আইসিসি ইভেন্টে নিয়মিত, তবে শিরোপা রেসে কখনোই থাকা হয় না। কারণ নেদারল্যান্ডস ক্রিকেটে বড় কোনো শক্তি নয়। ইউরোপে ফুটবল উন্মাদনার গণ্ডি পেরিয়ে ২২ গজে তাদের পর্দাপণই সফলতা। সেরা সাফল্য আইসিসি ইভেন্টে নাম লেখানো। বলা বাহুল্য, টানা তৃতীয় বিশ্বকাপ খেলতে চলেছে দেশটি। ২০২২ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ এবং ২০২৩ ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলা ডাচ ক্রিকেটাররা এখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং যুক্তরাষ্ট্র আয়োজিত বিশ্বকাপের দিকে তাকিয়ে। শিরোপা রেসে না থাকা খর্বশক্তির নেদারল্যান্ডসের বিশেষত্ব চমকে দেওয়া। হঠাৎ ওজনের চেয়ে বেশি শক্তিতে ঘুষি মারা তাদের অভ্যাস। হুটহাট ঘটিয়ে ফেলে অঘটন। তাই বড় মঞ্চে ‘সারপ্রাইজ প্যাকেজ’ নেদারল্যান্ডস।
লেখা ও বাস্তবতার মিল খুঁজে পেতে খুব বেশি দূরে তাকাতে হবে না। ধরা যাক, টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ানডে বিশ্বকাপের শেষ আসরের কথা। ২০২২ সালে টি-টোয়েন্টি সংস্করণের ইভেন্টটিতে নেদারল্যান্ডসের চার জয়ের একটি ছিল দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে। অস্ট্রেলিয়ায় সেই আসরে বড়দের চোখে চোখ রেখে লড়েছিল তারা। পরের বছর, ভারত বিশ্বকাপে ফের প্রোটিয়াদের কুপোকাত করেছিল কমলা জার্সিধারীরা। সেই সাফল্যকে পুঁজি করেই নতুন দিনের স্বপ্ন বুনেছেন কোচ রায়ান কুক, যার কোচিংয়ে নেদারল্যান্ডস তাদের ১১তম বিশ্বকাপ খেলার অপেক্ষায় (দুই ফরম্যাটের বিশ্বকাপে পাঁচটি করে খেলেছে)।
টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে বেশি সফল নেদারল্যান্ডস। চার-ছক্কার রোমাঞ্চে আতঙ্কের নামও বটে! পরিসংখ্যান বলছে এটা। জানেন কী, টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জয়ের হার কোন দলের সবচেয়ে বেশি? অদ্ভুত হলেও সত্যি, দলটি নেপাল। টুর্নামেন্টে একবারের অংশগ্রহণে ৩ ম্যাচে তাদের জয় ২টি। জয়ের হার ৬৬.৬%। নেপালের পর ভারত (৬৩.৯৫%) এবং অস্ট্রেলিয়ার (৬২.৫০%) অবস্থান যথাক্রমে দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থানে। মানে-গুণে, শক্তি-সামর্থ্যে যেখানে আধিপত্য থাকার কথা টেস্ট খেলুড়ে ১২ দলের, সেখানে নেপালের শীর্ষে থাকা সৌভাগ্য বটে। যদিও এতটা সৌভাগ্য নেই নেদারল্যান্ডসেরও, তবে আইসিসির পূর্ণ সদস্যদের শক্তির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে এই তালিকার ১১ নাম্বারে ডাচ ক্রিকেটাররা।
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে জয়ের হারে নিদারুণ বাংলাদেশ, আয়ারল্যান্ড এবং আফগানিস্তান (টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর মধ্যে)। টুর্নামেন্টে ৩৮ ম্যাচে টাইগারদের জয় মাত্র ৯টি (২৪.৩২%) এবং ২২ ম্যাচে আফগানিস্তানের জয় ৭টি (৩১.৮১%)। আয়ারল্যান্ডের (৩১.১৮%) অবস্থানও নেদারল্যান্ডসের পরে। তিন দলই ডাচদের চেয়ে বেশিবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ খেলেছে। কিন্তু উন্নতি দেখাতে পারেনি। এদিক থেকে নেদারল্যান্ডসের পারফরম্যান্সের গ্রাফ মনোমুগ্ধকর। ৫ বারের অংশগ্রহণে খেলেছে ২৩ ম্যাচ, জয় ৯টি। জয়ের হার ৪০.৯০! গত ওয়ানডে বিশ্বকাপের লিগ পর্বে দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়াও পরাস্ত করেছিল বাংলাদেশকে। সুখবর তাদের জন্যে- এবারও দুই দলকে পাচ্ছে নেদারল্যান্ডস।
‘ডি’ গ্রুপে নেদারর্যান্ডসের সঙ্গি বাংলাদেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা ছাড়াও অপর দুই দল হলো শ্রীলঙ্কা ও নেপাল। ডালাসে আগামী ৪ জুন নেপালের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে অভিযান শুরু করবে ডাচরা। দক্ষিণ আফ্রিকা, বাংলাদেশ এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলবে যথাক্রমে ৮, ১৩ ও ১৭ জুন। যেহেতু প্রতি গ্রুপের ২টি করে দল যাবে সুপার-এইটে, তাই ‘সারপ্রাইজ প্যাকেজ’ নেদারল্যান্ডসের সুযোগও থাকবে পরের রাউন্ডে খেলার। যদি গত বিশ্বকাপের ফর্ম ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং যুক্তরাষ্ট্রে টেনে আনতে পারে ডাচ ক্রিকেটাররা।
অভিজ্ঞতায় ভাটা
বৈশ্বিক ইভেন্টে চমক দেখানো দলটি এবার সবাইকে চমকে দিয়েছে দল ঘোষণায়। তাদের স্কোয়াডে নেই দুই সেরা অস্ত্র- কলিন অ্যাকারম্যান এবং রুলফ ফন ডার মারউই। কাউন্টি ক্রিকেটে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ দুই অভিজ্ঞ ডাচ ক্রিকেটার। এ জন্য বিশ্বকাপ থেকেই সরে ডারহামের অ্যাকারম্যান এবং সমারসেটের মারউই। যদিও অন্যরা এতটা স্বার্থপর হয়নি। কাউন্টির ব্যস্ততা গুটিয়ে নিয়ে আরেকটি বিশ্বকাপ খেলার অপেক্ষায় বাকিরা।
নেদারল্যান্ডসে ক্রিকেট কাঠামো তেমন আশানুরূপ নয়। সেখানকার খেলোয়াড়রা ব্যস্ত থাকেন বাইরের দেশের ক্রিকেট নিয়ে। যেমন- বাস ডি লিড ডারহামে, ফ্রেড ক্লাসেন কেন্টে, লোগান ফন বিক ওয়েলিংটনে, টিম প্রিঙ্গল নর্দান ডিস্ট্রিক্টে, ড্যানিয়েল ডোরাম লিওয়ার্ড দ্বীপপুঞ্জে, পল ফন মিকারেন ওয়েস্টন সুপার মারে ক্লাবে খেলেন। এদের প্রত্যেকেই ফের এক হয়েছেন বিশ্বকাপের জন্য। ডাচদের বিশ্বকাপ স্কোয়াডের মধ্যে থাকা ৭ জনের সবশেষ টি-টোয়েন্টি এবং ওয়ানডে বিশ্বকাপ খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। ৭ জন যেকোনো একটিতে ছিল এমন খেলোয়াড়ের সংখ্যা ৫।
ডাচদের দলে রয়েছে তিন ভারতীয় বংশোদ্ভূত ক্রিকেটার- বিক্রমজিৎ সিং, তেজা নিদামানুরু এবং আরিয়ান দত্ত। তবুও তাদের দলে অভিজ্ঞতায় ভাটা দুই ক্রিকেটার অ্যাকারম্যান এবং মারউই্ না খেলাতে। তাই একটা ঘাটতি নিয়েই যুদ্ধে নামবেন ডাচ অধিনায়ক স্কট এডওয়ার্ডস। বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুত হতে তারা ঘরের মাঠে আয়ারল্যান্ড এবং স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে খেলবে ট্রাইনেশন সিরিজ, যা শুরু হবে আজ।
টি-টোয়েন্টিতে নেদারল্যান্ডসের অভিষেক ২ আগস্ট ২০০৮
ম্যাচ: ১০৩
জয়: ৫২
হার: ৪৫
টাই: ২
পরিত্যক্ত: ৪
র্যাঙ্কিং: ১৫
রায়ান কুক, প্রধান কোচ
আমরা একটি ভারসাম্যপূর্ণ দল নির্বাচন করতে পেরেছি। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ওয়েস্ট ইন্ডিজের কন্ডিশনে ভালো পারফর্ম করার বিষয়ে আত্মবিশ্বাসী। প্রত্যেক খেলোয়াড় ভালো প্রস্তুতি নিচ্ছে। নেদারল্যান্ডস ক্রিকেট তাদের উন্নতি এবং গুণমান দেখিয়েছে। শেষ দুই বিশ্বকাপে আমাদের পারফরম্যান্স প্রশংসনীয় ছিল। ২০২৪ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের পরবর্তী রাউন্ডে (সুপার এইট) পৌঁছানোর জন্য সামনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ আমরা।
দল : স্কট এডওয়ার্ডস (অধিনায়ক), আরিয়ান দত্ত, বাস ডি লিড, ড্যানিয়েল ডোরাম, ফ্রেড ক্লাসেন, কাইল ক্লেইন, লোগান ফন বিক, ম্যাক্স ও’ডাউড, মাইকেল লেভিট, পল ফন মিকারেন, সাইব্র্যান্ড এনঙ্গেলব্রেখট, তেজা নিদামানুরু, টিম প্রিঙ্গল, বিক্রম সিং এবং ওয়েসলি বারেসি।