![হাথুরুসিংহে নিজেই নিজের বস](uploads/2024/02/12/1707717781.Allan-Donald.jpg)
ওয়ানডে বিশ্বকাপ শেষে বাংলাদেশ দলের দায়িত্ব ছেড়েছেন পেস বোলিং কোচ অ্যালান ডোনাল্ড। দায়িত্ব ছাড়লেও পেসারদের সঙ্গে এখনো বজায় আছে সম্পর্ক। তাসকিন-ইবাদতদের সঙ্গে নিয়মিত কথা বলেন হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে। তাকে নতুন করে এক বছর কাজ করার প্রস্তাব দিয়েছিল বিসিবি। কিন্তু এই এক বছর বাংলাদেশের ব্যস্ত সূচি দেখে রাজি হননি ডোনাল্ড। এ ছাড়া হাথুরুসিংহের সঙ্গে তার দূরত্বও তৈরি হয়েছিল। জানিয়েছেন, হাথুরুসিংহে নিজেই নিজেকে বস মনে করত।
বাংলাদেশের দায়িত্ব ছেড়ে বর্তমানে নিজ দেশ দক্ষিণ আফ্রিকার ঘরোয়া লিগের দল ডিপি ওয়ার্ল্ড লায়ন্সের দায়িত্বে আছেন। সেখান থেকে বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে খবরের কাগজের সঙ্গে কথা বলেছেন ডোনাল্ড। তার বলা সেসব কথা তুলে ধরেছেন পার্থ রায়
শরিফুল গত বছর দারুণ ছন্দে ছিলেন। তাকে কেমন দেখলেন?
ডোনাল্ড- এটার পেছনে দারুণ একটা গল্প আছে। ২০২৩ সালে শরিফুল যেমন বোলার ছিল, আগে কিন্তু এমন ছিল না। মাঝে তার পারফরম্যান্স একদম খারাপের দিকে ছিল। ফলে একাদশে নিয়মিত জায়গা পাচ্ছিল না। সেই সময় একদিন সকালে নাস্তার টেবিলে সে আমাকে প্রশ্ন করে, কেন আমি খেলছি না? সাধারণত এই প্রশ্নগুলোর উত্তর দেন কোচ। পাশাপাশি এই প্রশ্ন করার অধিকারও ওর নেই, যদি না সে খুব ভালো ফর্মে থাকে। আমি তাকে বুঝিয়ে বললাম, কেন সে দলে নেই। বললাম তোমার পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে। নিজেকে গড়ে তুলতে হবে। এরপর সে কঠোর পরিশ্রম করেছে। আমার ধারণা, প্রয়োজনের চেয়ে বেশি করেছে সে। তার এমন পারফরম্যান্সের পর তাকে দলে নিতে বাধ্য হয়েছে টিম ম্যানেজমেন্ট এবং তাকে খেলিয়েছে। এই কারণেই সে গত বছর দারুণ পারফর্ম করেছে।
শরিফুলের উন্নতির জায়গাগুলো কী ছিল?
ডোনাল্ড- আমি যখন তাকে প্রথম দেখেছি, সে ধারাবাহিক পারফর্মার ছিল না। সে নিজের ভুলগুলো নিয়ে কাজ করেছে। তার ইনসুইং অন্যতম উন্নতির জায়গা। সে বল ভেতরে ঢুকিয়ে প্যাডে লাগানোর সক্ষমতা রাখে। সেই কাজটা এখন সে দারুণভাবে করছে। এ ছাড়া তার কবজির অবস্থান ঠিকঠাক ছিল না। ডানহাতি ব্যাটারদের জন্য সে বল ভেতরে ঢোকাতে পারে এবং বাঁহাতি বোলারদের জন্য বল বের করে নিতে পারে। এটা ওর সহজাত প্রতিভা। কিন্তু কবজির অবস্থান ঠিক না থাকায় সেটি শরিফুল ঠিকঠাক করতে পারছিল না। ২০২৩ সালে সে ঠিক করেছে সেটি। ও অনেক জায়গায় উন্নতি করেছে। এগুলো ধরে রাখলে ভবিষ্যতে ও বাংলাদেশের সেরা পারফর্মার হবে। আমি তাকে নিয়ে বেশ গর্বিত।
বাংলাদেশি পেসাররা সামনে কেমন করতে পারে বলে আপনার বিশ্বাস?
ডোনাল্ড- পেসারদের সবার একই মানসিকতা। সবাই আক্রমণাত্মক খেলতে চায়। এটা কখনো পরিবর্তন হবে না বলে আমার মনে হয়। ভারত-পাকিস্তানের মতো একসময় বাংলাদেশেও দারুণ পেস আক্রমণ গড়ে উঠবে, এটা আমার বিশ্বাস। নিজেদের কাজ ঠিকঠাক বোঝে আর ওই ধারাবাহিকতা থাকলে তারা অনেক ভালো করবে।
পেসারদের উন্নতির মিছিলে ব্যতিক্রম মোস্তাফিজুর রহমান। তার সমস্যাটা কোথায় বলে আপনার মনে হয়?
ডোনাল্ড- মোস্তাফিজ ক্ল্যাসি ক্রিকেটার। মনে রাখতে হবে ফর্ম ইজ টেম্পোরারি, ক্লাস ইজ পার্মানেন্ট। বাংলাদেশকে সে দীর্ঘদিন সার্ভিস দিয়ে যাচ্ছে। মোস্তাফিজের সমস্যা আমার কাছে কখনো টেকনিক্যাল কোনো সমস্যা মনে হয় না। ওর সমস্যাটা মানসিক। ক্রিকেটাররা অফ ফর্মে থাকতে পারে। এটা সাময়িক। আমার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় শিক্ষা এটি। আশা করি, সে ফর্মে ফিরবে। তখন সে আরও ভয়ঙ্কর হয়ে উঠবে বলে আমার বিশ্বাস।
পেসারদের সঙ্গে হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে এখনো কথা হয়?
ডোনাল্ড- হ্যাঁ, হয়। হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপে এখনো তারা আমার কাছে নানা ধরনের পরামর্শ চায়। আমি চেষ্টা করি, যতটুকু সম্ভব ওদের সাহায্য করতে। দিন কয়েক আগে তাসকিন কিছু ভিডিও দিয়েছিল, আমি তাকে ভিন্ন ভিন্ন অ্যাঙ্গেলে কাজ করতে বলেছি। ইবাদত-খালেদরা বিশ্বকাপে ছিল না। ওরা নিজেদের কাজ আমাকে পাঠিয়েছিল। আমি চেষ্টা করেছি তাদের পরামর্শ দেওয়ার। ওদের সঙ্গ ছেড়ে আসার সময় বলেছিলাম, এই গ্রুপটা থাকবে, এখানে তোমাদের সমস্যা নিয়ে কথা হবে।
বাইরে শোনা যায় চন্ডিকা হাথুরুসিংহে ড্রেসিংরুমে নিজের প্রভাব ধরে রাখার চেষ্টা করেন। এটা কতটুকু সত্য?
ডোনাল্ড- সে নিজেই নিজের বস। আমি আসলে এমন কাউকে নিয়ে কথা বলতে চাই না, যে আসলে অন্যকে অসম্মান করে বা এই রকম কিছু করে।
বিশ্বকাপ চলাকালে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, আপনি টাইমড আউট পছন্দ করেন না। কিন্তু কেন?
ডোনাল্ড- এটা বলায় বাংলাদেশ ক্রিকেট আমাকে নিয়ে খুশি না। আমি কখনো টাইমড আউট দেখিনি। এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতেও দেখিনি কখনো। এমন কী ক্লাব কিংবা ঘরোয়া ক্রিকেটেও না। আমি জানি, এটি নিয়মে আছে। কিন্তু আমার কাছে ভালো মনে হয়নি।
বিশ্বকাপের আগে নাকি চাকরি ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন টুর্নামেন্টের মাঝপথে?
ডোনাল্ড- বিসিবি আমাকে নতুন করে এক বছর চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছিল। তবে বিশ্বকাপের আগেই সিদ্ধান্ত ছিল চাকরি ছাড়ব। বিশ্বকাপ চলাকালে কিছু বিষয় দেখার ছিল। ওই সময় এমন কিছু ঘটেনি যে, নতুন প্রস্তাবে সাড়া দেব। এটিই একমাত্র সিদ্ধান্ত, যেটি আমি সঠিক সময়ে নিতে পেরেছি। আমার অনেক বেশি ভ্রমণ করা হচ্ছিল। এখন আসলে পরিবারকে সময় দেওয়া উচিত। এই কারণে দক্ষিণ আফ্রিকায় ফেরত এসেছি। নতুন চুক্তির জন্য জালাল ইউনুসের সঙ্গে কথা হয়েছিল। পরের ১২ মাসের সূচি দেখে বাধ্য হয়ে চুক্তি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।