আসন্ন ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে প্রথম ধাপে ভোটের বাকি আর মাত্র ৭ দিন। এ পর্যায়ে ভোটকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির আশঙ্কা করছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। পরিস্থিতি মোকাবিলায় মঙ্গলবার (৩০ এপ্রিল) সংশ্লিষ্ট জেলা-উপজেলায় মনিটরিং টিম ও আইনশৃঙ্খলা সেল গঠন করতে সংস্থাটির নির্বাচন ব্যবস্থাপনা শাখা থেকে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্দেশ পাঠানো হয়েছে।
উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধি অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট নির্বাচনি এলাকাগুলোতে তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনি অপরাধ ও আচরণবিধি লঙ্ঘনের যেকোনো ঘটনা মনিটরিং করতে হবে। ইসির নির্দেশনায় সেই লক্ষ্যে জেলা পর্যায়ে রিটার্নিং অফিসারের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্য এবং উপজেলা পর্যায়ে সহকারী রিটার্নিং অফিসারের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট মনিটরিং কমিটি গঠন করে ইসিকে জানাতে বলা হয়েছে।
টিম গঠনের পর সদস্যদের নামের তালিকা নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে পাঠাতে হবে। এই টিম নির্বাচনসংক্রান্ত আইন, বিধি, নির্বাচন আচরণবিধি এবং নির্বাচনের সার্বিক বিষয়াদি যথাযথ ও সঠিকভাবে হচ্ছে কি না, তা তদারকি করবে ও প্রতিপালনের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। বিশেষ ক্ষেত্রে তাৎক্ষণিকভাবে আর বিশেষ প্রয়োজন না হলে প্রতি পাঁচ দিন পর পর উল্লিখিত বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করবে।
এ ছাড়া নির্বাচনকে ঘিরে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ রক্ষা ও ভোটারদের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোর কর্মকাণ্ডের সমন্বয় সাধন ও সুসংহতকরণের লক্ষ্যে জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী সেল গঠন করতে বলা হয়েছে। এই সেলে অন্য সদস্যরা হবেন জেলা নির্বাচন অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, পুলিশ সুপারের প্রতিনিধি ও সহযোগী আইনশৃঙ্খলা সংস্থার মনোনীত কর্মকর্তারা।
উপজেলা ভোটকে ঘিরে যেকোনো ধরনের অনিয়ম প্রতিরোধে জেলা পর্যায়ে নির্বাচনি সফরে গিয়ে মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের উদ্দেশে কঠোর নির্দেশনা দিচ্ছেন নির্বাচন কমিশনাররা। নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব খান বলেছেন, ‘নির্বাচনে কোনো অনিয়ম হলে দায়িত্বরত কর্মকর্তাদের চাকরিচ্যুত করা হবে। কে কোন দলের প্রার্থী- এটা বড় কথা নয়, বড় কথা হচ্ছে, জনগণ যাকে চাবেন, ভোট দেবেন, তিনিই নির্বাচিত হবেন, তিনিই জনপ্রতিনিধি হবেন।’
মঙ্গলবার সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে সাতক্ষীরা ও যশোর জেলার রিটার্নিং অফিসারসহ নির্বাচনসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা এবং উপজেলা ভোটে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় শেষে তিনি এসব কথা বলেন।
ভোটের পরিবেশ রক্ষায় উপজেলা ভোটে প্রতিটি কেন্দ্রে অস্ত্রধারী পুলিশ ও ইউনিয়নে ম্যাজিস্ট্রেট থাকবে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রসচিব মোস্তাফিজুর রহমান। গত সোমবার সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা-সংক্রান্ত সভা শেষে তিনি জানান, উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রগুলোতে ১৭ থেকে ১৮ জন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যসহ ৬ জন অস্ত্রধারী সদস্য থাকবেন। একই সঙ্গে প্রতিটি ইউনিয়নে ও উপজেলায় একজন করে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট থাকবেন।
গড়ে পাঁচটি সেন্টারের জন্য স্ট্রাইকিং ফোর্স ও মোবাইল ফোর্স থাকবে। আনসার, পুলিশ, বিজিবি, র্যাব ও কোস্টগার্ডের সমন্বয়ে এই মোবাইল ফোর্স গঠন করা হবে। উপকূলীয় এলাকাগুলোতে বিজিবির বদলে কোস্টগার্ড বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। পার্বত্য এলাকার কিছু দুর্গম সেন্টারে হেলিকপ্টারে পোলিং কর্মকর্তা ও ভোটের উপকরণ পৌঁছানো হবে। নির্বাচনসংক্রান্ত অভিযোগ ৯৯৯-এর মাধ্যমে গ্রহণ করা হবে। প্রতিটি অভিযোগ আসার পর কারা তা দেখবে, তাও ট্রাকিং করা হবে।
ইসির তফসিল অনুযায়ী এবারের ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে চার ধাপে। দেশের ৪৯৫টি উপজেলার মধ্যে এ পর্যায়ে ভোটের অনুষ্ঠানিকতা চলছে ৪৭৬ উপজেলায়। সব ধাপে ভোট অনুষ্ঠানের সব ধরনের প্রস্তুতিও নিয়েছে নির্বাচন কমিশন। প্রথম ধাপে আগামী ৮ মে ১৪৪ উপজেলায় ভোট গ্রহণ দিয়ে শুরু হবে ভোটের আনুষ্ঠানিকতা। গত ২৩ এপ্রিল প্রতীক পাওয়ার পর থেকে প্রথম ধাপের উপজেলাগুলোতে জমজমাট প্রচার চালাচ্ছেন ১ হাজার ৬৯৩ প্রার্থী। এ ছাড়া চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে ২৬ প্রার্থী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হওয়ায় সংশ্লিষ্ট ওই সব উপজেলায় নির্ধারিত বিজয়ী পদগুলোতে ভোটের প্রয়োজন হবে না।