![ফুরফুরে মেজাজে হিমালয়-কন্যা](uploads/2024/05/17/nepal-1715923480.jpg)
নেপালকে বলা হয় হিমালয় কন্যা। ১৮৭৭ সালে প্রকাশিত হয়েছিল হিস্টোরি অব নেপাল বই। যে বইটিতে ড্যানিয়েল রাইট লিখেছিলেন, ‘তরুণদের ক্রিকেট ও অন্যান্য খেলার জন্য বিভিন্ন সময়ে শিক্ষকরা চেষ্টা করে গেছেন। কিন্তু এই ধরনের বিনোদনকে সব সময়ই অপমানজনক বলে মনে করা হতো।’
ছোট্ট এই দেশটিতে ক্রিকেটের সঙ্গে পরিচয় অনেক আগে থেকেই। আজ থেকে ষাট-সত্তর বছর আগে ক্রিকেটের সঙ্গে পরিচিত হলেও কিন্তু সেভাবে ক্রিকেট বিশ্বে জায়গা করে নিতে পারেনি দলটি। ২০১৮ সালে ওয়ানডে স্ট্যাটাস পায় দলটি। সাফল্যের ভাণ্ডার অনেকটাই শূন্য। হিসেবের খেরোখাতা সমৃদ্ধ নয় বলেই যেকোনো বিশ্বকাপেই চাপহীন থাকে নেপাল। প্রত্যাশা কম, বিনোদন বেশি। সে লক্ষ্যেই এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে আসছে হিমালয় কন্যারা।
গত শতাব্দীর বিশ থেকে ত্রিশ সালের দিকে তৎকালীন শাসক রানাদের পরিবারের চেষ্টায় ক্রিকেটের যাত্রা শুরু হয় নেপালে। শুরুতে আর সব দেশের মতোই এটা ছিল অভিজাত শ্রেণির খেলা। কিন্তু নেপালে বিপ্লবের পর বদলে যেতে শুরু করে সব। গণতন্ত্রের প্রবর্তনের পর ক্রিকেট বাকি জনগোষ্ঠীর মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। ১৯৯৬ সাল থেকে এশিয়া ক্রিকেট কাউন্সিলের বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশ নেওয়া শুরু করে। অথচ ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন অব নেপাল গঠন করা হয়েছিল সেই ১৯৪৬ সালে ব্রিটিশ শাসনামলে।
রোহিত পাওদেলের নেতৃত্বে এবার বিশ্বকাপে খেলতে যাচ্ছে দেশটি। দলে নেই তারকা লেগ স্পিনার সন্দ্বীপ লামিচানে। ধর্ষণ মামলায় জেলে আছেন তিনি। অন্যথায় প্রত্যাশিত সবাই রয়েছেন নেপালের বিশ্বকাপের স্কোয়াডে। দলে বড় কোনো চমক নেই। অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে খেলা গুলশান ঝা তারুণ্য নির্ভর দলটিতে রয়েছেন। জায়গা ধরে রেখেছেন ১৯ বছর বয়সী প্রতীশ জিসি। ২০১৪ সালের ডেব্যু আসর থেকে একমাত্র খেলোয়াড় হিসেবে আছেন সোমপাল কামি। রয়েছেন ফাস্ট বোলিং অলরাউন্ডার কারান কেসি। তিনি দলটির সবচেয়ে বেশি বয়সী খেলোয়াড়। স্পিন আক্রমণে নেতৃত্বে দেবেন ললিত রাজবংশী।
নেপালের পোস্টারবয় খ্যাত সন্দীপ লামিচানে। তারকা এই লেগ স্পিনারের হাত ধরেই নেপালের স্বপ্নযাত্রা শুরু হয়েছিল। কিন্তু এক ধর্ষণ মামলায় নেপালের আদালত তাকে ৮ বছরের জন্য কারাদণ্ড দেন। তবে রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করার পর ধর্ষণ মামলায় খালাস পেয়েছেন লামিচানে। গত ১৫ মে এ রায় ঘোষণা করা হয়। ধারণা করা হচ্ছে নেপালের বিশ্বকাপ স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন তিনি।
আদালতের প্রাথমিক রায়ের পর নেপাল ক্রিকেট বোর্ড লামিচানেকে নিষিদ্ধ করেছিল। যদিও তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে এসেছেন লামিচানে। এমন অভিযোগের পরও জনসমর্থনও পেয়ে এসেছেন। এ মাসে ফেসবুকে তিনি লেখেন, ‘আমি নির্দোষ। যারা আমাকে বিশ্বাস করেন এবং আমার ব্যাপারে সহমর্মী, তাদের প্রতি আমি ঋণী থাকব।’
নেপালের প্রথম বিশ্বকাপ ২০১৪ সালে বাংলাদেশের মাটিতে। নতুন হিসেবে খারাপ করেনি দলটি। বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত সেই আসরে ‘এ’ গ্রুপে পড়েছিল নেপাল। প্রতিপক্ষ ছিল বাংলাদেশ, আফগানিস্তান ও হংকং। তিন ম্যাচের মধ্যে দুটিতে (হংকং ও আফগানিস্তান) জিতে রীতিমতো হইচই ফেলে দিয়েছিল। অল্পের জন্য সুপার টেনে খেলা হয়নি তাদের। বাংলাদেশের সমান ৪ পয়েন্ট ছিল নেপালেরও। তবে নেট রান রেটে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকায় কপাল পুড়েছিল গোরখালিদের। ওয়ানডের তুলনায় টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটেই বেশি সফল নেপাল। যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপটা তাই হিমালয় কন্যাদের জন্য বাড়তি রোমাঞ্চেরই।
দশ বছর পর আবার টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে নেপাল। এবারও গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশকে পেয়েছে তারা। বাংলাদেশ ছাড়াও ‘ডি’ গ্রুপে নেপালের প্রতিপক্ষ দক্ষিণ আফ্রিকা, শ্রীলঙ্কা, নেদারল্যান্ডস। ডালাসে ৪ জুন বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে তাদের প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস।