষ্টি নিয়ে আতঙ্কে আছেন। পুরো প্রক্রিয়াটা অনেকটা স্বাভাবিকই মনে হয়। যদিও কয়েক বছর ধরে বৃষ্টিপাত তুলনামূলক কম হওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে চলতি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশব্যাপী বোরো চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৫০ লাখ ৪০ হাজার ৪০৩ হেক্টর জমিতে। লক্ষ্যমাত্রা অনুসারে বোরোর হাইব্রিড, উফশী ও স্থানীয় জাতের ধান এই জমিতে চাষাবাদ ইতোমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে বলে ওই সূত্র জানায়। গড় হিসাবে হেক্টরপ্রতি ধানের ফলন ধরা হয়েছে ৪ দশমিক ৪২ মেট্রিক টন। সে হিসাবে এবার বোরোর মোট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২ কোটি ২২ লাখ ৬৬ হাজার ৩৯৬ মেট্রিক টন চালের। এর মধ্যে হাইব্রিড জাতের ধান থেকে ৭১ লাখ ৯১ হাজার ৩ টন চাল, উফশী জাতের ধান থেকে ১ কোটি ৫০ লাখ ৪৫ হাজার ৩২৫ টন চাল ও স্থানীয় জাতের ২৯ হাজার ৮৬৬ টন চাল পাওয়া যাবে।
এদিকে সম্ভাব্য ভারী বৃষ্টিপাতের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষায় হাওরাঞ্চলে ৮০ শতাংশ পরিপক্ব হলে বোরো ধান কাটার পরামর্শ দিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। গত রবিবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক জরুরি বিজ্ঞপ্তিতে এ পরামর্শ দিয়েছে ওই অধিদপ্তর।
এতে বলা হয়, আবহাওয়া অধিদপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আগামী ৩ মে থেকে বাংলাদেশের উত্তর-পূর্ব হাওরাঞ্চলের (সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, কিশোরগঞ্জ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও নেত্রকোনা) অনেক জায়গায় ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এমন অবস্থায় হাওরাঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাতের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে দণ্ডায়মান ফসল রক্ষার জন্য পরামর্শ দেওয়া হলো।
পরামর্শগুলোর মধ্যে রয়েছে বোরো ধান ৮০ শতাংশ পরিপক্ব হয়ে গেলে দ্রুত সংগ্রহ করা, দ্রুত পরিপক্ব সবজি সংগ্রহ করা, নিষ্কাশন নালা পরিষ্কার রাখা, জমির আইল উঁচু করা, সেচ, সার ও বালাইনাশক দেওয়া থেকে বিরত থাকা, বৃষ্টিপাতের পর বালাইনাশক প্রয়োগ করা, কলা ও অন্যান্য উদ্যানতাত্ত্বিক ফসল এবং সবজির জন্য খুঁটির ব্যবস্থা করা।
মৌলভীবাজারের কাউয়াদীঘি হাওরপারের বরকাপন, বানেশ্রী, রায়পুর, রসুলপুর, জুমাপুর, কাদিপুর, অন্তেহরি এলাকা ঘুরে দেখা যায়, তীব্র তাপপ্রবাহ উপেক্ষা করেই মাঠে ধান কাটছেন কৃষকরা। তবু বজ্রসহ বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি চান না কৃষকরা।
কাদিপুর গ্রামের বোরো চাষি নিবারণ নমশূদ্র বলেন, ‘এ বছর আবহাওয়া ভালো থাকায় এখনো পর্যন্ত ভালো ফলনের আশা আছে। এমন অবস্থায় বজ্রসহ বৃষ্টি, শিলাবৃষ্টি হলে আমাদের খুবই ক্ষতি হবে।’
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, এ বছর জেলায় বোরো ধান আবাদ হয়েছে ৬১ হাজার ৯৫ হেক্টর। ব্রি ধান-৮৮, ৮৯ ও ৯২ জাতের ধান বেশি চাষ হয়েছে। সদর ও রাজনগর উপজেলা নিয়ে বিস্তৃত কাউয়াদীঘি হাওর। এখানকার নিচু অংশে ৬০ শতাংশ ও ওপরের অংশে ২০ শতাংশ বোরো ধান কাটা শুরু হয়ে গেছে। পুরোদমে ধান কাটা ও মাড়াই শেষ হতে আরও ১০ থেকে ১৫ দিন সময় লাগবে।
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার আদাদিপুর গ্রামের কৃষক মনোয়ার হোসেন জানান, জমির ধান পেকে গেছে। এক সপ্তাহের মধ্যে পুরোদমে ধান কাটা শুরু হবে। এ মুহূর্তে বৃষ্টি এলে কৃষকদের অপূরণীয় ক্ষতি হবে। ধানের জমি ডুবে যাওয়া ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের পোকার আক্রমণ দেখা দেবে।
অন্যদিকে নবাবগঞ্জ ফল চাষি সমবায় সমিতির সভাপতি জিল্লুর রহমান জানান, টানা তাপপ্রবাহের কারণে আম-লিচুর জমিতে প্রচুর পানি প্রয়োজন। বৃষ্টি না হওয়ায় আম-লিচু ঝরে পড়ছে। অতিরিক্ত খরচ করে বাগানে সেচ দিতে হচ্ছে।
খুলনার উপকূলীয় দাকোপ, কয়রা, পাইকগাছা ও বটিয়াঘাটা উপজেলায় এ বছর প্রায় ১২ হাজার ৯৬৫ হেক্টর জমিতে তরমুজ আবাদ হয়েছে। তরমুজের ২০-২৫ শতাংশ এখনো মাঠে। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে এসব তরমুজ পরিপক্ব হলে বিক্রি করা যাবে। এ কারণে তরমুজ চাষিরা অন্তত আরও ১০ দিন বৃষ্টি চান না। বটিয়াঘাটার সুকদাড়া গ্রামের তরমুজ চাষি তিমির বিশ্বাস জানান, গত দুই-তিন বছর পর এবার তরমুজের ভালো দাম পাওয়া যাচ্ছে। অনেকেই তাদের খেতের তরমুজ বিক্রি করেছেন। তবে বিভিন্ন স্থানে ২০-২৫ শতাংশ তরমুজ এখনো মাঠে রয়ে গেছে। প্রচণ্ড তাপপ্রবাহ অসহনীয় হলেও এসব চাষি আরও ১০ দিন বৃষ্টি চান না। বৃষ্টি হলে শেষ সময়ে খেতের সব তরমুজ নষ্ট হয়ে যাবে। তখন ক্ষতি হবে চাষিদের।
এবার খুলনা জেলায় ৬৪ হাজার ৮৬০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ৪৫ শতাংশ জমির ধান কাটা হয়েছে। এখনো ৫৫ শতাংশ ধান মাঠে রয়েছে। পরিপক্ব না হওয়ায় এই ধান কাটতে আরও ১৫ দিন সময় লাগবে। এর মধ্যে বৃষ্টি হলে ক্ষতির মুখে পড়বেন কৃষক।
দেশের সর্ব উত্তরের সীমান্তবর্তী জেলা পঞ্চগড়ে দীর্ঘদিন থেকে বৃষ্টি না হওয়ার কারণে ব্যাহত হচ্ছে ফসলের চাষাবাদ। সেচের ব্যবস্থা করেও তেমন ফল পাচ্ছেন না প্রান্তিক কৃষকরা। এ জেলায় প্রতিবছর এ সময়ে বিপুল পরিমাণে বোরো ধান, মরিচ, ভুট্টা, বাদামসহ বিভিন্ন ফসলের আবাদ হয়। এই ফসল করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হন এখানকার সাধারণ কৃষকরা। কিন্তু অনাবৃষ্টির কারণে এবার মাথায় হাত পড়ছে তাদের।
তেঁতুলিয়া উপজেলার বুড়াবুড়ি ইউনিয়নের নাওয়াপাড়া এলাকার চাষি হবিবর রহমান বলেন, ‘আমি কৃষি করে চলি। এক বিঘার মতো মরিচ চাষ করেছি। কিন্তু বৃষ্টি না হওয়ায় গাছ থেকে মরিচ ঝরে পড়ে যাচ্ছে। সেচ দিলেও আবার শুকিয়ে যাচ্ছে খেত। এই সময়ে যদি বৃষ্টি হয়, তাহলে আমাদের মরিচ খেত ভালো থাকবে এবং কিছুটা হলেও আমরা ফলন পাব।’
তেঁতুলিয়া উপজেলার তিরনইহাট ইউনিয়নের পাঠানপাড়া এলাকার চাষি সফিউল ইসলাম সৈকত। তিনি বলেন, ‘বৃষ্টির অভাবে আমার বোরো খেতের মাটি ফেটে চৌচির হয়ে যাচ্ছে। বাধ্য হয়ে মোটরের মাধ্যমে সেচ দিলেও পানি শুকিয়ে যাচ্ছে। এ সময় প্রচুর পরিমাণে পানি প্রয়োজন। কিন্তু পানির অভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ধানখেত। অনাবৃষ্টির কারণে আমাদের সব ফসলের ক্ষতি হচ্ছে।’
দৌলতপাড়া এলাকার ভুট্টা চাষি রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘অনাবৃষ্টির কারণে এ বছর ভুট্টাখেত অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। পানির অভাবে ভুট্টার দানা তেমন বড় হচ্ছে না। এই মুহূর্তে বৃষ্টি হলে আমরা অনেক উপকৃত হতাম। কারণ সেচ যেভাবে দিতে হচ্ছে, এতে আমাদের অনেক খরচ হচ্ছে।’
রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার তাহেরপুর এলাকার ধান চাষি মিজানুর রহমান বলেন, ‘১০ থেকে ১৫ দিন আগে বৃষ্টি হলে চাষিরা খুবই উপকৃত হতেন। কারণ তখন ধানে সেচ দেওয়ার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু ঘন ঘন লোডশেডিং এবং পাম্পে সিরিয়াল না পাওয়ার কারণে ভালোভাবে সেচ দেওয়া সম্ভব হয়নি। এতে ধানের গাছ অনেক মরে গেছে। সেচে অনেক খরচেরও বিষয় আছে। ওই সময় বৃষ্টির প্রয়োজন ছিল। কিন্তু বর্তমানে ধান কাটা ও শুকানোর কাজ চলছে। তাই এখন বৃষ্টিপাত হলে কৃষকদের ভোগান্তি বাড়বে। ধান কাটা ও শুকানোর ক্ষেত্রে খরচও বেড়ে যাবে।’
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মোছা. উম্মে ছালমা বলেন, টানা তীব্র খরার কবলে পড়েছে এই অঞ্চলের কৃষি। আমের গুটি ঝরে পড়ায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন চাষিরা। একই কারণে ফসলি জমিতে থাকা ধান, ভুট্টা ও পাটের খেত পুড়ে গেছে। বর্তমানে ধান কেটে ঘরে ওঠানোর কাজ চলছে। বৃষ্টি না হওয়ায় ধান চাষিদের উপকার হচ্ছে। কিন্তু আমের গুটি ঝরে পড়া রোধ করা যাচ্ছে না। তাই এ পরিস্থিতি মোকাবিলায় আম চাষিদের গাছের গোড়ায় বেশি বেশি সেচ দিতে হবে। পাশাপাশি গাছে পানি স্প্রে করতে হবে।
আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ তাপস চন্দ্র আচার্য বলেন, গত সপ্তাহে সর্বোচ্চ ৩৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। সারা দিন তীব্র তাপমাত্রা অনুভূত হলেও রাতে তাপমাত্রা নেমে যায় ২৮ ডিগ্রিতে। তখন বাতাসের আর্দ্রতাও কমে যাওয়ায় রাতে ঘন কুয়াশাসহ শীত অনুভূত হচ্ছে।
লবণের বাম্পার উৎপাদন: এ বছর এখন পর্যন্ত একটানা কড়া রোদের সুবাদে দেশে লবণের বাম্পার উৎপাদন হয়েছে। লবণশিল্পের পৃষ্ঠপোষক সংস্থা বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) দেওয়া তথ্য অনুসারে চলতি লবণ মৌসুমে (২৮ এপ্রিল পর্যন্ত) ২২ লাখ ৩৪ হাজার ৬৫৮ টন লবণ উৎপাদন হয়েছে, যা বিগত বছরের সব রেকর্ড অতিক্রম করেছে। এখনো লবণ উৎপাদন অব্যাহত রয়েছে।
এর আগে গত বছর (২০২২-২৩ অর্থবছর) ৬২ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বেশি লবণ উৎপাদন হয়েছিল। সে সময় পর্যন্ত সর্বোচ্চ উৎপাদনের রেকর্ড ছিল ২২ লাখ ৩২ হাজার ৮৯০ টন।
এই প্রতিবেদনের তথ্য সহায়তা দিয়েছেন খবরের কাগজের রাজশাহী ব্যুরো ও ময়মনসিংহ, খুলনা, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি