ভোটের তারিখ ঘনিয়ে আসতেই পাল্টে গেল দৃশ্যপট। ঢাকা-১৮ আসনে নির্বাচনি প্রচারে প্রথম দিকে এগিয়ে ছিলেন লাঙ্গল আর কেটলি প্রতীকের প্রার্থী। তবে শেষ সময়ে এসে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতার কেটলি ও ট্রাকের সমর্থকদের মধ্যেও উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে। যার প্রেক্ষিতে নির্বাচনি সীমানার আওতাভুক্ত খিলক্ষেত এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে থানা আওয়ামী লীগের দুই প্রধান কার্যালয়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, খিলক্ষেত এলাকায় ‘ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে’র পিলার থেকে আনুমানিক ২০ ফুট দূরত্বে সড়কের উভয় পাশেই স্থাপন করা হয়েছে দুটি কার্যালয়। গত বুধবার দেখা যায়, বাঁশের খুঁটি আর টিনের ছাউনি দিয়ে তৈরি ডান পাশে স্থাপিত কার্যালয়ের প্রবেশপথে ঝুলছিল একটি ব্যানার। সেখানে লেখা খিলক্ষেত থানা আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের প্রধান কার্যালয়। ভেতরে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের চিত্র, দলীয় স্লোগানসহ দুটি ব্যানার রয়েছে। একটিতে ‘সৌজন্যে মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সদস্য রফিকুল ইসলাম’ ও অন্যটিতে ‘প্রচারে ৯৬ নম্বর ওয়ার্ড শাখা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য শফিকুল ইসলামের’ নাম রয়েছে। বাইরে কেটলি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী খসরু চৌধুরীর বহু পোস্টার ঝোলানো হয়েছে।
এ সময় কথা হয় শ্রমিক লীগের খিলক্ষেত থানার সাধারণ সম্পাদক সরওয়ারের সঙ্গে। খবরের কাগজকে তিনি বলেন, ‘এখানে অনেক দিন ধরে আমাদের অফিস ছিল। এখন বাড়ানো হয়েছে। নেতারা বসলে কর্মীর জায়গা হয় না। এ জন্য বড় করা হয়েছে। আমরা কেটলির পক্ষে কাজ করছি।’
এই কার্যালয়ের উল্টো দিকে আরেকটি অস্থায়ী কার্যালয় স্থাপনের কাজ চলছিল কয়েক দিন ধরে। গতকাল বৃহস্পতিবার গিয়ে সেখানে একটি ‘সাইনবোর্ড’সদৃশ ব্যানার দেখা যায়। সেখানে বড় করে লেখা, খিলক্ষেত থানা আওয়ামী লীগ, প্রধান কার্যালয়। নিচে লেখা হাজি মো. আসলাম উদ্দীন, সাধারণ সম্পাদক। ভেতরে স্বতন্ত্র প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক এস এম তোফাজ্জল হোসেনের ট্রাক মার্কার ভোটার লিস্টসহ প্রচারসামগ্রী রয়েছে।
এখানে কথা হয় আওয়ামী লীগের ৯৬ নম্বর ওয়ার্ডের সহসভাপতি রাকিব উদ্দীনের সঙ্গে। পূর্বের কার্যালয় রেখে এখানে কার্যালয় করা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন থেকে এটি ইলেকশনের কাজে ব্যবহৃত হবে।’
সংশ্লিষ্টরা জানান, এ আসনে লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে ১৪-দলীয় জোটের সমর্থনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন জাতীয় পার্টির শেরীফা কাদের। ১০ জন প্রার্থীর মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন আওয়ামী লীগের চার নেতা। আসন সমঝোতায় বাদ পড়েন বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগ নেতা হাবিব হাসান। ফলে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে কেটলি ও ট্রাকের প্রচারে অংশ নেন। তবে হাবিব হাসানের সঙ্গে খসরু চৌধুরীর পূর্ব থেকে দূরত্ব থাকায় হাবিবের সমর্থকদের বড় অংশ এস এম তোফাজ্জল হোসেনের সঙ্গে যোগ দিয়েছেন।
শেষ দিনের প্রচার
আজ শুক্রবার সকাল ৯টায় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারসীমা হওয়ায় প্রকৃত অর্থে গতকাল ছিল শেষ দিন। জাতীয় পার্টির লাঙ্গল প্রতীকের শেরীফা কাদের উত্তরার ১৪ নম্বর সেক্টর মাঠ থেকে ‘রোড শো’ শুরু করেন। যেখানে ট্রাক ও মোটরসাইকেলে করে নেতা-কর্মীরা অংশ নেন। এ সময় সাংবাদিকদের শেরীফা কাদের বলেন, ‘জনগণের ওপর ভরসা করে আমি নেমেছি। আমাকে ফাইট করতে হবে। আমি শতভাগ আশাবাদী।’
ট্রাক প্রতীকের প্রার্থী এস এম তোফাজ্জল হোসেন বাউনিয়া, গোয়ালটেক, কবিরশাহ খান মাজার, আজমপুর, দক্ষিণখানে গণসংযোগ ও পথসভা করেন। সন্ধ্যার পর কুর্মিটোলা হাইস্কুলে পথসভা করেন। এ সময় ভোটারদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের লোক। ট্রাক মার্কায় আপনারা একটা ভোট দেবেন।’
ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চান খসরু
কেটলি প্রতীকের স্বতন্ত্র প্রার্থী মহানগর আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক খসরু চৌধুরী গতকাল দক্ষিণখান ও তুরাগ এলাকায় গণসংযোগ করেছেন। একই সঙ্গে এই আসনের ২১৭টি ভোটকেন্দ্রের মধ্যে ৫৪টিকে ঝুঁকিপূর্ণ উল্লেখ করে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য রিটার্নিং কর্মকর্তা ও ঢাকা বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আবেদন করেছেন তিনি।